Panchayat 9

Panchayat: A Story Of Loot (Part IX)

২২ অক্টোবর ২০২২, শনিবার

চন্দন দাস

নবম পর্ব

পঞ্চায়েতের সদস্য হিসাবে কাজ করা মানে কী?

তিনি বলেছিলেন,‘‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো।’’

পঞ্চায়েতের সদস্যরা যারা চুরি করেন, কেন করেন?

তাঁর ব্যাখ্যা,‘‘কারন তারা যথেষ্ট অনারিয়াম পান না।’’

চুরি বন্ধ করতে গেলে কী করতে হবে?

তাঁর মতে ‘‘চুরি আটকাতে হবে। তাই তাদের মানোন্নয়ন ঘটাতে হবে।’’

মানোন্নয়ন মানে কী? তাঁর সমাধান —  ‘‘ভাতা বাড়ানো।’’

তাঁর সমালোচনা হল — বামফ্রন্ট সরকার ৩৫ বছর এই ভাতা বাড়ানোর কথা না ভেবে শুধু ‘বড় বড় কথা বলেছে’ বলেছে। তারপর তিনি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মুখ থেকে শোনা গেলো, ‘‘শুধু বলবে ও’ চোর ও’ চোর। আরে চুরি করবে না কী করবে? ওদের সুযোগ তো দাও।’’

আমফানের চুরি ধরা পড়ার পর মানুষের চাপে কান ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হওয়া তৃণমূল নেতা, কর্মীরা

২০১৭-র ফেব্রুয়ারি। ৩রা ফেব্রুয়ারি। নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ‘পঞ্চায়েতী রাজ’ সম্মেলন করেছিল তৃণমূল সরকার। পঞ্চায়েতের সম্মেলন নামে। আসলে তৃণমূলের দলীয় নেতা, কর্মী, নির্বাচিত সদস্যদের সভা। এলাহি আয়োজন হয়েছিল। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী তখন সুব্রত মুখার্জি।

বক্তা মূলত মমতা ব্যানার্জিই। যেমন সাধারনত হয়। সেদিনই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর মনোভাব আরও স্পষ্ট হয়েছিল। স্পষ্ট হয়েছিল দুর্নীতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব। সিপিআই(এম)-র রাজ্য কমিটির তৎকালীন সম্পাদক, রাজ্যের প্রাক্তন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সূর্য মিশ্র বলেছিলেন,‘‘যারা ‘আমরা সবাই চোর’ বলে মিছিল করে, তাদের থেকে এর চেয়ে বেশি কী আশা করা যায়? চোর-চুরির সামাজিকীকরণ চাই — এটাই ওদের দাবি।’’

তাই হয়েছে।

পঞ্চায়েত সদস্যদের ভাতা বেড়েছে। কিন্তু চুরি আরও বেড়েছে। আসলে পঞ্চায়েতে চুরি সদস্যদের ভাতার পরিমাণের উপর নির্ভরশীলই নয়। পার্থ চ্যাটার্জির মত তৃণমূলের মন্ত্রী, বিধায়কদেরও তো এই আমলে বেতন, সুবিধা অনেক বেড়েছে। তাতে কী তাঁদের চুরি বন্ধ হয়েছে? 

সেদিন পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রতিটি পর্যায়ের নির্বাচিত সদস্যদের ভাতা বাড়ানোর ঘোষনা মঞ্চ থেকেই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যেমন, জেলা পরিষদের সভাধিপতিদের ষান্মানিক ভাতা ৩৫০০ টাকা থেকে ৫০০০টাকা হয়েছিল। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির ভাতা ২৮০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা হয়েছিল। প্রধানদের বেতন ২০০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা হয়েছিল। সবার ভাতা বেড়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির কিছুই আসে যায়নি।

