Sujan Chakrabarty 1

Freedom Struggle And The Communists: Part I

সুজন চক্রবর্তী

স্বাধীনতার ঠিক প্রাকমুহুর্তে, মহাত্মা গান্ধী তখন দিল্লী থেকে অনেক দূরে। কলকাতায় বললেন, ‘From tomorrow we shall be delivered from the bondage of British rule. But from the midnight tonight India will be partitioned. While therefore tomorrow will be a day of rejoicing it will be a day of sorrow as well. It will throw a heavy responsibility upon us.’ স্বাধীনতার আনন্দের সাথে সাথেই যন্ত্রণার অভিব্যাক্তি। দীর্ঘ লড়াই এর মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা। নানান পথ, মত, সংগ্রাম, আপোষ সবকিছুর মধ্য দিয়েই শেষমেশ স্বাধীনতা। চল্লিশের দশকে একের পর এক আন্দোলনের ধাক্কা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিবাদের পরাজয়। সোভিয়েতের বিজয়। গণতন্ত্রের শক্তির জয়। সমাজতান্ত্রিক শক্তির বিকাশ। সাম্রাজ্যবাদী এবং উপনিবেশবাদী শক্তির পিছু হটা। সবমিলিয়ে এহেন সময়তেই দেশের স্বাধীনতা।

আজাদ হিন্দ ফৌজের মুক্তির দাবীতে লড়াই, ভারতছাড়ো আন্দোলন, নৌ বিদ্রোহ, দেশের নানান প্রান্তে কৃষকদের সংগ্রাম— একদিকে যেমন মানুষের ঐক্য রচনা করেছে; তেমনই দেশভাগ, বাংলা ভাগের চক্রান্তকে জোরদার করে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ক্রমশ মাথা চাড়া দিচ্ছে। ভারত যখন ছাড়তেই হবে, বৃটিশ বাহিনী তখন দেশভাগের যন্ত্রনা চাপিয়ে দিয়ে গেল ভারতবর্ষের উপর। দেশের সংবিধানের প্রনেতা বাবাসাহেব আম্বেদকর ১৪ই আগস্ট ১৯৪৭ মধ্য রাত্রির অধিবেশনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বললেন— ‘ Will Indians place the country above their creed or will they place creed above the country? I do not know. But this much is certain that if the parties’ place creed above the country, our independence will be put in jeopardy a second time and probably be lost forever. This eventuality we must all resolutely guard against.” আশঙ্কা প্রকাশ করলেন সঙ্গত কারণেই। সবাই মিলে তাকে রুখতেও হবে— সেই আবেদনও হাজির করলেন। দেশ এবং দেশবাসীর সুরক্ষা ও দায়বদ্ধতার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং পথচলার মনোভাবে এ দেশের কমিউনিস্টরা সদাই ক্রিয়াশীল।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এর পার্টি কর্মসূচী স্পষ্টতই তার লক্ষ্য এবং কর্মপন্থা ঘোষনা করেছে। শ্রমিক-কৃষক-সাধারণ মানুষ সহ ভারতীয় জনগণের প্রকৃত অর্থেই মুক্তির পথ ঘোষনা করেছে। ভারতীয় জনগণের স্বাধীনতার সংগ্রাম, তার মূল আকাঙ্খাগুলি এবং ভারতীয় সংবিধানের মূল মর্মবস্তুকে, প্রাথমিকভাবে পূরণ করার লক্ষ্য নিয়েই আমাদের পার্টি নিরবিচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম চালিয়ে গেছে। পার্টি কর্মসূচীর ৩.৩ ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে— ‘দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য্যে ভরপুর ভারত। আমাদের আছে প্রচুর কৃষিযোগ্য জমি, সেচের সম্ভাবনা, বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের শষ্য উৎপাদনে সহায়ক আবহাওয়া, বিপুল খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দারুন সম্ভাবনা। ভারতের বিরাট মানবশক্তি, আমাদের জনগণের বৈজ্ঞানিক, কারিগরী দক্ষতা, বুদ্ধিবৃত্তি, পরিচালনার যোগ্যতা যা অযুত সম্ভাবনার ভান্ডার স্বরূপ। এই সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানোর পরিবর্তে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনের পর বৃহৎ বুর্জোয়ারা এমন এক পুঁজিবাদী বিকাশের রাস্তা নিল যা তাঁদের নিজেদের সংকীর্ন স্বার্থ চরিতার্থ করার উপোযোগী।’

৩.৪ নং ধারায় বলা হয়েছে— ‘বৃহৎ বুর্জোয়ারা রাষ্ট্রের ক্ষমতা অর্জনের পর একটি বিশেষ ধরনের পুঁজিবাদী বিকাশের পথ নেয়। তারা সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে আপোষ করে, ভূস্বামীদের সঙ্গে মৈত্রী রক্ষা করে। রাষ্ট্রের ওপর তাঁদের কতৃত্বকে তারা ব্যবহার করেছে একদিকে জনগণের ওপর আক্রমণের জন্য, অন্যদিকে চাপ, দরকষাকষি ও সমঝোতার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ ও ভুস্বামীতন্ত্রের সঙ্গে দ্বন্দবিরোধ সমাধানের জন্য।…’

constituent-assembly-of-india

এটা ঠিকই যে, বৃহৎ বুর্জোয়া, সাম্রাজ্যবাদ কিংবা ভুস্বামীতন্ত্র অথবা সামন্ততন্ত্র বিষয়ক নানা বিশ্লেষণ সমূহ কারো কারো শিরপীড়ার কারণ ঘটাতে পারে। কিন্তু এই তথ্য এবং বাস্তবতাকে অস্বীকার করে এগিয়ে চলার কি কোন সুযোগ থাকে? স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনে যেমন আপোষহীণ, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়তেও তেমনই মানুষের স্বার্থ এবং আধুনিক ভারত গড়ে তুলতে কমিউনিস্টরা ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি প্রশ্নে গৌরবোজ্বল ভূমিকা পালন করেছে। এই সত্যকে স্বীকার করার কোন বিকল্প থাকতে পারে না।

Spread the word

Leave a Reply