HKS Cover

Revolution – The Beginning of A New Era

হরকিষাণ সিং সুরজিৎ

মানবজাতির ইতিহাসে ইতিপূর্বে কতিপয় বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, যার অনেকগুলি যথেষ্ট পরিবর্তনকামী ছিল, যদিও শেষ পর্যায়ে সেগুলি নিজেদেরকে সামাজিক অগ্রগতির বাধাস্বরূপ রক্ষনশীল সমাজেই পর্যবসিত করেছে। বৈপ্লবিক শক্তির উদ্ভব ঘটলেও, শোষণ এবং নির্যাতনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ এই বিপ্লবগুলি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। কিন্তু অক্টোবর বিপ্লব ছিল স্বতন্ত্র ধাঁচের। এই বিপ্লব প্রকৃতই শোষণ ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়েছিল, শোষণের ভিত্তিভূমির ধ্বংস সাধন করেছিল এবং ভেঙে দিয়েছিল সেই সকল শৃঙ্খলগুলিকে যা সামাজিক সম্পর্কের নূতন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকারী জনগণের বৈপ্লবিক শক্তিকে বাধাদান করছিল।

এই সমাজ বিপ্লবের প্রধান উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পুঁজিবাদী শোষণব্যবস্থার ধ্বংস সাধনই নয়, বরং নূতন সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে একটি নূতন ব্যবস্থা সৃষ্টি করাও ছিল এর উদ্দেশ্য, যে সমাজ ব্যবস্থা সময়োপযোগি বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এবং উৎপাদিকা শক্তির বিকাশ ও সর্বস্তরে অগ্রগতি সুনিশ্চিত করতে সমর্থ ।

এই পথ সুগম ছিল না, কারণ, সেই সময়ে লেনিন বলেছিলেন ক্ষমতা আদতে বুর্জোয়াদের কাছে একটি পরীক্ষিত গাড়ী, সুনির্মিত পথ এবং পরীক্ষিত উপায় সমূহ । বিপ্লবের ক্ষেত্রে অবশ্য এরূপ কোন যানবাহন ও রাস্তা ছিল না, এবং প্রকৃতপক্ষে এমন কিছুই ছিল না যা পূর্বে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যা করতে হয়েছিল তাহল- হাজার হাজার বছর ধরে জাতিগুলির মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা, বিরোধ এবং নির্যাতনের মধ্য দিয়ে উদ্ভূত বাধাধরা ছকের সামাজিক সচেতনতা এবং সামাজিক অবস্থানের আমূল পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে উদ্ভূত অভূতপূর্ব সমস্যার সমাধান |

পশ্চাৎপদ সমাজ:

এই সমস্যার আর এক উপাদান ছিল যে, বিপ্লব এমন একটি অঞ্চলে সফল হয়েছিল, যে অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা অগ্রসর ছিল না, অপরিমেয় প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হয়েছিল, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পশ্চাৎপদতাকে অতিক্রম করতে এবং নূতন ধরণের সমাজব্যবস্থা গঠনের বৈষয়িক ও প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো তৈরী করতে।

এতদসত্ত্বেও সমাজতান্ত্রিক অক্টোবর বিপ্লব পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সর্বপ্রথম ফাটলের সৃষ্টি করে পৃথিবীর অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক নবযুগের স্থাপনা করেছিল। পথ নির্দেশক হিসাবে অক্টোবর বিপ্লবের প্রধান সাফল্য ছিল শোষণ মুক্ত এক সমাজ গঠন — যা বিশ্ব বিকাশের সমগ্র ধারার উপর প্রভাব ফেলেছিল। বিভিন্ন গোষ্ঠিভুক্ত দেশগুলি, সমাজতন্ত্রের পথে রাশিয়াকে অনুসরণ করেছিল। আজ এটা বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। এর দ্বারাই মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বৈজ্ঞানিক শক্তি প্রমাণিত হয়েছিল। পুঁজিবাদ থেকে সমাজবাদে রূপান্তর ও তার অন্তিম লক্ষ্য সাম্যবাদ যে স্বাভাবিক উত্তরণ তা জনসমক্ষে বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল ।

