Panchayat Election: A Study

শ্রুতিনাথ প্রহরাজ

এবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা করলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। কদিন ধরেই আমরা তাঁর নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাজ্যপাল ও সরকারের ছায়া যুদ্ধ লক্ষ্য করছিলাম। একের জায়গায় তিনজনের নাম পাঠানোর নির্দেশ এল রাজভবন থেকে। তারপর সেই থোড় বড়ি খাড়া খাড়া বড়ি থোড়। যেহেতু প্রতিবার জুন মাসের মধ্যেই এই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাই বামপন্থীদের আগাগোড়া দাবী ছিল দ্রুত পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে হবে। তৃণমূল নেতা অভিষেক ব্যানার্জির মর্জি মাফিক রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে এ জিনিস মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আদতে তৃণমূল কংগ্রেসের কৌশল ছিল, হঠাৎ করে নির্বাচন ঘোষণা করা যাতে বিরোধীরা প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ না পায়। সেই মত তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন কমিশনার কে দিয়ে পঞ্চায়েতের দিন ঘোষণা করে। দেখা গেল, তৃণমূলের আশায় ছাই ঢেলে সিপিআইএম সহ বিরোধীদল গুলি যথেষ্ট প্রস্তুতি বহু আগে থেকে সেরে রেখেছে। বরং প্রস্তুত ছিল না রাজ্যের ব্লক, মহাকুমা এবং জেলা শাসকের দপ্তর গুলি। ঘোষণার পরদিন থেকেই নমিনেশন জমা নেওয়া হবে বলা হলেও বিডিও বা এসডিও রা সেইমতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেননি। রাজনৈতিক দলগুলির কর্মীরা যারা এই নমিনেশন প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন, তারা লক্ষ্য করেছেন কি পরিমাণ অসহায় অবস্থায় কাজ করছিলেন মহকুমা শাসক ও বিডিওর দপ্তরের কর্মীরা। অন্যান্যবার নির্বাচনের বহু আগে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। ভোট ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক করতো নির্বাচন কমিশন। এবার সেসবের বালাই নেই।

হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে নির্বাচন কমিশন বলেছিল অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে নির্বাচনের কোন কাজ করা হবে না। সিভিক ভলান্টিয়াররাও নির্বাচনের কাজে যুক্ত হবে না। অথচ দেখা গেল বহু জায়গায় স্থায়ীকর্মীর বদলে অস্থায়ী কর্মীরা নির্বাচনের কাজে যুক্ত হয়েছেন। সিভিক ভলান্টিয়াররা বহাল তবিয়তে তৃণমূল কংগ্রেসের নির্দেশ মতো ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছে। কিছু থানা আবার এইসব সিভিক ভলান্টিয়ারদের এমন পোশাক দিয়েছে, দূর থেকে দেখলে মনে হবে রাজ্য পুলিশের কমব্যাট ফোর্স পরিস্থিতির মোকাবিলায় পথে নেমেছে। লোক ঠকানোর যা যা কৌশল আছে তার সবটাই রপ্ত করেছেন তৃণমূল নেত্রী সহ তার দল ও সরকার। রাজ্য পুলিশের পর্যাপ্ত ফোর্স নেই একথা সবাই জানে। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য পুলিশের বহু স্থায়ী পদ শূন্য পড়ে আছে। বস্তুত, থানা গুলি চলে অস্থায়ী সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে। শুধু মমতা ব্যানার্জি ও তার দল ভাবে, জনগণ কিছু খবর রাখে না, ওরা যেমন বোঝাবে তেমন বুঝবে!

