১৫-১৭ মার্চ, কলকাতায় হতে চলেছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র ২৬তম রাজ্য সম্মেলন। ব্রিটিশ শাসনে থাকা ভারতের অবিভক্ত বাংলায় কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম রাজ্য সম্মেলন হয় ১৯৩৪ সালে। মেটিয়াবুরুজে। সর্বহারা-কৃষক মেহনতি মানুষের স্বার্থে শ্রেণিসংগ্রাম, গণআন্দোলন পরিচালনায় এই রাজ্যে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস উজ্জ্বল। রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর অনন্য নজির। মেটিয়াবুরুজ থেকে কলকাতা। প্রথম থেকে ২৬তম সম্মেলন। সেই ইতিহাসেরই গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য রাজ্য ওয়েবডেস্কের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হবে চারটি পর্বে। আজ তারই দ্বিতীয় পর্ব।
৭ম রাজ্য সম্মেলন ( ১৬-২১ জানুয়ারি, ১৯৫৬)
এই সময়কালে পার্টির সদস্যসংখ্যা ছিল ১০,৭৭৫। কলকাতার মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে ৩৪৭ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে আয়োজিত এই সম্মেলনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)-এর সাথে অন্যান্য বাম্পন্থী পার্টিগুলির ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়ে প্রস্তাব নেওয়া হয়, সেই প্রস্তাবের শিরোনাম ছিল ‘আমাদের করণীয় কাজ’। দেশে দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে সম্মেলন থেকে ঘোষণা করা হয় পার্টির পক্ষ থেকে গণতান্ত্রিক সরকার গঠনেই জোর দেওয়া হবে। ৩৫ জনের প্রাদেশিক কমিটি গঠন হয়, রাজ্য সম্পাদক হিসাবে পুনর্নিবাচিত হন জ্যোতি বসু।
৮ম রাজ্য সম্মেলন (৮-১২ এপ্রিল, ১৯৫৯)
৩১৩ জন প্রতিনিধি সমেত কলকাতায় আয়োজিত হয় এই সম্মেলন। শান্তি ও সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে তীব্রতর সংগ্রাম পরিচালনা করা, বিকল্প সরকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে বাম ঐক্যকে দৃঢ়করণের লক্ষ্য স্থির করা হয়। ১০১ জনের রাজ্য পরিষদ গঠন সহ জ্যোতি বসুকেই পুনরায় রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
৯ম রাজ্য সম্মেলন (১৭-২২ জানুয়ারি, ১৯৬১)
এই সম্মেলনে ৩০৯ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ৮১ পার্টির দলিলের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। পার্টিতে ঐক্য প্রতিষ্ঠার কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, নতুন ভারত গড়ার লক্ষ্যে ‘বৃহত্তম গনভিত্তি সম্পন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন’ গড়ে তুলতে মিত্র শক্তিসমূহকে কাছে টেনে আনাকেই লক্ষ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এই সময় পার্টির সদস্যসংখ্যা ছিল ১৭,৪৯৫। পুনরায় ১০১ জনের রাজ্য পরিষদ গঠিত হয়, রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রমোদ দাশগুপ্ত।
১০ম রাজ্য সম্মেলন (২২-২৬ অক্টোবর, ১৯৬৪)
৬ষ্ঠ রাজ্য সম্মেলনের সময় থেকেই পার্টির মধ্যে মতাদর্শগত বিতর্ক তীব্রতা পায়। শ্রেণিসংগ্রামের লাইন বনাম শ্রেণিসহযোগিতার লাইনের দ্বন্দ্ব তীব্রতম আকার ধারন করলে ভাঙন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। ১৯৬৪ সালের এপ্রিল মাসে পার্টির জাতীয় পরিষদ থেকে ৩২ জন সদস্য বেরিয়ে এসে প্রকৃত মার্কসবাদী – লেনিনবাদী পার্টি গঠনের আহ্বান জানান। তেনালি কনভেনশন আয়োজিত হওয়ার পরেই পশ্চিমবঙ্গে ১০ম রাজ্য সম্মেলন হয় কলকাতায়। এই সম্মেলনে তেনালি কনভেনশনের প্রস্তাবসমূহ সমর্থিত হয়, সংশোধনবাদ ও বুর্জোয়া সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনার সিদ্ধান্ত সহ ৭ম পার্টি কংগ্রেসের আহ্বান জানানো হয়। এই সময় পার্টির সদস্যসংখ্যা ছিল ১৩,৪২৪ জন। সম্মেলন থেকে প্রমোদ দাশগুপ্ত রাজ্য সম্পাদক হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হন।
