Iran Protest

মেঘের ঘোমটা চিরে
চাঁদের আলোর পথে

তপারতি গঙ্গোপাধ্যায়

“One night, this child, this youngstar, exchanged his childhood for power. He cut off the hands and feet of his brothers and imprisoned his father. But you my sisters, you know the story better than I do.”

Shirin, (A film by Abbas Kiarostami)

দশ দিন কেটে গেছে। ইরানের বিভিন্ন ছোট বড় শহরের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ সগর্বে কাঁদানে গ্যাস, লাঠি, বন্দুকের মোকাবিলা করছেন। আশ্চর্য অংশগ্রহণ পুরুষদের। এখনো অবধি ৪১ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মেরেছে ইরানের পুলিশ এবং নিরাপত্তা কর্মীরা। মহিলারা আদিম অহংকারে হিজাব পুড়িয়ে ফেলছেন। তাঁদের চুল কেটে পতাকায় নিশান উড়িয়ে দিচ্ছেন। আন্দোলনে মৃত ভাইয়ের কফিনে নিজের পরাধীনতার চিহ্ন উৎসর্গ করছেন বোন। তেহরানের পথ রক্তাক্ত। ধ্বনিত হচ্ছে ইনকিলাব। ‘এ সেপারেশন’, ‘অ্যাবাউট এলি’ খ্যাত পরিচালক আসগর ফারহাদি সারা পৃথিবীকে ইরানের পাশে থাকার আবেদন জানিয়েছেন। 

বুকান এর এক দশ বছরের মেয়ের মাথায় গুলি লেগেছে। কত মানুষ মরলে পরে মৃত্যু উচ্চারিত হবে ঘৃনায়? মানবাধিকার এর চর্চা আমরা কোনোদিনও করিনি। সে যতই আইন, নীতি, এজেন্ডা তৈরি হোক না কেন। আমাদের জীবনের সমস্ত লড়াইয়ের ইতিহাসে অবহেলিত হয়েছে এই মানবাধিকারের মৌলিক প্রয়োজনের কথা। মানুষের দ্বারা মানুষ কখনো নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। মলোটভ ককটেইল বোমার মুখে এথেন্স এর ইরানিয়ান এম্ব্যাসি। প্যারিসের রাস্তায় কয়েক হাজার প্রতিবাদীর উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে অ্যান্টি রায়ট কৌশল। লন্ডনে ইরানের দূতাবাসের ব্যারিকেড ভেঙে ভিতরে পৌঁছনোর চেষ্টা থেকে প্রচুর মানুষ গ্রেপ্তার হচ্ছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংহতির বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে মাহ্শা আমীনির দেশে।


তেহরানের গাস্ত এ এরশাদ বা গাইডেন্স পেট্রোল, যাকে আমরা চিনি মোরালিটি পুলিশ নামে। এদের হেফাজতে তিনদিন থাকার পরে মাহ্শা আমীনির মৃত্যু হয়। মাহ্শা একজন বাইশ বছর বয়সী কুর্দি মহিলা। ইরানের অন্তর্গত কুর্দিস্তানের সাকেজ শহরের বাসিন্দা ছিলেন। মাহশা, মানে চাঁদের মত। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাবার সময় পুলিশ ভ্যানেই মাহ্শাকে মারধর করা হয়েছিল। যদিও পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাহ্শার মৃত্যু হয়েছে। মাহ্শার পরিবার এই মিথ্যা মানতে নারাজ।