কমিশন নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও এই গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলের কর্মীসহ সমগ্র নির্বাচক মন্ডলী, প্রতিটি স্তরের রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও তার এজেন্ট, ভোট-কর্মী সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য সরকারি আধিকারিক ও কর্মীদের যাবতীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হয়। মূলতঃ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাজ এটি, যার দায়িত্বে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। সেই নিরাপত্তা দিতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ। এই সরকারের আমলে হওয়া গত দুটি নির্বাচনের মত এবারেও নির্বাচন ঘোষণার পরদিন থেকেই রাজ্য জুড়ে হিংসা হানাহানির ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। ভয় দেখিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের নমিনেশন জমা দিতে না দেওয়া বা জমা দিলেও জোর করে তা তুলিয়ে নেওয়া– এর সবটাই ঘটেছে নিয়মমাফিক। শুধু ব্যতিক্রম একটাই, অন্যান্যবার একতরফা তৃণমূল দল ও তার ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী এই কাজ করতো। ২০১৮ সালে সেই কারণে নির্বাচনের আগেই ওরা প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে নিয়েছিল। এবার বজবজ, ক্যানিং বা চোপড়ার মত কিছু জায়গায় ওরা সফল হলেও রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায় তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনীকে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে। ফলে সার্বিক মনোনয়নের চিত্র এবার অনেকটাই ইতিবাচক, যার কৃতিত্ব যতটা না রাজ্য সরকার বা নির্বাচন কমিশনের তার চাইতে অনেক বেশি সিপিআইএম সহ সংশ্লিষ্ট বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কর্মীদের যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই গুন্ডা বাহিনীকে রুখে দিয়েছে। এর জন্য বিস্তর রক্ত ঝরেছে চোপড়া থেকে ভাঙ্গড় ক্যানিং সর্বত্র, প্রাণ হারিয়ে গণতন্ত্র রক্ষায় শহীদ হয়েছেন বেশ কয়েকজন।আরও কত মৃত্যু দেখতে হবে আমাদের কে জানে! মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবারের মত এবারও বিগত ইলেকশনগুলির নিহত মানুষের সংখ্যা তুলে ধরে এই মৃত্যুর মিছিল কে তুচ্ছ বা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এহেন আচরণ করতে পারেন!

রাজ্য নির্বাচন কমিশনার বারংবার বলছেন রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রাখতে। রাজ্য পুলিশের সবাই খারাপ, এমন দাবি করা যাবে না। বিভিন্ন স্তরে বহু অফিসার ও পুলিশ কর্মী আছেন যারা সততার সঙ্গে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা সেই সুযোগ পান না। কোনও পুলিশ অফিসার এরপরেও ঝুঁকি নিয়ে তৃণমূলের দলদাস না হয়ে সদর্থক ভূমিকা পালন করলে, তার খেসারত দিতে হয়। হয় তাকে ক্লোজ করা হয় নতুবা তার পোস্টিং হয় বিপজ্জনক কোন জায়গায়। আইপিএস দময়ন্তী সেনের ঘটনা আমরা সবাই জানি। এবার চোপড়ায় বা ভাঙ্গড়ে যা ঘটলো তার সবটাই তো পুলিশের চোখের সামনেই ঘটেছে। পুলিশ একটু সক্রিয় হলে এই হিংসা এড়ানো সম্ভব হত। উভয় ক্ষেত্রেই এসপি সহ গোটা পুলিশ বাহিনী কি ভূমিকা পালন করেছে তা রাজ্যবাসী দেখেছে।

শাসকদলের মদত ছাড়া এ জিনিস হতে পারে না। প্রত্যাহারের শেষ দিন দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের সিপিআইএম প্রার্থী সুষমা সাউকে বলপূর্বক তুলে নিয়ে যেভাবে শাসক দলের নির্দেশে ওখানকার থানার ওসি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করিয়েছে তা এক কথায় নজীরবিহীন। তবে পুলিশকে দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য ভয় দেখানোর কাজ অতীতের মত এবারেও বহু জায়গায় ঘটেছে। শান্তিপুর থানার ওসি তো এককদম এগিয়ে, তৃণমূল কংগ্রেসের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দেওয়া প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি বার্তা, নিজের মোবাইল থেকেই সবাইকে ফরওয়ার্ড করেছেন। এরপরেও এদের ভরসা করতে বলছেন রাজীব বাবু?

