শ্রদ্ধেয় কনক মুখার্জি—আমাদের কনকদি থাকবেন মনের গভীরে – কনীনিকা ঘোষ

“মনে পড়ে ছোট্ট সেই মেয়েটির কথা যে পায়ে মল পড়ে ঝুমঝুম করে বাজিয়ে ছুট্টে এসে বসে পড়তো ঠাম্মা সৌদামিনী দেবীর কোলে, নামবে না কিছুতেই”

এভাবেই ‘মনে মনে’ বইতে কনকদি নিজের স্মৃতিচারণার প্রথম দিকে লিখেছিলেন। ভাবতেও অবাক লাগে, স্মৃতিশক্তি কত প্রবল হলে এত শৈশবের কথাও গল্পের ছলে মনে থাকে। হ্যাঁ কনক দি ছিলেন এরকমই, এক চলমান অভিজ্ঞতার ভান্ডার। আমি তাঁকে পাইনি খুব নিবিড়ভাবে, কারণ আমরা তখন মহিলা সমিতিতে নেহাতই বালখিল্য। এত ঐতিহ্য আর পরম্পরাগত এক সংগঠনের এরকম নেত্রী যিনি আমাদের কাছে ছিলেন আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো! তাঁকে দেখে দিশা ঠিক করা যায়, পথ হাঁটা যায় তাঁর স্নেহের পরশে। অবশ্য খানিক ব্যক্তিগতভাবে পেয়েছি আমিও, যা আমাকে ভরিয়ে রাখবে চিরকাল! তখন সদ্য এস এফ আই ছেড়েছি, আস্তে আস্তে মহিলা সমিতি অফিসে যাতায়াত শুরু হয়েছে, কনকদির দৃষ্টিশক্তি তখন প্রায় নেই বললেই চলে! নাম শুনে গায়ে হাত বুলিয়ে বলতেন, “ছাত্র করে এসেছ, লিখতে হবে কিছু শুধু বললে হবে না; তোমরাই তো লিখবে। নতুনেরা না লিখলে কেমন করে হবে!” আজ যখন জন্মশতবর্ষে ওনাকে নিয়ে লিখতে বসেছি বারে বারে ঐ কথাগুলো মনে পড়ছে, মনে পড়ছে তার গায়ে হাত বুলিয়ে বুঝে নেওয়া, কে এলো, তার অকৃপণ স্নেহের কথা। আসলে কনকদি মানেই নতুন কিছু,নতুন বোধ। সবসময় পরবর্তী প্রজন্মকে তৈরি করার মন নিয়ে পথ চলতেন। সংগঠক মানে সে একাধারে বলবে, লিখবে কাজ করবে, হবে চেতনায়, মননে মতাদর্শে সমৃদ্ধ।
একথা তিনি নিজে মনে করতেন বারবার মনে করাতেন।

৩০শে ডিসেম্বর, ১৯২১ সালে শ্রদ্ধেয়া কনক মুখার্জি জন্মগ্রহণ করেন, এখনকার বাংলাদেশের নড়াইল সাব ডিভিশন থানার বেন্দা গ্রামে, যদিও সে গ্রাম প্রায় সবটাই তলিয়ে গেছে পাশে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গার গর্ভে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। শৈশবেই তিনি মাতৃহারা।যৌথ পরিবারে ঠাম্মার স্নেহছায়ায় তিনি প্রতিপালিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সবার কাছে পুঁটু কিন্তু ঠাকুমার আদরের পুঁটুরানী। বৃহৎ পরিবারে ভাইবোনদের মধ্যে ছোট ছিলেন কনক মুখার্জি, লিখেছেন,

“তাদের গ্রামের বাড়ি ছিল যৌথ পরিবারের মূল কেন্দ্র। এছাড়াও যশোর কলকাতা ও হালিশহরে পরিবারের তিনটি বড় শাখা ছিল।”

Spread the word

Leave a Reply