ঝুলির গেরুয়া বিড়াল: শমীক লাহিড়ী

ঝুলির গেরুয়া বিড়াল

ওয়াল স্ট্রীট জার্নালে প্রকাশিত খবর ভারতের প্রায় সব কাগজেরই হেডলাইন।

ফেসবুক-বিজেপি গাঁটছড়া। এটাই তো হওয়ার কথা। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই এতে। এদের জন্যই তো বাকি সবাইকে হটাতে হচ্ছে। দেশপ্রেমের আর তথ্য সুরক্ষার ধুয়োর আড়ালে সব হঠাও – থাকবে শুধু আম্বানি-গুগুল- ফেসবুক গাঁটছড়া। সব এদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে, বকলমে বিজেপির।

এদের হাতে ভারতবাসী কতটা সুরক্ষিত?

বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে নাক গলানোর অভিযোগ ফেসবুকের বিরুদ্ধে আছে। এর মধ্যে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ঘটনা সবারই জানা। আমেরিকার নির্বাচনে সেদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারী নির্বাচকমণ্ডলীদের তথ্যভান্ডার তুলে দেওয়া হয়েছিল ঘুরপথে ট্রাম্পের হয়ে কাজ করা ভোট কুশলী কোম্পানি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার হাতে। অভিযোগ আছে একইভাবে তথ্য সংগ্রহ করে রাশিয়ার সরকারও নাকি ট্রাম্পকে জিতে আসতে সহযোগিতা করেছিল।

এই ফেসবুক কোম্পানির সাথে বিজেপির সখ্যতা ২০১৩ সাল থেকেই। ২০১৪ সালের প্রচারেও বিজেপিকে প্রচারে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছিল।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ফেসবুক কোম্পানিকে বিশেষ ছাড় দেওয়ার। ২০১৭ সালের জুন মাসে ফেসবুকের সাথে নির্বাচন কমিশন এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, নির্বাচকমন্ডলীর মধ্যে সচেতনতা প্রচার করার জন্য। ২০১৮ সালের ২৩ শে মার্চ নির্বাচন কমিশন এই বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার আশ্বাস দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এই বিজ্ঞপ্তিতে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায় অবাধ ও ন্যায্য নির্বাচন বাধাপ্রাপ্ত হবে যদি তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু কোনো অদৃশ্য হাতের খেলায় সম্পূর্ণ ডিগবাজি খেয়ে ৪ দিনের মাথায় তারা ক্লিনচিট দিয়ে ফেসবুকের সাথে চুক্তি বজায় রাখে।

শুধু এখানেই থেমে থাকেনি নির্বাচন কমিশন। ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারী মাসে বিজ্ঞপ্তি জারী করে জানায়, রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপন প্রচারের আগে নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমতি নিতে হবে। শুধু ফেসবুক এই বিজ্ঞপ্তি মানতে অস্বীকার করে এবং আশ্চর্যজনকভাবে নির্বাচন কমিশন নিশ্চুপ থাকে। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কার নির্দেশে ফেসবুক কোম্পানিকে এই ছাড় দেওয়া হয়েছিল?

এই ফেসবুকে এবং হোয়াটসঅ্যাপে ব্যাপক গুজব ও অসত্য প্রচার চালানো হয়েছে দিল্লির দাঙ্গাসহ অনেকগুলো দাঙ্গার আগে ও পরে। কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ফেসবুক কতৃপক্ষ বা কতজনের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট বাতিল করেছে সেটার চাইতে বড় প্রশ্ন, কোম্পানির সর্বোচ্চ একজন বলছেন – বিজেপির কারোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, তাহলে ভারতে ব্যবসা করা যাবে না।

এই কথা ফেসবুক কোম্পানির এক্সিকিউটিভ আঁখি দাস কি নিজ দায়িত্বে বলেছেন? জুকেরবার্গ সহ অন্য সর্বোচ্চ কতৃপক্ষের অজান্তেই? হতে পারে না। এই উচ্চপদাধিকারীর সম্পর্কে জানার জন্য জুকেরবার্গদের কি FBI-র সাহায্য লাগবে? কে না জানে বিজেপির সর্বোচ্চ স্তরের নেতাদের সাথে ওনার দৈনন্দিন ওঠাবসা! ওনার বোনের অসরকারী সংস্থার (NGO) দপ্তর, দিল্লি RSS এর দপ্তর থেকেই চলে, এটা জানার জন্য কিছু কসরত করতে হয় না কি? এইরকম একজনকেই তো জুকেরবার্গদের দরকার ছিল, যে সরকারী দলের বিশ্বাসভাজন। তাই ফেসবুকের সর্বোচ্চ কতৃপক্ষ সব জানে, সবই তাদের পরিকল্পিত।