অক্টোবর বিপ্লবের আগে ও পরে বিভিন্ন দেশে বিপ্লব সম্পর্কিত নানা তত্ত্ব উপস্থাপিত হয়েছিল। এর কয়েকটি সমাজবাদের নামে থাকলেও, মার্কসবাদ- লেনিনবাদের ধ্যান-ধারনা বহির্ভূত তত্ত্বগুলির সবকটিই তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল। যারা অক্টোবর বিপ্লবের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিল, শুধুমাত্র তারাই, নিজেদের দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে নূতন উন্নততর সমাজব্যবস্থায় উত্তরণে সক্ষম হয়েছিল ।

এসবগুলি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে, অক্টোবর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা ঘটেছে ।

উপনিবেশবাদবিরোধী সংগ্রামের প্রতি সমর্থন:

শুরু থেকেই অনুসৃত সোভিয়েতের নতুন বৈদেশিক নীতি ঘোষণাকালে অক্টোবর বিপ্লবের নেতা ভি. আই. লেনিন উল্লেখ করেছিলেন যে, এই নীতিগুলির মধ্যে একটি প্রধান নীতি হলো সাম্রাজ্যবাদী শাসন ও দমনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত বিভিন্ন জাতিয় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সোভিয়েত দেশের মৈত্রী। এশিয়ার ঘটনাবলী এবং সংগ্রাম সম্পর্কে লেনিনের বরাবরই তীক্ষ্ণ নজর ছিল— যে সংগ্রাম সংঘটিত হচ্ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই।

১৯০৮ সালে তিনি লিখেছিলেন, “এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে বৃটেন কর্তৃক দীর্ঘকাল ব্যাপী ভারতবর্ষ লুণ্ঠন এবং সমসাময়িক কালে উন্নত ইউরোপীয় কর্তৃক ভারত এবং ভারতীয় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ সর্বহারাকে সংগ্রামে সুদৃঢ় করেছিল, যা একদিন বিজয়ী হবে— (ভি. আই. লেনিন, কালেকটেড ওয়ার্কস, সংখ্যা-১৫, পাতা ১৮৪-১৮৫)

সেই সময় এশিয়া ছিল বিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য যার মধ্যে অগ্রণী ও প্রথম ছিল বৃটিশ সাম্রাজ্য। সর্ববৃহৎ ঔপনিবেশিক দেশ ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং ইন্দোচীন, সর্বাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট সর্ববৃহৎ আধা ঔপনিবেশিক দেশ চীনসহ আরো অনেক উপনিবেশ এই অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। এশিয়ার প্রতিটি দেশে সাম্রাজ্যবাদী প্রভুত্বের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন বেগবান হয়ে অভুত্থানে পরিণত হচ্ছিল ।

একটি স্বাভাবিক মৈত্রী:

কিন্তু মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এই সকল মুক্তি সংগ্রামে অনুঘটকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তাদের নব বিজয়ের পথ দেখিয়েছিল। এশিয়ার অত্যাচারিত জাতিগুলির নিকট এই বিপ্লব নতুন আশা সঞ্চারে সমর্থ হয়েছিল ।

জাতিগুলির এবং জনগনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সমন্বিত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ঘোষনা এশিয়ার জনগণের উপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছিল, যারা কয়েক শতাব্দী জুড়ে উপনিবেশবাদ ও জাতি বৈষম্যবাদের জোয়াল বহন করে নিয়ে চলেছিল। অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তারা বুঝেছে যে আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং স্বাধীনতার অধিকার হলো জনগনের মৌলিক অধিকারগুলির সর্বাগ্রগণ্য, যার থেকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইত্যাদি সকল বুনিয়াদী অধিকারগুলি অর্জিত হয়। ১৯১৭ সালে ডিসেম্বর মাসে লেনিন স্বাক্ষরিত সোভিয়েত সরকারের ঘোষণা দ্বারা প্রাচ্যের জনগনের উপর জার সরকারের লুণ্ঠনকারী নীতিগুলি বর্জন এবং এশিয়ার দেশগুলি সম্পর্কিত সাম্রাজ্যবাদী চুক্তির ফলে অর্জিত রাশিয়ার সুযোগসুবিধাগুলি পরিত্যক্ত বলে ঘোষণার একটি বিরাট বৈপ্লবিক তাৎপর্য ছিল।

