Ideology Series 13

Ideology Series (Part XIV): The Unity And Conflict Of Opposites

প্রাককথন

পিথাগোরাস থেকে মার্কস অবধি।

এমনকি সমসাময়িক যারা দার্শনিক হিসাবে পরিচিত তাদের লেখাও।  

অনুমানভিত্তিক, ধারনাগত দর্শন থেকে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দর্শন পর্যন্ত গোটা ঐতিহাসিক পর্বটি লেনিনের পড়ার টেবিলে ছিল। কে নেই তার পড়ার তালিকায়! পিথাগোরাস, হেরেক্লিটাস, ডেমোক্রিটাস’রা রয়েছেন। সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, এপিকিউরাস (যার দর্শন সম্পর্কে গবেষণা করে মার্কস ডক্টরেট হয়েছিলেন) আছেন। আবার হেগেল, ফয়েরবাখ হয়ে মার্কস-এঙ্গেলসও সেই তালিকাভুক্ত। প্রকৃতিবিজ্ঞান (ন্যচারাল সায়েন্স) থেকে আধ্যাত্মবাদী (মেটাফিজিক্স) যাবতীয় ঘরানার দর্শন চর্চা করছিলেন লেনিন।

১৮৯৫ থেকে ১৯১১ অবধি সেই পড়াশোনা চলে। ইতিমধ্যে ১৯০৫ সালে রাশিয়ায় প্রথম সর্বহারা বিপ্লব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পরবর্তীকালে দুনিয়াজুড়ে কমিউনিস্টদের মধ্যে, কমিউনিস্ট পার্টিগুলির ভিতরে নতুন বিতর্ক ওঠে, আসন্ন বিশ্বযুদ্ধে (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ) সর্বহারা শ্রেণীর অবস্থান কি হবে? সেই অবস্থান নির্ধারণে যে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রয়োজন ছিল লেনিনের ঐ পাঠপর্বে তারই প্রস্তুতি ছিল। ঐ দীর্ঘ অনুশীলন নিছক কেতাবি অভিজ্ঞতা কিংবা অহেতুক জ্ঞান চর্চার উদ্দেশ্যে ছিল না, বিপ্লবী রণকৌশল নির্ধারণেই তা শক্তি যুগিয়েছিল।

না, লেনিন এই দীর্ঘ পাঠের শেষে কোনও বই লিখে যেতে পারেননি। যা যা পড়েছেন সে সম্পর্কে নিজের মতামত, পর্যালোচনা সবই কয়েকটি নোটবুকে লিখে রেখেছিলেন। ১৯২৯-৩০ সালে রাশিয়ান ভাষায় ‘লেনিন মিশলেনিয়াস’ শিরোনামে সম্পাদিত এক বইতে (তাতে অন্যান্য আরও কিছু লেখা, চিঠি ইত্যাদি ছিল) প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৩৩ সালের পর শুধুমাত্র নোটবুকের অংশগুলিকে একত্রে ‘ফিলোজফিক্যাল নোটবুকস’-এর আকারে প্রকাশ করা হয়, ১৯৬১ নাগাদ সেই বইয়ের ইংরেজি ভাষান্তর করেন ক্লিমেন্স দত্ত, ইংরেজি সংস্করণের সম্পাদনা করেছিলেন স্টুয়ার্ট স্মিথ। আমরা সেই ইংরেজি সংস্করণ থেকে ‘অন দ্য কোয়েশ্চেন অফ ডায়ালেক্টিক্স’ অংশের ভাষান্তর করেছি। সোভিয়েত ইউনিয়নের মার্কসিজম-লেনিনিজম ইন্সটিটিউট সম্পাদিত প্রোগ্রেস পাবলিশার্স প্রকাশিত লেনিনের সংগৃহীত রচনাবলী (কালেক্টেড ওয়ার্কস)-র ৩৮ নং খণ্ড থেকে ইংরেজি বয়ানটি সংগৃহীত। ফিলজফিক্যাল নোটবুকস-এর পুরোটাই বাংলায় অনুবাদ করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে, কাজ শেষে সেটিও প্রকাশিত হবে।

