বিপ্লবের স্তর বুঝতে গেলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন ভারতের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রের প্রধান দ্বন্দ্বগুলোকে অনুধাবন করা।পৃথিবীর যে কোন দেশের ক্ষেত্রেই বিপ্লব বা সমাজের আমূল মৌলিক পরিবর্তনের জন্য যে লড়াই তার ক্ষেত্রে এই মূল্যায়ন অত্যন্ত জরুরি ও তার ভিত্তিতেই বিপ্লবের স্তর নির্ধারণ করতে হয়। ভারতের বিপ্লবের স্তর সেই অর্থে তিনটি ভাগে বিভক্ত। ১৯৪৭ এর ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত প্রথম স্তর -বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে General National United Front বা সাধারণ জাতীয় ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট। এই যুক্তফ্রন্টে দেশীয় পুঁজিপতি সহ শ্রমিক, কৃষক,মধ্যবিত্ত সমস্ত মানুষ শামিল ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে।এই ফ্রন্টের শরিক কমিউনিস্টদেরও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। এই সময়ের মূল লক্ষ্য ছিল দেশকে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত করা। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর ভিত্তিতে, মধ্যবিত্ত, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবৃহৎ পুঁজিপতিদের মোর্চায়-কমিউনিস্টরা যদি মূল চালিকা শক্তি হয় যেমন চীন,ভিয়েতনাম বা কোরিয়ার বিপ্লবের ক্ষেত্রে হয়েছিল তাহলে ঔপনিবেশিক শাসন মুক্তির পরে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তর এ উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব।কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের এই স্তরটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়।মূল কথা হল ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্টের পরে ভারতে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের যে স্তরে উত্তীর্ণ হওয়ার কথা ছিল সেই কাজ সম্পন্ন হয়নি। চীনের ক্ষেত্রে এই গণতান্ত্রিক স্তরটি আগেই উপস্থিত হয়েছিল যখন সান ইয়াৎ সেনের নেতৃত্বে কুয়োমিন্টাং ও কমিউনিস্টদের মৈত্রীর ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক মোর্চা তৈরি হয়েছিল। ড. সান ইয়াৎ সেনের মৃত্যুর পর চিয়াং কাই শেক এর বিশ্বাসঘাতকতায় এই ফ্রন্ট ভেঙে যায়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কাজ চীন বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন করে।গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কাজ সম্পন্ন করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের দিকে অগ্রসর হয়েছে চীন।
ভারতের ক্ষেত্রে প্রথম স্তরটা ছিলে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জনগণের লড়াই। কিন্তু আমরা যে স্বাধীনতা পেলাম সেটা ছিল আপোষের স্বাধীনতা। দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মধ্য দিয়ে যা আমরা পেয়েছিলাম। দেশভাগের জন্য স্বাধীনতার লড়াই ছিল না , ঐক্যবদ্ধ ভারতের জন্যই ঐক্যবদ্ধ লড়াই ছিল ,সেটাই ছিল ভারতীয় জনগণের প্রাথমিক আকাঙ্খা। বর্তমানের শাসক দলের আদি সংগঠন আরএসএস, হিন্দু মহাসভা ছিল হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে। পরে মুসলিম লীগ আলাদা পাকিস্তান দাবি করে।ঐ সময় ফ্যাসিবাদের পরাজয় ও জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ক্রমবর্দ্ধমান তরঙ্গের মুখে পড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ দুটি প্রধান বুর্জোয়া-জমিদার দল কংগ্রেস এবং লীগের নেতাদের সঙ্গে দেশভাগের সমঝোতা করে। জাতীয় আন্দোলনে বুর্জোয়া-জমিদার শ্রেনীর নেতৃত্ব থাকায় এই কাজ সহজ হয়েছিল। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে মৌলিক কথাগুলো এখনো লেখা আছে সেগুলোও পুরোপুরি অর্জিত হওয়া তো দূরের কথা,আজ তার প্রত্যেকটি শব্দই আক্রান্ত । এদেশের শাসক শ্রেণী বলতে বোঝায় বৃহৎ বুর্জোয়া শ্রেনীর নেতৃত্বে, বুর্জোয়া-জমিদারদের জোট। মূলত হাতে গোনা বৃহৎ পুঁজিপতিরা ধনতান্ত্রিক পথে বিকাশের জন্য ক্রমেই বেশি বেশি করে আন্তর্জাতিক ফিনান্স পুঁজি’র সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে।সাম্রাজ্যবাদ রাষ্ট্র ক্ষমতায় নেই কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক দেশের সার্বভৌমত্বের বিপদ বাড়াচ্ছে। জমিদারীর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে এরা শাসক জোটের অংশীদার। আগেকার জমিদারী এখন অনেক বদলে গেছে। এখনকার বৃহৎ জমির মালিকরা কৃষকদের কৃষি থেকে উচ্ছেদ করে দেশী বিদেশী কর্পোরেটদের সাথে সহযোগিতায় আগ্রহী।
ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রে আমরা যেমন রাজতন্ত্র সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের অবসান দেখেছিলাম এদেশে স্বাধীনতার পর তা করা হয়নি। পারস্পরিক স্বার্থে বুর্জোয়া- জমিদার জোট গনতান্ত্রিক বিপ্লবের মূল কাজ আমূল ভূমিসংস্কার আপোশ করে নেয় টিঁকে থাকার স্বার্থে। কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকও উল্লেখ করেছিল যে চীন বা কোরিয়ার তুলনায় এই দেশের বুর্জোয়ারা অনেকাংশে শক্তিশালী ছিল। চীনের ক্ষেত্রে মুৎসুদ্দি বুর্জোয়ারা যেমন সাম্রাজ্যবাদের ওপরেই নির্ভরশীল ছিল, তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল না এদেশের বুর্জোয়ারা তুলনায় ছিল অনেক বেশি
শিল্পদ্যোগী, ভারতে দেশীয় লগ্নীর উদাহরণ স্বাধীনতার আগেও ছিল- বস্ত্র, ইস্পাত ইত্যাদিতে তাদের উল্লেখযোগ্য লগ্নী ছিল। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকলেও প্রধান চালিকাশক্তি ছিল এই বুর্জোয়া-জমিদারদের জোট । চীন বা কোরিয়া বা ভিয়েতনামের অনগ্রসর পুঁজিপতিদের দ্বারা এই নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না । স্বাধীনতার কিছু অসম্পূর্ণতার জন্য ১৯৪৭ এর পরবর্তীতে শুরু হয়েছে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরটি। এই জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরটি সফল হলে শুরু হবে তৃতীয় স্তরের কাজ – সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তর। ভারতে পার্টির ১০০ বছরের ইতিহাসে এই বিপ্লবের স্তর নির্ধারণ,বিপ্লবে কাদের সাথে জোট হবে কাদের বিরুদ্ধে লড়াই হবে এই নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হয়েছে এবং যার ফলে পার্টি ভাগ ও হয়েছে।যদিও এখন এই নিয়ে বিশেষ বিতর্ক নেই যে বর্তমানে আমরা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরে রয়েছি। শব্দচয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় গণতান্ত্রিক,নয়াগণতান্ত্রিক বা জনগণতান্ত্রিক এই টুকিটাকি ফারাক থাকলেও মূলগতভাবে বর্তমান বিপ্লবের স্তর নিয়ে বিশেষ কোন বিতর্ক নেই। এই তিনটি যে স্তর ও সেই স্তরের দ্বন্দ্বসমূহের মধ্যে বা স্তরভেদের মধ্যে কোন চীনের পাঁচিল নেই। যেমন একটা সময় এদেশের শাসকশ্রেণী যে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদানকারী ভূমিকায় ছিল আজ সেই অবস্থান আর নেই, এখন এমন পরিস্থিতি রয়েছে যেখানে ট্রাম্প, ব্রাজিলের বলসোনারো, তুরস্কের এরদোগান,ভারতের মোদি সহ ইউরোপের উগ্র দক্ষিণপন্থীরা মিলে একটা জোট তৈরি করতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যেমন সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো মিলে ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবাদের জন্য গোটা পৃথিবী জুড়ে তান্ডব চালিয়েছিল তেমনই একটা অক্ষশক্তিতে ভারত যদি এখনকার মত জুনিয়ার পার্টনার না থেকে সরাসরি অংশগ্রহণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখন পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারে। ফলতঃ বিপ্লবের স্তর, জোটমিত্রও বদলে যেতে পারে যেমনটা চীনে হয়েছিল।
চিয়াং কাই-শেক এর নেতৃত্বে কুয়োমিন্টাং শুরুতে তীব্র কমিউনিস্ট বিরোধী ও সাম্রাজ্যবাদের মদতপুষ্ট ছিল কিন্তু জাপানী সাম্রাজ্যবাদ যখন মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করল তখন চিয়াং বাধ্য হয়েছিল কমিউনিস্টদের সাথে জোট করতে, তখন চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকেও সাময়িকভাবে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরকে স্থগিত রেখে জাপবিরোধী জোট করতে হয়েছিল চিয়াং কাই-শেকের সাথে। আবার অল্প সময়ের ব্যবধানেই এই জোট ভেঙে যায় ও নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের কাজ শুরু হয়। বর্তমানেও যদি ট্রাম্পের নেতৃত্বে এরকম কোন নয়া অক্ষশক্তি তৈরি হয় ও তাতে ভারত থাকে তাহলে এদেশেও দ্বন্দ্বগুলোর মধ্যে গুরুত্বের হেরফের ঘটতে পারে ও বিপ্লবের স্তরে রদবদল ও ঘটতে পারে। তবে এটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে অতীতের ফ্যাসিবাদ ও বর্তমানের ফ্যাসিবাদ একরকম হবে না। যদিও মৌলিক কিছু বৈশিষ্ট্য এক থাকতে পারে।
আমরা বর্তমানে একথাও বলতে পারি না যে এখন ভারত রাষ্ট্র ফ্যাসিবাদীদের দখলে । আক্রমণ বাড়ছে, দেশের সরকার চালাচ্ছে যে দল তার মূল সংগঠন আরএসএস একটি ফ্যাসিবাদী সংগঠন এটাও সত্য, সেইদিক থেকে বিজেপি এমন একটা রাজনৈতিক দল যার সাথে শাসক শ্রেণীর অন্য কোন দলের কোন তুলনাই হয় না। বিজেপি হিন্দু রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়, তারা অনেক বেশি আন্তর্জাতিক লগ্নীপুঁজির , সাম্রাজ্যবাদের ঘনিষ্ট,অনেক বেশি যুদ্ধবাজ। অতীতে হিটলার যেমন ইহুদীদেরকে মূল শত্রু বেছে নিয়েছিল বিজেপিও তেমন মুসলমানসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও মণুবাদী ভাবধারার মদতে দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য অনগ্রসর অংশের মানুষের ওপরে নিরন্তর অত্যাচার চালাতে চায়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও রাষ্ট্র ফ্যাসিবাদী হয়ে গেছে এটা বলা যায় না ,তবে বলা যাবে যদি তারা আগে যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে তেমন একটা চরম দক্ষিণপন্থী আন্তর্জাতিক যুদ্ধবাজ গোষ্ঠীর সাথে গাঁটছড়া বাঁধে- একটা নয়া অক্ষশক্তি যদি তৈরি হয়। তখন ভারতের অর্জিত সার্বভৌমত্ব,স্বাধীনতা সব ভূলুন্ঠিত হবে তখন আবার জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের মত একটা স্তর উপস্থিত হতে পারে ও বিপ্লবের স্তর-বদল ঘটতে পারে।
রাশিয়ার ক্ষেত্রে যেমন গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তর ১৯১৭ এর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ও পরবর্তী স্তরটা অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তর অক্টোবর-নভেম্বর মাসের মধ্যে উপস্থিত হয়। মাত্র ৮-৯ মাসের ব্যবধানেই স্তরোন্নয়ন ঘটেছিল। এটা সবসময় নাও হতে পারে, বিশ্ব পরিস্থিতি,বিশ্ব ভারসাম্য ও যে দেশে বিপ্লব সংঘটিত হচ্ছে সে দেশের শ্রেণীগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক ও শ্রেণী ভারসাম্যের ওপরে এগুলো নির্ভরশীল। চীনের ক্ষেত্রেও ওরা বলে না যে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, ওরা বলে থাকে যে ওরা সমাজতন্ত্রের প্রাথমিক স্তরে রয়েছে, চীন,ভিয়েতনাম , কিউবা সবাইকেই লেনিনের নয়া অর্থনৈতিক নীতি (NEP) এর দেখানো পথেই নানা বাঁক মোড় ঘুরে এগোতে হচ্ছে এর কোন ধরা বাধা রোডম্যাপ নেই।
