Remove Discrimination by Changing The Society

মধুজা সেন রায়

গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল একটি সাংবাদিক সম্মেলন এবং তার জেরে একটি অনৈতিক ও বেআইনি গ্রেফতার কে ঘিরে।মধ্যরাতে পুলিশ পাঠিয়ে এক শাসক বিরোধী আইনজীবীকে গ্রেফতার করানো হয়েছে। কি ভাবছেন? নারী দিবসে হঠাৎ এই বিষয়টির অবতারণা কেন? না, না ঘাবড়াবেন না। মেয়েদের কথাই বলবো আজকের লেখায়। আসলে গ্রেফতারের স্বপক্ষে বলতে গিয়ে শাসকদলের নেতা-নেত্রীরা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানহানি এবং স্ত্রীলতা হানির ঘটনাকে। তাদের যুক্তি কতটা সবল বা দুর্বল, সে যুক্তিতে কতটা গ্রহণযোগ্যতা আছে বা নেই সেটার বিচারও এই লেখায় করতে যাব না বরং এই লেখায় আলোচনা করব কেন হঠাৎ করে মহিলা বর্মে সজ্জিত হতে হলো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। কোন মানসিকতা থেকে। দিনভর এমন তোলপাড় চলল যে হাথরাস ধর্ষণ কান্ডে প্রমাণের অভাবে নিম্ন আদালত থেকে তিনজন অভিযুক্তের বেকসুর খালাসের মতন একটা খবর কার্যত চাপা পড়ে গেল। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন । হাথরাস কাণ্ডে মূল অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা হলেও তা শুধুই খুনের অভিযোগে। সেখানে ধর্ষণের কথা লেখা নেই কোথাও। একটা গোটা সন্ধ্যে ধরে কয়েক গন্ডা চ্যানেলের গন্ডা গন্ডা আলোচনায় একথা উঠেই এলো না যে হাথ রাস ধর্ষণ কাণ্ডে দলিত কিশোরীটির যথাযথ মেডিকেল টেস্টই হয়নি।। শরীর থেকে যথাযথ নমুনা সংগ্রহ করেনি উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। সিবিআই এর তদন্তের সে কথা খুব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
ভারতের নারী নির্যাতনের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে হাথরাস এক বহুল চর্চিত ঘটনা। আমরা হাথ রাস, কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট, মধ্যমগ্রামের কথা চর্চা করি প্রতিবাদের সোচ্চার হই ।কিন্তু ক’জন জানি মহারাষ্ট্রের আখের ক্ষেতের সেই মহিলাদের কথা যার কর্ম ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বন্ধাকরণ করিয়েছে মালিক! অবাক হলেন ভাবছেন কোন সত্য যুগের কথা আলোচনা করছি না এটাই বর্তমান ভারতের এক খন্ড চিত্র। আসলে, নৃশংস অত্যাচারে মারা না যাওয়া অবধি ‘খবর’ তৈরি হয়না যে! যে দেশের এক বিশাল অংশের মানুষের কাছে মেয়ে সন্তানের থেকে ছেলে সন্তানের গুরুত্ব বেশি সে দেশে কাজের বাজারে মেয়েদের অবস্থান ও অবস্থা যে প্রতিদিনের চর্চার বেশ কিছুটা বাইরে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু তা বলে আমরা তো আর চর্চার বাইরে থাকতে পারি না।

কাজের বাজারে মেয়েদের অবস্থান:

সারা ভারত জুড়ে কাজের সুযোগ এখন এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে, পেট চালাতে সংসার টানতে নারী পুরুষ নির্বিশেষে কোনরকমে একটা কাজের সন্ধানে দৌড়ে চলেছেন। যেখানে সম্মানজনক কাজের শর্ত, সামাজিক সুরক্ষা কোন কিছুই আর বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে না। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমাদের দেশে কাজের বাজার এমনিতেই খারাপের দিকে এগোচ্ছিল। বেকারত্ব বাড়ছিল। এই অবস্থায় আগুনে ঘি ঢালল কোভিড অতিমারি। কয়েক কোটি লোকের চাকরি গেল।আর এই চাকরি হারানোর বাজারেও মহিলারা এগিয়েই থাকলেন। ২০২২ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি দা হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে জানা যায় UNDESA র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভারতে শুধুমাত্র প্রথম লকডাউনে কাজ হারালেন ৪৭% মহিলা শ্রমিক। পুরুষেরা যথারীতি বহুযোজন পেছনে। শতাংশের বিচারে মাত্র ৭% পুরুষ শ্রমিক কাজ হারালেন। গত দশক জুড়ে কর্মরত মহিলার সংখ্যা প্রতিদিন কমেছে। ২০১০ সালে ২৬% মহিলা কর্মরত ছিলেন,২০২০ সালে এই হার ১৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাদের আশঙ্কা,চলতি আর্থিক বর্ষে এই হার আরো কমবে। কারণ কাজের খোঁজে মেয়েদের দৌড় স্লথ হয়েছে চোখে পড়ার মতো।কাজের খোঁজ করা মেয়েদের সংখ্যা 2019 সালের তুলনায় ২০২১ সালে প্রায় 30 লক্ষ কমেছে।শুনতে অবাক হলেও এটাই সত্যি যে গ্রামীণ ভারতের তুলনায় শহুরে ভারত মহিলাদের কর্মসংস্থানের প্রশ্নে পিছিয়ে রয়েছে।

কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অবস্থা:

এ তো গেল কাজ পাওয়া না পাওয়ার খতিয়ান। কাজ পাওয়া বা না পাওয়ার সাথে অবশ্য অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত আছে দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রশ্নে সরকারের পদক্ষেপ এবং সামগ্রিক সার্বজনীন শিক্ষার প্রশ্নটি। কিন্তু যে মহিলারা কাজ করেন,তাদের অবস্থাটা ঠিক কি? আমাদের দেশের প্রায় ৪৮ শতাংশ মহিলা রোজগেরে শ্রমিক হলেও,দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে তাদের অবদান মাত্র ১৭ শতাংশ। এই একটা তথ্যই দেখিয়ে দেয় মজুরির বাজারে মেয়েদের অবস্থান ঠিক কোথায়।আসলে এই দেশের শ্রমজীবী মহিলাদের অধিকাংশই ইনফরমাল সেক্টরে কাজ করে থাকেন। সারা বিশ্বের নিরিখে মহিলারা কোটি শতাংশ কম মজুরি পান পুরুষদের তুলনায়, ওই মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত এন্টারপ্রাইজ গুলির ৯০ শতাংশই ছয়জনের কম শ্রমিক নিয়ে পরিচালিত এবং ৮১%ক্ষেত্রে বাড়ি থেকেই এই সংস্থাগুলি পরিচালিত হয়। এই বিশ্বের ৩১ শতাংশ মহিলা গৃহস্থালির মজুরীবিহীন কাজেই তাদের শ্রমশক্তি ব্যয় করে থাকেন।। সারা বিশ্বের মতন আমাদের দেশেও মহিলারা সাধারণভাবে কম মজুরি এবং কম উৎপাদনশীল কাজেই নিযুক্ত ।মহিলা ও পুরুষ শ্রমিকের এই মজুরি পার্থক্যের একটা বড় কারণ হলো মজুরি বিহীন গৃহস্থালির কাজে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় প্রায় দশ গুণ বেশি সময় ব্যয় করেন।।কাজের বাজারে অংশগ্রহণের সমগ্র চিত্রটিকে একটি পিরামিডের আকারে প্রকাশ করলে দেখা যাবে আমাদের দেশে তো বটেই সারা বিশ্বেই ক্যাজুয়াল চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকরা পিরামিডের নিচের দিকেই থাকেন। আর এই স্তরেই মহিলাদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি।

আমাদের রাজ্যে জনসংখ্যার বিচারে মহিলা শ্রমিকের অনুপাত মাত্র ২৩.১% সারা দেশের গড়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে 5% পিছিয়ে রয়েছে আমরা। আর যে মহিলারা কাজ করেন তারা অধিকাংশই কম মজুরিতে এমনকি মজুরি বিহীন ক্যাজুয়াল ওয়ার্ক এর সাথে অথবা অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজের সাথে যুক্ত। এই রাজ্যে চা শিল্প, বিড়ি শিল্প এবং জরি, নির্মান,মৎস্যজীবী এই ক্ষেত্রগুলিতে বিরাট সংখ্যক মহিলারা কাজ করেন।। চা এবং বিড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে অধিকাংশই হলেন মহিলা শ্রমিক। এছাড়াও প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মহিলা আশা, আইসিডিএস এবং মিড ডে মিলের মতন প্রকল্পগুলির সাথে যুক্ত। এক বড় অংশের মহিলা গৃহ সহায়িকা এবং আয়ার কাজের সাথে যুক্ত।

