Moncada Day: Significance Of The Legacy

এবারের মনকাডা দিবস উদযাপন নতুনতর তাৎপর্যে

অঞ্জন বেরা

কিউবার অভ্যন্তরে মার্কিনী মদতপুষ্ট ষড়যন্ত্রের বিরোধিতায় বিশ্বব্যাপী গণসংহতি কর্মসূচীর পশ্চাদপটে এবারের মনকাডা দিবস এলো নতুনতর তাৎপর্য নিয়ে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানী হাভানার রাস্তায় অশান্তি পাকানোর ঘটনার পিছনে ইয়াংকী সাম্রাজ্যবাদের সক্রিয় মদত দিবালোকের মতো স্পষ্ট। রাষ্ট্রপতি বাইডেনের প্রশাসন হয়তো একটু বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি বদলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও  ডেমোক্র্যাট বাইডেন তাঁর রিপাবলিকান পূর্বসুরীকেও ছাপিয়ে যাওয়ার ফন্দি এঁটেছেন। অতিমারি-বিধ্বস্ত  সময়ও তাকে বিরত রাখেনি। বরং অতিমারিকে ব্যবহার করে কিউবার বিরুদ্ধে তীব্রতর আঘাত হানতে চায় নতুন প্রশাসন। কিন্তু বাইডেনের হয়তো জানা ছিল না, বিপ্লব কিউবার মানুষের। আমরা সবাই দেখলাম, বিপ্লবকে রক্ষা করতে রাস্তায় নামলেন কিউবার মানুষ। কিউবার মানুষের ঐক্যকে  আরও জোরদার করতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। খোদ আমেরিকা থেকে কলকাতা — আবিশ্ব মানুষ রাস্তায় নামলেন সোচ্চারে সমাজতান্ত্রিক কিউবার সমর্থনে। ষড়যন্ত্রকারীরা পিঠটান দিয়েছে।

কিউবার বিপ্লব আকাশ থেকে পড়েনি। ১৯৫৯ সালের বিপ্লবের সাফল্যের পিছনে ছিল অনেক বছরের সলতে পাকানোর পর্ব। ১৯৫৩-র মনকাদা দূর্গ অভিযানের সূত্রেই কিউবার বিপ্লব প্রবেশ করেছিল চূড়ান্ত পর্বে। বেজে উঠেছিল সময়ের ঘড়ি।

১৯৫৩ সালে ফিদেল কাস্ত্রো – গ্রেফতার হবার পরে

মনকাডা দুর্গ ছিল  বিপ্লব-পূর্ব কিউবার সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ  ঘাঁটি। সে দুর্গ দখল করা খুব সহজ ছিল না। ১৯৫৩ সালের ২৬ জুলাই ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী  মনকাডা দুর্গ আক্রমণ করেছিলেন।ক্ষমতায় তখন জেনারেল বাতিস্তার স্বৈরতন্ত্রী সরকার। ১৯৫২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটিয়ে বাতিস্তা ক্ষমতা দখল করেছিলেন। মুক্ত দুনিয়ার পাহারাদার মার্কিন সরকার সঙ্গে সঙ্গে সেই জুন্টাশাহীকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়। তরুণ সেই বিপ্লবীরা সেদিন দুর্গ দখল করতে পারেননি। অনেকেই ধরা পড়ে যান। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ফিদেল কাস্ত্রোও। প্রহসনমূলক এক বিচার পর্বেরও আয়োজন করেছিল বাতিস্তা সরকার।

মনকাডা অভিযান নিয়ে বিচার পর্বকে তরুণ বিপ্লবীরা সেদেশে লড়াইয়ের এক অভূতপূর্ব মঞ্চে পরিণত করেন। আইনের ডিগ্রীধারী তিরিশ বছরের তরুণ ফিদেল আত্মপক্ষ সমর্থনে বিচারকদের সামনে যে বক্তব্য পেশ করেছিলেন তা ছিল কার্যত কিউবার ভবিষ্যৎ বিপ্লবের এক প্রাথমিক রূপরেখা। পরবর্তীকালে সেই ভাষণ ছাপা হয়েছিল ‘ইতিহাস আমাকে মুক্ত করবেই’ শিরোনামে। ‘বিচার’ শেষে পনেরো বছরের কারাদন্ড হয়েছিল ফিদেলের। কিন্তু গণআন্দোলনের চাপে ১৯৫৫ সালের ৮ জুলাইয়ের মধ্যে ফিদেল ও তাঁর কমরেডদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল বাতিস্তা জুন্টাশাহী। তারপরই তীব্রতর হয়ে উঠে বৈপ্লবিক গণআন্দোলন। সাড়ে তিন বছরের মাথাতেই  ক্ষমতাচ্যুত হয় বাতিস্তা সরকার। ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি।