আর এই জন্যই হিংসার কথা বা অসত্য প্রচারের ঝড় সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠরা তুলতে পারে সরাসরি ফেসবুকের সহযোগিতায়।

বিজেপির সাংসদ কপিল মিশ্র বা তেলেঙ্গানার একমাত্র বিজেপি বিধায়ক অথবা সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠরা দাঙ্গা বাধাবার জন্য, হিংসা ছড়াবার জন্য যা খুশী প্রচার করতে পারে ফেসবুকে। এদের অবাধ ছাড়ের নির্দেশ ফেসবুকের সদর দপ্তর থেকেই দেওয়া আছে।

বৃহৎ ট্রান্সন্যাশনাল- মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর কাছে মুনাফাই মূল। মুনাফার জন্য এরা যে কোনও অপরাধ করতে পারে।

পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরদা ও সিরিল স্যাম ২০১৯ সালে একটা বই লিখেছিলেন – The Real Face of Facebook in India. বিজেপির সাথে এদের সম্পর্কই এই বইয়ের মূখ্য বিষয়। শিবনাথ ঠুকরাল। ইনি NDTV- র একজন প্রাক্তন সাংবাদিক। ইনি কার্নেগি কোম্পানির ডিরেক্টরও ছিলেন একসময়। নরেন্দ্র মোদির অত্যন্ত কাছের সাংবাদিক হীরেন জোশির সাথে ২০১৩ সাল থেকে বিজেপির হয়ে ‘মেরা ভরোসা’ নামে একটি ওয়াবসাইট পরিচালনা করার সূত্রে বিজেপির মোদি ব্রিগেডের বৃত্তে ঢুকে পড়েন। ২০১৭ সালে ফেসবুক কোম্পানি একে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার নীতি নির্ধারণ ডাইরেক্টর রূপে নিয়োগ করে। ফলে আঁখি দাসের নিয়োগ কোনও বিচ্ছিন্ন বা ভুল ঘটনা নয়। এটাই ফেসবুক কোম্পানির ভারতে চলার নীতি।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির জেরে ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্সের ডিজিটাল সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান ড্যামিয়ান কোলিন্স এর নেতৃত্বে তৈরী রিপোর্ট জানায় – ‘ফেসবুকের ব্যবসায়িক মডেলটাই বিপজ্জনক।’
এত বড় অপরাধ করেও বার বার ডাকা সত্ত্বেও মার্ক জুকেরবার্গ কিন্তু ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কমিটির মুখোমুখি হয়নি। যদি তিনি যুক্ত নাই থাকেন কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির সাথে, তাহলে কেন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কমিটির মুখোমুখি হতে ভয় পেলেন?

আমেরিকার সেনেট কমিটিও এই কোম্পানিকে ডেকে সতর্ক করেছে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে। এক মার্কিন ডেমোক্র্যাট সেনেটার বলেছেন – কম্পিটিশন আইন অনুযায়ী এইসব বৃহৎ দৈত্যাকার ডিজিটাল কোম্পানি যেমন ফেসবুক, গুগুল, অ্যামাজন এগুলোকে ভেঙে ছোট ছোট কয়েকটি কোম্পানি করা দরকার, যাতে অন্তত এরা প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়।

ভারতে দাঙ্গাবাজদের সাহায্য করার অভিযোগে অভিযুক্ত ফেসবুক কোম্পানির বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি সরকার কোনও ব্যবস্থাই নিতে চায় না।

ভারতবর্ষে হিংসা ও সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে প্রচার দেশের সংবিধান বিরোধী কাজ। এই অপরাধে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে ফেসবুক কোম্পানির বিরুদ্ধে। তাহলে কেন এদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা হবে না? কেন এত গুরুতর অভিযোগের উপযুক্ত তদন্ত হবে না? কেনই বা যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করে এদের কাজের উপযুক্ত অনুসন্ধান হবে না? যদিও যৌথ সংসদীয় কমিটিকে পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কতটা কাজ করতে দেবে মোদি সরকার – তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

তদন্ত হবে? না কি দেশে হিংসা-বিদ্বেষ-
দাঙ্গা -কুৎসা ছড়ানোর কাজে সহযোগিতা করার অবাধ ছাড়পত্র থাকবে?

