মহান বিপ্লবী, পথপ্রদর্শক ও শিক্ষক কমরেড লেনিন
এবছর ২২শে এপ্রিল বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের অনন্য নেতা কমরেড লেনিনের ১৫২ তম জন্মদিবস। কমরেড লেনিনের নেতৃত্বেই মহান নভেম্বর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রুশ দেশের বুকে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদ সহ সমস্ত ধরণের শোষণ ব্যবস্থার উচ্ছেদ করে শোষণহীন ব্যবস্থা হিসাবে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। নভেম্বর বিপ্লবের মধ্য দিয়েই মার্কসীয় মতবাদের প্রথম সফল রুপায়ন ঘটল। রুশ দেশের বাস্তব পরিস্থিতিতে কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে রুশ দেশের শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবী পার্টি মার্কসীয় মতবাদকে প্রয়োগ করলেন, সম্পন্ন করলেন বিপ্লব। এটা কে অস্বীকার করতে পারে যে ঐ মহান নভেম্বর বিপ্লবের মধ্য দিয়েই মার্কসীয় মতবাদের বার্তা সমগ্র বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত জনগণের কাছে পৌঁছায়। নভেম্বর বিপ্লব রুশ দেশে সংগঠিত হলেও এই বিপ্লবের তাৎপর্য ছিল আন্তর্জাতিক। বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শোষণ ব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটিয়ে শোষণহীন ব্যবস্থার দিকে মানব সভ্যতার অগ্রগতি সুনিশ্চিত করার বার্তা দিল নভেম্বর বিপ্লব।
প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে মার্কসবাদকে সমৃদ্ধ করলেন লেনিন
লেনিন সর্বাগ্রে ছিলেন একজন মার্কসবাদী। মার্কসীয় মতবাদকে ব্যখ্যা করতে গিয়ে তিনি দেখিয়েছেন যে কার্ল মার্কস ও ফ্রেডেরিক এঙ্গেলস উনবিংশ শতাব্দির বিশ্বে জ্ঞানের অগ্রগতির শ্রেষ্ঠ তিনটি ধারা, যথাক্রমে – জার্মান দর্শন, ইংল্যান্ডের অর্থনীতি এবং ফরাসী সমাজতন্ত্রের তত্ব, এগুলিকে তিনি অবলম্বন করে অগ্রসর হয়েছিলেন। জার্মান দর্শনের সর্বশ্রেষ্ঠ বিকাশ ঘটেছিল হেগেলিয় দর্শনের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু হেগেলীয় দর্শনে দ্বন্দ্বতত্ব ভাববাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। মার্কস এবং এঙ্গেলস দ্বন্দ্বতত্ত্বকে ভাববাদ থেকে বিযুক্ত করে তাকে স্বস্থানে প্রতিষ্ঠা করলেন। দ্বন্দ্বতত্ত্বকে তারা বস্তুবাদের সঙ্গে সংযুক্ত করলেন। দ্বন্দ্ব মূলক বস্তুবাদই হল মার্কসীয় দর্শন।
ইংল্যান্ডেই প্রথম অর্থনীতি বিজ্ঞান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শোষণের উৎসকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করার ঐতিহাসিক কর্তব্য মার্কসই প্রথম সম্পাদন করলেন। উদ্বৃত্ত মুল্যের তত্বকে তুলে ধরলেন। পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রক্রিয়ার অভ্যন্তরেই উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টি হয়। পুঁজিপতি এই উদ্বৃত্ত মূল্য আত্মসাৎ করে। উদ্বৃত্ত মূল্যের একটা অংশই হল মুনাফা। মুনাফাই হল পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চালিকাশক্তি। মার্কসবাদের এটাই হল ব্যাখ্যা।