বিশ্ব সর্বহারা শ্রেণী এবং বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের মৈত্রীর লেনিনবাদের আদর্শ অনুসরণ করেই সোভিয়েত রাশিয়ার বৈদেশিক নীতির সিদ্ধান্তগুলি ঘোষিত হয়েছে। উভয়েরই শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও দুটি শক্তির বাস্তবিক স্বার্থ সাধনের উপর ভিত্তি করেই এই মৈত্রী গড়ে উঠেছিল। সোভিয়েত রাশিয়া কালবিলম্ব না করে এশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাহায্যের জন্য ভ্রাতৃত্বমূলক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছিল। এমন কি গৃহ যুদ্ধের ভয়ানক বছরগুলিতে এবং সাম্রাজ্যবাদী অনুপ্রবেশের বছরগুলিতে সাম্রাজ্যবাদী অনুপ্রবেশ ও দখলের বিরুদ্ধে ইরান এবং তুরস্কের মুক্তি সংগ্রামীদের অর্থনৈতিক এবং সামরিক সাহায্য সোভিয়েত রাশিয়া প্রদান করে। আফগান জনগণ যারা ১৯১৯ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে বৃটিশ অনুপ্রবেশের সম্মুখীন হয়েছিল তাদেরকেও সোভিয়েত রাশিয়া সাহায্য প্রদান করেছিল । ১৯২১ সালে সোভিয়েত রাশিয়া প্রথম মৈত্রী চুক্তিগুলি সম্পাদিত করে ইরান, তুরস্ক এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে। এই চুক্তিগুলির ফলে এই দেশগুলি বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বাধীনতার অগ্রগতি ঘটাতে সমর্থ হয় ।

১৯২০-র দশকে সারা এশিয়া মহাদেশ গণজাগরণ ও গণঅভ্যূত্থানে উদ্বেলিত ছিল। ১৯২১ সালে মঙ্গোলিয়ায় গণবিপ্লব বিজয়ী হয়। বিপ্লবের অগ্নিশিখা স্বাভাবিকভাবেই চীনে বিস্তারিত হয়, সেখানে ১৯২৫-২৭ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটে । চীন থেকে এর বিস্তার ঘটে ইন্দোচীন থেকে ইন্দোনেশিয়ায়, পশ্চিম এশিয়ার তুরস্ক থেকে সিরিয়া এবং ইরান থেকে ইরাক। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, যা ইতিমধ্যে গতিলাভ করেছিল — ১৯৩০-এর দশকে আরও ঘনীভূত হলো।

সাম্রাজ্যবাদের ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার সংকট শুরু হলো :

ফ্যাসীবাদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে মানবজাতি এক নতুন বিপদের সম্মুখীন হলো। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে একটি যৌথ মঞ্চের জন্য সোভিয়েতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো। তারা সমাজবাদী ব্যবস্থার পতনে আরও বেশী আগ্রহী ছিল এবং এই উদ্দেশ্যে নাজী জার্মানীকে প্ররোচিত করছিল কিন্তু জার্মানী প্রথমে পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি আক্রমণ করলো এবং এক বিশাল অঞ্চল দখল করার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলো এবং সম্পূর্ণ পরাজিত হলো । নাজী জার্মানী ও সামরিকতন্ত্রবাদী জাপান বিজয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কার্যকরী অবদান সাম্রাজ্যবাদের ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার ভাঙন ত্বরান্বিত করেছিল। এই বিজয়ের ফলশ্রুতিতে পূর্ব ইউরোপের অনেকগুলি দেশ ও এর সঙ্গে ভিয়েতনাম এবং কোরিয়া নিজেদের স্বাধীন করা ও সমাজতন্ত্রের পথকে বেছে নেবার মধ্য দিয়ে বিশ্ব সমাজবাদী সমাজব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটলো। এতে সোভিয়েত ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক অবস্থান শুধুমাত্র দৃঢ় ভিত্তির উপরই দাঁড়াল না, উপরন্তু সমাজবাদ শান্তি এবং গণতন্ত্রের পক্ষে দুনিয়ার শক্তি সমূহের ভারসাম্যের বদল ঘটলো । উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জনগণ নতুন পথের সন্ধান পেলো ।