একটা সময় এমন ধারণা করা হত যে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কখনই আর পুঁজিবাদী পথে ফিরতে পারে না, কিন্তু সোভিয়েত রাশিয়ার পতন সেই ধারণার ভয়াবহ পরিণতি আমাদের সামনে তুলে ধরে। লেনিন কখনই এমন কোন ধারণা পোষণ করতেন না। তিনি বারবার বলতেন যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে পুঁজিবাদী শক্তিকে লাগাতার মদত দিয়ে যায় যাতে এই ব্যবস্থাকে ভেতর থেকেই ভেঙে ফেলা যায়। বুর্জোয়ারা তাদের আর্থিক ক্ষমতা ও সমাজতান্ত্রকি রাষ্ট্রের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা কে ব্যবহার করে নিজেদের আরো শক্তিশালী করে তোলে ও নিরন্তর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য সচেষ্ট থাকে । সোভিয়েত রাশিয়ার পার্টি এমন ভ্রান্ত ধারণারও শিকার হয়েছিল যে তারা বলে বসে সমাজতন্ত্র অতিক্রম করে কমিউনিজমের দিকে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদ বিদ্যমান সেইসময়ে একটা দেশে কমিউনিজম চলে আসবে এ এক অসম্ভব ধারণা। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদ যেভাবে ফিরে আসতে পারে সেইভাবেই একটা দেশে স্বাধীনতা লাভের পরে আবারও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো প্রাপ্ত স্বাধীনতা, সাংবিধানিক অধিকার সমস্ত কিছুকে উল্টে দিতে পারে। অর্থাৎ এই গোটা স্তর বিভেদ ও পরবর্তী স্তরে পৌছানো এই সমগ্র প্রক্রিয়াটার কোন ধরাবাঁধা সরলরৈখিক গতিপথ নেই- এটাই গোটা বিশ্বের অভিজ্ঞতা ও পার্টির ১০০ বছরের পথ চলার অভিজ্ঞতা।
ভারতের ক্ষেত্রে তিনটে গুরুত্বপূর্ণ দ্বন্দ্ব রয়েছে- সাম্রাজ্যবাদের সাথে ভারতীয় জনগণের দ্বন্দ্ব,যেটার আংশিক সমাধান হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট, কিন্তু সেটা অসম্পূর্ণ। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে ভারতে সমাজতন্ত্র স্থাপিত হলেও সে দ্বন্দ্ব থেকে যাবে কারণ বিশ্ব জুড়ে সাম্রাজ্যবাদ টিঁকে থাকবে। সেই দ্বন্দ্বের তখন রূপ হবে সমাজতন্ত্রের সাথে সাম্রাজ্যবাদের দ্বন্দ্ব , যা এখন সারা পৃথিবীর সামনে কেন্দ্রীয় দ্বন্দ্ব। দ্বিতীয় হল পুঁজির সাথে শ্রমের দ্বন্দ্ব এটাও গোটা দুনিয়া জুড়ে রয়েছে। কিন্তু এই দ্বন্দ্বের সমাধান তখনই হবে যখন শ্রমজীবীরা ক্ষমতা দখল করবে- গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরে ক্ষমতা দখলে শ্রমিক শ্রেণীর মিত্র শক্তি হিসাবে থাকে কৃষকেরা, মধ্যবিত্ত ও অবৃহৎ পুঁজিপতিরা- এখন যেমন লকডাউন ও আর্থিক সঙ্কটের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপতিরা ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বহু কলকারখান বন্ধ হয়ে গেছে, একচেটিয়া পুঁজির দাপট বাড়ছে । এছাড়াও রয়েছে পুঁজিপতিদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। সার্বিকভাবে এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে প্রতিটা স্তরে মিত্র শক্তি কারা হবে ও প্রতিটা স্তর থেকে পরবর্তীত স্তরে উন্নীত হওয়া এই গোটাটাই নির্ভর করে বাস্তব পরিস্থিতির সুনির্দিষ্ট দ্বান্দ্বিক বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন ও সেই ভাবে নিজেদের গতিপথ নির্ধারণের ওপরে। একশ বছরের পথ চলায় এটাই কমিউনিস্ট পার্টির অভিজ্ঞতা।