গুগুল-ফেসবুক এদের জন্মবৃত্তান্ত ও ইতিহাস জেনে রাখা ভালো।

সব জানতে পারবে সিয়ার কাছে

কিহোল ইনকরপোরেটেড কোম্পানি। সিলিকন ভ্যালির একটা ছোট্ট সফটওয়্যার কোম্পানি । ১৯৯৯ সালে জন হ্যাঙ্ক নামে এক গেম ডেভেলপারকে এই ছোট কোম্পানির মাথায় বসিয়ে কাজ শুরু হয়। এরা মূলত থ্রি ডি ম্যাপ বানানো এবং কিছু ভিডিও গেম তৈরীর কাজ করতো। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরায়, এমনই একটা কোম্পানি ছিল এটা। এমনকি সব কর্মচারীদের সবসময় মজুরীও দিতে পারতো না।

এদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় ২০০৩ সালে। হটাৎই প্রচুর টাকা ঢালে In-Q-Tel নামে একটা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি।

এরা কারা? In-Q-Tel হ’ল একটা বিনিয়োগকারি কোম্পানি, মানে যারা অর্থ বিনিয়োগ করে বিভিন্ন কোম্পানিতে নানা শর্তের বিনিময়ে। এটা কি সাধারণ আর পাঁচটা সাধারণ বিনিয়োগকারি কোম্পানি?

না। এটা হ’ল Central Intelligence Agency, অর্থাৎ কুখ্যাত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার অর্থে চলা একটা কোম্পানি, যারা মূলত সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোতে নিজেদের গোয়েন্দা কার্যকলাপ পরিচালনা করার জন্য টাকা ঢালে।

এই কিহোল কোম্পানির একটি বিভাগ যারা বিভিন্ন ভিডিও গেম তৈরী করতো, সেটার নাম ছিল ইনট্রিনসিক গ্রাফিকস। সেটা ভিকারিয়াস ভিশন নামে একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি ক’রে দিয়ে, প্রায় সব ইঞ্জিনিয়ার ও পরিচালকরা কিহোল কোম্পানিতে থাকে, যার মূল কাজ ছিল CIA র হয়ে কাজ করা, বিশেষত ডিজিটাল ম্যাপের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীর সব কিছুর আগে অবস্থান চিহ্নিত করা।

এই কোম্পানির প্রধান জন হ্যাঙ্কের কথায় – এটা বিশ্বের প্রতিটি স্থান সম্পর্কে পুঙখানুপুঙখ তথ্য, সমস্ত মানচিত্র, আবহাওয়ার তথ্য, স্থাপত্য পরিকল্পনার তথ্য সরবরাহ এবং উপগ্রহের মাধ্যমে সর্বত্র নজরদারি রাখার জন্যই কাজ করতো।

CIA কত অর্থ ঢেলেছিল জানা যায়নি। তবে এই ছোট্ট কোম্পানিটিকে National Geospatial- Intelligence Agency র পার্টনার করা হয়েছিল। NGA র সেই সময়ে বার্ষিক বাজেট ছিল ৫বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১৪,৫০০ জন সেখানে কাজ করতো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই NGA একটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, যাদের কাজ CIA ও Pentagonকে উপগ্রহ মারফৎ সংগৃহীত তথ্য সরবরাহ করা।

২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময়ে ইরাকি বাহিনীর অবস্থান, তাদের অস্ত্রভান্ডার মজুত করার স্থান ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক তথ্য ও মানচিত্র দিয়ে এরা সাহায্য করেছিল।

এই পর্যন্ত যা বললাম, তার মধ্যে আশ্চর্য হওয়ার মতো একটাই তথ্য আছে, তা হ’লো, কিভাবে সিলিকন ভ্যালিতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করে। তবে যে কোনও দেশের গোয়েন্দা সংস্থাই চায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে। তাই তারা কিহোল কোম্পানি কিনেছিল। কিন্তু এত গোপনে কেন সবটা করা হয়েছিল, সেটা অবশ্যই খটকা লাগার বিষয়।

