দুঃখের অযুত অক্ষর ফুটে উঠবে জাতিভিত্তিক জনগণনায় -অলকেশ দাস

১৮৫৭’র মহাবিদ্রোহে তখন ব্রিটিশ পর্যুদস্ত । কোনমতে বিদ্রোহ সামাল দিয়ে ব্রিটিশরা গালে হাত দিয়ে ভাবছে ভারতে তাদের শাসন কিভাবে গতিশীল, অব্যাহত রাখা যায়। তখনই তারা উপলব্ধি করল যে এর জন্য ভারতীয় জনগণের সামাজিক ব্যবস্থা, তার রীতিনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান আহরণের প্রয়োজন। শুরু হয়ে গেল ম্যাক্সমুলারের নেতৃত্বে প্রাচীন পুঁথি আর শাস্ত্রগুলির অনুবাদ । এছাড়া আরো তথ্য প্রয়োজন । ঐতিহাসিক রামসরণ শর্মার মতে , এই তথ্যের প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিত নিয়েই এদেশে ব্রিটিশ ধাঁচের জনগণনার শুরু ১৮৭২ সালে । ১৮৮১ থেকে অবশ্য পাকাপাকি প্রতি দশ বছর ব্যবধানে চলে আসছে জনগণনা । স্বাধীনোত্তর ভারতও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।

২০২১ সালে জনগণনা কার্যকরী হওয়ার কথা। বাদ সেধেছে অতিমারির অবস্থা। সবে এই বছরের জানুয়ারিতে জনগণকেরা সাধারণ মানুষকে যে ৩১ দফা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন তা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আপনার বাড়ির মেঝে মাটির, না সিমেন্টের ? নাকি ইট পাতিয়ে রাখা ? দেওয়াল পাটকাঠির না বাঁশের ? মাটির না পাকা ? আপনার ঘরের ছাদ সে কাঁচা হোক বা পাকা, আছে কি ? নাকি ন্যাড়া ছাদে চাঁদের আলো দেখেন আর গান করেন-‘ চাঁদের আলো ছিল ভালো তারে তুই গেরন লাগালি’ ? বাড়ি কি ঝাঁ-চকচকে না ভগ্নদশা ? সেটা কি আপনার নিজের ?তা কি নিজে ব্যবহার করেন না ভাড়া দেন ? আপনার বাড়িতে কটা পরিবার ? তার প্রধানই বা কারা ? সে ছেলে না মেয়ে , তপশিলী বা উপজাতি কিম্বা সংখ্যালঘু ? বাড়িতে ঘর কটা, কজন দম্পতি থাকেন? পানীয় জল কিভাবে পান ? বাড়িতে যদি আলো আসে তাহলে কোথা থেকে আসে ? বাড়িতে শৌচ ব্যবস্থা কি রকম ? বর্জ্য নিষ্কাশনই বা কিভাবে হয় ? বাড়িতে স্নানের ব্যবস্থা , রান্নাঘরের ব্যবস্থা, রান্নার জ্বালানি কি ধরনের? রেডিও , টিভি, ইন্টারনেট ,ল্যাপটপ ,কম্পিউটার ,টেলিফোন ,স্মার্ট ফোন ,মোবাইল আছে কিনা। বাইসাইকেল, স্কুটার, মোটরসাইকেল ? চার চাকার গাড়ি? আপনি যে প্রধান দানাশস্য গ্রহণ করেন তার নাম? আর শেষে আপনার মোবাইল নাম্বার। তারমানে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক যাবতীয় তথ্য। লিঙ্গ অনুপাত, মৃত্যুহার, গড় আয়ু, শিক্ষাগত তথ্য যেমন সাক্ষরতার হার , স্কুলে যাওয়ার তুলনামূলক গতি ও আর্থিক অবস্থা সংক্রান্ত নীতিগত যাবতীয় তথ্য । এবং বিস্তৃত পর্যায়ে ছড়িয়ে থাকা অসমতার নির্দিষ্টকরণ। জনগণনার তথ্য লাগে পরিকল্পনায়, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতি প্রণয়নে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে , গবেষণায়, শিল্পে, বাণিজ্যে এবং আরো অনেক কিছুতে। জনগণনা হচ্ছে ভিত্তি যা  দিয়ে বোঝা যায় এক দশকে দেশের তুলনামূলক প্রগতি। সরকারি পরিকল্পনাগুলোর মূল্যায়ন। সাহায্য করে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা গ্রহণে । সেজন্য বলা হয়-‘আমাদের জনগণনা-আমাদের ভবিষ্যৎ’।

