২৬ জানুয়ারী ২০২৪ (শুক্রবার)
ভারতের সংবিধান ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির সংগ্রামের ফসল। স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃবৃন্দ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে এদেশের সংবিধান রচনা করতে হবে বৈদেশিক শাসকের কোনরকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই। ১৯৩৪ সালে ভারতের জন্য একটি সংবিধান সভার প্রস্তাব প্রথম দিয়েছিলেন কমিউনিস্ট নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায়। এরপর ১৯৩৫ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এই দাবি উত্থাপন করে এবং ১৯৩৮ সালে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু বলেন যে স্বাধীন ভারতের সংবিধান তৈরি করবে যে সংবিধান সভা তা ভারতীয়দের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। তৎকালীন ভারতবর্ষে সার্বজনীন ভোটাধিকার না থাকলেও যে সীমিত ভোটের অধিকার ছিল তার ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের যুক্ত করে ১৯৪৬ সালে সাংবিধানিক সভা গঠন করা হয়। প্রায় তিন বছর ধরে বিস্তারিত আলাপ আলোচনার পর খসড়া সংবিধান পেশ করা হয় এবং ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গৃহীত হওয়ার পর ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে এই সংবিধান কার্যকর হয়। পরাধীনতার শৃংখল মোচন করে যে স্বাধীন ভারত আত্মপ্রকাশ করবে তার সংবিধানের চরিত্র কি হবে তা নিয়ে প্রথমেই সুস্পষ্ট মনোভাব গড়ে তোলার জন্য ১৯৪৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর সংবিধানের উদ্দেশ্য হিসেবে Objectives Resolution পেশ করেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল :
১৷ ভারত একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাধারণতন্ত্রে পরিণত হবে এবং জনগণই হবে সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস। ২৷ ভারতের প্রতিটি মানুষের থাকবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার এবং সুবিচার পাওয়ার অধিকার।
৩৷ আইনের দৃষ্টিতে সবাইকে সমান ভাবে দেখা হবে এবং প্রত্যেক মানুষের থাকবে সমান সুযোগ, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার এবং নিজস্ব ধর্মাচরণ করবার স্বাধীনতা ৪৷ স্বাধীন দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, সমাজের পশ্চাৎপদ অংশের মানুষ, আদিবাসী ও অন্যান্য নিম্নবর্গের মানুষের স্বার্থ রক্ষিত হবে।
এই সামগ্রিক প্রস্তাবনাটি ১৯৪৭ সালের ২৪ শে জানুয়ারি গ্রহণ করা হয় যা কিনা পরবর্তীকালে স্বাধীন ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনার ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হয় যেখানে ভারতবর্ষকে গণতান্ত্রিক, সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের সবথেকে বড় শত্রু হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুত্ববাদী চরিত্রকে নস্যাৎ করবার জন্য এবছর এই দিনটিকেই বেছে নিয়েছিল অযোধ্যার রাম মন্দিরে প্রধানমন্ত্রীর হাতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ করার জন্য। ভারতের সংবিধানকে শুরু থেকেই যারা অস্বীকার করেছে সেই আরএস এসের স্বয়ংসেবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যে সরাসরি সংবিধানের মুল সুরকে বিঘ্নিত করতে সদাব্যস্ত থাকবেন তাতে অবশ্য আশ্চর্যের কিছু নেই। তবে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের সংবিধানকে মেনে চলবার শপথ যারা নিয়েছেন তাদের এহেন কার্যকলাপ নিঃসন্দেহে এক গর্হিত অপরাধ কেননা সংবিধান কোথাও সরকারকে কোন একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটানোর কাজে লিপ্ত থাকবার অনুমোদন দেয়নি।
ভারতবর্ষে উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম হয়েছিল তাতে আরএসএস ছিল পুরোপুরি অনুপস্থিত। শুধু তাই নয় তারা ব্রিটিশ শাসকের অনুগত হিসেবেই বরাবর তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। স্বাভাবিকভাবেই যে সংবিধান স্বাধীনতা সংগ্রামের নির্যাসকে ভারতীয় রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত করবার লক্ষ্যে পরিচালিত সেই সংবিধান আরএসএস কোনদিনও মেনে নেয়নি কেননা তাদের স্বপ্নের হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে এই সংবিধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরএসএস-এর মুখপত্র Organiser -এ স্বাধীন দেশের সংবিধানের প্রবল সমালোচনা করে বলা হয়েছিল ” এই সংবিধানে কোন ভারতীয়ত্ব নেই … এখানে মনুস্মৃতির আইনগুলির কোন উল্লেখ করা হয়নি”। ভারতের সংবিধান যথার্থভাবেই মনুস্মৃতির মত একটি বর্ণবাদী, বৈষম্যবাদী ও নারী বিদ্বেষী গ্রন্থের কোন নির্দেশকেই মান্যতা দেয়নি। আর সেটাই হয়েছে আর এস এস এর মত চরম প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির কাছে অসহনীয় । ভারতের সংবিধান অস্পৃশ্যতাকে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে চিহ্নিত করেছে আর মনুস্মৃতির মত একটি গ্রন্থ যা জাত ব্যবস্থাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে তথাকথিত নিম্ন বর্ণের মানুষের ওপর ঘটে চলা নিপীড়নকে বৈধতা দেয় তাকেই রাষ্ট্র পরিচালনার আইনের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলছে আরএসএস।
গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি এবং সামাজিক ন্যায়ের ধারণা ভারতের সংবিধানের মর্মবস্তু। আমাদের দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা, মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতি একত্রে সংবিধানের মূল ভাবনাকে প্রতিফলিত করে। ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে সাম্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, শোষণের বিরুদ্ধে লড়বার অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার এবং সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার– এই ছটি মৌলিক অধিকার স্বীকৃত। সংবিধান প্রনয়ণের ৭৫ তম বছরে এটাই রূঢ় বাস্তব যে দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা এই সমস্ত অধিকার থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত। মোদী সরকারের আমলে নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ আরও বেড়েছে। নাগরিকদের প্রজা বানানোর অপপ্রয়াসে সর্বদাই লিপ্ত বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার নানা ভাবে জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করছে । কার্যত ভারতকে পুলিশ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।
বিজেপি সরকার সংবিধানের মর্মবস্তুতে ক্রমাগত আঘাত হেনে আমাদের দেশের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করে স্বৈরাচারী, বৈষম্যমূলক ও অসহিষ্ণু শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। তাই ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী দল বিজেপি দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো ধরনের প্রতিবাদী স্বরকেই দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে গণতন্ত্রের কন্ঠ রোধ করার কাজ করে চলেছে। এই সরকারের আমলে দমনমূলক ইউএপিএ আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার করে হাজার হাজার নাগরিককে বিনা বিচারে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ এই আইনের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সংখ্যা অভিযুক্তদের মাত্র দুই শতাংশ। ভীমা কোরেগাঁও মামলায় কারাবন্দী অশীতিপর খ্রিস্টান যাজক ও সমাজসেবী ফাদার স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর কথা ভোলবার নয়। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখেও আমাদের দেশ বিশ্বে অত্যন্ত লজ্জাজনক স্থানে রয়েছে।
সংসদীয় গণতন্ত্রকে পরিকল্পিত ভাবে দুর্বল করার লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত মোদি সরকার বিভিন্ন বিল পার্লামেন্টে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই পাশ করিয়ে নিচ্ছে । তবে সাম্প্রতিক কালে ১৪৬ জন সাংসদকে বহিষ্কার করা এবং তাদের অনুপস্থিতিতে যেভাবে ন্যায় সংহিতা বিলের মতো চরম বিতর্কিত বিল পাস করিয়ে নেওয়া হল তা স্বাধীন দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো যা কিনা আর এস এস-বিজেপির কাছে বরাবরই শিরঃপীড়ার কারণ কেননা এই কাঠামোয় স্বৈরাচারী ও এককেন্দ্রিক শাসন বাধাহীন ভাবে চালানো সম্ভবপর নয়। তাই রাজ্যপালের মতো সংবিধানিক পদকে অপব্যবহার করে বিভিন্ন রাজ্যের অবিজেপি সরকারগুলির কাজে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের ক্ষমতায় বারেবারে হস্তক্ষেপ করার যে অস্বাস্থ্যকর প্রবণতা এই সময়কালে দেখা গিয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। শিক্ষা যুগ্ম তালিকাভুক্ত হলেও রাজ্যগুলির সাথে কোনরকম আলোচনা ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করে তা কার্যকর করা শুরু করেছে। একইভাবে রাজ্যগুলির কোন মতামত ছাড়াই শ্রম আইন বদলে শ্রমিকদের স্বার্থহানি করা হয়েছে । এভাবেই করোনা অতিমারীর সময় তিনটি কৃষি বিল পাশ করিয়েছিল মোদী সরকার যা অভূতপূর্ব কৃষক আন্দোলনের ফলে পরবর্তীকালে সরকার প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
