নভেম্বর ২৩,২০২০ সোমবার
পর্ব- ৬
হাওয়াই চটির মানে
তাপসীর বাবাও জানে
মনোরঞ্জন মালিককে মনে আছে? সিঙ্গুরের বাসিন্দা। তাপসী মালিকের বাবা। যে তাপসী মালিকের পোড়া দেহের ছবি দেখিয়ে সিপিআই(এম)-র বিরুদ্ধে জঘন্য প্রচার করেছিল মমতা ব্যানার্জির দল। রহস্যময় সেই মৃত্যুর ঘটনায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পার্টি নেতা সুহৃদ দত্তকে। সেই তিনি, তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী মনোরঞ্জন মালিক সারদায় টাকা রেখেছিলেন। তার টাকাও মার গেছে।
মনোরঞ্জন এখন ‘বিক্ষুব্ধ’ — গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নির্দল প্রার্থীও হয়েছিলেন।
এমন আর এক উদাহরণ প্রসূন দত্ত। বাঁশবেড়িয়ায় বাড়ি ছিল যুবকের। কালীঘাটে মমতা ব্যানার্জির বাড়ির সামনে গায়ে তেল ঢেলে, আগুন জ্বালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। কেন? তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তখন রেলমন্ত্রী। অভিযোগ রেলে চাকরি পাওয়ার আশায় টাকা দিয়েছিলেন প্রসূন। চাকরি মেলেনি। এসেছিলেন হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে, মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করতে। নেত্রী দেখা করেননি। প্রসূন বোঝেন দল তাকে ঠকিয়েছে। মমতা ব্যানার্জির বাড়ির পিছনের খালের ধারে একটি জেনারেটরের পাশে রাখা ছিল তেল ভর্তি ড্রাম। সেই তেল গায়ে ঢেলে আগুন জ্বেলে দেন তিনি। তারপর থেকে আওয়াজই উঠে গেছিল — ‘হাওয়াই চটির মানে/ প্রসূন দত্ত জানে।’
দুর্নীতি ধান্দার ধনতন্ত্রের এক অবধারিত অনুসারি। তৃণমূল কংগ্রেস দেশের ধান্দার ধনতন্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। দুর্নীতি তাই মমতা ব্যানার্জির এই দলটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে । এবং তা অনেকদিন ধরে।
রাজ্যে গত সাড়ে ন’ বছরে মানুষের অভিজ্ঞতা হলো একশো দিনের প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, সরকারী ভাতা — প্রয় সব ক্ষেত্রে কমিশন বাবদ টাকা নেয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। এমনকি আমফানের ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষের নানা খাতের টাকাও নিয়ে নিয়েছে সম্পন্ন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা গরিবের চাল চুরি করে। ত্রিপল গায়েব করে। আদ্যোপান্ত একটি দুর্নীগ্রস্তদের দল।
দলটির ক্ষমতা দখলের পথেও এসেছে কোটি কোটি টাকা বেআইনী লেনদেন, দুর্নীতির অভিযোগ।
২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রকাশ হয়ে যায় ‘চেকমুড়ি রহস্য।’ তৃণমূল কংগ্রেস অসংখ্য পোড়া, নষ্ট, ফেলে দেওয়া বিলের সন্ধান মেলে। অভিযোগ ওঠে রহস্যময় উৎস থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে টাকা দেওয়া হয়েছে। যা প্রকাশ করা যায় না বলেই তারবদলে বিল কেটে তা নষ্ট করা হয়েছে।
২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টকে হারাতে প্রচুর বেআইনি টাকা সংগ্রহ করেছিল মমতা ব্যানার্জির দল। এই অভিযোগের কোনও জবাব তৃণমূল কংগ্রেস দিতে পারেনি।
দুর্নীতি হয়েছিল গমের বীজ নিয়ে, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের ৩ মাসের মাথায়। ৭কোটি টাকার কেলেঙ্কারি করে কৃষকদের যে প্রতারণা করেছিলো সরকার তা মহাকরণে স্বীকার করতে বাধ্য হন তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদ বা এস জে ডি এ-তে বড় মাপের দুর্নীতি ধরা পড়েছিল। তার তদন্ত সঠিকভাবে করার ‘অপরাধে’ সরতে হয়েছিল শিলিগুড়ির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার কে জয়রামনকে।
এছাড়াও সিটিসি-র জমি, টেট পরীক্ষা, ত্রিফলার আলোসহ নানা বিষয়ে গত দশ বছরে দুর্নীতির চিহ্ন মিলেছে।
আর আছে কাটমানি, সারদা কেলেঙ্কারী, নারদ স্টিং অপারেশন এবং সাম্প্রতিককালের গোরু ও কয়লা পাচারের টাকা থেকে ‘উপার্জন।’
কত রকমের কান্ড। সাংসদ হওয়ার আগে অভিষেক ছিলেন ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার কর্ণধার। অফিসের ঠিকানা বাসভবনে — ২৯/সি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট। বোর্ড অফ ডিরেক্টরসের তালিকায় পাঁচজনের নাম। সবার ঠিকানা দেখানো হয়েছে, ৩০বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০২৬। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ঠিকানাতে একটি সংস্থার পাঁচজন ডিরেক্টর! ২০০৯-এ বেদিক ভিলেজ কাণ্ডে রাজকিশোর মোদীর বিরুদ্ধে মমতা ব্যানার্জি ‘আন্দোলনে।’ আর তিন বছর পরে জামিনে মুক্ত সেই রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর থেকে ১ কোটির১৫ লক্ষ টাকা ঢুকে গেলে তাঁর ভাইপোর সেই সংস্থায়! অভিষেক ব্যানার্জির সংস্থার অডিটর যিনি তিনিই আবার রাজকিশোর মোদীর গ্রিন টেক সংস্থারও অন্যতম ডিরেক্টর!
