I Survived the Taliban. I Fear for My Afghan Sisters

মালালা ইউসুফজাই সারা পৃথিবীতে মৌলবাদ এবং তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একজন বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ব। ২০১২ সালের ৯ই অক্টোবর সোয়াট উপত্যকা অঞ্চলে একটি স্কুলবাসের উপরে হামলা চালায় তালিবানেরা। সেই ঘটনায় মালালা ইউসুফজাই মাথায় গুলি লেগে ভয়ানক আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন – মৌলবাদী ফতোয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মেয়েদের স্বাধীন জীবন এবং শিক্ষার অধিকারের স্বপক্ষে লড়াই অব্যাহত রেখেছেন। গতবছর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক হয়েছেন। আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী মালালা’কে আশংকিত করেছে – তালিবানেরা যেভাবে প্রায় বিনা বাধায় দেশের বেশিরভাগ জায়গায় নিজেদের দখল কায়েম করেছে তাতে সেখানকার মহিলা এবং শিশুদের ভবিষ্যৎসম্পর্কে তিনি নিজের অভিজ্ঞতাপ্রসুত মতামত প্রকাশ করেছেন। সেই বক্তব্যেরই বাংলা অনুবাদ রাজ্য ওয়েবসাইটের পক্ষে প্রকাশিত হল।

মালালা ইউসুফজাই

গত দুই দশকে লক্ষ লক্ষ আফগান নারী ও মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পেয়েছিল। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের যে প্রতিশ্রুতি ছিল তা এখন বিপজ্জনকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবার মুখে। ২০ বছর আগে ক্ষমতা হারানোর আগে অবধি তালিবানরা প্রায় সব মেয়েদেরই স্কুলে যেতে বাধা দিয়েছিল এবং যারা তাদের বিরুদ্ধাচারন করে তাদের কঠোর শাস্তি দিয়েছিল। আজ তারাই পুনরায় আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে এসেছে। অনেকের মতো আমিও আফগান মেয়েদের ভবিষ্যতের জন্য আশংকায় রয়েছি।

আমার নিজের শৈশবের কথা মনে পড়ছে। ২০০৭ সালে যখন তালিবানরা পাকিস্তানের সোয়াট উপত্যকায় আমার জন্মস্থান দখল করে তার কিছুদিন পরেই তারা সেই অঞ্চলের মেয়েদের শিক্ষা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আমি তখন শালের নিচে আমার বই লুকিয়ে রাখতাম এবং ভয়ে ভয়ে স্কুলে যেতাম। এভাবেই পাঁচ বছর চলে, আমার যখন ১৫ বছর বয়স – মেয়েদের স্কুলে পড়ার অধিকার সম্পর্কে প্রচার করার অভিযোগে তালিবানরা আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করে।

আমি আমার জীবনের জন্য কৃতজ্ঞ। গত বছর কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে আজ আমার ক্যারিয়ার সম্পর্কে ধারনা কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে। আজ আমি কোন বন্দুকধারী পুরুষ দ্বারা নির্ধারিত বন্দীজীবনে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারি না।

আজ আফগানিস্তানের পরিস্থিতি দেখে আমি এই চিন্তায় হতাশ হয়ে পড়েছি যে সেখানকার মেয়েদের হয়ত আর কখনও ক্লাসরুম দেখতে দেওয়া হবে না বা নিজেদের জন্য কোন বই রাখার অনুমতি দেওয়া হবে না। তালিবানের কিছু সদস্য অবশ্য বলছেন যে তারা মেয়েদের শিক্ষা বা কাজের অধিকারকে আর অস্বীকার করবে না। কিন্তু তালিবান শাসনে নারীদের অধিকার দমন করার পূর্ব ইতিহাসকে বিবেচনায় রাখলে আফগান মেয়েদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত আশঙ্কা তৈরি হতে বাধ্য। মহিলা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মহিলা কর্মীদের  অফিস যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে খবর আসতে শুরু করেছে।

এমন পরিস্থিতি অবশ্য আফগানিস্তানের জন্য নতুন নয়। দেশে বিদেশে বিভিন্ন শক্তিগুলির মধ্যেকার যুদ্ধবিগ্রহে আফগানদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম আটকে পড়ে রয়েছে। বহু শিশুদের জন্মই হয়েছে যুদ্ধের মাঝে। অনেক পরিবার বেশ কয়েক বছর ধরে শরণার্থী শিবিরেই বসবাস করছে। এখন আরও কয়েক হাজার মানুষ তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়েছে।

