১৯২৬ সালে গণবাণী পত্রিকার ৩০শে সেপ্টেম্বর সংখ্যায় মুজফ্ফর আহ্মদ ‘সাম্প্রদায়িকতার বিষম পরিণাম’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। দেশের তৎকালীন পরিস্থিতিতে সেই প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেছেন ভারতে শ্রমজীবী জনসাধারণের ঐক্যের পথে প্রধান বাধা হল সাম্প্রদায়িক বিভাজন। আজকের ভারতে রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে নতুন করে সেই চক্রান্ত চলছে। এই প্রেক্ষিতে আমরা ফিরে দেখে নিতে চাই, তখন অবস্থাটা কেমন ছিল। পিছনে ফেলে আসা সময়ের ভুল-ভ্রান্তির পুনরাবৃত্তি যাতে আর না ঘটে সেই উপলব্ধিতেই এহেন অতীত চর্চার গুরুত্ব।
মুজফ্ফর আহ্মদ
ভারতবর্ষে ধর্মগত সাম্প্রদায়িকতার দলাদলি খুবই বেড়ে চলেছে। গত ক’বছরের মধ্যে অনেকগুলি সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। খিলাফৎ কমিটি, হিন্দু-মহাসভা, জমিয়ৎ-ই-উলমা, শুদ্ধি-সভা, তবলীগ সভা, হিন্দু-সংগঠন, তন্জীম, শিখ্ লীগ ও মুসলিম লীগ প্রভৃতি কত যে হয়েছে তার হিসাব রাখাই মুশকিল, এর প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানেরই দ্বারা দেশে অশান্তি ও অসন্তোষ খুব বেশি মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে, এবং এর সবগুলি অনুষ্ঠানেরই পেছনে সে-সকল লোকের হাত রয়েছে যাঁরা উৎপাদন না করেও উৎপন্ন দ্রব্যের সারা ভাগটুকু নি:শেষে উপভোগ করে থাকেন। দেশের সর্বসাধারণের প্রতিনিধি সভা না হলেও ভারতীয় জাতীয় মহাসমিতি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের একটা মিলনক্ষেত্র ছিল। সাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে মহাসমিতিও আজকাল শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। সাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠানগুলির বিষময় ফল এই হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আজকাল বহু সংখ্যক লোক সমগ্রভাবে ভারতবর্ষের কথা চিন্তা না করে কেবলমাত্র একটি বিশিষ্ট গন্ডির বিষয়ই ভাবছে। হিন্দু ভাবছে কি করে মুসলমানকে জব্দ করা যাবে, আর মুসলমান ভাবছে ঠিক তার উল্টো। এই করে ভারতের জাতীয় জীবন অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে।
একটি ধর্মের নিয়ম-কানুনের সহিত আর একটি ধর্মের নিয়ম-কানুনের প্রায়ই মিশ্ খায় না। অধিকংশ স্থলে এ নিয়ম-কানুনগুলি পরস্পরবিরোধী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ধর্ম জিনিসটা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর পক্ষে ব্যক্তিগত সাধনার বস্তু হলে তা সহ্য করতে পারা যায়। কিন্তু, তা না করে যখনি আমরা আমাদের ধর্মকে অপর ধর্মাবলম্বী সহিত বোঝাপড়ার