আশ্চর্য।
‘বিশ্ব বাংলা’ লোগো। মমতা ব্যানার্জির মস্তিষ্ক প্রসূত। মুখ্যমন্ত্রী আঁকা সেই লোগোর ট্রেড মার্ক দাবি করলেন অভিষেক ব্যানার্জি। বিশ্ব বাংলা মার্কেটিং কর্পোরেশন লিমিটেড নামক সংস্থা তৈরির অনেক আগেই। মোদ্দা কথা মুখ্যমন্ত্রী ‘ব’ শব্দ দিয়ে ছবি আঁকলেন, সেই ছবিকে ট্রেড মার্ক হিসাবে ব্যবহার করার জন্য ট্রেড মার্কস রেজিস্ট্রির কাছে আবেদন জানালেন তাঁরই ভাইপো। তাঁর নামেই বরাদ্দ হলো। তার অনেক পরে তৈরি হলো ‘বিশ্ব বাংলা মার্কেটিং কর্পোরেশন লিমিটেড’ নামক সরকারি সংস্থা।
সরকারই সেখানে বিনিয়োগ করল, আর সেই সংস্থা অভিষেক ব্যানার্জির ‘বিশ্ব বাংলা’ লোগোই ব্যবহার করল। সরকারি সংস্থা বেসরকারিভাবে এক ব্যক্তির আবেদন করে পাওয়া লোগোকে ব্যবহার করল। সরকারের বিনিয়োগে ‘বিশ্ব বাংলা’ ব্র্যান্ডের যে প্রচার, প্রোমোশন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লোগোটি ব্যবহার করা হয়েছে, তার জন্য রয়্যালটি যাচ্ছে সেই — ৩০বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে!
আরও আছে।
মমতা ব্যানার্জির পরিবারর সম্পত্তি এখন কেমন?
হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট থেকে হরিশ মুখার্জি রোড, কালীঘাট রোড এখন এক পরিবারের একচেটিয়া দখলদারি। অভিযোগ উঠেছে। জবাব? পাওয়া যায়নি কালীঘাটের ‘টালির বাড়ি’-র মালিকদের তরফ থেকে। ওই এলাকার একাধিক পরিবারের জমি চলে আসছে ব্যানার্জি পরিবারের হাতে। দুটি রাস্তা জুড়ে ৩৫টি প্লট শুধু নয়, রয়েছে কালীঘাট চত্বরের বাইরেও একাধিক সম্পত্তি, নির্দিষ্ট ঐ ব্যানার্জি পরিবারেরই। দখলের কৌশলও ভিন্ন। কালীঘাট রোড ও হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের দুটি রাস্তার সিংহভাগ এখন মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার, আত্মীয়দের দখলে, হাতে। সিংহভাগ জায়গায় কোন অভিযোগ নেই।
‘চিট ফান্ডই মমতা ব্যানার্জিকে ২০১১ সালে সরকারে এনেছে। চিট ফান্ড থেকে কেউ যদি সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়ে থাকেন তাহলে তিনি হলেন মমতা ব্যানার্জি।’ তাঁরই দলের এক প্রাক্তন সাংসদ এই কথা বলেছিলেন। সেই ব্যক্তি আবার দলে ফিরেছেন। উক্তিটি কিন্তু রয়ে গেছে।
সারদা কেলেঙ্কারীতে কয়েক হাজার কোটি টাকা বাজার লুট হলো। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হলো। ১৪০জনের বেশি এজেন্ট, আমানতকারী আত্মঘাতী হলেন। কয়েক লক্ষ পরিবার সর্বস্বান্ত হলেন। মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘যা গেছে তা গেছে।’ ‘চিট ফান্ডের টাকা ফেরত দাও’ — তৃণমূল কংগ্রেস একবারও বলতে পারেনি। কারন — সে কথা বললেই টাকা ফেরত দিতে বললেই মমতা ব্যানার্জির ছবি বিক্রী করে পাওয়া ২ কোটি টাকা ফেরতের প্রশ্ন চলে আসবে। পরবর্তীকালে জানা গেছে, সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের যোগাযোগ শুরু ২০০৯-এ।
প্রবল বিক্ষোভের মুখে ২০১৩-র ২৩ এপ্রিল সারদাকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী শ্যামল সেন কমিশন গঠনের কথা ঘোষণা করেন। ২৪ এপ্রিল গেজেট নোটিফিকেশন জারি হয়। সুপ্রিম কোর্ট সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের রায় দিয়েছিল ২০১৪ সালের ৯ মে। রাজ্য সরকারের শ্যামল সেন কমিশনের কাজ বন্ধ করে দেয় ২০১৪ –র ২২ অক্টোবরে। কমিশনের রিপোর্ট আজও প্রকাশিত হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল ৫০০ কোটি টাকা দেবেন সারদায় প্রতারিতদের। সরকার দিয়েছে মাত্র ১৫০ কোটি টাকা। পেয়েছিলেন মাত্র ৪লক্ষ ৯৮ হাজার জন। যদিও আবেদন করেছিলেন ১৭লক্ষের বেশি।
