প্রাককথন
ফ্রেডরিক এঙ্গেলস সম্পর্কে অভিযোগ ওঠে কার্ল মার্কস নাকি খুব একটা নির্ধারণবাদী (ডিটারমিনিস্টিক) ছিলেন না, এঙ্গেলসই তাকে অমন করে তুলেছেন। এমন অভিযোগ যারা তোলেন তারাই নবীন মার্কস (ইয়ং মার্কস) বনাম প্রবীণ মার্কসের ভাষ্যটিকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করে গেছেন। এর উদ্দেশ্য খুবই সহজ, কার্ল মার্কসের মৃত্যুর পরে একদল ভেবে নিয়েছিলেন সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের ভূত শেষ হল! কিন্তু ফ্রেডরিক এঙ্গেলস আরও কিছু বছর বেঁচে রইলেন এবং শেষ অবধি সেই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। মাঝে কিছু বছর এডুয়ার্ড বার্নস্টাইনরা কাজ চালানোর মতো কিছু একটার চেষ্টা করেছিলেন। তার পরেই ভি আই লেনিন ও রাশিয়ার মাটিতে সর্বহারা বিপ্লবের বিজয়।
মার্কস-এঙ্গেলসের চিঠিপত্রের সংকলনে বহুদিন অবধি এই চিঠিটি স্টার্কেনবার্গের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি বলে উল্লিখিত হয়। এমনকি রাশিয়া থেক প্রকাশিত বাংলা সংস্করণেও দীর্ঘদিন সেই ভুল রয়ে গেছিল। ১৮৯৫ সালে Der socialistische Akademiker নামক জার্নালে এডুয়ার্ড বার্নস্টাইন এই চিঠিটি প্রকাশ করেন। তাতে প্রাপকের কোনও উল্লেখ ছিল না। চিঠিটি উদ্ধার করেছিলেন স্টার্কেনবার্গ নিজেই, তাই ধরে নেওয়া হয়েছিল এঙ্গেলস হয়ত তাকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছেন। ১৯৬৮ সালের সংস্করণে সেই ভ্রান্তি চিহ্নিত হয়। আপাতভাবে সামান্য ঘটনা বলে মনে হলেও কমিউনিস্ট পার্টির কাজে যেকোনো দলীল ইত্যাদির বিষয়ে কতদূর সতর্ক ও সচেতন থাকতে হয় এ হল তারই একটি উদাহরণ।
ইতিমধ্যে ঐতিহাসিক বস্তুবাদ সম্পর্কে এঙ্গেলসের দুটি চিঠি মতাদর্শ সিরিজে প্রকাশিত হয়েছে। এইবার ১৮৯৪ সালে ডব্ল্যু বর্গিয়াস’কে লেখা এঙ্গেলসের একটি চিঠি প্রকাশিত হল। এই চিঠির সারমর্ম আগের দুটির সাথে খানিকটা মেলে, সামাজিক বিকাশে অর্থনৈতিক সম্পর্কের বস্তুনিষ্ঠ গুরুত্বের আলোচনাই এতে রয়েছে। তাহলে একে বিশেষ করে উল্লেখের কারণ কী? এক- এই চিঠিতে এঙ্গেলস শেষ বিচারে অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রভাবকে তুলে ধরেছেন, আবার ভিত্তির উপরে উপরিকাঠামোর প্রভাবকেও উল্লেখ করেছেন। দুই- এই চিঠিতে বিধৃত হয়েছে ব্যক্তির ঐতিহাসিক ভূমিকা প্রসঙ্গে অসাধারণ কিছু মন্তব্য। মার্কস’কে ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারণার আবিষ্কারক হিসাবে চিহ্নিত করেও এঙ্গেলস মনে করিয়ে দিয়েছেন ইতিহাস নির্ধারিত কর্তব্য সম্পাদনে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতেই হত, মার্কস না থাকলেও আজ আমরা যাকে মার্কসবাদ বলে চিনি তার আবিষ্কার হতই। এঙ্গেলস’র ব্যবহার দুনিয়াজুড়েই খ্যাতি পেয়েছে, এই চিঠির শেষেও তার উদাহরণ মেলে। যেভাবে এই চিঠি লিখেছেন তা ছাপার জন্য যথাযথ না- এমনটাই মনে করেছিলেন এঙ্গেলস, কারণ লিখতে বসে ততটা সময় দিতে পারেননি। এও এক মনে রাখার মনে রাখার মতো বিষয়।
ফ্রেডরিক এঙ্গেলস
আপনার প্রশ্নের উত্তরে জানাই-
