প্রতিদিন ৯১টি ধর্ষণ, ৮০টি খুন আর ২৮৯টি অপহরণ। ২০১৮ সালের নথিভুক্ত অভিযোগের খতিয়ান এ জানিয়েছেন এনসিআরবি আধিকারিকরাই।এনসিআরবি নিজেই জানিয়েছে, মৌখিক অভিযোগের মাত্র ১ শতাংশই শেষ পর্যন্ত এফআইআর পর্যন্ত গড়িয়েছে। এনসিআরবি যে পরিসংখ্যান পেশ করছে, তা কেবল এফআইআর-এর ভিত্তিতেই। এনসিআরবি-র নথি বলছে, থানায় যে লিখিত অভিযোগ (জেনারেল ডায়েরি) করা হয়, তার মধ্যে ৬০ শতাংশের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত এফআইআর করে তদন্তে নামে পুলিশ। এনসিআরবি-র দাবি, সব অভিযোগ এফআইআর হলে বাস্তবে ধর্ষণ, ডাকাতি বা খুনের ঘটনার সংখ্যা আরও বেড়ে যেত। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ১.৩ % ফৌজদারি অভিযোগ বেড়েছে।
এর মধ্যে ধর্ষণের পরিসংখ্যান আলাদা করে ভাবাচ্ছে বিভিন্ন মহলকে। নির্ভয়ার ঘটনার পরে ধর্ষণকারীদের কঠোরতর শাস্তির লক্ষ্যে ফৌজদারি আইনে পরিবর্তন আনা হয়।তৈরি করা হয়েছে The Protection of Children from Sexual Offences (POCSO) Act, 2012 তার পরে প্রায় পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। ধর্ষণের সংখ্যা কমার তো লক্ষণই নেই, উল্টে বাড়ছে। এনসিআরবি জানিয়েছে, ২০১৮ সালে দেশে ৩৩,৩৫৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যা আগের বছরের চেয়ে ৭৯৭টি বেশি। সার্বিক ভাবে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২০ হাজারের কাছাকাছি।
এই মুহূর্তে ফাঁসির অপেক্ষায় দিন গুনছে নির্ভয়ার ধর্ষক-খুনিরা। এর মধ্যে কখনও কাঠুয়া, কখনও উন্নাও কখনও তেলঙ্গানা ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়েছে দেশ। কিন্তু শাস্তির ভয় দেখিয়ে অপরাধ আদৌ কমানো যায় কি না, এনসিআরবি-র রিপোর্ট সেই প্রশ্ন নতুন করে তুলে দিল। ইতিমধ্যেই ধর্ষণের মামলায় দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করার জন্যে ৭টি ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গড়বে বলেছে পঞ্জাবে সরকার। কিন্তু অপরাধে বেড়ি পরানো যাবে কোন পথে, তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে। গত একবছরে গোটা দেশে অপহরণের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে যাওয়াতেও উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। খুনের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় শতাংশ। ২০১৮ সালে দেশে ২৯,০১৭টি খুনের ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ খুনের পিছনে রয়েছে মনোমালিন্য ও বিবাদ। ১০ শতাংশ খুনের পিছনে দায়ী ব্যক্তিগত শত্রুতা।
আমাদের কোলকাতা শহরের রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ সাল থেকেই ধীরে ধীরে অপরাধ কমাতে সক্ষম হয়েছে লালবাজার। ২০১৬ সালে কলকাতায় অপরাধের মোট সংখ্যা ছিল ২২৫১৯টি। পরের বছর তা কমে হয় ১৯৯২৫। ২০১৮ সালে তা হয়েছে ১৯৬৮২। তবে কলকাতার পরিসংখ্যান নিয়ে এনসিআরবি-তে ‘ধন্দ’ও রয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ (বিশেষ করে কলকাতা শহর), অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয় ও সিকিমের অপরাধের পরিসংখ্যান চূড়ান্ত নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের দাবি, বিষয়টি নিয়ে এ রাজ্যের কাছে একাধিক বার তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও কোনও উত্তর মেলেনি। যদিও লালবাজার সূত্রের পাল্টা দাবি, তাদের পাঠানো পরিসংখ্যান নির্ভুল এবং সম্পূর্ণ।
লালবাজার সূত্রের দাবি, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে খুন, ডাকাতি, ধর্ষণের মতো অপরাধ কমেছে। সাম্প্রতিক যে সব ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, তা ২০১৯ সালের পরিসংখ্যানে ঠাঁই পেতে পারে। ২০১৭ সালের তুলনায় মহিলাদের উপরে হওয়া অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে ২০১টি। যার সিংহভাগই বধূ নির্যাতনের ঘটনা। বস্তুত, বধূ নির্যাতনের ঘটনায় দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এ রাজ্য। তবে পুলিশকর্তাদের অনেকের দাবি, এ রাজ্যে মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা বেশি হওয়ায় অভিযোগ জমাও পড়ে বেশি।
পুলিশকর্তাদের এ-ও দাবি, শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনও রকম গাফিলতি যে বরদাস্ত করা হবে না, সে কথা বাহিনীকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। নারীদের ও শহরের সার্বিক সুরক্ষার জন্য পুলিশি নজরদারি এবং সক্রিয়তার পাশাপাশি অ্যাপ-নির্ভর প্রযুক্তিরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। নাগরিকদের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সক্রিয় লালবাজার।
প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায়। যদি এতই নিরাপত্তার বলয় তৈরি হয়ে তাহলে রাজ্যে রোজ কেন খবরের কাগজে , টিভি চ্যানেলে নারী নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। যেখানে নিরাপদ নয় ৮০ বছরের সন্ন্যাসীনি থেকে টলিউডের সেলিব্রিটিরাও অথবা দেড় বছরের শিশু কন্যা। দ্বিচারিতরা খতিয়ান দেখতে গেলে প্রশ্ন বাড়ে বই কমে না। আমাদের রাজ্যের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তী কালে করা হবে।
NCRB report 2018
চলবে…