ব্যাপারে পরিণত করি তখনি ধর্ম সাধারণভাবে সমগ্র দেশের পক্ষে অসহ হয়ে উঠে। ভারতবর্ষে তথাকথিত ধর্মগুলি আজকাল একেবারেই অসহ হয়ে পড়েছে। এক ধর্মাবলম্বী অপর ধর্মাবলম্বীকে বলছে তোমাকে আমার ধর্মের বিধি-বিধানগুলো মেনে চলতেই হবে। কেন যে চলতে হবে, তার যুক্তি হচ্ছে লাঠির গুঁতো। সাধারণ লোকের মধ্যে এমনি সব মনোবৃত্তির উৎকর্ষ সাধন করে দিয়ে যাদের বিন্যস্ত স্বার্থ রয়েছে তারা খুবই মজা লুঠছে। ভারতবর্ষের জনসাধারণের শোষিত হওয়া কপাল। সকল দিক থেকে সকলরূপে তারা কেবলই শোষিতই হচ্ছে।
ধর্মসমূহের মধ্যে সারবস্তু কি আছে না আছে তা জানিনে, কিন্তু এদেশে প্রতিনিয়ত চোখে দেখতে পাচ্ছি যে বেশি ধার্মিক হওয়ার মানেই হচ্ছে বেশি সঙ্কীর্ণ হওয়া। আমি যত বেশি ধার্মিক হব তত বেশি অন্য ধর্মাবলম্বীকে ঘৃণা করব, এই হচ্ছে আমার ধার্মিকত্বের পরিচয়। হিন্দু শুধু হিন্দু বলেই মুসলমান তাকে ঘৃণা করে, আর মুসলমানকেও হিন্দু ঘৃণা করে থাকে কেবল সে মুসলমান বলে। হোক না কেন উভয়েই মানুষ, তাতে কি এসে যায়— হিন্দু কিংবা মুসলমান তো নয়।
এই যে ধর্মগত সংকীর্ণতা, এটা কেটে যেতে পারত যদি এদেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোকের জন্যে একটা সাধারণ মিলনক্ষেত্রের সৃষ্টি হত। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই ছিল একমাত্র মিলক্ষেত্র যে ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খৃষ্টান অর্থনীতিক কারণে, সমস্বার্থের জন্য মিলিত হওয়ার সম্ভবনা ছিল। ঠিক এইরূপ একটা রাষ্ট্রীয় জীবন গড়ে উঠার পরে সাম্প্রদায়িক গন্ডিগুলি আপনা হতেই ভেঙে যেত। কিন্তু এমন একটা প্রচেষ্টা আজো পর্যন্ত করা হয়নি। কংগ্রেসের ভিতর দিয়ে এরূপ রাষ্ট্রীয় জীবন গড়ে উঠা উচিত ছিল বটে, কিন্তু তা হয়নি। প্রথম কথা কংগ্রেসের সহিত কখনো দেশের সর্বসাধারণের জীবনের যোগ সাধিত হয়নি। ভদ্র ও অভিজাত শ্রেণীর লোকেরাই কংগ্রেসের সর্বেসর্বা, জনসাধারণ তার কেউ নয়। দ্বিতীয়ত: মহাত্মা গান্ধী কংগ্রেসকে একটা ধর্মচর্চার ক্ষেত্র করে তুলেছিলেন। এই অসম জিনিসের একত্র সমাবেশ করার চেষ্টার অবশ্যম্ভাবী বিষময় ফল এখন দেশে ফলেছে।
শুদ্ধি-আন্দোলন, হিন্দু-মহাসভা, তব্লীগ, হিন্দু-সংগঠন ও তন্জীম্ প্রভৃতি সাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠানগুলি দেশের রাষ্ট্রীয় জীবনকে একেবারেই রঙ্গমঞ্চে বক্তৃতা দিতে যেয়ে বোঝাতে চেষ্টা করেন বটে যে তাঁরা খুব একটা উদার মত নিয়ে তাঁদের অনুষ্ঠানগুলো গড়ছেন, কিন্তু সে কেবল কথার কথা মাত্র। শুদ্ধিওয়ালাদের মতে ভারতবর্ষে বৈদিক ধর্ম ব্যতীত আর কোনো ধর্মের স্থান নেই, বৈদিক কর্ষন (কালচার) ব্যতীত আর যত প্রকারের কালচার ভারতবর্ষে অনধিকার