ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন
“নিদ্রাহীন দীর্ঘ রাত রুদ্ধ কারাগারে
লিখেছি শতেক পদ্যে
কাকে বলে দাস ?
প্রতিটি শ্লোকের শেষে …দেখি
গরাদের বাইরে,
ঐ স্বাধীন আকাশ।”
কবিতাটি লিখেছিলেন হো চি মিন, অনুবাদ করেছিলেন শঙ্খ ঘোষ।
ফরাসী সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক হো চি মিন।
পরবর্তীকালে স্বাধীন উত্তর ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি হো চি মিন।
১৮৯০ সালের ১৯ মে তখনকার পৃথিবীতে ইন্দোচিন নামে পরিচিত দেশের ‘কিম লিয়েন’ গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা দুঃস্থ পরিবারের ভরনপোষণ চালাতেন সামান্য রোজগারের জোরে। ছোটবেলায় হো চি মিনের নাম ছিল ন্যগুয়েন সিনহ কান। পরবর্তী জীবনে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় তাকে বহু নাম ব্যবহার করতে হয়েছিল – প্রতিটি নামের সাথে একটি কাহিনী জড়িত যা আজ বিপ্লবীদের ইতিহাসে কিংবদন্তী।
স্কুল শিক্ষা শেষে কারিগরি শিক্ষালয়ে ভর্তি হন, পরে চাকরির সুত্রে আমেরিকায় চলে যান। সেখান থেকে ইংলন্ড হয়ে ফ্রান্সে আসেন। ১৯২০ সাল নাগাদ ফ্রান্সের কমিউনিস্টদের সাথে ক্রমশ জড়িয়ে পড়েন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে, সেখান থেকে মস্কোয় পোঁছান ১৯২৩ সালের শেষের দিকে।
লেনিনের মৃত্যুর পরে হো চি মিনের লেখা শ্রদ্ধার্ঘ ছাপা হয়েছিল প্রাভদায়।
ঐ বছরেই কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের অধিবেশনে ফরাসী কমিউনিস্ট পার্টির তীব্র সমালোচনা করেন – জরুরী বলে স্বীকার করেও ইন্দোচিনের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে ফরাসী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সেই পার্টি উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করেনি বলে। এর পরে চীনে পৌঁছান, সেদেশে আশ্রিত বিপ্লবীদের একত্রিত করে ইন্দোচীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।
লেনিনের লেখা জাতিসমূহের আত্মনির্ধারণের প্রশ্ন ( The Right of Nations To Self Determination) বইটিই তাকে কমিউনিস্ট বিপ্লবী হয়ে উঠতে প্রেরণা দিয়েছিল।
মুক্তির লড়াইতে সফল হয় ভিয়েতনাম। জেনিভা শান্তি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তখনকার মতো ভিয়েতনামের দক্ষিণ অংশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দখলে রয়ে যায়, স্বাধীনতা পায় উত্তর ভিয়েতনাম। সেই উত্তর ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন হো চি মিন। ১৯৫০ সালে মাও সে তুং’ই সবার প্রথমে ভিয়েতনামকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেন।
আজও সারা পৃথিবীতে ভিয়েতনামের লড়াই, দিয়েন বিয়েন ফু’র যুদ্ধ এক অসামান্য ইতিহাস – যা প্রমান করে নিপীড়িত মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াইতে বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
ভিয়েতনামের সেই সংগ্রাম, সেই শপথকে মনে রাখতেই সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন –
“… আকাশ কেন নীল বর্ণ –
সাপে কাটল কি?
সাপে কাটুক, খোপে কাটুক
আছে আমার মন্ত্র পড়া ফুঁ
যা রে সাপের বিষ
দিয়েন বিয়েন ফুঃ”