ইরানের গ্লোবাল ইন্টারনেট বন্ধ। সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ ছিন্ন। সাহান্দাজ, মাহাবাদ, বুকান, হামেদান, তাবরিজ, কোম, রাশত সহ ইরান এবং ইরানীয় কুর্দিস্তানের প্রায় পঁচিশটি শহরে এই আন্দোলন ভয়াবহ চেহারা নিচ্ছে। ধর্মীয় মৌলবাদ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে ইরানকে কোনঠাসা করেছে।  মেয়েদের সমস্ত রকম স্বাধীনতা এবং অধিকার খর্ব করার কারণে ইরানের বৃহত্তর জনগণের মধ্যে বেশ কয়েক দশক ধরেই রাষ্ট্রবিরোধী ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এর সাথে মাহ্শার জাতিগত পরিচয় এই আন্দোলনে একটা অন্য মাত্রা দিয়েছে। রাষ্ট্র এই আন্দোলনকে কুর্দিদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চেহারা দেবার একটা সক্রিয় চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রসঙ্গত কুর্দিস্তান সেভাবে ইরানের কোনো অনুমোদিত প্রদেশও না। কুর্দি ভাষা, কুর্দিদের নিজস্ব ধর্মাচরণ বা পরিচয় নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো আগ্রহ নেই। সে অর্থে কুর্দিদের নিজস্ব কোন দেশও নেই। তাঁরা চিরউদ্বাস্তু। রেজা পাহলভীর পরবর্তী ইরানে কুর্দি মানবাধিকারের কোনো স্থান নেই। ইরাক ইরান যুদ্ধে ইরাকের কুর্দিরা ইরানকে সমর্থন করেছিলেন। সেই কারণ ইরান সামান্যতম সহানুভূতির দেখিয়েছিল তাদের কুর্দিদের প্রতি, যদিও শুধুমাত্র যুদ্ধের সময়টুকুই। উত্তর ইরাকের কুর্দিদের অভ্যুত্থান যাতে ইরানকে প্রভাবিত না করে সেই কারণে নিয়ন্ত্রণ এবং অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে। জাতীয়তাবাদী প্রক্রিয়ায় প্রতি মানুষের স্বাভাবিক আকর্ষণ ছিল। মধ্যপ্রাচ্য চিরকাল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বীকার। তবু প্রজন্মান্তরে এই প্রতিবাদ অনেক বেশি শক্তিশালী এবং সংগঠিত আকার নিচ্ছে, ভবিষ্যতে আরো বড় চেহারা নেবে এমনটাই অনেকে মনে করছেন। পুরোনো এবং নতুন, দুই প্রজন্মই রাস্তায় নামছেন। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মা বাবার সাথে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। বহু দশকের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ এক বৃহত্তর নির্মাণের মুখোমুখি। 
 


ইরানের সুপ্রিম লিডার আলী খামেনেই এই বছরই জুন মাসে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন, যার প্রতিপাদ্য হলো “১৯৮০-র ঈশ্বরই আজকের ঈশ্বর।” এর পরিষ্কার অর্থ ১৯৭৯ এর ইসলামিক মৌলবাদের পরিস্থিতি এখনো বজায় আছে। কুর্দিশ মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, পেট্রোলের দাম তিনগুন হবার প্রতিবাদে ২০১৯ এ যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, মাহ্শার রাষ্ট্রীয় হত্যার প্রতিবাদ তাকে ছাপিয়ে যাবে। শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর পুলিশের অকথ্য অত্যাচার আন্দোলনকারীদের এই ধর্মীয় একনায়কতন্ত্রকে ভেঙেচুরে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরদার অংশগ্রহণে প্রাণিত করছে। তাঁরা স্লোগান দিচ্ছেন, “খামেনেই একজন হত্যাকারী, তার রাজত্ব ব্যর্থ। স্বৈরাচারী অত্যাচারীর শাস্তি মৃত্যু। কুর্দিস্তান থেকে তাবরিজ, ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। আমরা সংঘবদ্ধ না হলে শেষ হয়ে যাব।”