বিপ্লব-উত্তর কিউবায় ২৬ জুলাই পালিত হয় জাতীয় বিদ্রোহ দিবস হিসেবে। ন্যাশনাল রেভলিউশন ডে। বিপ্লবী সরকার ক্ষমতায় এসে মনকাডা দুর্গে সামরিক ছাউনি তুলে দিয়ে চালু করে স্কুল। পরবর্তীকালে মনকাডা দুর্গের একাংশে স্থাপিত হয়েছে  ‘২৬ জুলাই মিউজিয়াম’।

দেশে দেশে কিউবা সংহতি আন্দোলন সমাজতান্ত্রিক কিউবার প্রতি সংহতি জানাতে প্রতি বছর ২৬ জুলাই  নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ন্যাশনাল কমিটি ফর সলিডারিটি উইথ কিউবা, সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থাসহ নানা সংগঠন  প্রতি বছর ‘মনকাডা দিবস’  উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কিউবা সংহতি সম্মেলন– যার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৯৫ সালে আমাদেরই কলকাতা শহরে– ২৬ জুলাই দিনটিকে  ‘কিউবা সংহতি দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

বিপ্লবী কিউবা প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চক্ষুশূল। মার্কিন ভূখন্ড মায়ামি থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্রের আত্মমর্যাদাবোধকে ওয়াশিংটনের কখনও সহ্য হয়নি। ১৯৫৯ সালে বিপ্লব, আর ১৯৬১-র জানুয়ারিতে কিউবার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে আমেরিকা। সেবছরেরই এপ্রিলে বে অফ পিগসে মার্কিনী হানাদারি। ১৯৬২-র জানুয়ারিতে অর্গানাইজেশন অফ আমেরিকান স্টেটস থেকে সাসপেন্ড করা হয় বিপ্লবী কিউবাকে। ১৯৬২-র অক্টোবর-নভেম্বরে ১৮৩টি যুদ্ধজাহাজে আট হাজারের বেশি সেনা পাঠিয়ে কিউবা অবরোধ করে কেনেডি প্রশাসন। সোভিয়েত ইউনিয়ন এগিয়ে আসে কিউবার সমর্থনে। ওয়াশিংটন পিছু হটে।

ফিদেল কাস্ত্রো এবং নিকিতা খ্রুশ্চেভ

কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আগেই ১৯৬০ সালের ৬ জুলাই কিউবা থেকে চিনি আমদানি বন্ধ করে আমেরিকা। ২৪ আগস্ট মার্কিন সরকারের নতুন আইন জারি, যার বলে কিউবাকে সাহায্য বন্ধের জন্য অন্য রাষ্ট্রকে চাপ দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৬০ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে  শুরু হয় কিউবার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবরোধ। পরিকল্পিতভাবে কিউবাকে ভাতে মারা ব্যবস্থা।  তারপর থেকে ছদশকের উপর একের পর বেআইনী ব্যবস্থা নিয়ে অবরোধকে সর্বাত্মক রূপ দিয়েছে আমেরিকা। কার্যত কিউবার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ চালিয়ে আসছে আমেরিকা। সমাজতান্ত্রিক কিউবাকে পথ হাঁটতে হয়েছে  সেই যুদ্ধের মোকাবিলা করেই।

আমেরিকা ও তার সাগরেদরা ভেবেছিল ইউরোপে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পর কিউবা ভেঙে পড়বে। আমেরিকার স্বপ্ন সফল হয়নি। ফলে  তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পর কিউবার উপর চাপ বাড়াতে থাকে ওয়াশিটন। ১৯৯৬ সালের মার্চে রাষ্ট্রপতি ক্লিন্টন প্রশাসন জারি করে হেমস-বার্টন আইন। কিউবায় বাণিজ্য করে এমন বিদেশী কোম্পানীগুলিকে শাস্তি দিতে। রাষ্ট্রসংঘে বছরের পর বছর এই  অবরোধ তুলে নেওয়ার পক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হলেও ওয়াশিংটন তা মানেনি।  অর্থনৈতিক অবরোধের ফাঁস আরও শক্ত হয়।