পুঁজিবাদের অবসান এবং শোষণহীন সমাজের প্রতিষ্ঠা বিপ্লবী সংগ্রাম ব্যাতিরেকে সম্ভব নয় এবং এই বিপ্লবী সংগ্রামের অবধারিত নেতা শ্রমিক শ্রেনী। শ্রমিক শ্রেনীর নেতৃত্বের ভুমিকা পালনের জন্যই প্রয়োজন তাদের নিজস্ব সংগঠন – কমিউনিস্ট পার্টি। শ্রমিক শ্রেনীর পাশে কৃষকসহ সমস্ত শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত জনসাধারনকে যুক্ত করে ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবী সংগ্রাম শ্রমিকশ্রেণীর নিজস্ব সংগঠন অর্থাৎ কমিউনিস্ট পার্টি ব্যাতিরেকে সম্ভব নয়। সমাজতন্ত্র হল শোষণহীন ব্যবস্থার প্রথম স্তর। পরিকল্পিতভাবে সমাজতন্ত্রকে গড়ে তোলা ও তাকে পরিচলানা করার মধ্য দিয়ে মানবসমাজ এগিয়ে যাবে শোষণহীন ও শ্রেণীহীন ব্যবস্থা সাম্যবাদ বা কমিউনিজমের দিকে। সমগ্র বিশ্বব্যাপি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি।
এইভাবেই লেনিন মার্কসবাদের তিনটি উৎস এবং তিনটি উপাদান সহজবোধ্য করে উপস্থিত করলেন।
তিনি সমৃদ্ধ করলেন মার্কসীয় দর্শন
দ্বন্দ্বতত্ব বা দ্বান্দ্বিকতাকে বিকাশের ধারার সুগভীর মতবাদ হিসাবে লেনিন ব্যাখ্যা করলেন। তিনি এটাও দেখালেন যে নির্দিষ্ট পরিস্থিতির সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণ – এটাই হল দ্বন্দ্বতত্বের মর্মবস্তু।
উনবিংশ শতাব্দির শেষে ও বিংশ শতাব্দির শুরুতে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে ঐতিহাসিক আবিস্কারগুলি সম্ভব হয়েছিল তাকে বিকৃতভাবে ব্যখ্যার মধ্যে দিয়ে দ্বান্দ্বিক মতবাদকে নস্যাৎ করার গুরুতর প্রয়াস চলছিল। “মেটেরিয়ালিজম অ্যান্ড এম্পিরিও ক্রিটিসিজম” গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে লেনিনেই সমস্ত আক্রমনগুলির জবাব দিলেন। তিনি বিশদে দেখালেন যে বিজ্ঞানের এই সমস্ত আবিস্কারগুলি প্রকৃত অর্থে দ্বন্দ্বতত্বকে আরও বলিষ্ঠ করেছে, আরও শক্তিশালী করেছে। দ্বন্দ্বতত্ব বা দান্দ্বিকতার তত্বকে লেনিন আরও পুষ্ট করলেন, শক্তিশালী করলেন। এভাবেই তিনি মার্কসীয় দর্শনকে সমৃদ্ধ করলেন।
সাম্রাজ্যবাদকে তিনি ব্যাখ্যা করলেন
লেনিন যখন মার্কসীয় মতবাদকে প্রয়োগ করে বিপ্লবী সংগ্রাম গড়ে তুলছিলেন সেই সময় ইউরোপের মাটিতে সাম্রাজ্যবাদের আবির্ভাব ঘটে। পুঁজিবাদের বিকাশের ধারাতেই সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব হয় – লেনিন সেটাই দেখালেন। পুঁজিবাদের বিকাশের ধারাতেই লগ্নিপুঞ্জির (ফিন্যান্স ক্যাপিটাল) আবির্ভাব ঘটে, এই লগ্নীপুঁজি হল সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম বৈশিস্ট। সাম্রাজ্যবাদের যুগে একচেটিয়া পুঁজি দেশের বা রাষ্ট্রের অর্থনীতি সহ সর্বক্ষেত্রকে কীভাবে গ্রাস করে, সাম্রাজ্যবাদ প্রসঙ্গে আলোচনায় লেনিন সেই বিষয়গুলি আলোচনা করলেন “সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়” অসাধারণ গ্রন্থে যা মার্কসীয় তত্বভান্ডারকে সমৃদ্ধ করল। লগ্নী পুঁজি তার জন্মলগ্ন থেকেই বাজারের সন্ধানে বিশ্বব্যাপী ছুটে বেড়ায়। বিশ্ববাজারই তার অভিস্ট লক্ষ্য। বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজির ভয়ংকর কার্যধারা আমাদের চোখের সামনে।