আসল ব্যাপারটা ঘটলো পরের বছর, ২০০৪ এ। ল্যারি পেইজ এবং সার্গেই ব্রিন গুগুল কোম্পানি তৈরী করেন ১৯৯৮ সালে। ২০০৪ সালে এই কিহোল কোম্পানিটা কিনে নেয় এরা। এদের পরিচালক মন্ডলী ও ইঞ্জিনিয়ার- কর্মচারীদের প্রায় সবাইকেই নিয়ে এই কিহোল কোম্পানির নাম পাল্টে নতুন কোম্পানি তৈরী হ’লো – Google Earth।

এই কোম্পানিকে কেনার সময়ে অন্যান্যদের সাথে রব পেইন্টার নামে In-Q-Tel র এক শীর্ষ কর্তাকেও নিজেদের নতুন কোম্পানিতে গুগুল কতৃপক্ষ নেয়। এর নেতৃত্বে একটা নতুন ডিভিশন খোলা হয়। নাম Google Federal। এর ঠিকানা – রেস্টন, ভার্জিনিয়া প্রদেশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য CIA র হেড কোয়ার্টার ল্যাংলেহ থেকে খানিকটা দূরেই এই ঠিকানা। কেন ভার্জিনিয়ায় তুলে নিয়ে যাওয়া হ’লো এই ডিভিশনকে?

রব পেইন্টারের মূল কাজ ছিল – বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও যুদ্ধাস্ত্র তৈরীর কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ রেখে চলা। CIA, NSA, NGA, Pentagon ইত্যাদি গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি যেমন – রেথন, নর্থপ গ্রুম্যান, লকহিড মার্টিন ইত্যাদির কাজকর্মের বরাত যোগাড় করা।

কি ধরনের কাজ করেছে এরা? ২০০৩ সালে ২.১ মার্কিন ডলার মূল্যের কাজের বরাত পায়, মূলত বিভিন্ন নথিপত্র স্ক্যান ও ২৪ টা ভাষায় অনুবাদ করার কাজে ব্যবহারের উপযোগী বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার তৈরির জন্য। NSA র থেকে এই কাজ ছাড়াও CIA র থেকে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ খবর এনে দেওয়ার জন্যও বিরাট বরাত পায়। CIA র আভ্যন্তরীণ গুগুল পেজে দুটি ‘O’ র একটি ‘O’ তে CIA র লোগো ব্যবহার করা হয়।

এইসব স্বীকারোক্তি করেন গুগুলের প্রথম মার্কেটিং ডিরেক্টর ডগলাস এডওয়ার্ডস তার লেখা একটা বইয়ে। ২০১১ সালে তাঁর লেখা বই – I’m feeling lucky : The Confession of Google Employee Number 59 এ আরও অনেক তথ্য ফাঁস করে দেন।

২০০৬ সাল থেকে গুগুল ফেডারেল ডিভিশন আর কোনো রাখঢাক না করে সরাসরি মার্কিন সেনাবাহিনী, এয়ারফোর্স, CIA, রেথন, লকহিড মার্টিন ইত্যাদি জায়গা থেকে স্থায়ী-অস্থায়ী লোক নিয়োগ করতে থাকে। অভিযোগ এমনকি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান এই দুই দলের মধ্যেও নিজেদের প্রভাব প্রবল ভাবে বিস্তার করে।

গুগুল নিজেদের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ধরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেও, শাক দিয়ে পুরো মাছ ঢেকে রাখতে পারে না। ২০০৭ সালে এরা লকহিড মার্টিনের সাথে কাজ করে ইরাকের সিয়া ও সুন্নিদের অবস্থান নির্ণয় করার এবং অভিযোগ এটা সিয়া সুন্নি বিরোধ বাড়িয়ে অস্ত্র বিক্রির জন্য করা হয়েছিল।

২০০৮ সালে CIA র সাথে যৌথভাবে CIA Intellipedia তৈরীতে সাহায্য করেছে। ২০১০ সালে বিনা টেন্ডারে ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাজের বরাত পায়। NGA কে Geospatial Visualisation Service মানে ভূ-স্থানিক ধারণা পরিষেবা দেওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। বিনা টেন্ডারে গুগুলকে এই বরাত দেওয়া নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে NGA কতৃপক্ষ জানায়, তাদের অন্য কোনও উপায় ছিলনা, কারণ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই গুগুলের সাথে তারা চূড়ান্ত গোপনভাবে কাজ করছে Google Earth Technology কে নিজেদের কাজে ব্যবহার করার জন্য। তাই গুগুল ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে এই কাজ করাতে তারা অপারগ।