দেশের প্রথম জনগণনা থেকে ১৯৩১ সালের জনগণনা অবধি জাতিভিত্তিক জনগণনা হয়েছে । ১৯৪১ এর জনগণনাও সেইভাবে শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা অসমাপ্ত হয়ে পড়ে থাকে। স্বাধীনোত্তর ভারতে এ পর্যন্ত জাতিভিত্তিক  জনগণনা হয়নি। সাধারণ, তপশিলি জাতি, আদিবাসী, ধর্ম- এই শ্রেণীবিভাগেই এখন জনগণনা হয়। কিন্তু ১৯৯০ সালে মন্ডল কমিশনের রিপোর্ট তদানীন্তন কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করার পর সারাদেশে জাতিভিত্তিক জনগণনার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু সেই সময় জনগণনা ‘৯১ এর  প্রস্তুতি পূর্ণাঙ্গ পর্যায়ে । ২০০১ এর জনগণনার সময়ে ভারতের রেজিস্টার জেনারেল এবং সেন্সাস কমিশনার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে জাতিভিত্তিক জনগণনার পরামর্শ দিলেও তা কার্যকরী হয়নি। ২০১০ সালে বিরোধীরা কোমর বেঁধে জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবি তোলে। লোকসভায় আলোচনাও হয়। ইউপিএ টু সরকারের নিয়ন্ত্রক কংগ্রেসকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসেন প্রণব মুখার্জি। তিনি বলেন জনগণনার প্রস্তুতি এতটাই চূড়ান্ত পর্বে যে তার এখন পরিবর্তন করা যাবে না। বিরোধীদের চাপ সামলাতে সেই সময়ই ঘোষিত হয় সোশিও-ইকোনমিক কাস্ট সেন্সাস ২০১১কে কার্যকরী করার। এবারও যখন জাতিভিত্তিক জনগণের দাবি অনেক তীক্ষ্ণ, বিস্তৃত ও অনেক পূর্বে ঘোষিত, সেই সময় সরকারের যুক্তি নতুন মলাটে পুরনো বইয়ের মত। অর্থাৎ জনগণনা চূড়ান্ত পর্যায়ে, এখন আর তাকে নতুন করে জাতি ভিত্তিক করা যাবে না ! জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবি আকস্মিক নয়।

ইতিমধ্যে জাতিতাত্ত্বিক জনগণনার পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে মহারাষ্ট্র, উড়িষা এবং  বিহার সরকার। বিহার ঝাড়খন্ড থেকে সর্বসম্মত সর্বদলীয় প্রস্তাব নিয়ে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দাবি জানিয়ে এসেছেন। জনতা দল ইউনাইটেড, রাষ্ট্রীয় জনতা দল , বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতেন্দ্র মাঝির দল -হাম, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী রামদাস আথাওয়ালে ও তার দল আর পি আই, বিজু জনতা দল, তেলুগু দেশম পার্টি, ওয়াই এস আর কংগ্রেস পার্টি ইত্যাদি। সিপিআই(এম) জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবিকে সমর্থন করেছে। বিজেপির জাতীয় সম্পাদক পঙ্কজ মুন্ডে সহ অনেকেই ভিতরে এবং বাইরে জাতিভিত্তিক জনগণনাকে সমর্থন করছেন। ন্যাশনাল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ও জাতিভিত্তিক জনগণনার সুপারিশ করেছে। পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটি অন দি ওয়েলফেয়ার অফ দি ওবিসি’জ অ্যান্ড দি মিনিস্ট্রি অফ সোশ্যাল জাস্টিসও জাতিভিত্তিক জনগণনার পক্ষে মত দিয়েছেন। ২০১৫ সালে কর্ণাটক সরকার প্রায় ১৪৭ কোটি টাকা খরচ করে রাজ্যে জাতিভিত্তিক