PB Statement

Press Communiqué

১১ মে, ২০২২

৯-১০মে দিল্লিতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিট ব্যুরোর সভার শেষে নিম্নলিখিত বিবৃতি জারী করা হয়েছেঃ  

অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে চলা মূল্যবৃদ্ধি জনগণের ওপর নজিরবিহীন বোঝা চাপিয়ে চলেছে। কোটি কোটি জনসাধারণকে ক্রমবর্ধমান ক্ষুধার যন্ত্রণার সাথে দারিদ্র্যের প্রকোপে নিয়ে যাচ্ছে এই পরিস্থিতি। বেকারত্বের অভূতপূর্ব স্তরের শীর্ষে পৌঁছে যাওয়ার সাথে এহেন মূল্যবৃদ্ধি মানুষের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

গত এক বছরে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ, সবজির দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ, ভোজ্য তেল ২৩ শতাংশ এবং খাদ্যশস্যের দামে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোটি কোটি ভারতীয়ের প্রধান খাদ্যই গম, যার দাম প্রায় ৩৫ টাকা প্রতি কেজি। পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য এবং রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দামও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধি বেড়ে চলেছে।

অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারকে পেট্রোলিয়ামজাত সমস্ত পণ্যের উপরে যাবতীয় সেস/সারচার্জ প্রত্যাহার করতে হবে। গণবণ্টন ব্যবস্থা (পিডিএস)-র মাধ্যমে গমের সরবরাহ পুনঃস্থাপন করতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় গণবণ্টন ব্যবস্থা (পিডিএস)-কে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ঐক্যবদ্ধ ও সমবেত সংগ্রামের জন্য বামদলগুলি নিজেদের মধ্যে ব্যাপক সমন্বয় গড়ে তুলবে।

জাতীয় সম্পদের লুঠ

ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন (NMP)-র বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের আক্রমনাত্বক ভুমিকায় ভারতের জাতীয় সম্পদ লুট করতে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।

জীবন বীমা (এলআইসি)-র বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে সিপিআই(এম)-র নিজস্ব অবস্থান আরও একবার স্পষ্ট করছে পলিট ব্যুরো। যেভাবে এলআইসি’র আইপিও শুরু করা হয়েছে তার নিন্দা জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো। প্রায় ২৯ কোটি পলিসি হোল্ডারের মালিকানাধীন সংস্থা ভারতের জীবন বীমা নিগম। এত মানুষের স্বার্থ পদদলিত করে পলিসি হোল্ডারদের সম্পত্তির বিনিময়ে কেন্দ্রের সরকার আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্ট করতে এবং বিপুল মুনাফা পাইয়ে দিতে কম দামে বিক্রয়যোগ্য শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করেছে। এলআইসি-র সম্পদের মূল্য  ৩৮ লক্ষ কোটি টাকা, সারা দেশে ১৪ লক্ষ এজেন্ট সহ এই সংস্থাটি এক লক্ষেরও বেশি স্থায়ী কর্মসংস্থান দিয়েছে।

এলআইসি-র অবমূল্যায়নে এহেন স্বেচ্ছাচারী পদ্ধতির কঠোর নিন্দা জানানোর সাথেই ভবিষ্যতে শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া অবিলম্বে বাতিল করার দাবী জানিয়েছে পলিট ব্যুরো।

ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হিংসা

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রাম নবমী উপলক্ষে মিছিলের সময় সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা গভীর উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত। বিভিন্ন ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলি ইঙ্গিত করছে বিভিন্ন এলাকায় আক্রমণাত্মক সশস্ত্র মিছিল হয়েছে। এহেন মিছিলগুলির সাধারণ বৈশিষ্টই হল সংখ্যালঘু নিবিড় এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়ই উস্কানিমূলক, বিদ্বেষমূলক স্লোগান সহ বক্তৃতা দেওয়া হয়, যার ফলে পাথর ছুঁড়ে মারামারি শুরু হয়৷এহেন কর্মকান্ড কার্যত ভারতের সংবিধান ও আইনব্যবস্থাকেই নাকচ করে।

মুসলমান সংখ্যালঘুদের উপরে গণহত্যা চালানোর উস্কানি সহ এইসকল ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর বধিরতা, নীরবতা এমন উদ্বেগের উদ্রেক করতে বাধ্য করছে যে এসব ঘটনায় যুক্তদের পক্ষে ক্ষমতাবানেদের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে।

আরএসএস- সংঘ পরিবার কর্তৃক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রচারের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় উৎসবের সুযোগ নেওয়ার নিন্দা জানাচ্ছে সিপিআই(এম)। শান্তি বজায় রাখতে, সংখ্যালঘুদের অধিকারের সুরক্ষায় এবং ধর্মের নামে মানুষকে বিভক্ত করতে সক্রিয় চক্রীদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করতে সকল শ্রেণীর মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছে সিপিআই(এম)। শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সারা দেশে পার্টির সকল ইউনিটকেই যথাযথ কর্মসূচি গ্রহনের আহ্বান জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো।