২০১৭ সালে মার্কিন সরকারের সামরিক বাজেটে ৯০বিলিয়ন ডলার তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে খরচ করা হয়েছিল। এই অর্থের সিংহভাগ পাওয়ার জন্য গুগুল সব ধরণের কাজই করেছিল। গুগুল তাদের সার্ভারে রক্ষিত তথ্যাবলী পেন্টাগন, CIA সহ বিভিন্ন মার্কিন গোয়েন্দা দপ্তর এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দিয়ে থাকে। এই কথা ২০১৩ সালে সরকারি উচ্চপদস্থ আমলাদের এক সম্মেলনে খোলাখুলিভাবে বলেছিলেন গুগুল ফেডারেল ডিভিশনের সেলস ম্যানেজার স্কট সিয়েবাত্তারি।

পুলিশ, মিলিটারি, সরকার, অস্ত্র উৎপাদনকারী সংস্থা, সরকারি বিদ্যালয়, ব্যবসা, নানা ক্ষেত্রের উপভোক্তাগণ, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারকারী অসংখ্য মানুষ – সবাই গুগুলের নানাবিধ পরিষেবা ব্যবহার করেন। এখন প্রশ্ন বিভিন্ন ব্যবহারকারিদের থেকে সংগৃহীত তথ্য তারা অর্থের বিনিময়ে উপভোক্তাদের অন্ধকারে রেখে বিক্রি করছে কি না!

করছে তো বটেই। ২০১৫, ২০১৮, ২০১৯ সালে প্রমাণিত হয়েছে এই কথা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এইজন্য তাদের বিপুল অঙ্কের অর্থ জরিমানাও করেছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে আমার আপনার থেকে সংগ্রহ করা তথ্য কাদের হাতে তুলে দিচ্ছে? মার্কিন সরকারের ঘনিষ্ঠতম কোম্পানি গুগুল সংগৃহীত তথ্য সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সবাইকে মার্কিন নজরদারির আওতায় নিয়ে যাচ্ছে।

ফ্রেড বার্টন, মার্কিন সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষপদে কাজ করেছেন। ইনি ২০১৩ সালে একটা বই লিখেছিলেন – Under Fire : The Untold Story of the Attack of Benghazi। সেখানে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সরকার পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে মার্কিনীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে লিখেছিলেন – গুগুল হোয়াইট হাউস, গোয়েন্দা দপ্তর এবং খোলা আকাশের সাহায্য পাচ্ছে। বাস্তবত তারা যে কাজ করছে, সেটা CIAও পারতো না।

ইয়াশা লেভাইন। সোভিয়েত ইউনিয়ন একত্রিত থাকার সময়ে জন্ম। কিন্তু মার্কিন অনুরাগী হয়ে সেদেশে চলে আসেন এবং নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ২০১৯ সালে একটা বই লেখেন। শিরোনাম – Surveillance Valley : The Secret Military History of the Internet। তিনি তাঁর লেখা এই বইতে উপরে উল্লিখিত অভিযোগগুলি এনেছেন। ইনি কমিউনিস্ট নন। বরং বিদ্বেষী। মার্কিন অনুরাগী।

এই গুগুল এর বিভিন্ন পরিষেবা আমরা সবাই ব্যবহার করছি। এর মধ্যে দিয়ে আমার আপনার সব তথ্যই চলে যাচ্ছে মার্কিন মুলুকের গোয়েন্দাদের হাতে। আপনি কোথায় যাচ্ছেন, সাথে কে আছেন? সব তথ্য গুগুলের কাছে জমা হচ্ছে। ব্যবসায়িক বা রাষ্ট্র যে কোনও কাজের জন্যই এরা সব তথ্যই বেচে দেয়। অতীতে বেচে ধরাও পড়েছে।

Uber, Amazon, Facebook, eBay, Apple, Airbnb, Instagram, Twitter, Angry bird এইরকম অনেকগুলো অ্যাপস যা প্রতিদিন আমরা ব্যবহার করতে অভ্যস্ত বা বাধ্য হচ্ছি, সেগুলোই গুপ্তচরের কাজ করে চলেছে। বিকল্প আর কোনও অ্যাপস যাতে না থাকে তার জন্য সরকারি ফরমান জারি করাচ্ছে এরাই। আর বিনিময়ে সরকারও আপনার আমার সম্পর্কে সব তথ্য এদের কাছ থেকে পেয়ে, সম্পূর্ণ নজরদারির ব্যবস্থা করছে। ট্যাঁফো করলেই সরকার, পুলিশ- সিবিআই-সিআইডি লেলিয়ে দেবে।