গণনা করে। বিজেপি সরকার আসার পর সেই গণনার তথ্য চেপে রেখেছে। উড়িষ্যা সরকারও ওই একই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রেখেছে কিন্তু অতিমারীকালীন পরিস্থিতির জন্য এগিয়ে যেতে পারছে না। ২০১৪তে তেলেঙ্গানা সরকার ওই সমীক্ষা করে রাজ্যে ওবিসি শতাংশ (৫১%) নির্ণয় করে ফেলেছে। কেরালা সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা রাজ্যে সোসিও ইকোনমিক সার্ভে পরিচালনা করবে। সবমিলিয়ে জাতিভিত্তিক জনগণনার পক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়া প্রচুর রাজ্য এবং মানুষ ওই দাবিতে বিব্রত করছে নারাজ কেন্দ্রীয় সরকারকে।

পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর সামাজিক, শিক্ষাগত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য দেশের দ্বিতীয় কমিশন মন্ডল কমিশন। তারা রিপোর্ট দেয় ১৯৮০তে। দশ বছর পর তা কার্যকরী করেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। মন্ডল কমিশন সমগ্র জনগণকে ১০০ শতাংশ ধরে নেন। ওই সময় শেষ জনগণনা ছিল ১৯৭১ সালের । সেখান থেকে প্রাপ্ত জনসংখ্যার এস সি , এস টি ও অহিন্দু শতাংশকে বিয়োগ করে পান এস সি,এস টি অংশ ব্যতীত হিন্দু শতাংশকে। শেষ জাতিভিত্তিক ১৯৩১ এর জনগণনা থেকে মন্ডল পেয়েছিলেন সমাজের তথাকথিত উচ্চবর্ণীয় জনগণের শতাংশ। হিন্দু শতাংশ থেকে উচ্চবর্ণীয় জনগণের শতাংশ বিযুক্ত করে তিনি নির্ণয় করেছিলেন হিন্দু পশ্চাদপদ জনগণের শতাংশ। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যের পশ্চাৎপদতাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তিনি অহিন্দু জনসংখ্যার শতাংশের অর্ধেক পশ্চাৎপদ ধরে নিয়ে তাকে যুক্ত করে দেন। এইভাবে হিন্দু, অহিন্দু মিলিয়ে মন্ডল কমিশন ওবিসি জনসংখ্যা নির্ণয় করেন মোট জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ। গাণিতিক এই পদ্ধতি গ্রহণ করার সময় সাহায্য নেওয়া হয়েছে ১৯৩১ এর জাতিভিত্তিক জনগণনার। আজ থেকে নয় দশক আগেকার। সাহায্য নেওয়া হয়েছে ১৯৭১ এর জনগণনার তথ্যের। আজ থেকে পাঁচ দশক পূর্বের। সেই তথ্য আজকে সময়োপযোগী নয়। ওবিসি নির্ণয়ের মন্ডল গৃহীত প্রক্রিয়া যে নিখুঁত বা বিজ্ঞানসম্মত নয় সেটা বুঝতে কোন অংকের ছাত্র হতে লাগে না। কিন্তু সেইসময় তার কাছে অন্য কোনো তথ্য না থাকাতে এর বিকল্প কিছু ছিল না।১৯৩১ এর যে জাতিভিত্তিক জনগণনাকে মন্ডল কমিশনে ভিত্তি করা হয়েছে সেই জনগণনায় তখনকার ব্রিটিশ শাসিত রাজ্যগুলি কেবলমাত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রিন্সলি স্টেটগুলি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে গোড়ায় একটা গলদ ছিলই। মন্ডল কমিশনের সুপারিশ কার্যকরী হওয়ার তিনদশক অতিক্রান্ত। এরমধ্যে দি ইউনাইটেড ডিস্ট্রিক্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম  ফর এডুকেশন প্লাস (ইউডাইস+) দেশব্যাপী প্রায় এক দশক ধরে প্রাথমিকের স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জাতিভিত্তিক তথ্য সংরক্ষন করে যা পেয়েছে তাতে অন্যান্য পিছিয়ে পড়া  জাতিভুক্ত মানুষ ৪৫ শতাংশ, তপশিলি জাতি ১৯ শতাংশ, আদিবাসী ১১ শতাংশ -এইরকম ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ২০০৬ এ ন্যাশনাল স্যাম্পলিং সার্ভে অরগানাইজেশন (এন এস এস ও) ওবিসি সংখ্যা নির্ণয় করে দেখায় যে তা সমগ্র জনগণের ৪০.