প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মজুরির বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। বিড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে মহিলাদের মজুরী দেওয়া হয় বান্ডিল হিসেবে আর পুরুষদের দিনপ্রতি। গৃহস্থালির কাজ সামলে খুব স্বাভাবিকভাবে মহিলাদের কাজের পরিমাণ কম হয়।সংগঠিত শিল্পে কর্মরত মহিলাদের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাওয়ার প্রভাব সরাসরি এসে পড়েছে গৃহ সহায়িকা তাদের উপর গৃহ সহায়িকারা বহু ক্ষেত্রেই নিজেদের কাজ হারিয়ে আয়ার কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন কোভিডের সময় একটা বড় অংশ এভাবে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার হয়ে উঠেছিলেন।আন্তর্জাতিক শ্রম কনভেনশনের ১৮৯ তম সুপারিশ অনুযায়ী এদের ন্যূনতম মজুরি ঠিক করতে হবে সরকারকে।আদানি আম্বানির স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যস্ত সরকারের সময় হয়নি এই নিয়ে আলোচনা করার। আন্তর্জাতিক শ্রম ও কনভেনশনের ৪৫ এবং ৪৬ তম সুপারিশ মেনে প্রকল্প কর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা দেওয়ার দাবি আমাদের বহুদিনের। কিন্তু ভারতবর্ষের সরকার এখনো পর্যন্ত তা করে ওঠেনি উপরন্ত প্রতিদিন বরাদ্দ কমছে এই প্রকল্পগুলিতে মোদি সরকারের আমলে। এই প্রকল্প গুলির নানা গাল ভরা নাম দিয়ে আসলে প্রকল্পগুলিকে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দিতে চাইছে দেশের সরকার।কম ভাষায় যথেচ্ছ পরিমাণ খাটিয়ে নেওয়া হয় প্রকল্প কর্মীদের আমাদের রাজ্যের সরকার কাজের শর্তের কোনরকম তোয়াক্কা না করেই এদের ওপর নির্বাচনী ডিউটি দুয়ারের সরকার আবাস যোজনার মতন কাজগুলি একের পর এক চাপিয়ে চলেছে।নিজেদের দুর্নীতির দায় শুধু এই প্রকল্প কর্মীদের ওপরে চাপিয়ে দিতে চাইছে না,গ্রামের গরীব মানুষের মধ্যে বিভাজনও তৈরি করছে।
কেন্দ্রের সরকার ৪৪ টি শ্রম আইনের মধ্যে ২৯ টিকে বেছে নিয়ে চারটি শ্রম কোড তৈরি করেছে। এই কোডে ন্যূনতম মজুরি গ্যারান্টি করার প্রশ্নে যেমন শিথিলতা আছে তেমনি সমকাজে সমবেতনের কথাও সুনিশ্চিত করা হয়নি। খুব স্বাভাবিকভাবেই মহিলা শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই টা আইনগতভাবে শক্তিহীন হবে।মহিলা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আরও একটি বড় বিষয় হলো মাতৃত্বকালীন ছুটি। বামপন্থীদের দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে শুধুমাত্র সংগঠিত ক্ষেত্রে ১৮০ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটির অধিকার সুরক্ষিত করা গিয়েছিল। নতুন শ্রম কোডেও অসংগঠিত ক্ষেত্রের মহিলা শ্রমিকদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির কোনো কথা বলা হয়নি। অথচ এই অসংগঠিত ক্ষেত্রে মহিলা শ্রমিকের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। মাতৃত্বকালীন ছুটির অধিকার সুরক্ষিত না হওয়ায় বহু মহিলাই কর্মক্ষেত্র থেকে ছিটকে যেতে বাধ্য হবেন।

মহামারী পরবর্তী সময়ে দাঁড়িয়ে মহিলাদের অবৈতনিক কাজের পরিমাণ শুধু বৃদ্ধি পায়নি এর সাথে কাজের শর্ত হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বেশ কিছু অমানবিক এবং মহিলাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক শর্তও। মহারাষ্ট্রের আখের ক্ষেতে,তামিলনাড়ুর পোশাক শিল্পে মহিলারা নৃশংসতার শিকার হন। তাদের থেকে বেশি কাজ আদায় করে নিতে কোথাও তাদের জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হয় কোথাও কোথাও বা তাদের বন্ধাকরণ করানো হয় আবার মহারাষ্ট্রের খেতে স্বামী স্ত্রী মিলে একটি ইউনিট ধরা হয় নতুন শ্রমকোডে এ ধরনের ঘটনা আটকাতে কোন ব্যবস্থা তো নেওয়াই হয়নি উপরন্ত, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি আটকানোর জন্য মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার সামগ্রিক বিষয়টিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কর্ম ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি আটকানোর জন্য আইনগত যে সুযোগ শ্রম আইনে ছিল এই নতুন শ্রমকোডে সে বিষয়টিকেই সামগ্রিকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। রাতের শিফটে কাজের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য যে রক্ষাকবচ গুলি ছিল নয়া শ্রমকোডে তাও অনুল্লিখিতই থেকে গেছে।কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি আটকাতে বর্তমান আইনেও যা ব্যবস্থা রয়েছে তার সব জায়গায় প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় আই সি সি নেই বা থাকলেও কাজ হারানোর ভয় বা লোক লজ্জার ভয়ে মুখ বুজে মেনে নেন মেয়েরা ।