সাম্রাজ্যবাদের যুগে বিশ্ববিপ্লবের এক নতুন সম্ভাবনা উপস্থিত হয়। সাম্রাজ্যবাদ যেহেতু সমগ্র বিশ্বকে পুঁজির নিগড়ে বেঁধে ফেলে তাই সর্বহারা বিপ্লবের ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনা উপস্থিত হয়। এমনকি পশ্চাদপদ পুঁজিবাদী দেশেও, যদি পরিস্থিতি উপযুক্ত হয় তাহলে সেই দেশেও সর্বহারা বিপ্লব সংগঠিত হতে পারে এবং বিজয় অর্জন করতে পারে। সংশ্লিষ্ট দেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে এই ধরণের পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে বিপ্লবের লক্ষ্যে ব্যবহার করার যোগ্যতা এবং সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। লেনিন শুধুমাত্র সাম্রাজ্যবাদকে ব্যাখ্যা করে মার্কসীয় মতবাদকে সমৃদ্ধই করলেন না, তিনি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সামনে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করলেন। সাম্রাজ্যবাদের যুগে বিপ্লবের সম্ভাবনার লেনিনীয় বক্তব্যের প্রয়োগই ঘটল রুশ বিপ্লবে। তত্ব ও কর্মের অসাধারণ মেলবন্ধন ঘটেছিল কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে।
বিপ্লবী সংগ্রামের তত্বকে লেনিন উন্নত করলেন
প্যারি কমিউনের নজীরকে সামনে রেখে মার্কস প্রায়সই বলতেন যে সর্বহারা বিপ্লব ও সর্বহারা রাষ্ট্রের রূপ সম্পর্কে যাদের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে তাদের দেখা উচিত প্যারি কমিউনের দিকে। ১৮৭১ সালের ১৮ই মার্চ সংগ্রামী কৃষকরা শাসকশ্রেণীকে বিতাড়িত করে প্যারি নগরীর শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিল। বিপ্লবী সংগ্রামের ইতিহাসে এই ঘটনা “প্যারি কমিউন” হিসাবে চিহ্নিত। এই কমিউন বাহাত্তর দিন স্থায়ী ছিল। ফরাসী শাসক গোষ্ঠী সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে একজোট করে রক্তের বন্যার মধ্যে দিয়ে প্যারি কমিউনকে পরাস্ত করেছিল। প্যারি কমিউনের পতনের কারণগুলি স্বয়ং কার্ল মার্কস বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনা আজ সমগ্র পৃথিবীর সমাজ বিপ্লবীদের কাছে মূল্যবান শিক্ষা। লেনিন প্যারি কমিউনের পতন সম্পর্কে মার্কসীয় শিক্ষাকে আত্মস্থ করেছিলেন। বিপ্লবের স্তর সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা গড়ে তুলতে তিনি বিশেষ ভুমিকা নিয়েছিলেন। সমাজতন্ত্রের অভিমুখে বিপ্লবী সংগ্রাম অগ্রসর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের আর্থ-সামাজিক প্রশ্নটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হয়। গণতান্ত্রিক বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের দ্বান্দ্বিক সম্পর্কটি তিনি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করলেন। ১৯০৫ সালে রুশদেশে বিপ্লব ব্যার্থ হবার পর প্রতিক্রিয়ার শক্তির ভয়ংকর আক্রমনের