৯৪ শতাংশ। তফসিলি১৯.৫৯, আদিবাসী ৮.৬৩ শতাংশ। সংখ্যাগত এই বিভ্রান্তি কাটানোর জন্যই প্রয়োজন জাতিভিত্তিক জনগণনার। মুসলিমদের মধ্যেও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতিভুক্ত মানুষ রয়েছে। তাদের পরিস্থিতির মূল্যায়ন হয়েছিল শেষ সাচার কমিশনের রিপোর্টে । তাও দেড় দশক আগে। তাদের মধ্যেও এই সময়ে কে এগোলো, কে পিছিয়ে পড়লো জানার জন্য প্রয়োজন জাতি ভিত্তিক জনগণনার।  

পশ্চাৎপদতা দূর করবার স্বার্থেই মন্ডল কমিশন ওবিসিদের সরকারি কাজ ও শিক্ষায় ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের সুপারিশ করেছিল। সুপ্রিমকোর্টে এর বিরুদ্ধে মামলা হলে আদালত বলে ক্রিমি লেয়ার অর্থাৎ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধদের সংরক্ষণের আওতা থেকে বিযুক্ত করতে। আদালত কাজ ও শিক্ষায় ওবিসি সংরক্ষণ ২৭ শতাংশকে অনুমোদন দেয়। সংবিধানের সংরক্ষণ সম্পর্কে কোন শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়নি। কিন্তু সংবিধানের মর্মবস্তু (constitutional philosophy) সমানুপাতিক সমতার বিরুদ্ধে। এখানে সমতার ভারসাম্যের মুখ্যনীতি নির্দেশ দেয় সংরক্ষণকে কোনমতেই পঞ্চাশ শতাংশের উর্ধ্বে না যেতে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ইতিমধ্যেই তফসিলিদের জন্য ১৫ ও আদিবাসীদের জন্য ৭.৫ শতাংশ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া সংবিধানে স্থিরীকৃত। সুতরাং ৫২% ওবিসি দের জন্য সর্বোচ্চ ২৭% সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা।
এইরকম আরেক সংরক্ষণ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশের জন্য।   সরকার তাকে বেঁধেছে ১০ শতাংশে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন ১০ শতাংশ? বেশীও তো হতে পারত বা কম ? তাহলে কিসের ভিত্তিতে? অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশ জনগণের কত শতাংশ তার কোনো সরকারি সমীক্ষা, তথ্য নেই। অথচ সংরক্ষণের পিছনের ব্যাখ্যা বিভিন্ন জায়গায় সেই অংশের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব এবং তার ক্ষমতায়ন। সুতরাং এরও মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। এখানেই জাতিভিত্তিক জনগণনার আবশ্যিকতা।

সংরক্ষণ নিয়ে একটা বিপরীতমুখী চোরাস্রোত সমাজে বয়ে চলেছে। অনুকূল পরিবেশ পেলে সেই স্রোত ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। সাধারণের মধ্যে ধারণা তৈরি করা হয়েছে যে তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা আসলে সংরক্ষণের দরজা দিয়ে বের করে নিয়ে যাচ্ছে তপশিলি ,আদিবাসি, ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতিভুক্ত মানুষেরা। একবারও ভাবছে না আসলে কাজ খেয়ে নিচ্ছে শাসক । দেশি-বিদেশি পুঁজির সঙ্গে, ভূস্বামীদের সঙ্গে আপোষ করে। সেই জন্যেই বিগত ৪৫ বছরের সেরা বেকারি উপহার দিয়েছে কেন্দ্রের সরকার।