মোদি জমানায় ধর্মীয় স্বাধীনতা বিপন্ন। প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ-হিংসা তীব্র গতিতে ছড়ানো হচ্ছে ।ঘৃণাভাষণের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিলেও তোয়াক্কা করছে না বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যের সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার। দাঙ্গাবাজ, ধর্ষকদের পক্ষে প্রকাশ্যে সওয়াল করছে বিজেপি। রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে গুজরাট গণহত্যার সময় নৃশংস আক্রমণ ও ধর্ষণের শিকার বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তির ব্যবস্থা পর্যন্ত তারা করে ফেলেছিল।শেষমেষ সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে এই ঘৃণ্য অপরাধীদের আবার কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু নাগরিকদের তটস্থ করে তাদের কার্যত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করার চক্রান্ত চলছে। ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইন প্রণয়ন, তথাকথিত লাভ জিহাদের জন্য সংখ্যালঘুদের অভিযুক্ত করা, এনআরসির মাধ্যমে দেশছাড়া করার ভয় দেখানো, সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্বের ধারণার সাম্প্রদায়িকীকরণের প্রচেষ্টা- এই সব কিছুর মাধ্যমে বর্তমান রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ভারতের ধারণা ও সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে তছনছ করে দিতে চাইছে।
ভারতের সংবিধান রাজনৈতিক সাধারণতন্ত্রের সাথে সাথে সমাজতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতের শাসক শ্রেণী সংবিধানে বর্ণিত স্বাধীনতা, সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের নীতিকে বারে বারে লংঘন করেছে। ১৯৯১ সালে নয়া উদারবাদী নীতি প্রবর্তনের পর থেকেই আমাদের দেশ ক্রমাগত কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণা থেকে দূরে সরে আসে। বিজেপির শাসনে ভারতবর্ষের অর্থনীতিতে, সমাজে ও রাষ্ট্র পরিচালনায় একচেটিয়া ও বহুজাতিক পুঁজিপতিদের দাপট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্পোরেট আধিপত্যকে আরও ব্যাপক করার জন্য নিত্য নতুন প্রয়াস চালাচ্ছে মোদি সরকার। শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে শ্রমজীবি জনগণ। কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোন পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করার কোন ইচ্ছেই নেই বর্তমান সরকারের। নারীদের ওপর নিপীড়ন বাড়ছে, ব্যপক হারে কমছে কর্মরত নারীর সংখ্যা। একথা স্পষ্ট যে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সংবিধানের নির্দেশকে লঙ্ঘন করেছে। ভারতীয় সংবিধানের নির্দেশাত্মক নীতিতে বলা আছে যে রাষ্ট্রকে এমনভাবে তার সামাজিক ও আর্থিক নীতি রচনা করতে হবে যাতে ” পুরুষ ও নারী সকল নাগরিকেরই সমানভাবে জীবিকা অর্জনের জন্য যথেষ্ট উপায় অবলম্বনের অধিকার থাকে”
( অনুচ্ছেদ ৩৯ক), ” কাজের ন্যায়সম্মত ও মানবোচিত অবস্থা থাকে” ( অনুচ্ছেদ ৪২) এবং ” একটা শোভন জীবনযাত্রার মান ও পূর্ণরূপে অবসর যাপন আর সামাজিক ও সংস্কৃতিক সুযোগ ভোগ করবার ব্যবস্থা থাকে( অনুচ্ছেদ ৪৩)। বর্তমানে আমাদের দেশের সরকার যে দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে তার পরিণতিতে দেশে বেকারী, দারিদ্র ও মূল্যবৃদ্ধি তীব্রতর হচ্ছে। একদিকে যখন বিলিয়নেয়াররা তাদের সম্পদ অত্যন্ত দ্রুত হারে বৃদ্ধি করে ফেলছেন, তখন আমজনতা মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও পেটের ভাত জোগাতে এবং মানবিক মর্যাদা সম্পন্ন জীবন ধারণ করতে পারছেন না। জনগণের মৌলিক অধিকার ও দেশের সংবিধানের নির্দেশাত্মক নীতিগুলিকে কার্যত অর্থহীন করে তুলেছে এদেশের শাসক শ্রেণী যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বর্তমানে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসীন বিজেপি দল।
কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে এমন কোনরকম সংবিধান সংশোধনী করা যাবে না যা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে লঙ্ঘন করতে পারে। অথচ আরএসএস- বিজেপি সংবিধানের এই মৌলিক কাঠামোকেই পদে পদে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই বিচারব্যবস্থাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে ৯৯ তম সংশোধনীর মাধ্যমে যে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েনমেন্ট কমিশন গঠন করে তাকে সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করেছিল। সম্প্রতি উপরাষ্ট্রপতি জগদীশ ধানকার বলেছেন যে কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত যে রায় দেওয়া হয়েছিল তার ফলে সংসদের সার্বভৌমত্ব হ্রাস পেয়েছে। অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড় সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্রুবতারার সাথে তুলনা করেছেন। তবে আর এস এস এর এজেন্ডা সম্পূর্ণ ভাবে রূপায়ণ করার পথে যেহেতু সংবিধান সবচেয়ে বাধা তাই একে আমূল পরিবর্তন করবার জন্য সংঘ পরিবার মরীয়া। এই পরিস্থিতিতে দেশের সংবিধান ও সংবিধানের ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ বামপন্থীদের এবং তাদের গণতান্ত্রিক সহযোগীদেরই গ্রহণ করতে হবে। গণচেতনা শাণিত করে এবং গণ আন্দোলনের পথে কর্পোরেট সাম্প্রদায়িক শক্তির অসৎ ও ধ্বংসাত্মক প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে হবে।