এখানেও সরকারের বঞ্চনা স্পষ্ট। সরকার দিয়েছিল মাত্র ২৮৭ কোটি টাকা মিলেছে। তাও তিন দফায়। যে ২৮৭ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে কমিশনের তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে টাকা ফেরতের জন্য ছাড়া হয়েছিল ২৫২ কোটি টাকার চেক। এর মধ্যে ১০২ কোটি টাকার চেক হয় বাউন্স করেছে নয়তো আমানতকারীরা হাতে পেলেও তা ভাঙাতে পারেনি। অন্যদিকে ২৮৭ কোটি টাকার মধ্যে ২৫২কোটি টাকার হিসাব দেখালেও ৩৫ কোটি টাকা হাতে রয়ে যায়। ফলে বাউন্স হয়ে আসা ১০২ কোটি টাকা এবং ৩৫কোটি টাকা পড়ে থাকার কথা রাজ্য সরকারের ঘরে। মোট পরিমাণ ১৩৭ কোটি টাকা। রাজ্য সরকারের দেওয়ার কথা থাকলেও ২১৩কোটি টাকা কমিশনকে দেয়নি। পাশাপাশি সরকারের দেওয়ার ২৮৭ কোটি টাকার মধ্যে পড়ে রইল ১৩৮ কোটি টাকা, কমিশন সম্পত্তি বেচে পেল আরও ২ কোটি বেশি।
সেই ৩৫৩ কোটি টাকা কোথায় গেল? এটাও রহস্য রয়ে গেল। কেলেঙ্কারি ঢাকতে কমিশন। তাতেও কেলেঙ্কারি!
সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হলফনামায় সিট(স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম) দাবি করেছিল, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন লোকসান জেনেও প্রায় ৪২০ কোটি টাকা মিডিয়ায় বিনিয়োগ করেছিল। সেই তালিকায় ছিল একটি চ্যানেলও। যা কখনও সম্প্রচার হয়নি। যাতে যুক্ত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস ঘনিষ্ট শুভাপ্রসন্ন, প্রাক্তন তৃণমূলী সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, শঙ্কুদেব পন্ডাও। সিট’র নথিতেই ছিল টাকা পাচার হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি সীমান্ত পেরিয়েও। পুলিশের নজরদারি এড়িয়েই বেমালুম টাকা পাচার হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সেও।
দুর্নীতির কী বিশাল চক্র স্থাপিত হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের তত্বাবধানে।
পাঞ্জাবে লোকসভা ভোটের আগে পতাকা কিনতে নাকি তৃণমূল কংগ্রেস খরচ হয়েছিল ২কোটি টাকা! তাও আবার ২০১৩-১৪’ সালে। ২কোটি টাকার পতাকা কেনা হয়েছে, তা যদি বিশ্বাসযোগ্যও হয় তাহলে সেই হিসাব সংশ্লিষ্ট বছরে তৃণমূলের আয় ব্যয়ের রিপোর্টে ছিল না। বিস্মিত আয়কর দপ্তরও।
আরও আছে। ২০১২-র ৭ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানার পাঁচকুলায় একটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ‘সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস’র নামে। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি— ১৩দিনের মধ্যে কয়েক দফায় ওই অ্যাকাউন্টে নগদে ৮৮লক্ষ ৪৪হাজার টাকা জমা পড়ে। কে সেই টাকা জমা দিল? হরিয়ানায় তৃণমূল কংগ্রেস ছিল? যদি থাকে তবে তৃণমূলের কতজন কর্মী কিংবা সমর্থক দলীয় তহবিলে এই টাকা জমা দিল? এর চেয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছিল — ফেব্রুয়ারিতে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা জমা নেওয়া হলে ২০১১-১২’র সালের আয় ব্যয়ের রিপোর্ট সেই অ্যাকাউন্টের অস্তিত্ব থাকল না কেন?