১) আমরা মনে করি বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থার যাবতীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের সামগ্রিক চেহারাটিই হল মানুষের সামাজিক ইতিহাসের নির্ধারক ভিত্তি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বলতে আমরা বুঝি সেই ব্যবস্থা যার মাধ্যমে মানুষ নিজেদের জীবন ধারণের জন্য জরুরী সমস্ত উপকরণসমূহ নির্মাণ করে এবং উৎপাদিত সবকিছুই নিজেদের মধ্যে বিনিময় করে। সমসাময়িক পরিস্থিতিতে শ্রমবিভাজনের কাঠামোর উপরে সেই বিনিময়ের মাত্রা নির্ভর করে। উৎপাদন প্রক্রিয়া ও পরিবহনকে এই কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত বলেই বিবেচনা করা হয়। আমরা মনে করি প্রতিটি ঐতিহাসিক পর্যায়ে সামাজিক বণ্টন এবং বিনিময়ের পদ্ধতিটিও নির্ধারণ করে দেয় ঐ একই কাঠামো। গোত্র ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা (Gentile Society) ভেঙে যাওয়ার পর থেকে মানবসমাজ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়েছে। প্রভু ও দাস ভিত্তিক সমাজ থেকে বর্তমান রাষ্ট্রকাঠামো, রাজনৈতিক পরিবেশ ও আইনের শাসন সবকিছুই নির্ধারিত হয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই। এর সাথেই যুক্ত ভৌগোলিক বাস্তবতার বিষয়টি। যে ভৌগলিক ভিত্তিক উপর অর্থনৈতিক সম্পর্ক সমূহ কাজ করে তার যাবতীয় ঐতিহাসিক অবশেষ যা পাওয়া যায় সেসবই হয় বংশানুক্রমিক আর নাহলে উৎপাদন প্রক্রিয়ার নিজস্ব গতির কারণে অতীত থেকে পরবর্তী সময়ে সঞ্চারিত হয়ে এসেছে। সমাজ বিকাশের ইতিহাসে প্রকৃতিজনিত পারিপার্শ্বিক বাধ্যবাধকতাও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
আপনার যুক্তিতে এই সমগ্র অবস্থাটি মুলত বিজ্ঞানের বিকাশের উপরে নির্ভর করে এগোয়। তাকেই আপনি মোটের উপরে ‘টেকনিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে বিজ্ঞান ও তার বিকাশ মূলত রাষ্ট্রীয় চাহিদার (সার্বিক সমাজব্যবস্থার প্রয়োজন) উপরেই নির্ভর করে। প্রযুক্তিগত বিকাশের জন্য নির্দিষ্ট চাহিদা থাকলে যা ঘটে, দশ দশটি বিশ্ববিদ্যালয় মিলেও বিজ্ঞানকে ততদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। ষোল ও সতেরো দশকের ইতালির পার্বত্য এলাকার ঝরনার জলকে নিয়ন্ত্রণের চাহিদা তৈরি হয়েছিল। সেই থেকেই পরিবাহী সংক্রান্ত গতিবিজ্ঞানের (হাইড্রোডাইনামিক্স) জন্ম হয়েছে, টরিসেল্লীর মতো বিজ্ঞানীরা সেই সামাজিক চাহিদার সমস্যাকে সমাধান করেন। কিন্তু এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যের যে আজও জার্মানিতে বিজ্ঞানের ইতিহাসকে কার্যত আকাশ থেকে খসে পড়া জ্ঞান হিসাবেই তুলে ধরা হচ্ছে।
২) আমরা মনে করি মানবসমাজের ঐতিহাসিক বিকাশ শেষ অবধি সমাজের অর্থনৈতিক বাস্তবতার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু ‘জাতি’ (race) নিজেই একটি অর্থনৈতিক উপাদান। অবশ্য সংশ্লিষ্ট প্রশ্নে আরও দুটি বিষয়কে মনে রাখতে হবে-
ক) অর্থনৈতিক বিকাশের উপরে নির্ভর করেই রাজনৈতিক, আইনগত, দার্শনিক, ধর্মীয় ও শিল্প সাহিত্য ইত্যাদি বিকশিত হয়। কিন্তু সেটুকুই সব না, উল্টোটাও ঘটে। উপরিকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত ঐ সকল বিষয়গুলিও ভিত্তি অর্থাৎ অর্থনৈতিক বাস্তবতার উপরে প্রভাব বিস্তার করে। এক্ষেত্রে অর্থনীতিকেই একমাত্র কারণ আর বাদবাকি সবকিছুই তার ফলাফল বিবেচনা করা চলে না। ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলাফল হিসাবে শেষ অবধি যা প্রতিষ্ঠিত হয় তার নির্ভরতা রয়ে যায় বিদ্যমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার উপরে।