যে কালাশনিকভ রাইফেলগুলি তালিবানরা কাঁধে চাপিয়ে ঘুরে বেড়ায় সেগুলি আসলে আফগান জনগণের কাঁধে চেপে থাকা একটি ভারী বোঝা। নিজেদের আদর্শ ও লোভের যুদ্ধে যেসব দেশ আফগানদের বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করেছে তারা কার্যত নিজেদের পাপের বোঝা আফগানদের ঘাড়ে ঠেলে দিয়েছে।

কিন্তু আমি মনে করি আফগান জনগণ বিশেষ করে নারী ও শিশুদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে এখনও যথেষ্ট দেরি হয়নি।

গত দুই সপ্তাহ, আফগানিস্তানের বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদদের সাথে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি এবং পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে তাদের প্রত্যাশা নিয়ে আমি কিছু কথা বলেছি। নিরাপত্তার কারণে আমি এখানে তাদের নাম বলতে চাইছি না। গ্রামীণ শিশুদের জন্য স্কুল পরিচালনা করেন এমন একজন মহিলা আমাকে বলছিলেন যে তিনি সেই স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না।

তিনি আমাকে জানালেন, “আমরা সাধারণত শিক্ষা নিয়ে কাজ করি, এখন তাঁবু বিতরণের কাজে মনোযোগ দিয়েছি। হাজার হাজার মানুষ নিজেদের জায়গা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। এইসব পরিবারগুলির খুব দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন যাতে তারা অনাহার বা পানীয় জলের অভাবে  না মারা যায়”। অন্য অনেকের মতোই তিনি একটি সাধারন আবেদন জানাচ্ছেন: নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলির এখনই সক্রিয় হওয়া উচিত। আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ হিসাবে চীন, ইরান, পাকিস্তান, তাজাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তানকে এদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া নাগরিকদের জন্য নিজেদের দেশের দরজা খুলে দিতে হবে। এই পদক্ষেপে জীবন বাঁচবে এবং আফগানিস্তানের এক  বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে স্থিতিশীল রাখতেও এই কাজ সহায়ক হবে। অবিলম্বে শরণার্থী পরিবারবর্গের শিশুদের স্থানীয় বিদ্যালয়গুলিতে ভর্তির অনুমতি দিতে হবে এবং মানবিক সংগঠনগুলিকে বিভিন্ন শিবির ও আপৎকালীন বসতিগুলিতে অস্থায়ী শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করতে দিতে হবে।

আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের স্বার্থে, আরেক মানবাধিকার কর্মী আমাকে জানালেন তারা চাইছেন তালিবানরা কী চাইছে সে সম্পর্কে তারা স্পষ্ট বার্তা দিক: “ভাসা ভাসা কায়দায় ‘মেয়েরাও স্কুলে যেতে পারে’ বললেই চলবে না। মেয়েরা যাতে তাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারে, বিজ্ঞান – গনিত ইত্যাদি বিষয়ও পড়তে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে হবে। নিজেদের পছন্দের কাজে যুক্ত হবার অনুমতি দেবার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকা উচিত”। আমি যেসব মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি তারা সবাই ধর্মীয় শিক্ষা ব্যাতিত অন্যসব শিক্ষার সুযোগ নিষিদ্ধ থাকার অবস্থার কথা বলে নিজেদের আশঙ্কা প্রকাশ করছিল। তাদের আশংকা ভবিষ্যতের আফগানিস্তানে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং বিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আফগানিস্তানের যুদ্ধে কোন পক্ষের কি ভুল হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক করার যথেষ্ট সময় থাকবে, কিন্তু আজকের সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই আফগান নারী ও মেয়েদের প্রসঙ্গকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। পূর্বতন সরকারের আমলে তাদের সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাধীনতা এবং ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তাদের সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাওয়ার সাক্ষি হয়ে আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আমাদের হাতে আর একটুও সময় নেই।

ওয়েবডেস্কের পক্ষে অনুবাদঃ সৌভিক ঘোষ

Spread the word

Leave a Reply