Justice Muralidhar transfer : Lack of Clarity

দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধরকে পাঞ্জাব- হরিয়াানা হাইকোর্টে বদলির সিদ্ধান্তকে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবেই দেখছেন সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশানের সভাপতি দূশ্যন্ত দাভে ।

শাহিন বাগে মধ্যস্থতার জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়েকে দায়িত্ব দিয়েছিল । সেই হেগড়ের মত, ‘‘সলিসিটর জেনারেলের তরফে শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ সত্ত্বেও দিল্লির হিংসা নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি , তার পরেই বিচারপতি মুরলীধরকে বদলির নির্দেশ সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে।’’ দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি কৈলাস গম্ভীরের মন্তব্য, ‘‘সরকার চায়, সবাই সরকারের সুরে সুর মেলাক। কিন্তু সবাই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্র নন।’’

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে পৌনে দু’টো পর্যন্ত শুনানির শেষে বিচারপতি মুরলীধর দিল্লির হিংসাকবলিত এলাকার মানুষকে সাহায্য করতে পুলিশ-প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। বুধবার নির্দিষ্ট সময়ে হাইকোর্টে হাজির হয়ে বিজেপি নেতাদের উস্কানিমূলক মন্তব্যের ভিডিয়োগুলি তিনি এজলাশে চালানোর আদেশ দেন ও কেন কোন নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়নি সেই প্রসঙ্গে পুলিশকে ভর্ৎসনাও করেন। এর পর গভীর রাতে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক বদলির নির্দেশ জারি করে। জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । সংবিধানের ২২২ অনুচ্ছেদের ১ নম্বর ধারায় রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতা রয়েছে। আইন মন্ত্রকের বক্তব্য , সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের সুপারিশের ভিত্তিতে বিচারপতি মুরলীধরকে বদলির নির্দেশ জারি হয়। সঙ্গে অন্য যে দুই বিচারপতির বদলির সুপারিশ করা হয়েছিল, তাঁদেরও বদলির নির্দেশ জারি হয়েছে । কিন্তু আইনজীবী কামিনী জয়সওয়ালের যুক্তি, ‘‘সরকার কলেজিয়ামের সুপারিশের আড়ালে লুকোতে পারে না ।’’ আইনজীবীরা মনে করাচ্ছেন, কলেজিয়াম সাড়ে তিন বছর আগে বিচারপতি পি কৃষ্ণ ভাটকে কর্নাটক হাইকোর্টে বদলির সুপারিশ করলেও কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয়নি।আইন বিশেষজ্ঞরা আরো মনে করান যে গুজরাত দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের বিপক্ষে আইনজীবি গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের নিয়োগ জোর করে আটকে দেওয়া হয় কলেজিয়ামের পরোয়া না করেই । উত্তরাখন্ডের কংগ্রেস সরকার ফেলে রাষ্ট্রপতি শাাসন জারি খরিজ করেন বিচারপতি কে এম জোসেফ। তাঁর নিয়োগও অনেকদিন আটকে রাখে মোদি সরকার। সুপ্রীম কোর্ট কলেজিয়াম একাধিকবার সুপারিশ করার অনেক পরে ছাড়পত্র দেয় কেন্দ্র । বিচারপতি অকীল কুরেশীর নিয়োগও আটকে রাখে কেন্দ্র । এই বিচারপতি অমিত শাহকে জেলে পাঠিয়েছিলেন । সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলায় বিচারপতি গীতা মিত্তলকেও এভাবে বদলি করা হয় ।

বিচারপতি মুরলীধর ১৯৮৪সালে সেপ্টেম্বরে চেন্নাইয়ে প্রথম আইনজীবী হিসাবে প্র্যাকটিস শুরু করেন তিনি। তারপর ১৯৮৭ সালে দিল্লিতে চলে যান। দিল্লি হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। সুপ্রিম কোর্টে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং নর্মদা বাঁধ তৈরির জন্য ঘরহারা মানুষদের জন্য লড়াই করে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। এরপর তিনি জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরামর্শদাতা নিযুক্ত হন। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে ল’কমিশন-এর আংশিক সময়ের সদস্য হন তিনি । বিচারপতি হিসাবে দিল্লি হাই কোর্টে তিনি ২০০৬ সাল থেকে রয়েছেন। ওই বছর ২৯ মে-তে দিল্লি হাই কোর্টে বিচারপতি হিসাবে কাজে যোগ দেন । দীর্ঘ এই ১৪ বছর দিল্লি হাই কোর্টে বিচারপতি থাকাকালীন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নানা গুরুত্বপূর্ণ মামলা সামলেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৮৪-র শিখ-বিরোধী দাঙ্গা মামলা যেখানে সজ্জন কুমার দোষী সাব্যস্ত হন । সমকামিতাকে ফৌজদারি অপরাধের তকমা থেকে মুক্ত করার রায়ও তিনিই দেন। তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় প্রধান বিচারপতির দপ্তরকে নিয়ে আসার রায় , বিচারাধীন বন্দী , নিগৃহীত মহিলা , মানসিক রোগী , শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অধিকার মামলায় ইতিবাচক রায় দেওয়াও তাঁরই ।

সম্প্রতি দিল্লি-হিংসা নিয়েও ভীষণ তৎপরতা দেখিয়েছেন তিনি। দিল্লির মুস্তাফাবাদে গোষ্ঠী সংঘর্ষে বহু আহত স্থানীয় ছোট হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পুলিশের থেকে কোনও সাহায্য না-পেয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার সময় বিচারপতি মুরলীধরের বাড়িতে যান চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মীরা । রাতেই তাঁদের আর্জি শুনতে রাজি হন বিচারপতি।


এমন একজন বিচারপতির বদলি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি বলে সরব হন আইনজীবীরা । কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। দিল্লি হাইকোর্ট থেকে বিচারপতি মুরলীধরের বদলির প্রসঙ্গ এর আগেও দু’বার উঠেছিল। ২০১৮ -র ডিসেম্বর ও ২০১৯-এর জানুয়ারিতে । বদলি না-হলে ভবিষ্যতে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদের দাবিদার হয়ে উঠতেন বিচারপতি মুরলীধর। সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষ সূত্রের দাবি, বিচারপতি মুরলীধরের সম্মতি নিয়েই বদলির সুপারিশ করা হয়। হেগড়ে বলেন, ‘‘ওঁকে আগেও বদলির চেষ্টা হয়েছে। সে সময় প্রবীণ বিচারপতিরা বাধা দিয়েছিলেন। মনে হচ্ছে, ১২ ফেব্রুয়ারি সুপারিশের আগে কলেজিয়াম ওঁর সম্মতি আদায় করে নেয় ।’’ দাভে বলেন, ‘‘এই বদলি নিয়মমাফিক, কিন্তু যে ভাবে তাড়াহুড়ো করা হল, তাতে শাস্তির কথাই মনে হচ্ছে।’’

আশ্চর্যের বিষয় হল যে বিচারপতি মুরলীধর দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখার জন্য বিজেপ নেতাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এফআইআর করার , তাঁর বদলির সাথে সাথেই দিল্লি হাইকোর্টে পুলিশ জানায় যে এফআইআর করার মত ‘সহায়ক পরিবেশ’ এখন নেই এবং সেই বক্তব্যে মান্যতা দিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি এন পটেলের বেঞ্চ পুলিশকে চার সপ্তাহ সময় দিল এফআইআর করার জন্য । এই গোটা ঘটনা পরিক্রমায় বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতার উপরে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের প্রশ্নটা আরো একবার সামনে চলে আসতে বাধ্য।

Spread the word

Leave a Reply