প্রবেশ (তাঁদের মতে) করেছে সে-সকলকে তাঁরা ভারতবর্ষ হতে তাড়িয়ে দেবেন। স্বামী শ্রদ্ধানন্দ ও ডাক্তার মুঞ্জে প্রভৃতি এরূপ মত প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও এত বেশি নির্বোধ কি করে তাঁরা হলেন তা ভেবে আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়। এই বিংশ শতাব্দীতেও যাঁরা বহু সহস্র বছরের পুরাতন বিশিষ্ট সভ্যতা নিয়ে সঙ্কীর্ণ গন্ডির ভিতরে বসে থাকতে চান তাঁদেরকে বিকৃত সভ্যতা নিয়ে সঙ্কীর্ণ গন্ডির ভিতরে বসে থাকতে গচান তাঁদেরকে বিকৃত মতিষ্ক বললেও বোধ হয় কিছুমাত্র অত্যুক্তি হয় না।আজকের দিনে বাইরের আলোবাতাস হতে আপনাকে কেউ কখনো বাঁচিয়ে রাখতে পারে? রেলওয়ে স্টীমার প্রভৃতির সৃষ্টি হয়ে জগতের বিভিন্ন দেশের লোকের মধ্যে একটা যোগ স্থাপিত হয়ে গেছে। আজকের দিনে কোনো একটা বিশিষ্ট সভ্যতা, একটা বিশিষ্ট কালচার নিয়ে কোনো জাতি সন্তুষ্ট থাকতে পারে না, ইচ্ছা করলেও না। মানুষের সাথে মানুষের যোগ যেমন ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে তেমনি মানুষের সভ্যতার সাথেও সভ্যতার একটা যোগ সাধিত হতেই হবে। বেদের সভ্যতা ও বৈদিক যুগের কর্ষণ আমাদের অগৌরবের জিনিস নয়, কিন্তু সেটাই ঠিক একমাত্র গৌরবেরও বস্তু নয়। কতকগুলি লোক আছেন যাঁরা লেখাপড়া যথেষ্ঠই শিখেছেন বটে, কিন্তু, মন তাঁদের রয়ে গেছে একেবারেই ছোট। তাঁরা নিজের মনকে বড় করার চেষ্টা তো করেনই না, পরন্তু, ইচ্ছা করেন যাতে সমগ্র বিশ্বের মন তাঁদেরই মতো ছোট হয়ে যায়।
সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ডাক্তার মুঞ্জের ভিতরে কত বেশি তার একটা দৃষ্টান্ত আমরা এখানে দেব। মালাবারের মোপলা-বিদ্রোহের কথা সকলেরই মনে আছে। এই মোপলা-বিদ্রোহটা ছিল সত্যকার ভাবে তথাকথিত অত্যাচারী ভূমাধিকারীর বিরুদ্ধে কৃষকদের বিদ্রোহ পূর্বে এমন বিদ্রোহ আরো পয়ত্রিশবার সেখানে হয়ে গেছে। মোপলা কৃষকেরা সবাই মুসলমান, আর ওখানকার ভূমাধিকারীরা প্রায় সবাই হিন্দু। কাজেই, কৃষক আর ভূমাধিকারীতে যে সংঘাত বাধলো সেটা আর একদিক থেকে হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ হয়ে পড়লো। ডাক্তার মুঞ্জে এ ব্যাপারটার ব্যাখা করলেন যে এটা নিছক হিন্দু-মুসলমান বিরোধ। তিনি রবীন্দ্রনাথকে ঠিক একথাই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ বিদ্রোহের সময় দু’একজন মাত্র যে মুসলমান জমিদার ছিলেন তাঁরাও বিদ্রোহীদের হাত থেকে রেহাই পাননি। একটা গন্ডির ভিতরে থেকে থেকে এ সকল লোকের মন এতই ছোট হয়ে গেছে যে তাঁরা সব জিনিসের ভিতরেই ধর্মগত পার্থক্য দেখতে পান। হাজীপুরে হিন্দুতে হিন্দুতে যে ঝগড়া হল সেটাও এ শ্রেণীর লোকের কৃপায় হয়ে গেল হিন্দু-মুসলমান