এই লেখায় গিয়র্গি প্লেখানভের প্রসঙ্গে লেনিন কিছু সমালোচনা করেছেন। মার্কসবাদী দ্বন্দ্বতত্ত্বের আলোচনা করতে গিয়ে প্লেখানভ ও আরও কয়েকজন মার্কসবাদী পণ্ডিত বিপরীতের ঐক্য ও সংঘাতের প্রসঙ্গটি খানিকটা এড়িয়ে গেছিলেন। লেনিন সেই ভ্রান্তি চিহ্নিত করেন এবং নিজেই সে ফাঁক পূরণের জন্য কলম ধরার পরিকল্পনা করেছিলেন, পড়লেই বোঝা যাবে প্রবন্ধের একটি ছোট অংশ লিখতে গিয়েও লেনিন বিজ্ঞান, দর্শন ও ইতিহাসের এক অসামান্য সংশ্লেষ ও বিশ্লেষণ করেছেন। প্রকৃতি জগতের মূল নিয়ম হিসাবে যা প্রমাণিত, মানব সমাজের গতিপ্রকৃতিও যে সেই নিয়মাবলী অনুসরণ করেই বিকশিত হয় এটাই তার প্রধান বক্তব্য।

এ লেখার সুত্র ধরেই মাও সে তুং উল্লেখ করেছিলেন বিপরীতের মাঝে ঐক্যের বিষয়টি সাময়িক, সংঘাতটাই চুড়ান্ত। ওটি লেনিনেরই সুত্রায়ন, তাও হেগেল ও মার্কসের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েই।

মার্কসবাদের চর্চায় লেনিনের নোটবুক এক অনন্য অবদান। একে বাদ দিয়ে মার্কসবাদ ও সামগ্রিক অর্থে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের চর্চা কার্যত অসম্পূর্ণ।

মতাদর্শ সিরিজ রাজ্য ওয়েবসাইটে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার।

আজ ত্রয়োদশ পর্ব।

ভি আই লেনিন

একক হিসাবে অস্তিত্বময় কোনও বস্তুকে ভাঙলেই তার অভ্যন্তরস্থ যাবতীয় বৈপরীত্যেকে একে অন্যের সাথে সংঘাতরত অবস্থায় চিহ্নিত করা যায়, এটাই দ্বন্দ্বতত্ত্বের সারমর্ম। এছাড়াও দ্বন্দ্বের অন্যান্য নিয়মাবলী বা বলা চলে ধর্ম রয়েছে, তাদেরই অন্যতম বিপরীতের ঐক্য ও সংঘাত। বস্তু সম্পর্কে আলোচনায় হেগেলও অত্যন্ত সুনির্দিষ্টরূপে একথার উল্লেখ করেছেন। নিজের লেখা ‘মেটেফিজিক্স’-এ অ্যারিস্টটলও ঐ সুত্র ধরেই হেরেক্লিটাসের দার্শনিক ধারণার বিরোধিতা করেছিলেন।

বিজ্ঞানের ইতিহাসের নিরিখে এহেন মতামতের যথার্থতা বিচার করতে হয়। সাধারণভাবে দ্বন্দ্বতত্ত্বের আলোচনায় এ প্রসঙ্গটিকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয় না (প্লেখানভও এ ভুল করেছেন)। আবার অনেকে বিপরীতের ঐক্যের বিষয়টিকে বস্তুর ধর্ম সম্পর্কে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গীতে বিবেচনা করেন। এর অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়- ‘বীজ’, ‘দ্রুতি’ কিংবা আদিম সাম্যবাদী সমাজ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যার সময় এঙ্গেলস যেভাবে সর্বসাধারণের বুঝতে সুবিধা হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এর ফলে বিপরীতের এহেন আচরণকে চৈতন্যের নিয়ম কিংবা বস্তুজগতেরই নিজস্ব নিয়ম হিসাবে বিবেচনা করা হয় না।

