Mangal Pandey

“Those who will not reason, are bigots, those who cannot, are fools, and those who dare not, are slaves.” Remembering Mangal Pandey

ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন

ইউরোপীয় সেনাদের কুচকাওয়াচ শুনে হাতে রাইফেল তুলে নিয়েছিলেন তিনি। ততদিনে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে ভারতবর্ষ গোলামের দেশে পরিণত হয়েছে। ভারতীয়দের সেনাবাহিনীতে রিক্র্যুট করিয়ে তাদের বন্দুকে ভর করেই দেশের মানুষের উপরে রাজত্ব কায়েম করেছে ইংরেজরা। দিল্লিতে মোগলশাসন দুর্বল হয়ে পড়েছে, সবকিছু জেনে – বুঝেও বাদশাহের কিছুই করার নেই। যারা একদিন দেওয়ানি নিয়ে ব্যবসা করতে এসেছিল তাদের হাতেই উঠে এসেছে রাজদন্ড।

১৮২৭ সালের ১৯শে জুলাই উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলায় জন্ম হয় মঙ্গল পান্ডের। ৩৪ নম্বর বেঙ্গল নেটিভ ইনফেন্ট্রির অন্তর্গত ষষ্ঠ কোম্পানির সিপাহি ছিলেন তিনি। এই ইনফেন্ট্রি মোতায়েন ছিল কলকাতার ব্যারাকপুরে। অনেকেই ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের কারন হিসাবে এনফিল্ড পি-৫৩ রাইফেলের কার্তুজের খোলে গরু এবং শুকরের চর্বিকে দায়ী করেন। আসল কারন ছিল সীমাহীন অত্যাচার, লুঠ এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপশাসন। যেকোনো বিদ্রোহের ক্ষেত্রেই জমে থাকা ক্ষোভ ফেটে পড়ার মতো অগ্নিসংযোগের ঘটনা হঠাৎ ঘটে যায়। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালের সেই বিদ্রোহের শুরু হয়েছিল সিপাহি মঙ্গল পান্ডের রাইফেল থেকেই।

১৮৪৯ সালে মঙ্গল পান্ডে বেঙ্গল আর্মিতে সিপাহি (Private) হিসাবে যুক্ত হন। ১৮৫৭ সালের ২৯শে মার্চ লিউটিন্যান্ট বগ খবর পান কুচকাওয়াচ করার ময়দানের সংলগ্ন অস্ত্রাগারের সামনে একজন সিপাহি হাতে মাস্কেট নিয়ে অন্য সবাইকে লড়াই করতে বক্তৃতা করছে – সেই সিপাহির নাম মঙ্গল পান্ডে। লিউটিন্যান্ট বগ নিজেকে প্রস্তুত করে ঘোড়ায় চড়ে সেই জায়গায় উপস্থিত হন – মঙ্গল পান্ডে তাকে দেখা মাত্রই রাইফেল থেকে ফায়ার করেন। গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও ঘোড়াটিকে আহত করে, লিউটিন্যান্ট বগ মাটিতে আছড়ে পড়েন। কোনরকমে নিজেকে সামলে তিনি মঙ্গল পান্ডের দিকে নিজের রিভল্ভার থেকে গুলি ছোঁড়েন – নিশানা লাগে না। মঙ্গল পান্ডে তলোয়ার দিয়ে লিউটিন্যান্ট বগের কাঁধ এবং ঘাড় লক্ষ করে আঘাত করেন – বগ গুরুতর আহত হন। ইতিমিধ্যেই সার্জেন্ট – মেজর হিউশন সেখানে উপস্থিত হন, হিউশন সেনাবাহিনীর জমাদার ঈশ্বরী প্রসাদকে নির্দেশ দেন মঙ্গল পান্ডেকে গ্রেফতার করার জন্য। ঈশ্বরী প্রসাদ জানান তার একার পক্ষে মঙ্গল পান্ডেকে আটকানো সম্ভব না। নিজের গ্রেফতারী নিশ্চিত জেনে মঙ্গল পান্ডে নিজের রাইফেলের নজল বুকে চেপে ধরে পায়ের আঙ্গুলের সাহায্যে ট্রিগার চেপে দেন – রাইফেলের বুলেট তাকে রক্তাক্ত করলেও তার প্রাণ বেঁচে যায়।

এক সপ্তাহের চিকিৎসায় তাকে কিছুটা সুস্থ করে তোলা হয়, সেনা আদালতে বিচার চলে। বিচার চলাকালীন মঙ্গল পান্ডে জানান ২৯শে মার্চ তিনি নেশাগ্রস্থ ছিলেন (ভাং এবং আফিম) কিন্তু তাকে কেউ এমন কাজের জন্য প্ররোচিত করে নি, তিনি নিজের সিদ্ধান্তেই বিদ্রোহ করেছেন। বিচারে সিপাহি মঙ্গল পান্ডে এবং জমাদার ঈশ্বরী প্রসাদ দুজনকেই ফাঁসীর সাজা দেওয়া হয়। জমাদার ঈশ্বরী প্রসাদ অন্যান্য সিপাহীদের মঙ্গল পান্ডেকে গ্রেফতার করতে বারন করেছিলেন।

বিচারে ফাঁসীর দিন নির্ধারিত হয়েছিল ১৮ই এপ্রিল। বিদ্রোহ আরও বড় আকার নিতে পারে এই আশংকায় ব্রিটিশরা সিপাহি মঙ্গল পান্ডেকে ৮ই এপ্রিল – আজকের দিনে ফাঁসি দেয়। ব্যারাকপুরের সেই জায়গাতেই ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে প্রথম শহীদ সিপাহী মঙ্গল পান্ডের স্মৃতিতে উদ্যান নির্মিত হয়েছে। ১৯৮৪ সালে ভারত সরকার মঙ্গল পান্ডের ছবিসহ ডাকটিকিট জারী করে।

আজকের দিনে অনেকেই নানা ভ্রান্ত তথ্যের শিকার ( এইসব ভ্রান্তি অনেক ক্ষেত্রেই ইচ্ছাকৃত প্রচারিত) হয়ে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ এবং এবং সিপাহি মঙ্গল পান্ডের সম্পর্কে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারেন না। তাদের সেই ভ্রন্তির সুযোগ নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি মানুষের মগজে আক্রমণ নামিয়ে আনে, যাতে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে নিজেদের কায়েমি স্বার্থ চরিতার্থ হয়। সবারই মনে রাখা উচিত কার্ল মার্কসই প্রথম ব্যাক্তি যিনি এই বিদ্রোহকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে উল্লেখ করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক মূল্যায়ন সকলেরই পড়া উচিত।

ওয়েবডেস্কের পক্ষেঃ সৌভিক ঘোষ

Spread the word

Leave a Reply