১৯৭৯ সালে ইসলামের পুনরুত্থান ঘটে ইরানে। ১৯৭৯ পূর্ববর্তী ইরান কেমন ছিল? কিভাবে এই ইসলামিক মৌলবাদ অবধি পৌঁছলো ইরান? ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ ইরানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মোহাম্মদ মোসাদ্দেক। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মোসদ্দেক একজন আইনজীবী এবং ইরানের মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি একটি নাম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানিগুলিকে সরকারি আয়ত্তে আনার একটা প্রায় সফল প্রচেষ্টা ছিল তাঁর। ১৯৫৩ তে আমেরিকার রাস্ট্রপতি ট্রুম্যান এর হস্তক্ষেপে দীর্ঘ বোঝাপড়ার চেষ্টার পরে মোসাদ্দেক সরকারের পতন ঘটে। কারণ তেলের উপর ইরানের সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্রিটেন এবং আমেরিকার কাছে সমস্যার। তার সাথে ইরানের কমিউনিস্ট তুদেহ পার্টির অভ্যুত্থানের একটা ভয়ও ছিল। মোসাদ্দেক এর পতনের পরবর্তী ইরান শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভীর শাসনে আমেরিকার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানে ছিল। এই সময়টা হোয়াইট রেভোল্যুশন এর। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, মহিলারা স্বাধীন জীবনের স্বাদ পান। নিম্ন মধ্যবিত্তদের কাছে উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে যায়। মূলত এই সময়ের ইরানকেই মনে রেখেছেন ওদেশের মানুষ। কিন্তু কট্টর শিয়ারা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি এই উদারতা। রুহল্লা খোমেনির নেতৃত্বে তাদের চরমপন্থী আন্দোলন শুরু হয়। এই বিশৃঙ্খলা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় ১৯৬৪ সালে এবং খোমেনি নির্বাসিত হন। কিন্তু তাঁর ছাত্রদের মাধ্যমে তিনি শক্তিশালী সংগঠন চালিয়ে যেতে থাকেন। মূল লক্ষ্য ধর্মতন্ত্র হলেও তিনি সাধারণ মানুষের কাছে পাহলভী শাসনে অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং দুর্নীতির কথাই তুলে ধরেন। এতে মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে, যদিও তা সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর গড়ে উঠেছিল। ১৯৭০ এর পরে মার্কসবাদী তুদে পার্টি সহ বহু বামপন্থী এবং উদারবাদী সংগঠনকে কড়া হাতে দমনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তার সাথেই সশস্ত্র মুজাহিদীন এবং গেরিলা শক্তি গড়ে ওঠে। প্রত্যেকে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় পহলভী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।  

১৯৭৪ পরবর্তী তেলের উৎপাদন এবং রপ্তানির পরিস্থিতিতে অসম্ভব অর্থনৈতিক মেরুকরণ তৈরি হয়। দেশের মানুষ কাজ হারাতে শুরু করেন। ইরানে অসংখ্য জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে। রাষ্ট্রের প্রশ্নে মানুষ বহুধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৭৭ সালে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি কার্টার ভিয়েতনাম যুদ্ধ পরবর্তী বিদেশনীতিতে বেশ কিছু বদল আনেন। মৌলবাদ বিরোধিতা এবং মানবাধিকার এর প্রসঙ্গ অগ্রাধিকার পায়। রেজা শাহ পহলাভী প্রায় সাড়ে তিনশো রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেন। উদারবাদীদের হস্তক্ষেপে ধীরে ধীরে খোমেনি পহলভীর শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছে যান। ১৯৭৯ এর ইসলাম অভ্যুত্থানের পথ তৈরি হয়।  ক্ষমতায় আসার পরে খোমেনি ভেবেছিলেন ধীরে ধীরে ধর্মতন্ত্রকে মানুষের মধ্যে  ছড়িয়ে দেবেন। ১৯৭৯ এর ইসলাম অভ্যুত্থান এর কান্ডারি ইসলামিক, জাতীয়তাবাদী এবং কমিউনিস্ট সংগঠন। কিন্তু বাকি দুই শক্তিই কমিউনিস্টদের ভয় করতো, কারণ তারা ছিলেন সবথেকে শক্তিশালী সংগঠন। তাই খোমেনি এবং জাতীয়তাবাদীরা কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং ইসলামিক রিপাবলিক গড়ে তোলে। কিন্তু এই দুই সংগঠনের মূল নীতির মধ্যে সংঘাতের সমস্ত লক্ষণ রয়েছে , এবং গবেষকদের মতে যা কাউন্টার স্টেট। শুধু তাই নয়, ইরান পেরিয়ে ইরাকের মধ্যেও ইসলামিক রিপাবলিক এর প্রভাব সঞ্চারের একটা চেষ্টা ছিল। এর কিছু পরেই ১৯৮০ সালে সাদ্দাম হোসেন  ইরান আক্রমণ করেন। সেই যুদ্ধ আট বছর চলেছিল। ইরানের মানুষ এক শক্তিশালী নেতৃত্বের আকাঙ্খায় ছিলেন।  ১৯৮৯ এ রুহল্লা খোমেনির মৃত্যুর পরে রাষ্ট্রপতি আলী খামেনেইকে দ্রুত সুপ্রীম লিডার এর আসনে বসানো হয়। কিন্তু ১৯৮০ থেকে যে ধর্মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, তার ভিত মজবুত না। তাছাড়া অনেকের মতে খামেনেই এর ধর্মীয় শিক্ষা ছিল অপর্যাপ্ত। সহযোগী শক্তিরা ইসলামিক রিপাবলিক এর একটি সংবিধান চাপিয়ে দেয়। বিভিন্ন সহযোগী উপদলগুলি কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শিক্ষা ছাড়াই শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে থাকার জন্য বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে। এভাবেই স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা শুরু হয়। মেয়েদের সমস্ত স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়।