এশিয়ায় সংগ্রামের বিস্ফোরণ:

উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-এ এশিয়ার দেশগুলির ছিল অগ্রণী ভূমিকা । সোভিয়েত সৈন্যবাহিনীর হাতে জাপানের কোয়াডটুং বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় এই প্রক্রিয়াকে আরও সাহায্য করেছিল। এই ভাবেই ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে স্বাধীনতাকামী মানুষ সাম্রাজ্যবাদ ও জাতিবৈষম্যবাদের সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবেও বিবেচনা করেছিল।

১৯৪৫ সালে নাজী জার্মানী এবং এশিয়া ও ইউরোপে এর মিত্রগোষ্ঠী পরাজিত হবার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ হলো, তখন এশিয়ার দেশগুলিতে আন্দোলনের এক নতুন অঙ্গ দেখা যেতে লাগলো। ভিয়েতনামে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের অভ্যুদয় হলো আর লাওস এবং কাম্বোডিয়ার জনগণ সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে দিল। ১৯৪৫ এর আগস্টে সোভিয়েত সৈন্যবাহিনী জাপানী অত্যাচারের কবল থেকে কোরিয়াকে মুক্ত করে । ১৯৪৫-এর আগস্ট ইন্দোনেশিয়ায় বিপ্লবের বিস্ফোরণও প্রত্যক্ষ করে। ১৯৪৬-এ ফিলিপাইনস স্বাধীন হয়। ভারতবর্ষে বিপ্লবী আন্দোলন গতিশীল হচ্ছিল যার ফলে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের পশ্চাদপসরণের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা ঘোষিত হলো ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট। শ্রীলংকা এবং ব্রহ্মদেশ স্বাধীন হলো ১৯৪৮-এর ডিসেম্বরে।

চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বে সফল বিপ্লব ঐতিহাসিক গুরুত্বের দিক থেকে কেবলমাত্র অক্টোবর বিপ্লব ও ফ্যাসীবাদের বিজয়ের পরবর্তী ধাপে ছিল। সোভিয়েত লালফৌজ কর্তৃক মাঞ্চুরিয়ার মুক্তি এই বিজয়কে আরও সহজ করেছিল এবং ১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন আত্মপ্রকাশ করলো ।

জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সফল হওয়ার ফলশ্রুতি হিসাবে ১৪টি এশীয় দেশের স্বাধীন দেশ রূপে উত্তরণ ঘটলো। ঔপনিবেশিক দাসত্বমুক্ত হলো মানুষ। নিঃসন্দেহে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রামের ফলে এটা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা এবং পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এই সংগ্রামে বিপুল পরিমাণে সাহায্য করেছিল।

১৯৫৭ ঘোষণা:

জাতিসংঘের ভিতরে এবং বাইরে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং অন্যান্য – সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি সোচ্চার হতে শুরু করলো। এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের শক্তিগুলির বিজয় অবশ্যম্ভাবী এবং সমাজতন্ত্রের স্বপক্ষে পৃথিবীর শক্তিসমূহের নূতন ভারসাম্যের ফলে ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব বজায় রাখা অসম্ভব। সাম্রাজ্যবাদ তখন নয়া উপনিবেশবাদের নীতি অনুসরণ করতে আরম্ভ করে। ১৮৫৭ সালের ১৪–১৬ই নভেম্বর আয়োজিত কমিউনিষ্ট অ্যান্ড ওয়ার্কাস পার্টিগুলির সভায় অবস্থা পর্যালোচনা করতে গিয়ে এইভাবে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করা হয়।– ‘আমাদের নবযুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পুঁজিবাদ থেকে সমাজবাদে উত্তরণ বা রাশিয়ায় মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল। আজ সারা বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ —১৫ কোটির উপর মানুষ সমাজতন্ত্রের পথ গ্রহন করেছে এবং নতুন জীবন গড়া শুরু করেছে। সমাজতান্ত্রিক শক্তিগুলির অগ্রগতির ফলে যুদ্ধ পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় সংগ্রাম আরও দৃঢ়তর হয়েছে। গত বারো বছরে চীন প্রজাতন্ত্র ছাড়াও ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং কোরিয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ৭০ কোটির বেশী অধিবাসী ঔপনিবেশিক জোয়াল মুক্ত হয়ে জাতীয় স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করেছে ।

