ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন
ভারতে ফেসবুকের নীতিনির্ধারক হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আঁখি দাসের সাথে বিজেপি দলের ঘনিষ্ঠ ব্যাবসায়িক যোগাযোগের ঘটনা এখন সকলেই জানে, এবছর অক্টোবর মাসে আঁখি দাস জনসেবার উদ্দেশ্যে ফেসবুকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। ফেসবুকের ভারতীয় ব্যাবসাবাণিজ্যের কর্ণধার অজিত মোহন গতকাল বুধবার সংসদীয় কমিটির প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন এযাবৎ তাদের সংস্থা বজরং দলের পক্ষ থেকে প্রকাশিত কোন পোস্টেই আপত্তিজনক কিছু খুঁজে পায় নি।
ফেসবুকের (এবং হোয়াটস্যাপ – যা ফেসবুক কিনে নিয়েছে) ব্যাবসাবাণিজ্য সংক্রান্ত নীতিসমূহ খতিয়ে দেখছে তথ্য প্রযুক্তি সম্বন্ধীয় সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি, যার প্রধান শশী থারুর। সেই কমিটির ডাকেই হাজির হয়েছিলেন ফেসবুক ইন্ডিয়ার কর্ণধার অজিত মোহন। অতি দক্ষিনপন্থি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত বজরং দলের একটি পোস্ট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন এখনও অবধি তারা এমন কোনকিছুর (যা জনমানসে ঘৃণা প্রচার করে) মঞ্জুরি দেন নি যা ফেসবুকের নীতির বিরুদ্ধে। তাদের সংস্থার নীতিনির্ধারক কমিটি রয়েছে, সেই কমিটিতে রাজনৈতিক মতামত নিরপেক্ষ থেকেই কাজ করা হয়।
গতকাল তার সাথে কথোপকথনের সময়ে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট ভিডিয়োর উল্লেখ করা হয়, ভিডিয়োটি ইতিমধ্যেই প্রায় ২.৫ লক্ষ মানুষ ফেসবুকের কল্যানে দেখেছেন – এতে দেখা যাচ্ছে দিল্লির কাছেই একটি গির্জায় আক্রমনের ঘটনায় বজরং দলের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হচ্ছে। সম্প্রতি দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় ফেসবুকের মাধ্যমে বিজেপি নেতৃত্বদের হিংসা ছড়াতে দেখা গেছে, এমনকি সংশ্লিষ্ট মামলায় দিল্লী হাইকোর্টে এমন কয়েকটি ফেসবুক ভিডিয়োকে প্রমান হিসাবেও দাখিল করা হয়েছে। এসব অজিত মোহনের জানা, তবুও সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সামনে তিনি দাবী করেন তাদের সংস্থা রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাতিরেখেই নিজেদের ব্যাবসা পরিচালনা করেন।
সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতে বানিজ্যিক স্বার্থে এবং সংস্থা ও কর্মীদের উপরে আক্রমনের সম্ভাবনার কারনে বিজেপি এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন দক্ষিনপন্থি শক্তিসমূহের সাথে আপোষ করছে ফেসবুক। এদিন ফেসবুকের কর্ণধারের সাথে আলোচনার সময়ে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির পক্ষ থেকে সেই প্রতিবেদনেরও উল্লেখ করা হয়।
আচমকা অবসর গ্রহনের আগে অবধি ভারতে সংস্থার নীতিনির্ধারক আঁখি দাস “বাণিজ্যে ক্ষতি হতে পারে” বলে বিজেপি কিংবা উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন দক্ষিনপন্থি গোষ্ঠীর ফেসবুক পোস্ট এবং হোয়াটস্যাপ মেসেজ ছড়িয়ে পড়া আটকানোর বিরোধিতা করেছিলেন। অজিত মোহনের যাবতীয় সাফাই সেই অবস্থানেরই অনুসারী একথা স্পষ্ট।
বুধবার, সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি দিল্লীতে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাবহার সংক্রান্ত আলোচনার জন্য সেই রাজ্যে বিধানসভার অধীনে গঠিত শান্তি কমিটির সাথে কথা বলার জন্য অজিত মোহন’কে অনুরোধ জানিয়েছে। শান্তি কমিটির এই আহ্বানকে তার “মৌলিক অধিকার”-এর উপরে আক্রমন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আপাতত ফেসবুকের ব্যাবসাবাণিজ্যের যে নমুনা গোটা দেশের মানুষ দেখছেন তাতে বলা বাহুল্য ফেসবুক ভারতে মুনাফার খোঁজে ব্যাবসা করছে, সেই মুনাফার লোভে নিজেদেরই ঘোষণা করা রীতি নীতিকে পায়ে মাড়িয়ে যেতে তারা দুবার ভাবে না। মুনাফার লক্ষ্যে সাহসী পুঁজির এই চরিত্র সম্পর্কে টি জে ডানিং’র সেই বিখ্যাত উক্তিটি ঠিক এই কারনেই কার্ল মার্কস তার ‘ক্যাপিটাল’ গ্রন্থে যুক্ত করেছিলেন।
“শুন্য হাতে ফেরার চিন্তায় পুঁজি মুনাফার কমে যাওয়া কিংবা অতি অল্প মুনাফাকে ভয় পায়। কিন্তু একবার যথেষ্ট মুনাফার গন্ধ পেলে পুঁজি হয়ে পড়ে খুবই সাহসী। ১০ শতাংশ মুনাফা নিশ্চিত হলে পুঁজি অগ্রসর হয়, মুনাফা ২০ শতাংশে পৌঁছালে পুঁজি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত, ৫০ শতাংশ মুনাফার জন্য পুঁজি নিজের মাথা ফাটিয়ে ফেলতে প্রস্তুত, ১০০ শতাংশ মুনাফার ক্ষেত্রে পুঁজি সমস্ত নিয়ম কানুন মাড়িয়ে চলে যেতে পারে আর যদি মুনাফার সুযোগ থাকে ৩০০ শতাংশ তবে পুঁজি এমন কোন অপরাধ নেই যার ঝুঁকি নিতে পারে না, এমনকি সে তার জন্য ফাঁসিকাঠে ঝুলতেও প্রস্তুত”।
সুত্রঃ পি টি আই