বিরোধ। তারপরে কুষ্টিয়া মোহিনী মিলের হিন্দু-মুসলমান তাঁতি একসঙ্গে কাজ ছেড়ে দিয়েছিল তাদের অভিযোগের প্রতিকার করার জন্যে কিন্তু ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ সেটাকেই হিন্দু-মুসলমান বিরোধ বলে প্রচার করতে ছাড়লেন না। হিন্দু তাঁতিও যে মুসলমান তাঁতির সহিত একত্রে ধর্মঘট করেছিল একথা ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ গোপন করে রেখে বললেন যে মিলের মালিকরা কেবলমাত্র হিন্দু বলেই মুসলমান তাঁতিরা সাম্প্রদায়িক বৈরনির্যাতনের জন্য ধর্মঘট করেছিল।
হিন্দুদের তরফ থেকে বরাবর বলা হচ্ছিল যে মুসলমানদের কোন ভৌগলিক দেশাত্মবোধ নেই, তাঁরা ‘প্যান ইস্লামিজম’-এর স্বপ্ন দেখে থাকেন। এ দেশাত্মবোধ না থাকা আর ‘প্যান ইস্লামিজম’-এর স্বপ্ন দেখাকে হিন্দুদের তরফ থেকে বারবার খারাপ বলা হয়েছে। মজা এই হয়েছে যে, যে জন্যে তাঁরা মুসলমানদের অভিযুক্ত করেছিলেন সেই অভিযোগে এখন তাঁরা নিজেরাও অভিযুক্ত হয়েছেন। হিন্দু-মহাসভা এখন ‘প্যান হিন্দুইজম’ প্রচারে ব্রতী হয়েছেন। ভারতবর্ষের বাইরে হিন্দু নেই। তাই তাঁরা বৌদ্ধদের নিজেদের দলভুক্ত করে বৌদ্ধ চীন ও জাপানের সহিত বন্ধুত্ব করতে চেষ্টা করছেন।এ হিন্দু-মহাসভার নেতা লালা লাজপৎ রায় ও মি: কেলকার বলেছেন – মুসলমানদিগকে বাদ দিয়ে, তাঁদের কোনো সাহায্য না নিয়েও তাঁরা ভারতে স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। আর সকলকে বাদ দিয়ে তাঁরা যদি একা একা স্বরাজ লাভ করতে পারেন তা হলে সেটা শুধু তাঁদেরই স্বরাজ লাভ হবে, ভারতের স্বরাজ লাভ হবে না।
মানুষ কত যে বহুরূপী সাজতে পারে তা বর্তমানের দু’জন প্রসিদ্ধ সাম্প্রদায়িক নেতা লালা লাজপৎ রায় ও ডাক্তার সয়ফুদ্দীন কিচলুর কার্যকলাপের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেই সহজে বুঝতে পারা যায়। লালা লাজপৎ রায় প্রথমে ছিলেন আর্য-সমাজী। আর সকল আর্য-সমাজীরা যেমন সাম্প্রদায়িক গরল উদ্গীরণ করে থাকেন তিনিও তা করতেন। তারপরে ধীরে ধীরে তাঁর মত বদলে যায়। আমেরিকা হতে ফিরে এসে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে কোনো ধর্মেই তাঁর বিশ্বাস নেই। আজ আবার তিনিই হয়েছেন হিন্দু-মহাসভা ও হিন্দু-সংগঠনের পান্ডা। ডাক্তার সয়ফুদ্দীন কিচ্লুর দেশাত্মবোধের কথা দেশময় ব্যাপৃত হয়ে পড়েছিল। আজ তিনি হয়েছেন তন্জীম্ বা মুসলীম-সংগঠনের পান্ডা। বাংলাদেশে ভ্রমণের সময় ডাক্তার কিচ্লু অনেক বড় বড় কথা বলে গেছেন, কিন্তু সে-সকল ভুয়ো কথার কোনো মূল্যই নেই। যদি তাঁর মনে কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িকতা না থাকে তা হলে তিনি পৃথক ভাবে মুসলিম-সংগঠন করতে গেলেন কিসের জন্যে? তারপরে, তাঁর বক্তৃতা অনুসারে কিংবা পন্ডিত মদনমোহন মালব্যের বক্তৃতা অনুসারে কেউ কখনো তন্জীম্ ও হিন্দু-সংগঠনের কাজ করতে যাবে না। মুসলমানরা ‘তন্জীম্’ করবে হিন্দুদের মাথা ভাঙার উদ্দেশ্য নিয়ে, আর হিন্দুরা সংগঠন করবে মুসলমানদের মাথা ভাঙার জন্যে। খারাপ জিনিসের খারাপ ফলই ফলবে, ভাল ফল কখনো ফলবে না।