শুধু অর্থনৈতিক অবরোধ নয়, কিউবার বিরুদ্ধে এমনকি মনস্তাত্বিক যুদ্ধ চালাতেও অজস্র অর্থ খরচ করছে আমেরিকা। চালাচ্ছে সাইবার যুদ্ধ। বেনজির তৎপরতায়।আন্তর্জাতিক আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে, সরাসরি কিউবায় অন্তর্ঘাত চালাতে আমেরিকা মদত দিচ্ছে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে।

গুয়ান্তানামো বে-তে  মার্কিন সামরিক ঘাঁটি বজায় রেখে জবরদস্তি  দখল করে রেখেছে কিউবার ভূখন্ড। বন্দীদের উপর নৃশংস অত্যাচারের জন্য গুয়ান্তানামো বে-র মার্কিন সামরিক ঘাঁটি গোটা বিশ্বে ধিকৃত।

গুয়ান্তানামো বে

১৯৯০-র দশকে কিউবা সংহতি আন্দোলন শুধু আন্তরাষ্ট্রীয় উদ্যোগ থাকেনি। দেশেদেশে কিউবা সংহতি আন্দোলনের গণআন্দোলনের রূপ নেয়। আমাদের দেশেও জাতীয় স্তরে ও রাজ্যে রাজ্যে সংহতি সংগঠন গড়ে উঠে। কিউবার প্রতি সংহতি জানিয়ে আন্তর্জাতিক সংহতি সম্মেলন সংগঠিত হতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন একটি দেশকে ঘিরে গণমানুষের এই স্বেচ্ছামূলক সক্রিয়তা অভূতপূর্ব।

কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের মানুষও সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় পরবর্তী কঠিন পরিস্থিতিতে বারবার সমাজতান্ত্রিক কিউবার পাশে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৯২ সালের ৭ এপ্রিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে সভাপতি করে এরাজ্যে ‘কিউবা সংহতি কমিটি’ গঠিত হয়েছিল। সেই কমিটির উদ্যোগেই ১৯৯২সালের ৯-১৫ আগস্ট পালিত হয়েছিল ‘কিউবা সংহতি সপ্তাহ’। ১৯৯৫ সালের ২২-২৪ সেপ্টেম্বর  প্রথম এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কিউবা সংহতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কলকাতাতেই। উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। প্রসঙ্গত, ১৮৯৫ সালের ২২-২৪ সেপ্টেম্বর   কলকাতাতেই প্রথম এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কিউবা সংহতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল । উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ।

সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি সমাজতান্ত্রিক কিউবার সমর্থনে  লাগাতার নানাবিধ সংহতিমূলক  কর্মসূচী পালন করে আসছে।

১৯৭৩ সালে কোলকাতা বিমানবন্দরে ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে জ্যোতি বসু এবং প্রমোদ দাশগুপ্ত

মার্কিন চোখ রাঙানী উপেক্ষা করে আজকের লাতিন আমেরিকায় বলিভারিয়ান বিকল্পের নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কিউবা। লাতিন আমেরিকায় একের পর এক দেশে বামপন্থী ও বাম-ঘেঁষা সরকার ক্ষমতায় এসেছে। শত ষড়যন্ত্র করেও আমেরিকা এই রাজনৈতিক অগ্রগতি ঠেকাতে পারছে না।বলিভারিয়ান বিকল্পের অভিযান প্রত্যাখ্যান করেছে তথাকথিত ওয়াশিটন ঐকমত্যকে। আমেরিকা ও কানাডাকে বাদ দিয়ে লাতিন আমেরিকার দেশগুলি গঠন করেছে তাদের যৌথ মঞ্চ ‘সেলাক’। শুধু পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাড়াতে নয়, নয়া উদারনীতির বিরুদ্ধে একত্রে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও তারা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। কিউবাকে একঘরে করতে গিয়ে লাতিন আমেরিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই আজ নি:সঙ্গ। শুধুমাত্র ব্রাজিলে বোলসেরানো সরকার তাদের সঙ্গী।

 কিউবা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। রাষ্ট্রসংঘের মঞ্চেও কিউবার পাশে বিপুল সংখ্যক দেশ। কিউবা কখনই একা নয়। পৃথিবী জুড়ে প্রায় দুহাজার কিউবা সংহতি কমিটি আছে। এর কোনো তুলনা নেই। বিপ্লবী কিউবা আন্তর্জাতিক সংহতি বোধের মূর্ত প্রতীক।

খোদ রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদেও ১৯৯২ সাল থেকে সদস্য দেশগুলি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায়  কিউবার বিরুদ্ধে মার্কিন অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রস্তাব পাশ করছে। গত ২৩ জুন রাষ্ট্রসংঘে ১৮৪টি দেশ কিউবার পক্ষে ভোট দেয়। ব্রাজিলসহ  তিনটি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। বিপক্ষে ভোট দেয় মাত্র দুটি দেশ- আমেরিকা ও ইজরায়েল।