ঔপনিবেশিক এবং পরাধীন দেশগুলির অধিবাসীরা যারা এখনও দাসত্বের ভারে অবসন্ন, তাঁরাও জাতিয় মুক্তি সংগ্রাম তীব্রতর করছেন। সমাজবাদের অগ্রগতি এবং জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম পুঁজিবাদের ভাঙন আরও ত্বরান্বিত করেছে। মানবজাতির বিপুল অংশের উপর সাম্রাজ্যবাদ তার এককালের সর্বময় কর্তৃত্ব হারিয়েছে।

‘সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিতে গভীর শ্রেণীদ্বন্দ্বে সমাজ বিপর্যস্ত এবং এই দেশগুলি একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ, এ সময়ে শ্রমিক শ্রেণী সাম্রাজ্যবাদী নীতিগুলি এবং একচেটিয়া কোম্পানীগুলির বিরুদ্ধে বর্ধিত প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, আরও উন্নত ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক অধিকার, শান্তি এবং সমাজতন্ত্রের পক্ষে লড়াই সংঘটিত করছে’।

এই বিশ্লেষণে দাবী করা হয়েছে যে, –

‘এই সভা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের মৌলিক সমস্যাগুলি সম্পর্কে কমিউনিষ্ট এবং ওয়ার্কার্স পার্টিগুলির দৃষ্টিভঙ্গী অভিন্ন তা প্রতিপন্ন করেছে। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের এবং সমাজতন্ত্র গঠনের প্রক্রিয়াগুলি সমাজতন্ত্র গঠনে উদ্ভূত সকল দেশের পক্ষে সমানভাবে প্রযোজ্য কতকগুলি মূল নিয়মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত – মার্কসবাদী-লেনিনবাদী এই নিয়মগুলি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের অভিজ্ঞতার দ্বারা সম্পূর্ণতঃ প্রমানিত হয়েছে। সদাসর্বদা বিবেচ্য ঐতিহাসিক জাতীয় বৈশিষ্ট্য সহ ঐতিহ্যের বিপুল বৈচিত্র্যের পাশাপাশি এই নিয়মগুলি সর্বত্রই প্রকাশমান। এই নিয়ম হলো কোনো না কোনো প্রকারের সর্বহারা বিপ্লব ও কোনো না কোনো প্রকারের সর্বহারা একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অস্ত্র হিসাবে কার্যকরী মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পার্টি, যার কেন্দ্রবিন্দু সেই শ্রমিকশ্রেণী কর্তৃক শ্রমজীবি মানুষকে পরিচালন; জনগণের ব্যাপকতর অংশ ও অন্যান্য শ্রমজীবি মানুষের সাথে শ্রমিক শ্রেণীর মৈত্রী ; পুঁজিবাদী মালিকানার বিলোপ সাধন ও উৎপাদনের মূল উপায়গুলির উপর সামাজি মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা; কৃষি ব্যবস্থার ক্রমান্বয়ে সমাজতান্ত্রিক পুনর্গঠন; সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে জাতীয় অর্থনীতির পরিকল্পিত উন্নয়ন সাধন; মেহনতি মানুষের জীবন ধারনের মানোন্নয়ন; তত্ত্বগত চিন্তা এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সমাধা করা; শ্রমিক শ্রেণী, মেহনতী জনগণ এবং সমাজতন্ত্রের উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রাণ অসংখ্য বুদ্ধিজীবি তৈরী করা; জাতীয় নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে জনগণের মধ্যে সমতা ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা ; আভ্যন্তরীন ও বহিঃশক্রর বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রের দ্বারা অর্জিত সুফলগুলি রক্ষা করা ; যে কোন দেশের শ্রমিকশ্রেণীর সহিত অপরাপর দেশগুলির শ্রমিকশ্রেণীর সংহতি অর্থাৎ সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদ প্রতিষ্ঠা’।