আপনার কাছে বিকল্প অন্য কোনো সফটওয়্যার ক্রমশ কমছে। আমাদের দেশের আম্বানির জিও এখন গুগুল আর ফেসবুকের সাথে হাত মিলিয়েছে। মোদিজি চীন বিরোধী যুদ্ধ জিগির তুলে চীনা অ্যাপস হঠিয়ে দিয়েছেন। ফলে আম্বানি-জুকেরবার্গ- গুগুলের হাতে বন্দী হওয়ার কোনও বিকল্প আপাতত নেই।

মারীচ সংবাদ নামে একটা নাটকের গানের কয়েকটা লাইন মনে পড়ছে।

নিশীথ রাতে প্রিয়ার কাছে
কোন কথাটি কও,
ঘুমের মাঝে স্বপ্নরাজে
কোথায় তুমি যাও।
মাটিতে পা আছে কিম্বা
শূণ্যেতে রও ভাসিয়া।
সব জানতে পারবে
সিয়ার (CIA) কাছে –
সিয়া সিয়া সিয়া।

মেরীবাবার গল্প

WPP। একটা ব্রিটিশ কোম্পানি। এরা মূলত বিজ্ঞাপন, মিডিয়া মার্কেটিং, ব্র‍্যান্ড মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর কাজ করে।

এইরকম হাজারো কোম্পানি পৃথিবী জুড়ে আছে।

কিন্তু বাকিদের থেকে এটির কার্যকলাপ ভিন্ন।

১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ছোট্ট প্লাস্টিকের জিনিস তৈরীর কোম্পানিকে কিনে নেন মার্টিন সোরেল ১৯৮৫ সালে। তিনি এটিকে সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞাপন সংস্থায় রূপান্তরিত করেন।

২০১৯ সালে এই কোম্পানির মোট মুনাফা হয়েছে ৭০৭.১ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড। মোট ব্যবসার পরিমাণ ছিল ১৩,২৩৪.১ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড। বর্তমানে পৃথিবীর ১০৭টির দেশে কর্মরত মোট কর্মচারী সংখ্যা ১লক্ষ ৫৮ হাজারেরও বেশি। এদের অধীনে আরও ১৩টি কোম্পানি আছে। আবার অনেকগুলো সহযোগী কোম্পানিও পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

WPP র অন্যতম ব্যবসায়ী সহযোগী (অভিযোগ আসলে এটি এদেরই অধীনস্থ) একটি কোম্পানির নাম Visible Technologies, US । ২০০৯ সালের ৩১ শে অক্টোবর CBS News একটা খবর প্রকাশ করে জানায় এই কোম্পানি আমেরিকার CIA র অর্থ বিনিয়োগকারী সংস্থা In-Q-Tel থেকে অর্থ পেয়েছে, মূলত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলির থেকে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। ২০০৯ সালেই WPP দু’বার In-Q-Tel থেকে অর্থ পেয়েছে মূলত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারিদের উপর নজরদারি চালানোর জন্য। সেই ধারা আজও অব্যাহত।

এই নজরদারির মাধ্যমে এরা মূলত ব্যাবহারকারীর রাজনৈতিক , ভোগ্যপণ্য, ব্যক্তিগত নানা পছন্দ-অপছন্দ এমনকি যৌন পছন্দেরও ম্যাপিং করে। এই তথ্য তারা বিক্রি করে বৃহৎ ট্রান্সন্যাশনাল, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোসহ নানাবিধ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়া CIA, FBI ইত্যাদি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির হাতেও তুলে দেয় ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত সমস্ত তথ্য।

ফেসবুক। এই মুহুর্তে ফেসবুক ব্যবহারকারির সংখ্যা ২৬০ কোটি, যারা ৫৮টি দেশে ছড়িয়ে আছে। পৃথিবীর জন সংখ্যা ৭৮০ কোটি। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতি ৩ জন মানুষের একজন ফেসবুক ব্যবহার করছেন। আর কোনও পণ্য বা পরিষেবা নেই যা এই পরিমাণ মানুষ ব্যবহার করে।

২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্ক জুকেরবার্গ কয়েকজন বন্ধুর সাথে মিলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকেই ফেসবুকের যাত্রা শুরু করেছিলেন।

এই ফেসবুক কোম্পানি প্রথমে Paypal কোম্পানির প্রাক্তন CEO পিটার থিয়েলের কাছ থেকে ৫০০০০০ মার্কিন ডলার মূলধন হিসাবে পেয়েছিল। পরে আবার ২০০৫ সালের মে মাসে থিয়েল এবং Accel নামে একটা কোম্পানির অংশীদারদের কাছ থেকে ১২.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূলধন পায়। তারপরে ২০০৬ এর এপ্রিলে থিয়েল, Accel এবং Greylock Partners এই ৩ জায়গা থেকে ২.৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হিসাবে পায়।

এদের কারুর সাথে কি CIA এর বিনিয়োগকারী সংস্থা In-Q-Tel এর কোনো সম্পর্ক ছিল?

