মহারাষ্ট্রের পরেই এখন গুজরাটের ঠাঁই হয়েছে। গোটা দেশে সবাইকে পেছনে ফেলে ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে গুজরাটের করোনা চিত্র। সরকারি তথ্য অনুযায়ি গুজরাটে এখন পর্যন্ত মোট করোনার আক্রান্তের সংখ্যা ১১৭৪৫(গত ২৪ ঘন্টায় ৩৬৬ জন নতুন করে আক্রান্ত), ৪৮০৪ জন সুস্থ হয়েছেন ও ৬৯৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দুই ক্ষেত্রেই গুজরাটের স্থান এখন দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। মোদি-শাহের হোম গ্রাউন্ড, সাধের মডেল স্টেট গুজরাটে আজ বেআব্রু স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দৈন্য।
এর মধ্যেই উঠে এসেছে আরো চাঞ্চল্যকর এক খবর। গুজরাটের হাসপাতালগুলোতে সরকারের পক্ষ দেওয়া হয়েছে ৯০০ জাল ভেন্টিলেটর ! করোনা সঙ্কটের মধ্যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র পোস্টারবয় হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল রাজকোটের জ্যোতি সিএনসি সংস্থাকে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজর রূপাণীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর সংস্থা এই জ্যোতি সিএনসি দাবি করে যে তারা সম্পূর্ণ দেশিয় প্রযুক্তিতে অত্যন্ত কম খরচে ভেন্টিলেটর বানিয়ে ফেলেছে। কিন্তু একাধিক সংবাদ সংস্থার অন্তর্তদন্তে ধরা পরেছে যে ঐগুলো আসলে কোন ভাবেই পূর্ণমাত্রার ভেন্টলেটর নয় – অ্যাম্বু ব্যাগ মাত্র।
করোনা সংক্রমণে গুজরাত রীতিমতো বেহাল। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আমদাবাদের। কিন্তু এক দিনের জন্যও সেখানে যাননি রূপাণী। কিন্তু গত ৪ এপ্রিল আমদাবাদ সিভিল হাসপাতালে রীতিমতো জাঁকজমক করেই ভেন্টিলেটরের উদ্বোধন করেন তিনি। আহমেদাবাদ মিরর পত্রিকার সাংবাদিক বিপুল রাজপুত ডাক্তারদের জন্য আয়োজিত এই ভেন্টিলেটরের প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন সেখানে তিনি জ্যোতি সিএনসি এর সিএমডি পরাক্রমসিন জাডেজাকে এইগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলে আমদাবাদ সিভিল হাসপাতালের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ড. এম এম প্রভাকর মাইক কেড়ে নিয়ে প্রসঙ্গান্তরে চলে যান।
এখন দেখা যাচ্ছে গুজরাট সরকার ২০১৭ সালের মেডিকেল ডিভাইসেস রুল কে উপেক্ষা করে কোন ধরণের মেডিকেল ট্রায়াল ছাড়াই এই ‘ভেন্টিলটর’গুলো স্থাপনের সবুজ সিগন্যাল দিয়েছিল। আরো ভয়াবহ যে চিত্র সামনে আসছে তা হল এই ৯০০টা জাল ভেন্টিলেটরগুলো স্থাপনের আগে মাত্র একজন রোগীর ওপরে তা পরীক্ষা করা হয়েছিল। ৯০০টা জাল ভেন্টিলটরের মধ্যে ২৩০টাই আছে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত আহমেদাবাদের প্রধান কোভিড হাসপাতাল আমদাবাদ সিভিল হাসপাতালে ! ধমন-১ নামধারি এই জাল ভেন্টিলেটরগুলোর ক্ষেত্রে এমনকি ড্রাগস এন্ড কসমেটিক্স এ্যাক্ট (১৯৪০) এর অন্তর্গত যে গাইডলাইন আছে তাও সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা কর হয়। নামপ্রকশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আমলা জানান,” আইন মোতাবেক, ভেন্টিলেটর ‘সি’ ও ‘ডি’ক্যাটাগরির মধ্যে পরে যার ব্যবহারের জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনেরাল অফ ইন্ডিয়ার অনুমোদন আবশ্যিক এবং তা রাজ্য নয় বরং কেন্দ্রের সরকারের আওতাধীন একটি বিষয় “। এই ধরণের যে কোন চিকিৎসা সরঞ্জামের পরীক্ষামূলক ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি , ডাক্তার সহ এই ধরনের সরঞ্জামের বিশারদদের নিয়ে, বিশেষজ্ঞ কমিটির স্থাপন করে গোটা স্বীকৃতির বিষয়টি নির্ধারন করতে হয় কিন্তু গুজরাট সরকার বা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এই বিষয়গুলো স্রেফ উপেক্ষা করে গোটা পরিস্থিতিতে কোভিড রোগীদের অবস্থা আরো সঙ্গীন করে তুলেছে।
গোটা ঘটনাটা সামনে আসে যখন আমদাবাদ সিভিল হাসপাতাল সরকারের কাছে পুনরায় ভেন্টিলেটর চেয়ে পাঠানোয়। প্রশ্ন ওঠে, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধন করা ২৩০টি ‘ভেন্টিলেটর’ (ধামন-ওয়ান) সিভিল হাসপাতালে থাকা সত্ত্বেও আরও ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন পড়ল কেন? হাসপাতাল সূত্রের খবর, এটি ভেন্টিলেটর নয়, নেহাতই মেশিনাইজ়ড অ্যাম্বু-ব্যাগ। ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে যে মাত্রায় রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়, এতে তার চেয়ে বেশি মাত্রায় অক্সিজেন যায়। ফলে এটিকে কোনও ভাবেই ভেন্টিলেটর হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে গুজরাতের বেশ কিছু সরকারি হাসপাতাল রীতিমতো ভেন্টিলেটর সঙ্কটে ভুগছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৩০০টি পুরো মাত্রার ভেন্টিলেটর চেয়েছে রাজ্য।
এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে কোনও জবাব মেলেনি। তবে, তাঁর ঘনিষ্ঠ এক সহকারীর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী কখনওই এটাকে ভেন্টিলেটর বলে উল্লেখ করেননি। অথচ, প্রেস নোটে যে ‘ভেন্টিলেটর’ লেখা স্পষ্ট? এর কোনও জবাব রূপানি-ঘনিষ্ঠের কাছে মেলেনি।যে সংস্থার মেশিন নিয়ে এত বিতর্ক, সেই সংস্থার মালিক, রূপানি-ঘনিষ্ঠ পরাক্রমসিন জাদেজা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘ধমন-১’ ভেন্টিলেটর নয়।