ঐ ঘোষনায় সাম্যবাদী আন্দোলনে সুবিধাবাদী ঝোঁকের বিষয়ে হুঁশিয়ারী দিয়ে বলা হয়েছে-

‘বর্তমান অবস্থায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হোলো শ্রমিকশ্রেণীর এবং সাম্যবাদী আন্দোলনে সুবিধাবাদী ঝোঁকের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রাম সংঘটিত করা । এই সভা কমিউনিষ্ট এবং শ্রমিকদের পার্টিতে শোধনবাদ এবং গোঁড়ামীর বিরুদ্ধে দৃঢ় সংগ্রামের প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব আরোপ করছে। কমিউনিষ্ট আন্দোলনে শোধনবাদ,এবং সংকীর্ণতাবাদ অতীতের মতো বর্তমানেও একটি আন্তর্জাতিক ঘটনা। গোঁড়ামী ও সংকীর্ণতা পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী তত্ত্বের বিকাশকে এবং তার সৃজনশীল প্রয়োগকে ব্যাহত করে, বাস্তব পরিস্থিতির বিশ্লেষনের জায়গায় উদ্ধৃতি ও অন্ধবিশ্বাসকে স্থান করে দেয়, এবং পার্টিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দিকে এগিয়ে দেয়। যে পার্টি সংকীর্ণতার খোলসে আবদ্ধ এবং জনগণের সাথে সংযোগ হারিয়েছে, সে কিছুতেই শ্রমিকশ্রেণীর পক্ষে বিষয় অর্জন করতে পারে না’।

‘সংকীর্ণতাবাদকে নিন্দা করার সাথে সাথে কমিউনিষ্ট পার্টিগুলি মনে করে যে বিপ্লবী উদ্দীপনা অবশকারী এবং ধনতন্ত্রের স্থায়ীত্ব ও পুনঃ প্রবর্তনার দাবীদার বুর্জোয়া ধ্যানধারণার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে শোধনবাদ বা দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদই আজকের প্রধান বিপদ। অনন্ত গোঁড়ামী কিংবা সংকীর্ণতা যেকোনো পার্টির বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রধান বিপদ হতে পারে। কোনো একটি সময়ে কোন বিপদটি তাকে বেশী বিপন্ন করছে তা কমিউনিষ্ট পার্টিগুলিকেই ঠিক করতে হবে।”

১৯৬০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর-এ ৮১ পার্টির দলিলে এই নীতিগুলি আবার অনুমোদিত হয়েছে।

আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকা:

এই সময়কালে উপনিবেশবাদ বিরোধী সংগ্রামের অগ্নিশিখা এশিয়ার দেশ থেকে আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ছিল। গণরোষের ঢেউ অবশিষ্ট ঔপনিবেশিক দেশগুলিতে বিপুলভাবে আছড়ে পড়ছিল। ১৯৬০ সালে আফ্রিকার ১৭টি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল, অর্থ নৈতিক রাজনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী একটি বিশ্বসমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল বলেই এবং এই ব্যবস্থাই অনেক দেশেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে সংগ্রামী জনগণের কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য করেছিল।

এর ফলে ১৯৬১ সালে উপনিবেশবাদ বিরোধী জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্ভব হলো । ১৯৫৬ সালে গঠিত হলো অর্গানাইজেশন অফ আফ্রিকান ইউনিটি, যে সংগঠন জোট নিরপেক্ষ নীতির স্বপক্ষে মহাদেশের সকল স্বাধীন দেশগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করলো। স্বাধীন দেশের উদ্ভব সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে প্রভাবিত করলো। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার পঞ্চদশ অধিবেশনে উপনিবেশগুলি এবং এগুলির জনগণের স্বাধীনতা প্রদান করে একটি ঘোষণা গৃহীত হলো। প্রস্তাবটি ১ ভোটে অনুমোদিত হলো। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি এর বিপক্ষে ভোট দিতে  সাহস করেনি। ভোট দানে বিরত থেকে তারা তাদের অসম্মতি জানালো। এদের মধ্যে ছিল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং পর্তুগাল ।