পিটার থিয়েল ২০০৪ সালে তার একটি স্টার্টআপ ফার্ম Palatir এর জন্য In-Q-Tel এর তহবিল নেন।

২০০৪ সালে, Accel এর অংশীদার জেমস ব্রেয়ার In-Q-Tel এর তৎকালীন CEO গিলম্যান লুইয়ের সাথে প্রতিরক্ষা ঠিকাদার কোম্পানি BBN এর পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন।

Greylock Partners এর একজন প্রধান অংশীদার হাওয়ার্ড কক্স সরাসরি In-Q-Tel এর পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন।

তার মানে আমি বলছি না যে CIA বা In-Q-Tel ফেসবুকের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল শুরুর সময়ে,
তবে ফেসবুকের প্রাথমিক বিনিয়োগকারীদের ফেসবুকের মূলধন বাড়ানোর সময় In-Q-Tel ঘুর পথে হলেও সহযোগিতা করেছে। সেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে, এমন কিছু শোনা যায়নি।

ফেসবুক ব্যবহারকারী ২৬০ কোটি মানুষ যখনই তার এ্যাকাউন্ট খোলে, তখনই তার ব্যক্তিগত অনেক তথ্য ফেসবুক কতৃপক্ষকে দিতে হয়। এরপর বিভিন্ন পোস্ট, মেসেজ সহ অসংখ্য তথ্য প্রতিবারই ব্যবহারকারীরা দিয়ে থাকে – জেনে অথবা না জেনে।

এদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে গুরুতর অভিযোগ আসে, যে প্রায় ৮কোটি ৭০লক্ষ মার্কিন নাগরিকদের সব তথ্য কেম্ব্রিজ অ্যানালিটিকা নামে একটি ব্রিটিশ কোম্পানির কাছে পাচার করে দেওয়া হয় ঘুরপথে। কেম্ব্রিজে ফিলোমেট্রিক্স, সাইকোলজি এবং ডেটা বিজ্ঞান সংক্রান্ত একটা কোম্পানির CEO মার্কিন নাগরিক ডঃ আলেকজান্দ্রিয়া কোগান একটি অ্যাপের মাধ্যমে নাকি এই সব তথ্য ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করে কেম্ব্রিজ অ্যানালিটিকা নামে একটি ভোট কুশলী কোম্পানির হাতে তুলে দিয়েছিলেন অর্থের বিনিময়ে।

এখন প্রশ্ন এইসব তথ্য নিয়ে কি হয়? এই নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু আছে কি?

২০১৯ সালে সুশানা জুবফ নামে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপিকা একটা বই লিখেছেন। The Age of Surveillance Capitalism, মানে নজরদারি পুঁজিবাদের যুগ।

এই বইতে দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি আমাদের সামনে এনেছেন। প্রথমত পুঁজিবাদী উৎপাদনকারিরা কিভাবে ক্রেতার মনমেজাজ, শরীরের নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যাচাই করে তাদের পণ্য বেচার চেষ্টা করে, আর রাষ্ট্রকেও ক্রমে নজরদারির রাষ্ট্রে পরিণত করে।

আজকের এই বিশেষ যুগে তথ্য বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে কিভাবে মানুষের চিন্তা ভাবনায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করে দেওয়া যায়, তার চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন সুশানা। এর মানে, আগে আপনার চকোলেট খেতে ইচ্ছে করছে এমন মনোভাব যদি আপনি কোথাও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্ত করতেন, তাহলে সেটা জেনে নিয়ে আগে আপনার কাছে নানা চকোলেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন পাঠানো হত। এখন আপনার চকোলেট খেতে সাময়িক ভাবে ইচ্ছে হচ্ছে এটা জেনে কেবল চকোলেটের বিজ্ঞাপন দেবে না। আপনার চকোলেট খেতে ইচ্ছে করলেও এই তথ্য-বিজ্ঞানের ব্যবহার করে আপনার এই ইচ্ছেটা অনবদমিত করে দিয়ে তাদের ইচ্ছামত আপনার ইচ্ছেটা পাল্টেও দিতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য মিডিয়া।