এই ইতিহাস বর্ণনার উদ্দেশ্য একটাই। সারা পৃথিবীর মৌলবাদ, অটোক্রেসির চরিত্র এক, এবং তার চলন ঠিক এভাবেই ঘটে। পুঁজিবাদ এবং মৌলবাদ পরস্পরের আশ্রয়।  ঠিক তেমনই আবার মৌলবাদের বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের চরিত্র দেশে কালে ভিন্ন। কিন্তু তার মূল চরিত্র এক। এই সময়ে ইরানের আন্দোলন মেয়েদের হিজাব গ্রহণের স্বাধীনতা থেকে সার্বিক মানবাধিকারের প্রশ্নে পৌঁছে গেছে। এই লড়াই আর শুধু মেয়েদের লড়াই নেই। ঠিক যেভাবে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে ট্রেভন মার্টিন এর মৃত্যুর সাথে এবং আন্তর্জাতিক রূপ নেয় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে, সেখানে চামড়ার রং নির্বিশেষে মানুষ পথে নেমেছেন। ভারতের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনীর প্রতিবাদ শুধু মুসলিমদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।

পোল্যান্ডের গর্ভপাত বিরোধী বিলের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাবঅরিজিনালদের পরিবেশ আন্দোলন, আমাজনের ভূমিপুত্রদের লড়াই থেকে ভারতের আসামের এলিফ্যান্ট করিডোর, দেউচা পাচামীর কয়লাখনির প্রতিবাদ সারা পৃথিবীর চেতনাসূত্র। আসলে দুর্বল এবং সবলের বিভেদ। রাষ্ট্র এবং মানুষের দূরত্ব। এবং মানবাধিকারের, উন্নত পৃথিবীর লক্ষ্যে মানুষ একত্রিত।

মাহ্শার কবরের স্মৃতিফলকে লেখা হয়েছে, “তোমার মৃত্যু হবে না। তোমার নাম আমাদের প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠবে।”

এই পৃথিবীর মধ্যে আছে অসংখ্য পৃথিবী। তারা একে অপরের চেতনায় জুড়ে থাকে। সেই ভাষা পৃথিবীর ভাষা। তাই প্রত্যেক নতুন সময় আসলে চেতনার উন্মেষ। সেই ফরাসি বিপ্লব থেকে আজকের প্রকাশ্য রাস্তায় নৃশংসভাবে খুন হওয়া রক্তাক্ত শরীরের সম্মেলন সেই চেতনার রঙে রাঙানো চুনি পান্না। মৃত্যু ছাড়া হয়তো বিপ্লব আসবে না। তবু পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য পুরুষের সম্মিলিত স্বরের অনুরণন হবে, “আমিই মাহশা আমীনি।” রাজপথ জুড়ে সেই সমস্ত মানুষের ক্ষতবিক্ষত শরীর যাঁরা তাঁদের দেশের মেয়েদের জ্বালানো আগুনের চারপাশে ব্যারিকেড গড়ছেন। সেই সব মেয়েরা যাঁরা ঋজু পতাকায় খোলা চুল উড়িয়ে দিয়েছেন আকাশে। তাঁদের হাহাকার ক্রোধের স্বর হয়েছে। উদাত্ত স্লোগানে, “জিন্ জিয়ান আজাদী।” আসলে এসবই স্বাধীনতার লড়াই। আমি এদেশ থেকে তাকিয়ে থাকি সেই সব রাজপথে, সেই সব উদ্‌গত অশ্রু, আগুনের আঁচ হৃদয়ে লালন করে।

‘আমিই মাহশা আমীনি!’
 
আলিঙ্গন, ইনকিলাব, ইরান।

Spread the word

Leave a Reply