সামনে বিপ্লবী শক্তিগুলিকে রক্ষা করার, পুনর্গঠিত করার অত্যন্ত জটিল ও গভীর সংগ্রামে তিনি নেতৃত্ব দিলেন। ১৯১৭-র মার্চ বিপ্লব সংগঠিত হল এবং কেরেনস্কি সরকার স্থাপিত হল। এহেন পরিস্থিতিতে সর্বহারা এবং তার বিপ্লবী পার্টির কর্তব্য তিনি বিবৃত করলেন দেশের বাইরে থেকে। এই সময় তিনি দেশের বাইরে নির্বাসিত ছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি রুশদেশে প্রবেশ করলেন এবং শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে বিপ্লবী সংগ্রামের কর্তব্য তুলে ধরলেন “এপ্রিল থিসিস” এর মাধ্যমে। অগ্রসর হল বিপ্লবী সংগ্রাম। শেষ পর্যন্ত নভেম্বর বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে শ্রমিকশ্রেনী ক্ষমতা দখল করল, প্রতিষ্ঠিত হল সমাজতান্ত্রিক রুশ দেশ। এই দেশই পরে সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নে পরিনত হয়।
“রাষ্ট্র ও বিপ্লব” গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রের অন্তর্বস্তু এবং সর্বহারা বিপ্লব সম্পর্কে অত্যন্ত মূল্যবান শিক্ষা ও পথনির্দেশ করলেন। বিপ্লব সফল হবার পরে মাত্র সাত বছর বেঁচে ছিলেন লেনিন। এই সময় বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জাপান সম্মিলিতভাবে শিশু সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা চেষ্টা করেছিল। দেশের অভ্যন্তরে প্রতিবিপ্লবীদের মদত যুগিয়েছিল। এই ষড়যন্ত্রকে পরাস্ত করেই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে রক্ষা করা এবং একটি পশ্চাদপদ দেশে সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার ঐতিহাসিক কার্যধারায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
মার্কসীয় মতবাদকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে লেনিনের ঐতিহাসিক অবদানকে স্মরণে রেখেই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মতবাদকে মার্কসবাদ – লেনিনবাদ হিসাবে অভিহিত করার সিদ্ধান্ত হয়।
তাঁর কাছে মার্কসবাদ ছিল পথনির্দেশক
মার্কসবাদ কোন আপ্তবাক্য নয়, এটা চলার ক্ষেত্রে পথনির্দেশক। লেনিন এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। তাই আমরা তার সারাজীবনে দেখি তিনি মতবাদকে পরিস্থিতি অনুসারে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন। রুশ দেশের বৈশিষ্ট অনুধাবন করার জন্য তিনি রুশ দেশে পুঁজিবাদের বিকাশের ধারাকে নির্দিষ্টভাবে অনুশীলন করলেন। “ডেভেলপমেন্ট অফ ক্যাপিটালিজম ইন রাশিয়া” – এই রচনার মধ্যে দিয়ে তিনি এই কাজ করেন। এর পরবর্তী সময়ে শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্তব্যগুলিকে তিনি নির্দিষ্ট করলেন “কি করিতে হইবে” এই পুস্তকে। রুশ পরিস্থিতিতে সর্বাহারা বিপ্লবের কর্তব্য নির্ধারণ করলেন “গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসির দুই কৌশল” এই পুস্তকে। বিপ্লব পরবর্তী রুশদেশে রাষ্ট্রের উপর শ্রমিকশ্রেনীর নেতৃত্ব শক্তিশালী করার জন্য লেনিনের দুইটি ঐতিহাসিক রচনা, “বলশেভিকরা কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে” এবং “সোভিয়েত সরকারের সামনে আশু কর্তব্য” এইগুলি ছিল বাস্তব পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে অনুধাবন করার অতি মূল্যবান ফলশ্রুতি।