তারপর নারদ স্টিং অপারেশন। তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের মন্ত্রীরা, সাংসদরা ঘুষের টাকা নিচ্ছেন — দেখলো দেশ। ২০১৬- বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তর কলকাতায় দলীয় সমাবেশে মমতা ব্যানার্জি বললেন,‘‘আগে জানলে প্রার্থী করতাম না এদের।’’ ইঙ্গিত সেবার বিধানসভায় প্রার্থী হওয়া ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখার্জি, শুভেন্দু অধিকারী, থেকে শোভন চ্যাটার্জিদের দিকে। ভোটের ফল বেরোনোর পর শুধু তাঁদের মন্ত্রীই করেননি বরং স্যান্ডো গেঞ্জি পরে ঘরে বসে ঘুষের টাকা নিয়ে আলোচনা করা ফিরহাদ হাকিমকে কলকাতার মেয়রের চেয়ারে বসিয়েছিলেন। দলের বারোজন নেতা, মন্ত্রী, সাংসদের বিরুদ্ধে সিবিআই এবং ইডি’র এফআইআর। তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও ব্যবস্থা। নাহ্।
হালফিলে উঠে এসেছে কয়লা এবং গোরু পাচারের টাকা কাটমানির কথা।
গোরু পাচারের মাথা এনামুল হক মুর্শিদাবাদ-মালদহের বাংলাদেশ সীমান্তে সক্রিয় বলে চিহ্নিত। একইসাথে তৃণমূলের ফান্ড ম্যানেজার। আয়কর ও সিবিআই’র সূত্রে জানা গেছে, গোরু পাচার থেকে মাসে কয়েক কোটি টাকা সে পাঠাতো মুর্শিদাবাদ ও কলকাতার তৃণমূল নেতাদের কাছে। একই ভাবে কয়লা পাচার চক্রের মাথা অনুপ মাঝি ওরফে লালার থেকেও প্রতি মাসে ৫০ কোটি টাকার বেশি যেতো মূলত তৃণমূলের একেবারে শীর্ষ মহলে — অভিযোগ জোরালো হয়ে উঠেছে।
আয়করের তল্লাশি, নথি বাজেয়াপ্ত করার পরে কয়লা মাফিয়া লালার বয়ান ও নথিপত্রে স্পষ্ট ইঙ্গিত, কোটি কোটি টাকা গেছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা, মমতা ব্যানার্জির অত্যন্ত ঘনিষ্ট একজনের স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠতম এক ব্যক্তি। তিনি যুব তৃণমূলের রাজ্যস্তরের কমিটির পদে আছেন। কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালার একাধিক ভুয়ো সংস্থার লেনদেনের সঙ্গে ওই ব্যক্তির যোগসূত্র মিলেছে। কয়লা মাফিয়ার কোটি কোটি টাকা ওই গতিপথেই শাসক তৃণমূলের তহবিলে ঢুকেছে। কয়লা মাফিয়ার কোটি কোটি কালো টাকা সাদা হয়ে ঢুকেছে অ্যাকাউন্টগুলিতে — আর এই টাকা পাচারের জন্য তৈরি হয়েছিল কয়েকশো শিখণ্ডী সংস্থা বা শেল কোম্পানি।
তৃণমূল কংগ্রেস যেন দুর্নীতির এক মানে বই।
ধারাবাহিক চলবে ….
আগামীকাল – পর্ব ৭
বিষয়: গনতন্ত্র কেন ধ্বংস করেছে তৃণমূল।