গণিতে এর উদাহরণঃ যোগ (+) ও বিয়োগ (-) , অবকলন (ডিফারেন্সিয়াল) ও সমাকলন (ইন্টিগ্রাল) প্রক্রিয়া

বলবিদ্যায় এর উদাহরণঃ ক্রিয়া (অ্যাকশন) ও প্রতিক্রিয়া (রিঅ্যাকশন)

পদার্থবিদ্যায় এর উদাহরণঃ ধনাত্মক (পজিটিভ) ও ঋণাত্মক (নেগেটিভ) বিদ্যুৎ

রসায়নে এর উদাহরণঃ অনুগুলির একে অন্যের সাথে যুক্ত ও বিযুক্ত হওয়া

সমাজবিজ্ঞানে এর উদাহরণঃ শ্রেণীসংগ্রাম

বিপরীতের মাঝে ‘অভেদ’ বা সম্ভবত একে বলা উচিত ‘ঐক্য’-কে চিহ্নিত করা (এই সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দুটি শব্দই কার্যত সমার্থক) আসলে দুটি ভিন্ন সত্ত্বাকে স্বীকৃতি দেওয়া। এ হল প্রকৃতিতে যাবতীয় বস্তুগত অস্তিত্ব ও ঘটনার অভ্যন্তরে দুই বিপরীতমুখী ও একে অন্যের থেকে স্বতন্ত্র প্রবণতাকে স্বীকৃতি দেওয়া। এখানে প্রকৃতি বলতে যা বোঝানো হয়েছে চেতনা ও সমাজকেও তার অন্তর্ভুক্ত ধরতে হবে। দুনিয়ায় ঘটে চলা যাবতীয় কিছুর সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন ঘটনাবলীর নিজস্ব গতিই যথেষ্ট হয়। এই গতি একেবারেই স্বতঃস্ফূর্ত, বাস্তব জগতে এহেন গতি সম্পর্কে জানার অর্থ হয় বিভিন্ন বিপরীতকে একসাথে বিবেচনা করা। যেকোনো ঘটনা কিংবা বস্তুর ক্ষেত্রে বিকাশের অর্থই হল তার অভ্যন্তরস্থ বৈপরীত্যের সংঘাত। বিকাশকে ( কিংবা বিবর্তনকে) বিবেচনা করার দুটি দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে। একটিতে বিকাশকে দেখা হয় উত্তরণ ( অথবা বৃদ্ধি) ও অবতরণ ( অর্থাৎ হ্রাস) এই অর্থে। আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী বিকাশ অথবা বিবর্তনের অর্থ হল যাবতীয় অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্যের ঐক্য। এই বিপরীত হল পরস্পর নির্ভরতাহীন দুটি প্রবণতা ও তাদের আন্তঃসম্পর্ক।

গতি সম্পর্কে আলোচনার সময় তার পিছনের কারণটির বিষয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে যে বিবেচনায় গতির কারণ হিসাবে ঈশ্বরকে কল্পনা করা হয় অথবা ধরে নেওয়া হয় গতি নিজেই গতির কারণ। আরেক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গীও রয়েছে। সেই বিবেচনায় গতির অভ্যন্তরস্থ হেতুর অনুসন্ধানই আলোচনার কেন্দ্রে থাকে।

এ দুটি দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রথমটি জীবনশক্তিহীন, শুষ্ক এবং ফ্যাকাশে ধারণা। দ্বিতীয়টি সজীব। দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গীর সুবাদেই আমরা যাবতীয় গতির মূল কারণ সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি। দ্বিতীয় ধরনের বিবেচনার উপরে নির্ভর করেই আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি কেন গতিপথের সর্বত্র সরলরৈখিক ধারা বজায় থাকে না, কেন মাঝেমধ্যে উল্লম্ফনের ঘটনা ঘটে। এ ধরনের উল্লম্ফনে গতির সন্ততায় ছেদ পড়ে। একটি সত্ত্বা নিজের বিপরীত সত্ত্বায় রূপান্তরিত হয়। কেবলমাত্র এই বিবেচনাতেই স্পষ্ট হয় কিভাবে পুরাতন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং নতুন গড়ে ওঠে।