উপনিবেশবাদী ব্যবস্থার অবসান:

সত্তর দশকের শেষভাগের মধ্যে সারা পৃথিবী থেকে সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশ- বাদ উৎপাটিত হলো । প্রস্তাবটি গৃহীত হবার পর থেকে এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং ওশিয়ানিয়ার প্রায় ৫০টি দেশের লক্ষ লক্ষ অধিবাসী ঔপনিবেশিক দাসত্ব হতে মুক্তিলাভ করলো। এই অভীষ্ট সাধন খুব সহজ হয়নি। প্রস্তাবটি কার্যকরী করা সত্ত্বেও পশ্চিমী দেশগুলি এর গতিরোধ করছিল। অনেক ক্ষেত্রে তারা ঔপনিবেশিক যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল, যার ফলে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামীদের উপর নামিয়ে দিয়েছিল নির্যাতন, এমনকি সামরিক শক্তিও প্রয়োগ করেছিল। আলজিরিয়া, কঙ্গো, গিনি বিসাউ, আঙ্গোলা, মোজাম্বিক এবং জিম্বাবোয়ের ক্ষেত্রে এটা করা হয়েছিল। নামিবিয়ার ক্ষেত্রে আজও এটাই ঘটেছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় সেখানকার কুখ্যাত বর্ণবিদ্বেষী সরকার দ্বারা আফ্রিকার জনগণ জাতিগত শোষণে পিষ্ট হচ্ছে।

গিনি বিসাউ, কেপভাব্দে, আঙ্গোলা, মোজাম্বিকে মুক্তি ফৌজের বিজয় সংগ্রামে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি বিপুল পরিমাণে সাহায্য করেছে। এই দেশগুলির মুক্তি সংগ্রামের নেতৃবৃন্দ সোভিয়েত সাহায্যের জন্য বারবার তাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন ।

বিগত পঁচিশ বছরে যে দেশগুলি স্বাধীনতা অর্জন করেছিল সেগুলির প্রায় অর্ধেক সংখ্যকই এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের লাগোয়া দেশ। কুয়েত, পশ্চিম সামোয়া, সিঙ্গাপুর, ইয়েমেন গণসাধারণতন্ত্র, মরিশাস, মালদ্বীপ এবং নারাক -এর দশকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। বাহরিন, টোংগা, ফিজি, ইউনাইটেড আরব এমিরেটস, ওমান, কামোরস, পাপুয়া নিউগিনি, টুভ্যালু, সিসিলিস- সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং কিরিবাতি ৭০এর দশকে মুক্ত হয়েছিল। ৮-র দশকে আরও তিনটি অঞ্চল উপনিবেশের কবলমুক্ত হয়েছিল ভানুয়াটু, বারী, কোকাস দ্বীপপুঞ্জ ।

এইরূপে এই সময়কাল উপনিবেশবাদের সর্ব্বাঙ্গীন পতন এবং স্বাধীন জাতীয় সরকারের জন্ম প্রত্যক্ষ করেছিল। বর্তমানে পৃথিবীতে কেবলমাত্র প্রায় ডজন দুয়েক ঔপনিবেশিক দেশ রয়েছে, যার লোক সংখ্যা প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন। তাদের মধ্যে সর্ববৃহৎ ঔপনিবেশ হলো নামিবিয়া। যার জন সংখ্যা প্রায় ১৫ মিলিয়ন ।

সাম্রাজ্যবাদের নূতন থাবা:

এর অর্থ এই নয় যে সাম্রাজ্যবাদ তার বিশ্বপ্রভুত্বের চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছে। সে এখন নয়া উপনিবেশবাদ, নয়া বিশ্বপ্রভুত্বের নীতি গ্রহণ করেছে। বিশ্বপ্রভুত্বের নীতি শুধুমাত্র সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির বিরুদ্ধেই নয়, নবতম রাষ্ট্রগুলি এবং জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করছে। সাম্রাজ্যবাদীরা স্বাধীন দেশগুলিতেও হস্তক্ষেপ করতেও দ্বিধা করছে না। গ্রেনাডা, লেবানন, নিকারাগুয়া, লিবিয়া এবং সাম্প্রতিককালে ফিজিতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং আফগানিস্তানের পক্ষে অঘোষিত যুদ্ধ আমেরিকার নয়া উপনিবেশবাদী এবং রাষ্ট্র পরিপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী চরিত্র উদ্ঘাটন করছে। আমাদের দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার প্রয়াসে এদেশেও এরা শিখ সন্ত্রাসবাদী ও অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করছে। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সামরিক ঘাঁটি বসিয়েছে এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে আনবিক অগ্নবাহী যুদ্ধ জাহাজ এনেছে। পাকিস্তানের হাতে এরা অস্ত্র তুলে দিয়েছে আমাদের অঞ্চলে হস্তক্ষেপের উদ্দেশে তারা পাকিস্তানকে আপাদমস্তক অস্ত্রে মুড়ে দিয়েছে।

বর্ধমান অশ্বগুলিঃ

কিন্তু যেহেতু বিজয়ী অক্টোবর বিপ্লব এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে তার ভূমিকার দৌলতে সমাজতন্ত্র এবং জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের স্বপক্ষে শক্তির ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটেছে, তাই সাম্রাজ্যবাদের গতি রুদ্ধ হয়েছে। জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম এবং সমাজতন্ত্রের শক্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও দ্রুত প্রকোপিত হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলির ঋণ সংকট এই দ্বন্দ্বকে আরও প্রকোপিত করে তুলেছে।

সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি তাদের শাস্তির নীতির সাহায্যে সাম্রাজ্যবাদ নতুন আক্রমণ রচনা করেছে এবং তারা শুধুমাত্র জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনেরই নয়, সারা বিশ্বের শান্তিকামী শক্তির সমর্থন পাচ্ছে। পৃথিবীর ৪০ বছর ধরে যে শাস্তি প্রত্যক্ষ করেছে তা সম্ভব হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের শান্তির নীতি অনুসরণ করার জন্য, এর সাথে রয়েছে তার প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি এবং বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব।

ভবিষ্যৎবানীর বাস্তব রূপায়ণ:

এমন একটা সময়ে আমরা অক্টোবর বিপ্লবের ৭০তম বার্ষিকী পালন করছি যখন অক্টোবর বিপ্লবের সাময়ে লেনিনের ভবিষ্যদবাণী বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ইতিহাস দেখিয়ে দিয়েছে যে অক্টোবর বিপ্লবের সাফল্যের সাথে যে নবযুগের সূচনা হয়েছে সে যুগ হলো উপনিবেশবাদের পতনের যুগ, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের বিজয়ের যুগ । সমাজতান্ত্রিক সমাজ উত্তরোত্তর শক্তিশালীরূপে আত্মপ্রকাশ করছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদের সম্পূর্ণ পরাজয় ঘটেছে আবার কিউবার বিপ্লব সমগ্র লাতিন আমেরিকার দেশে দেশে পরিস্থিতিকে চঞ্চল করে তুলেছে এবং তারা সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে শুরু করেছে। আফ্রিকা মহাদেশ দৃঢ় পদক্ষেপে স্বাধীনতা ঘোষণা করছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজবাদ সদ্য স্বাধীন দেশগুলিকে সাম্রাজ্যবাদের চাপ রুখতে সাহায্য করছে। এটাই হল অক্টোবর বিপ্লবের অর্থ এবং শিক্ষা।

১৯৮৭ সালের ৭ই নভেম্বর, নভেম্বর বিপ্লবের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে

 ‘বিপ্লব – এক নবযুগের সূচনা’

শিরোনামে মূল প্রবন্ধটি প্রকাশিত

মুজফ্‌ফর আহমদ স্মৃতি পাঠাগার সুত্রে সংগৃহীত

ব্যবহৃত শিরোনাম রাজ্য ওয়েবডেস্কের

Spread the word

Leave a Reply