যে অতিমানবিক তৎপরতা মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ আটঘন্টায় তৃণমূল কংগ্রেস এবার তাদের চল্লিশ হাজারের ও বেশি নমিনেশন জমা দিয়েছে তা চরম জোচ্চুরি ছাড়া কি করে সম্ভব হতে পারে? এর যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। সব সত্যি বেরিয়ে আসবে। কোথাও নমিনেশন জমা দেওয়ার পর প্রতীক বন্টনের ফর্ম জমা দেওয়ায় বাধা আবার কোথাও প্রার্থীর নমিনেশন থেকে জাতি শংসাপত্র হাপিস করে দেওয়া — এসবই চলছে যত্রতত্র। প্রতি ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নির্বিকার। বাধ্যহয়ে কোর্ট কে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে বোঝা মুশকিল হয় কে পরিচালনা করছে এই নির্বাচন, কোর্ট না নির্বাচন কমিশন? যে অতিমানবিক তৎপরতা মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ আটঘন্টায় তৃণমূল কংগ্রেস এবার তাদের চল্লিশ হাজারের ও বেশি নমিনেশন জমা দিয়েছে তা চরম জোচ্চুরি ছাড়া কি করে সম্ভব হতে পারে? এর যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। সব সত্যি বেরিয়ে আসবে। কোথাও নমিনেশন জমা দেওয়ার পর প্রতীক বন্টনের ফর্ম জমা দেওয়ায় বাধা আবার কোথাও প্রার্থীর নমিনেশন থেকে জাতি শংসাপত্র হাপিস করে দেওয়া এসবই চলছে যত্রতত্র। প্রতি ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নির্বিকার। বাধ্যহয়ে কোর্ট কে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে বোঝা মুশকিল হয় কে পরিচালনা করছে এই নির্বাচন, কোর্ট না নির্বাচন কমিশন?

ভাঙ্গড়ে মনোনয়ন পর্বের শেষ দিনের শেষ পর্বে, তৃণমূলের শওকত মোল্লা বাহিনীর শত বাধা এড়িয়ে আইএসএফএর যারা নমিনেশন দিয়েছিলেন, তার সবকটা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গড়ের বিডিও যেখানে পরিস্থিতির বিবেচনায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই নমিনেশন গুলি গ্রহণ করেছিলেন, নির্বাচন কমিশন তা বাতিল করে কিভাবে? বিষয়টি আদালতে যাবে শুনেছি। নিশ্চয়ই সুবিচার পাবে প্রার্থীরা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যদি প্রতি পদে এভাবে শাসকদলের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে, আদৌ কি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব এই নির্বাচন কমিশনার কে দিয়ে? এ প্রশ্ন এখন খুবই সঙ্গত কারণে রাজ্যবাসীর মনে উঁকি দিয়েছে। এটি অমূলক ও অসঙ্গত আশঙ্কা তা প্রমাণ করতে পারেন একমাত্র রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ও তার দলবল, নিরপেক্ষ ও যথাযথ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে।

পশ্চিমবঙ্গে মোট ৩৩১ ৭ টি গ্রাম পঞ্চায়েত, যার মোট আসন৬৩২৩৯ টি। ৩৪১ টি পঞ্চায়েত সমিতিতে আসনসংখ্যা ৯৭৩০ টি এবং জেলা পরিষদের আসনসংখ্যা ৯২৮ টি। রাজ্যের মোট ভোট গ্রহণ কেন্দ্র ৬১৬৩৬ টি এবং ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ ২১ হাজার ২৩৪ জন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কোন যুক্তিতে এর মধ্যে কেবল ১৮৯টি বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করে মাত্র ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে তা বোঝা দুষ্কর। তবে এর থেকে একটি জিনিস পরিষ্কার বোঝা যায়, নির্বাচন কমিশন রাজ্যের মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে বাজি রেখে আদালতের সঙ্গে কোচুরি খেলা খেলতে চাইছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করার কোনো দায় বর্তমান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ও তার দপ্তরের আছে বলে মনে হয় না। আশা করছি, পুনরায় আদালতের যথাযথ নির্দেশে বিষয়টির সুষ্ঠু মীমাংসা হবে এবং রাজ্যের প্রতিটি বুথে, রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় ভোটদান পর্ব সম্পন্ন হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার কাছে অন্তত এই বার্তা পৌঁছানো দরকার যে, রাজ্যবাসীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবার অধিকার তাকে কেউ দেয়নি।