লেনিন আজ আরও বেশী প্রাসঙ্গিক
লেনিনের মৃত্যুর পর ৯৭ বছর অতিক্রান্ত। বিগত ৯৭ বছরে বহু ঘটনা, বহু পরিবর্তন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এমনকি কয়েকটি সমাজতান্ত্রিক দেশে বিপর্যয়ের ঘটনাও আমরা দেখেছি। কিন্তু এই ৯৭ বছরে পুঁজিবাদ মানেই শোষণ, বৈষম্য, নিপীড়ন, বঞ্চনা এগুলি আরও নগ্নভাবে সামনে এসেছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি মানব সভ্যতার সামনে যে বিপুল সম্ভাবনা দ্বার উন্মুক্ত করেছে তার সুযোগ থেকে বঞ্চিত সমগ্র বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। মুষ্টিমেয়র হাতে বিশাল সম্পদ – অথচ অগনিত জনগণ বেঁচে থাকার উপাদান থেকেও বঞ্চিত। ন্যুনতম মানবিক অধিকারগুলিও তাদের জীবনে অনুপস্থিত। বর্তমান সময়ে বিশ্বের সমস্ত পুঁজিবাদী দেশে নয়া উদারনীতির প্রয়োগের পরিণতি আমরা প্রত্যক্ষ করছি। ভারত সহ বিশ্বের সমস্ত পুঁজিবাদী দেশে বেকারি, দারিদ্র্য, চরম খাদ্যাভাব – বুভুক্ষা, অশিক্ষা ও স্বাস্থ্যহীনতা, বৈষম্য চরমভাবে বিরাজ করছে। মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি সমগ্র পুঁজিবাদী দুনিয়ায় ক্রমান্বয়ে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। বেঁচে থাকার অধিকার, বিশুদ্ধ পানীয় জল ও সুস্থ পরিবেশের অধিকার, শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কাজের অধিকার চরমভাবে অবহেলিত ও আক্রান্ত। সংকটজর্জরিত পুঁজিবাদের প্রকৃতরূপ আজ আমাদের সামনে। সংকট থেকে মুক্ত হবার লক্ষ্যে পুঁজিবাদ নানা পন্থাই নিয়েছে। ওয়েলফেয়ার ইকনমি, মিলিটারি – ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স, নয়া উদারনীতি – কিন্তু কোনকিছুতেই পুঁজিবাদের অন্তঃসারশ্যুন্যতাকে আড়াল করা যায়নি। পুঁজিবাদী সংস্কারমূলক পদক্ষেপ, সমাজ আজ যে গভীরতর সংকটের আবর্তে নিমজ্জিত তার থেকে পুঁজিবাদকে কিছুতেই রক্ষা করতে সমর্থ নয়। পুঁজিবাদের পতন ঘটিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ব্যাতিরেকে সমাধানের অতীত সংকট থেকে মানব সমাজ ও সভ্যতাকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। বিষয়ীগত (Subjective) উপাদানগুলিতে অনেক ধরণের দুর্বলতা বিরাজ করছে, সেই দুর্বলতা অতিক্রম করে দেশে দেশে সমাজতন্ত্রকে জয়যুক্ত করাই একমাত্র বিকল্প। এই লক্ষ্যে প্রতিটি দেশের বাস্তব পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করেই বিপ্লবের কর্মপন্থা স্থির করতে হবে। সমস্ত ধরণের সংগ্রামের সুযোগকে কাজে লাগিয়েই এই লক্ষ্যে ধৈর্যের সাথে এগিয়ে চলা ছাড়া কমিউনিস্টদের সামনে অন্য কোন বিকল্প নেই। এই কর্তব্য পালনে কমরেড লেনিনের শিক্ষা অমূল্য সম্পদ। বর্তমান পরিস্থিতি, এই যুগ সন্ধিক্ষণে কমরেড লেনিন আজ আরও প্রাসঙ্গিক।