বুলডোজার চালানো রাজনীতির নিন্দা

জাহাঙ্গীরপুরী সহ দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় বুলডোজার চালিয়ে ধ্বংস অভিযানের উদ্দেশ্যে আসলে জনসাধারণের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে তীক্ষ্ণতর করা। দরিদ্রতম মানুষ ও শ্রমজীবী পরিবারগুলির সামান্য আশ্রয়টুকুও ধংস্ব করতে চাইছে এই বুলডোজার চালানো রাজনীতি।

অবৈধ নির্মাণ ও দখলিকৃত সম্পত্তির বিষয়ে দেশে নির্দিষ্ট আইন ও পদ্ধতি রয়েছে। বুলডোজার চালিয়ে কার্যত সেইসব আইনকেই লঙ্ঘন করা হয়। বিচারব্যবস্থার হস্তক্ষেপে আপাতত জাহাঙ্গীরপুরীতে বুলডোজার চালানো বন্ধ করা হলেও বিভিন্ন জায়গায় একই ধরনের কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। যে কোনো অবৈধ নির্মাণ অপসারণ অবশ্যই আইন অনুযায়ী হতে হবে এবং কঠোরভাবে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করেই সেই কাজ হবে। দরিদ্র মানুষের জন্য বিকল্প জীবিকা এবং আশ্রয় সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এমন ধ্বংসযজ্ঞ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির প্রসার

প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি সরকারের সমালোচনা করার অভিযোগে গুজরাটের বিধায়ক জিগনেশ মেভানিকে দুবার গ্রেপ্তারীর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো।

রাষ্ট্রদ্রোহীতার আইন খারিজ করতে হবে: বিচার বিভাগের অধীনে পুনর্বিবেচনার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানাতে বাধ্য হয়েছিল যে তারা এই আইনকে পুনর্বিবেচনা ও পুনঃনিরীক্ষণ করবে। আই ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ১২৪-ক ধারাটি স্থগিত রাখতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ কিছুটা স্বস্তিদায়ক, এই সংক্রান্ত যাবতীয় মামলায় কার্যধারা স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলিকে রাষ্ট্রদ্রোহীতা আইনের অধীনে নতুন কোন মামলা নথিভুক্ত না করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সরকারী পর্যালোচনার জন্য অপেক্ষা না করেই জুলাই মাসে এই মামলার শুনানি শুরু হলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-ক ধারাটি বাতিল করা উচিত শীর্ষ আদালতের।

এই প্রসঙ্গেই মনে রাখতে হবে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স, ২০২২’র প্রতিবেদনে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারত ১৫০ নম্বরে নেমে এসেছে। এই পরিসংখ্যানে বিগত বছরে ১৪২ এবং ২০১৬ সালে আমরা ১৩৩-এ ছিলাম।

জম্মু ও কাশ্মীরে ডিলিমিটেশন কমিশনের সুপারিশ খারিজ করতে হবে

জম্মু ও কাশ্মীরে জনসংখ্যার চরিত্র এবং তার গঠনকে পরিবর্তন করার স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ডিলিমিটেশন কমিশন সুপারিশ পেশ করেছে। কমিশনের যাবতীয় সুপারিশ খারিজ করার দাবী করছে পলিট ব্যুরো।

জনসংখ্যাই হল নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণে বাধ্যবাধকতার মূল সূচক। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, কাশ্মীরের জনসংখ্যা ৬৮.৯ লক্ষ এবং জম্মুর জনসংখ্যা ৫৩.৮ লক্ষ। সুতরাং সীমানা নির্ধারণে মোট ৯০ জন সদস্যের বিধানসভায় কাশ্মীরকে ৫১টি এবং জম্মুকে ৩৯টি আসন দেওয়াই ন্যায্য। এর পরিবর্তে, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কাশ্মীরকে ৪৭টি এবং জম্মুকে ৪৩টি আসন দেওয়া হয়েছে।

কোভিডে মৃতদের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অভিমত

ভারতে কোভিডের কারনে মৃতদের সংখ্যা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সম্প্রতি নিজেদের প্রতিবেদনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হু’ অনুমান করেছে যে এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা ৪৭ লক্ষ অর্থাৎ সরকারী বিবৃতিতে ঘোষিত ৪.৮ লক্ষ মৃতের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। অনেক রাজ্যে যতজনের নামে কোভিডে মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে তা সরকারী ঘোষণায় মৃতের চাইতে বহুগুণ বেশি। বিজেপি শাসিত গুজরাটে, যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে তা সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী মৃতের চাইতে ১০ গুণ বেশি। কোভিড মহামারী মোকাবিলায় মোদি সরকারের অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ছাড়াও এই ঘটনায় মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্যে কারচুপি করার মতো জঘন্য অভিযোগ উঠে আসছে। সঠিক গণনা করতে অস্বীকার করে মৃত ব্যাক্তিবর্গকে অপমান করতে পারে না মোদী সরকার। কোভিডের কারনে মৃত প্রত্যেকের পরিবারকেই সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

পলিট ব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব বণ্টন

সদ্য সমাপ্ত ২৩তম পার্টি কংগ্রেসের পরে নবগঠিত পলিট ব্যুরোর এটিই প্রথম বৈঠক। কাজ এবং দায়িত্ব বণ্টন সংক্রান্ত আলোচনায় যা নির্ধারিত হয়েছে সেইসব এই বছর ১৮-১৯ জুন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিবেচনার জন্য পেশ করা হবে।

Spread the word

Leave a Reply