যে দেশে ধর্ষিতা মেয়ের পোশাক নিয়ে মন্তব্য করেন সাংসদ,যে দেশে ধর্ষকদের অপরাধ ব্রাহ্মণ্যবাদের নীতিতে মাপেন বিধায়ক,সেই দেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানীর বিষয়টি নিয়ে মেয়েরা সব সময় মুখ খুলতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক।আর তাই আমাদের মতন দেশে,’পিরিয়ড লিভ’ স্বপ্নের মতন মনে হয়। এদেশের অধিকাংশ জায়গাতেই কর্ম ক্ষেত্রে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন নেই। অথচ মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ অতি প্রয়োজনীয় এক বিষয়।

কিন্তু গার্গী, মৈত্রেয়ী, খনা,অপলা, লক্ষ্মী বাই দের দেশে কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের এই দুরবস্থা কেন?

কারণ লুকিয়ে রয়েছে শাসকের শ্রেণী চরিত্রে। এদেশের আধা সামন্তবাদী, আধা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের মূল অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া সমূহ, নারী শিক্ষার প্রসার বরাবরই ভাবনার পেছনের সারীতেই রয়ে গেছে। আর দেশের বর্তমান শাসক বিজেপি তো ভারতীয় সংস্কৃতির নামে জীবনচর্যার প্রতিটি ক্ষেত্রে মনুবাদকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। সেই মনুবাদ, যে মনুবাদ মেয়েদেরকে মানুষ বলেই মনে করে না। নয়া শ্রম কোডের প্রতিটি ছত্রেই সেকথা প্রমাণিত। আমাদের সমাজের শ্রমজীবী মহিলারা দুভাবে শোষিত হন।এক, শ্রমিক হিসেবে; দুই,মহিলা হিসেবে। মার্কসবাদ এর এই মৌলিক বোঝাপড়া ভারতের ক্ষেত্রেও একদম নির্ভুলভাবে প্রযোজ্য। এর সাথে আমাদের দেশে যুক্ত হয়েছে জাতপাতের সমস্যা। এই সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থার রাশ যেদিন থেকে মহিলাদের থেকে পুরুষের হাতে গেছে,যেদিন থেকে এই সমাজে মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে,সেদিন থেকেই মেয়েদের পিছিয়ে পড়ার শুরু। লেনিন একে চিহ্নিত করেছিলেন মেয়েদের ঐতিহাসিক পরাজয় হিসেবে। তাই শ্রেণি বৈষম্যের অবসান না ঘটলে,মেয়েদের প্রতি,মহিলা শ্রমিকদের প্রতি এই বৈষম্যের সম্পূর্ণ অবসান কখনই ঘটা সম্ভব নয়। মহিলাদের সম্মানকে শিখন্ডী হিসাবে খাড়া করে যারা রাজনৈতিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন লড়াই জিততে চায়, তারা প্রতি মুহূর্তে আসলে মেয়েদেরকেই অসম্মান করে। মেয়েদের সম্মান রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শিক্ষার অধিকার আর কাজের অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে সমতা প্রতিষ্ঠা করা।এই দুই অধিকারকে মেয়েদের কাছ থেকে কার্যত কেড়ে নিয়ে যারা নারী স্বাধীনতার কথা বলেন, তাদের কাছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস গয়না, শাড়ি আর প্রসাধনীর সামগ্রীর বিশেষ ছাড়েই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আমরা জানি, সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। পাল্টাতে হবে সমাজ। পাল্টাতে হবে গোটা ব্যবস্থাটাকে। আর তাই, সমতার জন্য,সমাধিকারের জন্য সমাজের সব অংশের মানুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে হবে। এ লড়াই শুধু মেয়েদের বা মহিলা সংগঠণ গুলোর নয়, আমাদের সবার লড়াই। আর সবার সম্মিলিত লড়াই এই রান্নাঘর আর আঁতুড় ঘরের বশ্যতা থেকে মুক্ত হবে মেয়েরা। মুক্ত হবে সমাজ।

Spread the word

Leave a Reply