কিউবা মার্কিন সম্পর্কে কিছুটা হলেও ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হয় রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার আমলে। ২০১৫ সালে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুন:স্থাপিত হয়। পরের বছর মার্চে ওবামা কিউবা সফরে যান। ৮৮ বছর পর কোনো মার্কিন রাষ্ট্রপতির হাভানা সফর। অর্থনৈতিক অবরোধকারী ব্যবস্থাগুলি অবশ্য প্রত্যাহিত হয়নি। ওবামার পর রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প কিউবা সম্পর্কে পুরোনো অবস্থানে ফিরে যান। ট্রাম্প প্রশাসন কিউবার বিরুদ্ধে ২৪৩টি নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

মনে রাখতে হবে, গত প্রায় দুবছর ধরে করোনা অতিমারি’র জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো অর্থনৈতিক সমস্যা বেড়েছে কিউবারও। কিউবার বিদেশী মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র পর্যটন থেকে আয় কমেছে চারভাগের প্রায় তিনভাগ। অবরোধের ফলে খাদ্য আমদানিতে বাড়তি সমস্যার মুখে। আয় কমেছে রপ্তানি খাতে। অবরোধের সমস্যা তীব্রতর। কিন্তু তার মধ্যেও করোনা মোকাবিলায় গোটা বিশ্বে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে কিউবা। করোনায় প্রতি দশ লক্ষে কিউবায় মৃত্যু ১৩৯।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি দশ লক্ষে কোভিডে মৃত্যু ১,৮৭১। দেশীয় উদ্যোগে পাঁচটি ভ্যাকসিন তারা তৈরি করেছে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমস্ত সরকারী ব্যবস্থা কিউবা সরকার বজায় রেখেছে। কিউবার পরিচয় তার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য। কিউবা ব্যতিক্রমী তার বৈপ্লবিক রূপান্তরের জন্য।

সমস্যা রয়েছে, কিন্তু তার মধ্যেও কিউবার সরকার দেশের মানুষকে সংহত করেই সমস্যা মোকাবিলা করছে। দেশের মানুষকে সংঘবদ্ধ করে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে কিউবা।‘হয় সমাজতন্ত্র, নয় মৃত্যু’– কিউবা লড়াই করছে বীরের মতো। আত্মমর্যাদা নিয়েই কিউবা সমস্ত প্রতিকূলতার মোকাবিলা করছে।  অশান্তি বাঁধানোর চেষ্টা হতে কিউবার রাষ্ট্রপতি দেশবাসীকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান। সেনাবাহিনীকে নয়। সাইবার যুদ্ধ চালিয়ে কিউবার মনোবল ভাঙতে ব্যর্থ ওয়াশিংটন। ষড়যন্ত্রকারীরা আসলে মার্কিনী অবরোধকে আরও শক্ত করার অছিলা বানাতে চায়।

সাম্প্রতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিউবা সংহতি আন্দোলন সংগঠিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগের রূপ পেয়েছে। প্রথম সারির মার্কিন দৈনিক ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ চার শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষরিত  বিবৃতি ছেপেছে কিউবার বিরুদ্ধে অবরোধ তোলার দাবি জানিয়ে। কিউবা সংহতি আন্দোলন এক অর্থে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনেরই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

মনকাডা দিবস এবছর যেন নতুন প্রতিজ্ঞার রূপ নিয়েছে। আরও জোরদার করতে হবে কিউবা সংহতি আন্দোলনকে।  এদেশের মাটিতেও। কারন ষড়যন্ত্রকারীরা এখনকার মতো পিঠটান দিলেও ষড়যন্ত্র একেবারে থেমে যাবে না।

এবারের মনকাডা দিবসে  আমাদের দাবি-

আমেরিকার মাটিতে কিউবা-বিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক ও সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ বন্ধ হোক ।

কিউবার বিরুদ্ধে জারি করা বেআইনি অর্থনৈতিক অবরোধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করুক মার্কিন সরকার ।

কিউবার ভূখন্ড গুয়ান্তানামো বে-তে  মার্কিন সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করা হোক ।

কিউবা-বিরোধী মার্কিন ষড়যন্ত্রের নিন্দা করুক ভারত সরকার।

সংহতি কর্মসূচীতে চাই সবার অংশগ্রহণ। আপনিও এগিয়ে আসুন।

Spread the word

Leave a Reply