১১শ রাজ্য সম্মেলন (৬-৯ ডিসেম্বর, ১৯৬৮)
রাজ্যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। পার্টির ১১শ রাজ্য সম্মেলন সতর্কবার্তা দেয় এখনও সংশোধনবাদ ও হঠকারী লাইনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায় নি। গণআন্দোলন দ্বারা যুক্তফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও অচিরেই তা খারিজ করে প্রফুল্ল ঘোষের মন্ত্রীসভা ক্ষমতাসীন হয়, পরে সেই সরকারকেও বাতিল করে জারী হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। রাজ্য বিধানসভার মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবীতে রাজ্য উত্তাল হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে দমদমে আয়োজিত হয়েছিল ১১শ রাজ্য সম্মেলন। এই সম্মেলন থেকেই জনগণতন্ত্র গঠনের জন্য জনগনতান্ত্রিক মোর্চা গঠনের আহ্বান জানানো হয়, ৪২৮ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে গঠিত হয় ৩৩ জনের রাজ্য কমিটি। ৭জনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সহ প্রমোদ দাশগুপ্ত রাজ্য সম্পাদক হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হন।
১২শ রাজ্য সম্মেলন (১৬-২০ জানুয়ারি, ১৯৭২)
১৫-১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ সম্মেলন পূর্বনির্ধারিত থাকলেও বিশেষ পরিস্থিতিতে তার পরিবর্তন করতে হয়। সম্মেলন আয়োজিত হয় মেদিনীপুরে। কংগ্রেসের অপশাসন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামে প্রস্তুত রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে ঐক্য স্থাপন সহ গনতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানানো হয় এই সম্মেলনে। ৪৬৯ জন প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ৪২ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়। প্রমোদ দাশগুপ্ত পুনরায় রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৩শ রাজ্য সম্মেলন (৭-১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮)
পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনুকূল পরিবর্তন ঘটে। কলকাতার শিশিরমঞ্চে আয়োজিত এই সম্মেলন থেকে দীর্ঘমেয়াদী জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রেক্ষিতে কিছু আশু কর্মসূচীর পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। সেই লক্ষ্যের অনুসারী থেকেই বামফ্রন্ট সরকার পরিচালনা, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা, ভূমিসংস্কারের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ এবং গণতন্ত্র ও ব্যাক্তিস্বাধীনতা রক্ষার প্রশ্নে জোরদার আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সম্মেলন থেকে ৫১ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়, রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রমোদ দাশগুপ্ত।
১৪শ রাজ্য সম্মেলন (২৭ ডিসেম্বর ১৯৮১ – ৩ জানুয়ারি ১৯৮২)
কলকাতার মহাজাতি সদনে এই সম্মেলন আয়োজিত হয়। পার্টির ব্যাপক প্রভাব বৃদ্ধি করা, যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির পক্ষে জনমত গঠন এবং বামফ্রন্ট সরকার বিরোধী চক্রান্ত প্রতিরোধের কর্মসূচি গৃহীত হয়। পার্টিতে সমৃদ্ধি জনিত সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়। আহ্বান জানানো হয় জনগনের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে সংগঠন মজবুত করার। ৮৩ জনের রাজ্য কমিটির সাথেই প্রমোদ দাশগুপ্ত রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া, গনশক্তি – লেখার সাথে সদৃশতা বজায় রেখে ছবি যুক্ত হয়েছে, সবক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ছবি পাওয়া যায় নি
তথ্যসুত্রঃ গনশক্তি
*********************
One comment