১৬৪৮ সাল থেকে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় ছিল। সেই থেকেই তৈরি হয় ভয়ানক অবসাদ ও অক্ষমতার মানসিকতা। সেই মনোভাবই প্রথমে ভক্তিধর্মে এবং পরে ভাবালুতায় ভেসে গিয়ে রাজা ও অভিজাতদের সমীপে পদলেহী দাসত্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে। তার অর্থনৈতিক প্রভাবও সামনে আসে। পুনরুজ্জীবনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ঐ মনোবৃত্তিই। যতদিন না বৈপ্লবিক পরিস্থিতি এবং নেপোলিয়নের সুবাদে যুদ্ধবিগ্রহ দীর্ঘস্থায়ী দুর্গতিকে সুতীব্র করে তুলেছিল, ততদিন সেই বাধা এতটুকু নড়েনি। তাই, কেউ কেউ নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী যেমনটা ধরে নেন যে অর্থনৈতিক অবস্থার ফলাফল নিজে থেকেই ফলবে, সেটা আদৌ সঠিক নয়। মানুষ নিজের ইতিহাস নিজেরাই সৃষ্টি করে ঠিকই, কিন্তু তেমনটা ঘটে কেবলমাত্র এক নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই। সেই পরিস্থিতি ইতিমধ্যে বিদ্যমান বাস্তব সামাজিক সম্পর্কসমূহ ও ইতিহাসের শর্তাশধীন থাকে। ঐ সকল সম্পর্কের মধ্যে অবশ্য নানা রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত বিষয়গুলি যতই প্রভাব বিস্তার করুক না কেন শেষ অবধি অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই সামাজিক বিকাশকে উপলব্ধি করা যায়।
খ) মানুষ নিজেরাই তাদের ইতিহাস সৃষ্টি করে। কিন্তু এখনও অবধি তা কোনো যৌথ পরিকল্পনা কিংবা কোনো যৌথ অভিপ্রায় অনুসারে ঘটেনি। নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ কোনও সমাজের বেলায়ও তেমনটা হয় না। ইতিহাসের নির্মাণের পর্বে বিভিন্ন মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সংঘাত লাগে। আর তাই যেকোনো সমাজই আসলে প্রয়োজনীয়তার দ্বারা শাসিত হয়। সেই শাসনেরই অনুবন্ধী চেহারায় সামনে এসে হাজির হয় আকস্মিক দুর্ঘটনার মতো নানা ঘটনাবলী। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে যে সকল দুর্ঘটনাগুলি আড়াআড়িভাবে সামাজিক প্রয়োজনকে প্রতিস্থাপিত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে সেসবই শেষ বিচারে অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা। এমন পরিস্থিতিতেই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন তথাকথিত মহাপুরুষরা। একটি বিশেষ দেশ ও বিশেষ সময়ে ঐ যে নির্দিষ্ট ব্যক্তিটির আবির্ভাব ঘটল সেটা অবশ্যই আকস্মিক ঘটনা। কিন্তু ইতিহাসের বিবেচনায় যদি তাকে সরিয়ে রেখে দেখেন, দেখতে পাবেন চারিদিকে সেই নির্দিষ্ট বিকল্পের দাবিই উঠছে। এই বিকল্প পাওয়া যাবে, ভাল হোক মন্দ হোক শেষ পর্যন্ত সেই বিকল্প মিলবেই। ঠিক যেমন ঘটেছিল ফ্রান্সে। যুদ্ধ বিগ্রহে অবসন্ন ফরাসী প্রজাতন্ত্র এক সামরিক ‘ডিক্টেটর’কেই ইতিহাসের কর্তব্য সমাধানের জন্য আবশ্যক করে তুলেছিল। শেষ অবধি সেই ব্যক্তি হয়ে উঠলেন কর্সিকাবাসী নেপোলিয়নই। এখানে ব্যক্তি হিসাবে নেপোলিয়নের উত্থান আকস্মিক ঘটনা, তিনি সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ না হলে তার বদলে অন্য যে কেউই সেই স্থান পূরণ করত। এর প্রমাণ কী? ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালেই দেখা যাবে যখনই তার এমন কোনও ব্যক্তির প্রয়োজন হয়েছে তখনই কাম্য মানুষটির খোঁজ ঠিকই পাওয়া গেছে। সিজার, অগাস্টস কিংবা ক্রমওয়েল সকলেই সেই ঐতিহাসিক উদাহরণ। মার্কস ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারণাটির আবিষ্কার করেছেন ঠিকই। কিন্তু একথাও স্মরণে রাখতে হয় যে ঐ আবিষ্কারের জন্য চেষ্টা চলছিলই। থিয়েরি, মিগনেয়, গিজো সহ ১৮৫০ সাল পর্যন্ত সকল বৃটিশ ঐতিহাসিকরাই সেই চেষ্টা করে গেছেন। মর্গানের হাত ধরে যে ঐতিহাসিক ধারণার আবিষ্কার হল সেটাই প্রমাণ করে দেয় যে ঐ আবিষ্কারের সময় উপস্থিত হয়েছিল- আজ হোক বা কাল কাজটা করতেই হত।