দুর্নীতি আটকাতো গনতন্ত্র শক্তিশালী করলে। মমতা ব্যানার্জি পঞ্চায়েতের প্রতিটি পর্যায়ে বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছেন। দুর্নীতি আটকানো যেত, পঞ্চায়েতের কাজে মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে। মমতা-শাসনে গ্রাম সংসদ থেকে জেলা কাউন্সিল — সব বন্ধ হয়েছে। সামাজিক অডিট হয় না ঠিক মত। দুর্গতদের চাল, ত্রিপল থেকে রাস্তার কাজের টাকা — দুর্নীতির সামাজিকীকরণ হয়েছে মমতা-শাসনে।

২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনে বেশ কিছু আসন খোয়ানোর পর নজরুল মঞ্চে দলীয় কর্মীদের সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর থেকে ২০% হারে কাটমানি নেন তাঁর দলের নেতারা — এই কথা প্রকাশ্যে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু রোধের কোনও চেষ্টা করেননি। তৃণমূল আরও চুরি করেছে।

Chor dhoro Jail Bhoro

বিজেপি কী করেছে? কেন্দ্রের সরকারে তারা। এখন দুর্নীতির অভিযোগে একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে। ক্ষতি হচ্ছে গ্রামের গরিবের। অথচ ২০১৬-তে এই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি দল কী রিপোর্ট দিয়েছিল?

রাজ্যে ২০১৬-র ৩০শে মে থেকে ২রা জুন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক প্রতিনিধি দল বর্ধমান, নদীয়া এবং বাঁকুড়া জেলায় কয়েকজন গ্রামবাসী, এসডিও, বিডিও-দের সঙ্গে কথা বলেন। ওই প্রতিনিধি দলের অভিজ্ঞতা জানিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব অপরাজিতা সারেঙ্গি রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যসচিব বাসুদেব ব্যানার্জিকে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে তিনি জানান, সরকারের আতিথেয়তা, সংবর্ধনায় তাঁরা আপ্লুত। অভিভূত। তাঁদের ‘মন আনন্দে উদ্বেল হয়েছে যখন বুঝেছেন দুর্দান্ত রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক উদ্যম’ রাজ্যে উনন্নয়নমূলক কাজের পিছনে সক্রিয় আছে।

কিন্তু গ্রাম ঘুরে তারা কী জেনেছিলেন?

‘বাস্তবের মাটিতে’ তাঁরা একশো দিনের প্রকল্পে কোনও অনগোয়িং (চালু) কাজই দেখতে পাননি! চিঠিতে প্রতিনিধি দলের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে লেখা হয়েছে —‘‘এটি বিস্ময়কর, কারন, অনেক কাজ দেখানো হয়েছে স্যানশাংনড হিসাবে। পঞ্চায়েত এবং ব্লক পর্যায়ে অনেক কাজ শুরু হয়ে গেছে বলেও দেখানো হয়েছে। যদিও আমরা আর্থিক বছরের দ্বিতীয় মাসেই হাজির হয়েছিলাম। কিন্তু আমরা কোনও অনগোয়িং কাজ বাস্তবের মাটিতে দেখতে পাইনি।’’

অর্থাৎ গ্রামের গরিব মানুষ কাজ পাচ্ছেন না। খাতায় কলমে দেখানো হয়েছে কাজ চলছে। ওই প্রতিনিধি দল দেখেছেন যে, কত কাজের দাবি আছে এবং কত কাজের মাস্টার রোল তৈরি হয়েছে তার কোনও হিসাবই সঠিকভাবে রাখা হয় না। অর্থাৎ মাস্টার রোলেই গোঁজামিল। যদিও বি জে পি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এই চিঠি লিখেই দায়িত্ব শেষ করেছে। আজ গরিব মানুষের টাকা আটকেছে। তৃণমূলের তাতে কোনও মাথাব্যথা নেই।

ক্রমশ

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক চন্দন দাসের এই প্রবন্ধটি মোট ১২ টি পর্ব প্রকাশিত হবে।

Spread the word

Leave a Reply