April,18,2020
FAO এর নাম আমাদের জানা – খাদ্য এবং কৃষি সংক্রান্ত সংগঠন, যারা রাষ্ট্রসংঘের একটি শাখা হিসাবে পৃথিবীজুড়ে কাজ করে।
এরা ২০১৯ সালে একটা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের দেশে ১৯ কোটি ৪৪ লক্ষ মানুষ খাদ্যাভাবজনিত অপুষ্টিতে ভুগছে। অর্থাৎ জনসংখ্যার ১৪.৫%। এই রিপোর্টে উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে – ১৫-৪৯ বছর, এই অংশের ৫১.৪% মহিলা রক্তাল্পতায় ভুগছে। ৫ বছরের কম বয়সী ৩৭.৯% শিশু বৃদ্ধিজনিত এবং ২০.৮% কম ওজন সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছে।
আবার বিশ্ব ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী বিশ্বের ১/৩ ভাগ অপুষ্টিতে ভোগা ৫বছরের কম বয়সী শিশুর বাস আমাদের দেশ ভারতবর্ষে। ৫ বছরের নীচে প্রতি ৩জন শিশুর মধ্যে ১ জন অপুষ্টিতে ভুগছে।
এর মানে প্রায় ৫৮% শিশু ভালো পুষ্টিকর খাবার পায়না, ৪২% ঠিকঠাক পায়। এদের মধ্যে আবার কিছু বেশী খেয়ে মোটা হয়ে যায়। এই হ’ল আমাদের ভবিষ্যৎ ভারতবাসীর চেহারা।
কিন্তু কেন? দেশে খাদ্যের উৎপাদন কি কম?
না। আমাদের দেশে উৎপাদন কম, তাই এত মানুষ পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না, এটা সত্য নয়।
কেন্দ্রীয় সরকার যা হিসাব দিচ্ছে তাতে ২০১৯-২০২০ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হতে চলেছে।
চাল ৪৫.২৪ মিলিয়ন টন
গম ১০৬.২১ মিলিয়ন টন
ডাল ২৩.০২ মিলিয়ন টন
তৈলবীজ ৩৪.১৯ মিলিয়ন টন
আখ ৩৫৩.৮৫ মিলিয়ন টন
অন্যান্য ৪৫.২৪ মিলিয়ন টন
পুষ্টিকর
খাদ্যশস্য
সরকারের হিসাব অনুযায়ী গতবছরের তুলনায় এই বছর উৎপাদন অনেকটা বাড়বে সব ধরণের খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রেই। আর এটা যথেষ্ট দেশের মানুষের খিদে মেটানোর জন্য।
একটা বড় প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে – উৎপাদন এত বাড়লো কিন্তু মাথাপিছু খাদ্যগ্রহণ (consumption) কমছে কেন? ১৯৯১ সালে মাথাপিছু খাদ্যশস্য গ্রহণের পরিমাণ ছিল প্রতিদিন ৫১০গ্রাম। উদারীকরনের ৩ দশক পেরিয়ে এটা ২০১৮ সালে এসে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন ৪৮৭ গ্রাম/মাথাপিছু। কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য এই লেখা নয়। অন্য অবসরে, আকাশে লকডাউনের আঁধার কাটলে সে আলোচনা করার অনেক সুযোগ থাকবে।
এখন এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলঃ
১) দেশের স্বাভাবিক অবস্থায় যদি এই বিশাল সংখ্যক শিশু নারী সহ সাধারণ মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে, তাহলে লকডাউনের বাজারে তাদের অবস্থা কি?
২) স্বাভাবিক অবস্থায় যদি ৫৮% শিশু অপুষ্টিতে ভোগে তাহলে ৪০ দিনের লকডাউনে এই সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে? আর লকডাউন পরবর্তী ভয়ংকর অর্থনৈতিক মন্দার বাজারে, যা নাকি অন্তত ১/২ বছর চলবে বলে অনুমান, সেই সময়ে এই অন্ধকার আরও কত শিশুকে গ্রাস করবে?
৩) এই ৪০ দিন আর তার পরের ভয়াবহ অন্ধকারের দিনগুলোর জন্য কি কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়?
কিছুই কি করার নেই! অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে দেখবো আমরা – লক্ষ-কোটি রোগা রোগা শীর্ণ চেহারার মানুষের মৃত্যুমিছিল! শুকিয়ে যাওয়া ফুলের মতো চেহারার শিশুদের সামনে দাঁড়াবে কি ভাবে সভ্যতা? আবার কি ১৭৭১ বা ১৯৪৩ এর মন্বন্তর ফিরে আসবে!
দেশবাসী এই কথাগুলো শুনতে চায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেই ২০ শে মার্চ হাতে ঘণ্টা ধরিয়ে চলে গেলেন, তারপর একদিন এসে দেশবাসীর হাতে হারিকেন ধরালেন আর শেষবার এসে লক্ষ্মণের গন্ডী কেটে, সপ্তপদীর গল্প শুনিয়ে শবাসনে চলে গেলেন।
খাবে কি দেশের মানুষ? ভিনরাজ্যে আটকে কয়েক কোটি মানুষ আকাশের তলায় বসে আছে। কবে বাড়ি যাবে তারা? হাতে টাকা নেই, মাথার উপরে ছাদ নেই, নাওয়া নেই, খাওয়া নেই। ৪০ দিন এমনভাবে মানুষ বাঁচে? ৪০ ঘন্টা না খেয়ে থাকুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী – দেখুন পেটের নাড়ি কেমন জ্বলে! ওদের পরিবারগুলো ভাত-ভাতার সব হারাতে বসেছে। দেশের কয়েক কোটি মানুষকে রাস্তায় বসিয়ে রেখে আপনি শবাসনে চলে গেলেন?
শুধু বান্দ্রা-সুরাট নয় এরপর গোটা দেশে এই লোকগুলো মরার আগে মরিয়া হয়ে রাস্তায় রাস্তায় নেমে আসলে কি করবেন? এরা আজ হোক, কাল হোক, নামবেই নামবে। মরার আগে এই লক্ষ-কোটি মানুষ একসাথে হবেই। এরপর এরা রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করবে – মরার আগে নিজের সন্তানকে একবার কোলে তুলে নেওয়ার জন্য, একবার বৌ-র সোহাগের জন্য, একবার মায়ের আঁচলের গন্ধ পাওয়ার জন্য, দীর্ঘ অপেক্ষায় বসে থাকা বৃদ্ধ বাবার মুখে গাঢ় হয়ে ওঠা বলিরেখার ফাঁকে এক চিলতে হাসি দেখার জন্য।
পুলিশ- মিলিটারি- লাঠি-গুলি বরাদ্দ করবেন? যে পরিমাণ অর্থ এদের হত্যা করতে আপনার রাষ্ট্রকে খরচ করতে হবে, তার চাইতে এমন কিছু বেশী খরচ হবে না, এদের হাতে ৫/৭ হাজার টাকা তুলে দিয়ে, ট্রেনে চাপিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিতে।
পুলিশ মিলিটারির বন্দুক দেখিয়ে করোনা ভাগানো যায় না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
মুসোলিনি- গোলওয়ারকারকে ছেড়ে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর অভিজ্ঞতা নিন একটু।
বলুন অভুক্ত ভারতবাসী কবে খাবার পাবে? কাজ হারানো মানুষগুলো বেঁচে থাকার জন্য অন্তত ২ মাসের খোরাকির অর্থ পাবে কি না! বলুন কবে এই মানুষগুলো বাড়ি ফিরবে?