চিহ্নিত ব্যক্তির ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই তথ্য-মনোবিজ্ঞান, তাঁর সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ এবং প্রচারের মাধ্যমে। রাজনৈতিক কাজে এর অপব্যবহার সাংঘাতিক ভাবেই হচ্ছে। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এই কুখ্যাত Cambridge Analytica কোম্পানি ফেসবুক থেকে ৮.৭ কোটি মার্কিন নাগরিকদের সংগৃহীত (আসলে বেআইনিভাবে পাচার করা) তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রচার চালিয়েছিল উগ্র দক্ষিণপন্থী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে, আর সাফল্যও পেয়েছিল।

আমাদের দেশেও বিগত লোকসভা নির্বাচনে একইভাবে মিথ্যা নির্মাণ করে ভোট প্রচার করা হয়েছিল। কৃষকের আত্মহত্যার সমস্যা, বেকারের কাজ না পাওয়ার সমস্যা, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সমস্যা সব ভুলিয়ে, বালাকোটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উগ্র দেশপ্রেমের জোয়ারে সব সমস্যা ভাসিয়ে নিয়ে গেল বিকৃত – অসত্য প্রচার। এই কাজে বিজেপির অন্যতম সহযোগী ছিল ফেসবুক।

যে প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল অর্থ দেয়, তাদের হয়ে ভোটের কৌশল নির্ধারণ ও প্রচার করা এই ভোট কুশলী কোম্পানিগুলোর কাজ। যেমন আমাদের রাজ্যে প্রশান্ত কিশোরের কোম্পানি তৃণমূল দলের হয়ে করছে। এদের কাজকর্মের ধরণ খুবই গোপনীয় হয় এবং বিভিন্ন সময়ে আইনের বাইরে গিয়েও এরা কাজ করে। যেমন এখানেও নাকি ১৪ টি বেনামি কোম্পানি নানারকম লেনদেনের সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠছে।

তাহলে কি আমরা এইসব থেকে হাত গুটিয়ে থাকবো? না আজকের বিশ্বায়িত দুনিয়ায় তা হয় না। চাই কঠোর তথ্য পাচার সংক্রান্ত আইন। চাই ২/১টি কোম্পানির কুক্ষিগত নয়, অনেকগুলো কোম্পানির অস্তিত্ব অথবা ওপেন সোর্স।

সেই রাস্তায় কি হাঁটতে রাজি মোদিজি?

না। ওনার অনেক বেশি আগ্রহ আম্বানি-গুগুল- ফেসবুকের একছত্র রাজত্ব কায়েম করা। শুধু এরাই থাকবে। বাকি সবার জন্য দ্বার বন্ধ। আর তথ্য পাচার নিরোধক আইন পার্লামেন্টে পড়ে আছে, তাতে ধুলো জমতে দেখে উল্লসিত জুখারবার্গ-পিচাই -আম্বানীরা।

তাই রাষ্ট্র আর বহুজাতিক সংস্থার নজরদারির কারাগারে বন্দী করার ফন্দি আটছে মোদি-ট্রাম্প- বলসেনারো অক্ষ।

সেই মেরী বাবার গান মনে পড়ছে?

খাবা খাবা খাবা আমি সব খাবা
মেরী বাবা।
থলিতে ভরবো যা হাতের কাছে পাবা,
এখানে ওখানে বসাবো থাবা
মেরীবাবা।
সোনা চাই, দানা চাই
কাবুলের চানা চাই
দুধ ঘি ছানা চাই
মুরগির ছানা চাই
মিছরির পানা চাই,
মোগলাই খানা চাই,
মিহিসুরে গানা চাই,
সবচেয়ে বেশি চাই
কি কি কি?
বশ্যতা মানা চাই।
আর আর আর
গোটা দুনিয়াটা
হাতের মুঠোয় আনা চাই।

মেরীবাবাদের গোগ্রাসে গেলার বিরুদ্ধে লড়াই চাই।

আঁখি দাস ও নরেন্দ্র মোদি
নরেন্দ্র মোদি ও জুকের বার্গ
ট্রাম্প-মোদি-বলসোনারো
Spread the word

Leave a Reply