Fascism And Tagore – What History Tells?

শমীক লাহিড়ী

রবীন্দ্রনাথ ১৯২৫ সালে ফিলোজফিকাল সোসাইটি অব মিলানের আমন্ত্রণে ইতালি গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর সাথে পরিচয় হয় রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতালীয় অধ্যাপক, সংস্কৃত ভাষা ও ভারত বিশেষজ্ঞ ফরমিচির সাথে। মুসোলিনি সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় অধ্যাপক ফরমিচি বিশ্বভারতী আসেন এবং একইভাবে রবীন্দ্রনাথ ৩০শে মে, ১৯২৬ রোমে যান।

রোমা রঁলা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৩১শে মে তিনি মুসোলিনির সাথে সাক্ষাৎ করেন। মুসোলিনির ব্যবহার ও কথায় কবি আপ্লুত হয়ে পড়েন। সাক্ষাৎকার শেষে রবীন্দ্রনাথ অধ্যাপক ফরমিচি-কে বলেন— “আমার কোনও সন্দেহ নেই যে উনি একজন অসাধারণ ব্যক্তি। “

এরপর নানা স্থানে কবি বক্তৃতা করেন এবং একটি সভায় মুসোলিনি উপস্থিতও ছিলেন। আসার আগে কবি অধ্যাপক বন্ধুকে বলেন— মুসোলিনি যতদিন আছেন, ইতালি নিরাপদ থাকবে। ফেরার আগের দিন অর্থাৎ ১৩ই জুন মুসোলিনির সাথে সাক্ষাতে কবি তাঁকে বলেন – আপনাকে নিয়েই পৃথিবীতে সব চাইতে বেশী কুৎসা রটনা করা হয়। উত্তরে মুসোলিনি মুচকি হেসে বলেছিলেন—আমি জানি, কিন্তু আমি কি করতে পারি! মুসোলিনিকে নিজের হাতে স্বাক্ষর করা একটি ছবিও উপহার দিয়েছিলেন কবি, যেটা ফ্যাসিস্ট সংবাদমাধ্যম ব্যাপক প্রচার করেছিলো।

এরপর কবি গিয়েছিলেন বন্ধু রোমা রঁলার কাছে। তিনি কবিকে বিস্তারিতভাবে জানালেন ফ্যাসিস্টদের খুন-অত্যাচার-মত প্রকাশের অধিকার হরন ইত্যাদি বিষয়ে। কিন্তু কবির মত এসব শুনেও পাল্টায়নি। এরপর সর্বজন শ্রদ্ধেয় ম্যাত্তিওত্তির খুনের বিচারের প্রহসনের সত্যতা নির্ধারনের জন্য ম্যাত্তিওত্তির দেশান্তরী আইনজীবী মদগিয়ালনির স্ত্রীর সাথে দেখা করাবার জন্য কবিকে জুরিখে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে মদগিলিয়ানির সাথেও সাক্ষাৎ হয় কবির। এরপর ভিয়েনাতে তাঁর সাথে দেখা হয় অ্যাঞ্জেলা বালবানাফের। তাঁর কাছেও ফ্যাসিস্টদের অত্যাচারের কাহিনী শুনে, রবীন্দ্রনাথ ৫ই আগষ্ট, ১৯২৬ ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি চিঠি লেখেন এবং ফ্যাসিবাদ সর্ম্পকে তাঁর মোহভঙ্গের কথা তিনি ব্যক্ত করেন।

ক্ষিপ্ত মুসোলিনির ভাই ওদের দলের মুখপত্র পোপোলো দ্য ইতালিয়ার পত্রিকায় কবিকে কুৎসিত নোংরা ভাষায় আক্রমণ করেন। তবে কবিকে এই কদর্য আক্রমণ বিচলিত করতে পারেনি।

পরবর্তীতে আইনস্টাইন, রোমা রঁল্যা এবং ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক বারবুঁস-এর সভাপতিত্বে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক ফ্যাসিবাদ বিরোধী অধিবেশন। এখানকার গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ‘স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রে’ প্রথম এশীয় যিনি সই করেন, তাঁর নাম রবীন্দ্রনাথ নাথ ঠাকুর।

Henri Barbusse
অঁরি বারবুস

১৯৩৭ সালে রোমা র‍্যঁলা ও বারবুঁস এর নেতৃত্বে পৃথিবী জুড়ে গঠিত হয় ‘লীগ এগেনস্ট ফ্যাসিসম অ্যান্ড টেরর’। তার ভারতীয় শাখার সভাপতি হন কবি। স্পেনীয় ফ্রাঙ্কো, হিটলার, মুসোলিনির বিরুদ্ধে বারবার ঝলসে উঠেছে কবির কলম। আমৃত্যু তিনি ফ্যাসিবাদের ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে তাঁর মত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ব্যক্ত করে গেছেন।

প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ লিখেছিলেন— ক্ষিতিমোহন সেনের উপস্থিতিতে কবি তার হাত জড়িয়ে আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, রাশিয়াই পারবে হিটলারকে ঠেকাতে। এটাই ছিল মৃত্যুর প্রাক মুহুর্তে তাঁর শেষ কথা।

প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ, নির্মল কুমারী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ফ্যাসিস্টদের প্রচার কৌশল ও বাক চাতুর্যে অনেক বিদ্বান মানুষও সাময়িকভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েছেন নানান সময়ে। ধীরে ধীরে সত্য উন্মোচিত হয়েছে। আমাদের দেশে এখন তাই হচ্ছে। তবে শুভ বুদ্ধির উদয় হবেই দ্রুত। অসত্যের ওপর কোনকিছুই বেশী দিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা।

কৃতজ্ঞতাঃ প্রবন্ধ, সভ্যতার সংকট, শ্রী জ্যোতি হাজরা, অধ্যাপক নেপাল মজুমদার, অধ্যাপক ক্ষুদিরাম দাস

Spread the word

Leave a Reply