বিপরীতের মধ্যেকার ঐক্য অবশ্যই শর্তসাপেক্ষ, একটি সাময়িক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া ক্ষণস্থায়ী, আপেক্ষিকও। বিপরীতের মাঝে সংঘাতটিই হল চূড়ান্ত অবস্থা, ঠিক যেমন বিকাশ ও গতিই প্রকৃতপক্ষে চরম অবস্থা।

ভাববাদী বিষয়ী দৃষ্টিভঙ্গী ও বস্তুবাদী দান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে পার্থক্য হল দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গীতে চূড়ান্ত ও আপেক্ষিক অস্তিত্বের মধ্যেকার সম্পর্ককেও আপেক্ষিক হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদে আপেক্ষিকতার নিরিখেই চরমকে ব্যখ্যা করা হয়। ভাববাদ চরম ও আপেক্ষিকতা দুটিকে আলাদা আলাদা করে বিবেচনা করে, একটির থেকে আরেকটিকে পৃথক রেখেই উভয়কে ব্যাখ্যা করে।

মার্কসই প্রথম বুর্জোয়া সমাজের সবচেয়ে সহজ, সবচেয়ে সাধারণ ও নিতান্ত এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাকে পর্যালোচনার জন্য নির্দিষ্ট করেন। বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থায় যা প্রতিদিন কয়েক লক্ষবার ঘটে চলে সেটি হল পণ্যের বিনিময়। ক্যাপিটাল লিখতে বসে মার্কস একেই বুর্জোয়া সমাজের মূল বা বুনিয়াদি ভিত্তিটিকে চিহ্নিত করার কাজে ব্যবহার করলেন, সেই বুনিয়াদ হল পণ্য। এই দৃষ্টিভঙ্গীর সুবাদেই আধুনিক সমাজের যাবতীয় দ্বন্দ্ব ও সেসবের শিকড় অবধি স্পষ্ট হয়ে গেল। বুর্জোয়া সমাজের কোষ হিসাবে পণ্যকে ভিত্তি করে পরবর্তী পর্যালোচনায় গোটা সমাজব্যবস্থার প্রতিটি অংশের নিজস্ব গঠন ও তাদের ক্রমবিকাশের শুরু থেকে শেষ অবধি ব্যাখ্যা করা গেল।

দ্বন্দ্বকে একটি বিষয় হিসাবে বিচার বিশ্লেষণ করার সময়ও আমাদের এহেন দৃষ্টিভঙ্গিই কাজে লাগাতে হবে। মার্কসের বিবেচনায় বুর্জোয়া সমাজ দ্বন্দ্বের সার্বিক বিষয় ছিল না, তিনি বুর্জোয়া সমাজকে দ্বন্দ্বের এক নির্দিষ্ট চেহারা হিসাবেই বিবেচনা করেছিলেন। আমাদেরও সেভাবেই নিতান্ত সহজ, সরল ও বাস্তব জীবনের সবচেয়ে স্পষ্ট বিষয়গুলিকেই আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় গাছের পাতার রং সবুজ, জন নামের একজন মানুষ কিংবা ফিডো নামের সেই যে কুকুরটি – এভাবেই শুরু করতে হবে। দ্বন্দ্বতত্ত্বের পর্যালোচনায় হেগেল একটি অসামান্য সূত্রের হদিস দিয়েছেন: এককের মধ্যেই সার্বিককে খুঁজে পাওয়া যায়। এরিস্টটল রচিত মেটাফিজিক্স প্রসঙ্গে সেই বিখ্যাত যুক্তির কথা স্মরণ রাখতে হবে – ‘অন্ততপক্ষে একটি বাড়ির কাঠামোও যে দেখেনি, তার পক্ষে নিতান্ত সাধারণভাবে হলেও বাড়ির গঠন সম্পর্কে কোনরকম মতামত দেওয়া সম্ভব হয় না’।এক্ষেত্রে এককের ধারণাই সার্বিককে প্রাসঙ্গিক করছে। আবার এরই ঠিক বিপরীত সত্য হিসাবে উপলব্ধি হয় সার্বিকের অস্তিত্ব ব্যতীত কোনও একক অস্তিত্বের সম্ভাবনাই থাকে না। এককের মাধ্যমেই সার্বিক নিজেকে তুলে ধরে, আবার সেই এককের মধ্যে সার্বিক নিজেকে টিকিয়েও রাখে। আর তাই প্রত্যেক একক নিজেই সার্বিক (অংশ কিংবা বলা চলে মর্মবস্তু হিসাবে)। সার্বিক অস্তিত্ব নিজের ভিতর বিভিন্ন এককের প্রায় সকলকেই পরিসর দেয়। আবার প্রত্যেক একক অসম্পূর্ণরূপে হলেও সার্বিক অস্তিত্বের মাঝেই নিজেকে তুলে ধরে।

