PDS Pandemonium In Bengal – Mockery of Social Distancing

করোনাভাইরাসের জেরে রাজ্যজুড়ে ২১ দিনের লকডাউন আবহে রেশন বিলিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার আবহ সামাল দিতে ফের পুলিশি পদক্ষেপ বাংলায়। লকডাউনে বন্ধ হয়েছে রাজ্যের দোকানপাট, বাজার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বুধবার বিনামূল্যে রেশন দেওয়া শুরু হতেই রেশন দোকানের সামনে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। সামাজিক দূরত্বের নির্দেশ অগ্রাহ্য করেই সারিবদ্ধ হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ। এই চিত্র দেখা যায় রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায়।

প্রসঙ্গত, ২০ মার্চ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ঘোষণা করেছিল যে করোনা ভাইরাসের এই অতিমারীর মধ্যে আগামী সেপ্টেম্বর অবধি বিনামূল্যে ধান এবং গম বিতরণ করবে তাঁর সরকার। যেখানে উপকৃত হবে রাজ্যের সাড়ে সাত লক্ষ মানুষ। কিন্তু বিনামূল্যে রেশন বিলি শুরু হতেই উঠে আসে নানা অভিযোগ। রেশন দোকানে ভিড় বাড়তেই অভিযোগ ওঠে পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন স্কিমের দোকানগুলির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, “যে পরিমাণ রেশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার, তা সরবরাহ করা হচ্ছে না।” এর ফলে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। রাজ্যের অনেক জায়গাতেই পুলিশি হস্তক্ষেপে মিটমাট হয় সমস্যা।

কোচবিহার শহরের রবীন্দ্র নগর এলাকা এবং মালদা জেলার মানিকচাক এলাকার লোকেরা দাবি করেছেন যে পুলিশ পদক্ষেপ নেওয়ার পরেই রেশন দোকানগুলি যথাযথভাবে রেশন দেওয়া শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বীরভূম জেলার অনেক জায়গায় লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়েছিল। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। খেজুরি গ্রামে চাল ও গম গোপনে মজুত রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় এক রেশন ব্যবসায়ীকে।এমনকী দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার সোনারপুরে এবং পুরুলিয়া জেলার বোরো গ্রামেও উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। পাথর ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনায় আহত হয় দুই পুলিশ।

বাস্তবে সরকারের ঘোষণার সঙ্গে কোনও মিল নেই রেশন দোকানের। মোদী-মমতার প্যাকেজ উধাও। প্রাপ্য রেশন তুলতে এসেই বুধবার এপ্রিল ফুল রাজ্যবাসী। রেশন দিতে সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করতে পারেনি সরকারও। দু’একটা জায়গায় সমস্যার কথা জানাতে বাধ্য হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন থেকে তাঁর এদিন রাজ্যবাসীর কাছে পরামর্শ, ‘দুটো সেদ্ধ ভাত খান। মনে রাখবেন বিপদের সময় যদি দুটো সেদ্ধ ভাত জোটে সেটাই যথেষ্ট। আমি কী খাচ্ছি? আমি বড়জোর মুড়ি খাই।’ রাজ্যবাসীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য চরম রসিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২টাকা কেজি চাল বিনামূল্যের সরকার দেওয়ার ঘোষণা করেছিল। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল রাজ্যের আরকেএসওয়াই ২নং কার্ডের গ্রাহকদের কেন বিনামূল্যের রেশনের সুযোগ থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের প্রায় ২কোটি ৯৪লক্ষ গ্রাহক আছেন আরকেএসওয়াই ২নং কার্ডের। মাসে ১৩টাকা কেজি দর দিয়ে এক কাজ চাল ও ৯টাকা কেজি দর দিয়ে এক গম মেলে। এদিন সেই গ্রাহকরাও রেশন দোকানে এসে বিনামূল্যে রেশনের দাবি করেন। কারণ, বহু গরিব মানুষ তাঁদের রেশন কার্ড আরকেএসওয়াই ২ থেকে পরিবর্তন করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে আছে। সেই আবেদনের এখনও পর্যন্ত কোনও নিষ্পত্তি সরকার করে উঠতে পারেনি।

এমন মানুষের সংখ্যা কত?

খাদ্য দপ্তর সূত্রের খবর, প্রায় ৫০লক্ষ মানুষ রাজ্যজুড়ে ২টাকা কেজি চালের জন্য আবেদন করে আছেন। শুধু কলকাতা শহরেই এই সংখ্যা ২লক্ষ ৬৩হাজার। এখন এই মানুষের কাছে রেশন তুলে দেওয়ার জন্য সরকার কুপন চালুর ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সেই কুপন কবে মিলবে তা এখনও ঠিক করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে খাদ্য দপ্তর। 

কার্ড নেই। কিন্তু লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে রেশন চাইতে এলে তাঁদেরও দিতে হবে রেশন। নবান্ন থেকে এই ঘোষণাও করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। কীভাবে মিলবে সেই রেশন ভিডিও কনফারেন্স করে তা জেলাশাসকদের জানিয়ে সরকারি ‘জিআর’এর মাধ্যমে চাল ও গম তুলে দেওয়ার কথা ছিল এদিন রেশন দোকান থেকে। এদিন সেই মানুষও ভিড় করেছিলেন রেশন দোকানে। দাবি করেছিলেন জিআর চাই। কিন্তু তাঁদেরও ফিরতে হয়েছে খালি হাতেই। 

এরকম বিশৃঙ্খলার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব কোনভাবেই বজায় রাখা সম্ভব নয় । জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা রাজ্যের এই ভেঙে পরা গণবন্টন ব্যবস্থা হয়ত ভবিষ্যতে করোনা সংক্রমণ বহু গুনে ত্বরান্বিত করবে।

Spread the word

Leave a Reply