তারাই প্রশ্ন করছে বছরের-পর-বছর সংরক্ষণ থাকবে কেন? সংরক্ষন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তি সাজায় তারা। অথচ আর্থিক দূর্বলতর অংশের জন্য সরকার যখন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে তখন তাতে তারা অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করে । ‘মেধা’ নিয়ে সংরক্ষণকে যারা কটাক্ষ করে তারা একবারও প্রশ্ন তোলে না ম্যানেজমেন্ট কোটার নামে কিভাবে টাকা নিয়ে , কম কাট অফ মার্কস নিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রমরমিয়ে চলছে। অথচ যাদের বলা হচ্ছে সংরক্ষণ ভোগ করছে, তারা সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছে না। দেশের আইআইটি গুলিতে ফ্যাকাল্টি সদস্যদের মধ্যে তপশিলি জাতিভুক্ত ২.৩ শতাংশের নিচে। আদিবাসীদের ক্ষেত্রে এক শতাংশ। দেশের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টগুলির ফ্যাকাল্টি সদস্যদের মধ্যে তপশিলি জাতিভূক্ত এক শতাংশও নয় (.৬৬)। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের মধ্যে তপশিলি জাতিভুক্ত ১.২৫ শতাংশ, আদিবাসী নেই। অথচ তফসিলিদের ১৫ শতাংশ সংরক্ষণ থাকার কথা। অফিসের ক্ষেত্রেও তাই । ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ কোথাও দেখা যাবে না। ২০১৬ এর ১লা মার্চ অবধি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে  কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরীতে এ,বি,সি গ্রুপ মিলিয়ে ওবিসি শতাংশ ২২.৬৫। তাও গ্রুপ ‘সি’ তেই একগাদা ভিড়। গ্রুপ এ,বিতে ওবিসি’র দেখা নেই। আইআইটি, মাদ্রাজের অর্থনীতি বিভাগের ৩৬ জন অধ্যাপকের মধ্যে ১ জন ওবিসি। থাকার কথা ১২ জন ওবিসিভূক্ত অধ্যাপকের। এই রাজ্যেই তফসিলি, আদিবাসীদের সঙ্গে অন্য জাতিভুক্ত মানুষের শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত ফারাক ১০.৯৫ শতাংশ। সরকারি চাকুরিতে এরাজ্যে তথাকথিত উচ্চবর্ণীয় মানুষের অংশগ্রহণ ৭২.৯ শতাংশ। তপশিলি জাতিভুক্ত মানুষের অংশগ্রহণ ১৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে এবং সরকারি ক্ষেত্রে চাকুরীতে সংরক্ষণের সুবিধার ৫০ শতাংশ কেবলমাত্র ৪০টি সম্প্রদায় পেয়েছে । আবার ২০১৪ থেকে ২০১৮- এই কয়েক বছরে ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত প্রায় কুড়ি শতাংশ সংরক্ষণের কোন সুবিধা পায়নি বলা চলে। সব মিলিয়ে তাই দাঁড়ায় যে সংরক্ষণের প্রয়োগের যে দায়িত্ব সরকারের উপর ছিল, সরকার সেই দায়িত্ব পালন করেনি। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব থাকলে এই কাজ কখনো সুচারুভাবে সম্পন্ন হতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে সংরক্ষণের প্রয়োগ প্রকৃতই কতখানি হল ? আর তা কি বা প্রভাব বিস্তার করতে পারল? সামাজিক মর্যাদা এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে তা কি ভূমিকা পালন করল ? এগুলো জানার জন্যই ফিরতে হবে জাতিভিত্তিক জনগণনায়।