একেক প্রকৃতির এককের সাথে অন্যান্য প্রকৃতির এককের বহুবিধ ক্ষণস্থায়ী সম্পর্ক তৈরি হয়। এক্ষেত্রে কোনও একক হিসাবে একটি বস্তু বা কোনও ঘটনা কিংবা কোনও একটি প্রক্রিয়া সবকিছুকেই বিবেচনা করা যায়। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন জীবানু, মৌল পদার্থ সম্পর্কে জানতে পেরেছি, বেঁচে থাকতে ন্যূনতম শর্তাবলী, প্রকৃতির সাথে মানব সমাজের বস্তুনিষ্ঠ সম্পর্ক ইত্যাদিও জানা গেছে। সম্ভাব্য ও আবশ্যিক শর্তের ধারণা পাওয়া গেছে, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ শর্তের বিষয়টিও এখন স্পষ্ট। আমরা যখন বলি জন নামের একজন মানুষ কিংবা ফিডো নামের সেই যে কুকুরটি তখন আসলে যা ঘটে তা হল একটি নির্দিষ্ট অস্তিত্বকে তুলে ধরতে যাবতীয় সম্ভাবনাকে পরিহার করা, আবার একইসাথে এর দ্বারা বাহ্যিক গঠনকে ব্যতিরেকে মানুষ কিংবা একটি কুকুর বলতে যা কিছু বোঝায় তার সারমর্ম হিসাবে একজন জন কিংবা একটি ফিডোর উদাহরণটি নির্মিত হয়। 

দ্বন্দ্বতত্ত্বের পর্যালোচনা করতে গিয়ে আমরা এমন এক উপস্থাপনার আশ্রয় নিতে পারি যাতে একটি ধারণাগত মূল বা নিউক্লিয়াসে যাবতীয় বিভিন্নতা, বৈপরীত্যের বৈশিষ্ট রয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষের অর্জিত যাবতীয় জ্ঞানেরই একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট হিসাবে দ্বন্দ্বতত্ত্বকে চিহ্নিত করা যায়। প্রকৃতি বিজ্ঞানের মাধ্যমে জানা যায় দ্বন্দ্বের যাবতীয় নিয়মাবলী বস্তুজগতেরও স্বাভাবিক নিয়ম। এককের সার্বিকে রূপান্তরিত হওয়া, সম্ভাব্য শর্ত হতে আবশ্যিক শর্তে পরিণত হওয়া, ক্ষণস্থায়ী প্রক্রিয়া থেকে চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় রূপান্তর, একক হতে বহুর অস্তিত্বে বিভাজিত হওয়া এবং নিরন্তর নিজের বিপরীতে রূপান্তরিত হওয়া এ সবই বস্তুজগতের নিয়মিত ঘটনা। দ্বন্দ্বতত্ত্ব হল জ্ঞানের নিয়ম ( থিওরি অফ নলেজ), মার্কসবাদের নিয়ম। এমন একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় সম্পর্কে প্লেখানভ সহ আরও কয়েকজন মার্কসবাদী পন্ডিতরা কার্যত মনোযোগই দেননি।  

প্রাককথন ও অনুবাদঃ সৌভিক ঘোষ

Spread the word

Leave a Reply