ধর্মগত ভাবে যে অনুষ্ঠানগুলির সৃষ্টি হয়েছে সেগুলি আবার দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করেছে। হিন্দু-মহাসভা, খিলাফৎ কমিটি ও জমিয়ৎ-ই-উলামা প্রভৃতি সভাগুলো দেশের রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধে দেশের লোককে বিপথে চালিত করছে। কেননা, এসব অনুষ্ঠানের তরফ থেকে যা কিছু করা হয়েছে তার সমস্ততেই একটা ধর্মের রং ফলানো হচ্ছে। আমাদের দেশের লোক ধর্মের নামে যেমন শোষিত হচ্ছে এমনটা পৃথিবীর আর কোথাও কখনো হয়েছে কিনা সন্দেহ। পরাশ্রিত শোষকগুলি দেশের সর্বসাধারণকে এমনি আফিম খাইয়ে রেখেছে যে ধর্মের নামে তাদেরকে যা কিছু বলা হয় তাতেই তারা বিশ্বাস করে থাকে। আজ যা ‘না’ কালই আবার তা ‘হ্যাঁ’ হয়ে যায়, অথচ এ ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ দু’য়েতেই তাদের বিশ্বাস অব্যাহত থাকে।
কেন যে এমন করা হয় তার ব্যাখ্যা আমরা একাধিকবার প্রদান করেছি। আবারো বলছি – ধর্মগত ভাবে অনুষ্ঠিত যতগুলি সঙ্ঘের নাম আমরা করেছি তার সবগুলিরই মূলে একই শ্রেণীগত স্বার্থ রয়েছে। এই দেশের জনসাধারণ যাতে কোনো প্রকারে আপনাদের অবস্থা সম্বন্ধে সচেতন না হতে পারে তাঁর জন্যে শোষকশ্রেণীর আপ্রাণ প্রচেষ্টা হচ্ছে – এই ধর্মগত সঙ্ঘগুলোর অনুষ্ঠান ও তারি ফলস্বরুপ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা। এই করে দেশের সর্বসাধারণের সর্বনাশ করা হচ্ছে। এদেশের যুবকগণ দেশের মুক্তির জন্যে কম নিগ্রহ ভোগ করেননি। ফাঁসিকাঠে ঝুলে আপনাদের প্রাণ তাঁরা হাসিমুখে বলি দিয়েছেন, কারাবরণ তাঁরা করেছেন এবং আরো কত প্রকারে যে নির্যাতিত তাঁরা হয়েছেন কে তার খবর রাখে। কিন্তু বর্তমানে দেশের এ দুর্দিনে তাঁদের কি কোনো কাজ নেই করার? তাঁরা দেশের সর্বসাধারণকে তাদের অবস্থা সম্বন্ধে সচেতন করে তুলুন। সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতাকে পরিহার করে তাঁদের উচিত জনসাধারণকে বোঝানো কি ক্ষতিই না স্বার্থপর লোকেরা তাদের করছে। এ অচেতন-জনগণকে খুব ভাল করে বুঝিয়ে দিতে হবে যে তাদের রক্ত নানা উপায়ে যে সকল লোক শোষণ করছে সে-সকল লোক কোনোদিনও তাদের বন্ধু হতে পারে না।
“গণবানী” ১ম খন্ড ৮ম সংখ্যা – ৩০শে সেপ্টেম্বর, ১৯২৬ (১৩ই আশ্বিন, ১৩৩৩)
ছবিঃ আজকের প্রাসঙ্গিকতা অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়া সুত্রে সংগৃহীত