রাজ্য নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা যা ভারতীয় সংবিধানের ২৪৩ কে ও ২৪৩ জেড ধারা অনুসারে গঠিত হয়। মূলতঃ রাজ্যের পুরসভা গুলি ও ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে কমিশন। নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন আদর্শ আচরণবিধি ঘোষণা ও তা কার্যকর করার দায়িত্ব থাকে কমিশনের ওপর। যেহেতু রাজ্য নির্বাচন কমিশন তাই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের পরামর্শ মেনেই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে কমিশন। এর মানে এই নয় যে কমিশনের নিজস্ব কোন অস্তিত্ব নেই। যেহেতু এটি একটি সাংবিধানিক সংস্থা, নির্বাচন যথাযথভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আছে। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে চেয়েছিলেন প্রতিটি বুথে অন্তত দুজন করে সশস্ত্র পুলিশ থাকুক। সেই মতো পর্যাপ্ত রাজ্য পুলিশ না থাকায় তিনি রাজ্য সরকারের আপত্তি সত্ত্বেও, কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করবার সিদ্ধান্ত নেন, যা সুপ্রিম কোর্ট অব্দি গড়ায়। শেষমেষ জয়ী হয় নির্বাচন কমিশন। সেবার তিন দফায় নির্বাচন হয়েছিল। পর্যাপ্ত না হলেও ২০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জোয়ান ঐ নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিযুক্ত হয়েছিল। প্রতিটি দফায় এই ২০০ কোম্পানি জোয়ানকে কাজে লাগানোর সুযোগ হয়েছিল। 

সর্বত্র দেখা গেল, রাজ্য পুলিশকে দিয়ে এই জোয়ানদের অকেজো করে রাখার একটা চেষ্টা, যাতে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও তার ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ার দখল নিতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা সফলও হল। অসহায় নির্বাচন কমিশনার এটা বুঝলেন, রাজ্যের শাসক দল না চাইলে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এবার ইতিমধ্যেই, বর্তমান নির্বাচন কমিশনার শাসক দলের হয়ে দালালি করছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর কিছু সিদ্ধান্ত স্ববিরোধী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। দুর্নীতির আঁতুড়ে জন্ম নেওয়া তৃণমূল কংগ্রেস দল তাদের আখের গোছাতে পঞ্চায়েতের দখল চাইবে এটাই স্বাভাবিক। লুটেরা বাহিনী তাই আজ এত মরিয়া। ঘোলা জলে মাছ ধরতে ধর্ম ও জাতপাতের রাজনীতির গুটি সাজিয়ে আসরে নেমেছে বিজেপি ও। সিপিআইএম সহ বামপন্থীদের লড়াই এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে। লক্ষ্য একটাই, গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার। লুটেরা বাহিনীকে সরিয়ে জনগণের পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠা।তবে তৃণমূলের আমলে এ ধরনের নির্বাচনগুলির মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা থেকে একটি জিনিস পরিষ্কার হয়েছে, এই লড়াই কারো ভরসায় নয়, লড়তে হবে নিজেদের। নির্বাচন কমিশন শাসক দলের দালালি করবে, রাজ্য পুলিশ তার নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে বাধার মুখে পড়বে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে শাসকদলের নির্দেশে অকেজো করবে রাজ্য পুলিশ। তাই দরকার, অন্যায় অবিচারের শিকার জনগণকে সংগঠিত করে নিজেদের বাহিনী গড়ে তোলা, প্রতিটি পাড়ায়, প্রতিটি বুথে। তবেই লক্ষ্য পূরণে এগোনো সম্ভব।

Spread the word

Leave a Reply