ইতিহাস নির্দিষ্ট বিভিন্ন আকস্মিক দুর্ঘটনা এমনকি আপাত দুর্ঘটনাগুলির বেলাতেও ঠিক এমনই ঘটেছে। সেসবের শিকড় অনুসন্ধানে আগ্রহীরা খেয়াল করবেন নির্দিষ্ট বিষয়টিকে যত বেশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে দূরে রেখে বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে, বিশুদ্ধ বিমূর্ত-মতাদর্শগত ক্ষেত্রের নিকটবর্তী করে তোলা হবে, ততই বেশী করে তার বিকাশপথে আকস্মিক দুর্ঘটনার প্রভাব খুঁজে পাওয়া যাবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক থেকে যত আলাদা করে বিবেচনা করা হবে ইতিহাসের সঞ্চারপথ নিজেকে ততই আঁকিয়ে-বাঁকিয়ে এগোবে। সেই সঞ্চারপথের অক্ষরেখাকে টানা হলে দেখা যাবে আলোচ্য সময়কাল যত দীর্ঘ হবে, আলোচ্য ক্ষেত্রটি যত বিস্তৃত হবে, তত বেশি করে সেই বক্ররেখার অক্ষ অর্থনৈতিক বিকাশ রেখার কাছাকাছি চলে আসবে, দুটি রেখা কার্যত সমান্তরাল হয়ে পড়বে।
জার্মানিতে অর্থনৈতিক ইতিহাসের চর্চায় সবচেয়ে বড় বাধা কি? ঐতিহাসিক নথিপত্র সংরক্ষণে দায়িত্বজ্ঞানহীন অবহেলাই সেই বাধার মূল। একেবারে স্কুল স্তর থেকে ইতিহাস সম্পর্কে যে সকল ধারণা শিক্ষার্থীদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বড় হওয়ার পরেও সেসবের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া বেশ কঠিন। এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য ইত্যাদি খুঁজে বার করা আরও কঠিন কাজ। উদাহরণ হিসাবে গ ফন গালিখের কথাই বলা যায়। তার লেখা বইতে তথ্য-সঙ্কলন নীরস হলেও অসংখ্য রাজনৈতিক ঘটনার ব্যাখ্যায় উপযোগী মালমসলায় ভর্তি একথা কি ভুলে যাওয়া চলে?
এছাড়া, মার্কসের রচনার কথাও বলা যায়। ‘অষ্টাদশ ব্রুমেয়ার’ বইতে তিনি চমৎকার সব দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। আমার মনে হয় সে থেকেই আপনি নিজের প্রশ্নগুলির যথেষ্ট উত্তর খুঁজে পাবেন। এর একমাত্র কারণ ঐ বইটি ইতিহাস রচনার এক ব্যবহারিক দৃষ্টান্ত। নিজের বিভিন্ন লেখায় অধিকাংশ বিষয়গুলি নিয়ে ইতিমধ্যে আমিও বেশ কিছুটা আলোচনা করেছি। ‘অ্যান্টি-ড্যুরিং’ই তার অন্যতম উদাহরণ। এই বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের ৯-১১ পরিচ্ছেদ, দ্বিতীয় অধ্যায়ের ২-৪ পরিচ্ছেদ এবং তৃতীয় অধ্যায়ের ১ম পরিচ্ছেদে আপনি সেসব খুঁজে পাবেন। এমনকি বইটির মুখবন্ধেও বেশ কিছু জরুরী কথাবার্তা রয়েছে। ‘ফয়েরবাখ’ সংক্রান্ত সমালোচনার (ল্যুদউইগ ফয়েরবাখ ও চিরায়ত জার্মান দর্শনের অবসান) শেষ অংশেও কিছু কথা লিখেছি।
এই চিঠিতে যা লিখলাম তার প্রতিটি কথা নিক্তি মেপে ওজন করতে যাবেন না। যাবতীয় আলোচনার সাধারণ সম্পর্কটি মনে রাখবেন। লেখাটি প্রকাশের উদ্দেশ্য লিখতে বসলে যেমনভাবে আমাকে লিখতে হত দুঃখের সঙ্গে জানাতে বাধ্য হচ্ছি, আপনার চিঠির জবাবে তেমনটি লেখার মতো অবকাশ আমার হাতে নেই…
প্রাককথন ও অনুবাদ- সৌভিক ঘোষ