কেন্দ্রীয় সরকার সর্বোচ্চ আদালতে হলফনামা দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা নীতিগতভাবে জাতিগত জনগণনার বিরোধী। এফিডেভিটে সরকারের একথা ব্যক্ত হয়েছে – ‘ জাতিগত জনগণনা কার্যকরী করা প্রশাসনিকভাবে কঠিন এবং কষ্টকর।’ সরকার আরো বলেছে জাতি ভিত্তিক জনগণনায় প্রাপ্ত পরিসংখ্যানের সম্পূর্ণতা এবং নির্ভুলতার কোন গ্যারান্টি নেই। এবং সেই কারণে এখান থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান তথ্যের উৎস হিসেবে সরকারি উদ্দেশ্যে বিধিবদ্ধ ব্যবস্থায় ব্যবহার করা যাবে না। যেমন সংরক্ষণের কাজে সে শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে হোক, কাজে পদোন্নতির ক্ষেত্রে, বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় নির্বাচনের ক্ষেত্রে।
জনগণনার সঙ্গে জাতিকে যুক্ত করলে গোটা ব্যবস্থা  পর্যুদস্ত হতে পারে। প্রযুক্তিগত, লজিস্টিক, ব্যবহারিক অসুবিধা। জাতিভিত্তিক জনগণনা না করার বাহানা সরকারের অনেক। জনগণকদের ট্রেনিং হয়ে গেছে আগে, প্রশ্নাবলী নতুন করে তৈরি করতে হবে, নতুন কলাম যুক্ত করতে হবে, ওবিসি দের কোন নির্দিষ্ট তালিকা নেই, জনগণনার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ইতিমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে ইত্যাদি, ইত্যাদি। এইসব মিথ্যা যুক্তির উত্তর আছে। ১৯৭৯র শুরুতে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিন্ধ্যেশ্বরী প্রসাদ মন্ডল দায়িত্ব পান মন্ডল কমিশনের।৪০৭ জেলার ৪০৫ জেলার সামাজিক, শিক্ষাগত সমীক্ষা করে তথ্য সংগ্রহ করেন। অসামান্য বিশাল তথ্য। ১৯৮০’র শেষ সময়ে রিপোর্টও জমা দিয়ে দেন। আজ থেকে চার দশক আগে প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না, আজকের আধুনিক প্রক্রিয়াও তখন এত জানা ছিল না। তবুও মন্ডল কমিশন পেরেছিল। আসলে সদিচ্ছা ছিল। সোশিও ইকনমিক কাষ্ট সেন্সাস ২০১১ তে ১১৮ কোটি মানুষের কাছে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে বা ন্যাশনাল স্যাম্পলিং সার্ভে অরগানাইজেশন মত সরকারি সংগঠন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, পেশাদারী সংস্থা ইতিমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছে যে জাতিভিত্তিক গণনা সম্ভব। ২০০৭ এ এনএসএসও তো সমীক্ষা করে বলেই দিয়েছিল দেশে ওবিসি ভুক্ত জনগণের সংখ্যা । সদ্যসমাপ্ত এসইসিসি ২০১১এর অভিজ্ঞতা রয়েছে । তার অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করা  যায়। যে প্রশ্নগুলির কথা বলা হচ্ছে সেই প্রশ্নাবলী প্রকাশিত হয়েছে এই বছরের জানুয়ারি মাসে । সেই প্রশ্নাবলী পরিবর্তিত করে নবরূপে সাজানোটা এমন কিছু কঠিন ব্যাপার নয়। জনগণকেরা এবার  জনগণনায় পাবেন পার্সোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। এই প্রযুক্তির আধুনিকতায় নতুন কলাম যুক্ত করাটা কোন বিষয়ই না। বলা হচ্ছে ওবিসি তালিকা নাকি নেই। কেন্দ্রের তালিকা আছে , রাজ্যের তালিকা আছে , কোন ক্ষেত্রে জেলারও তালিকা আছে। মিলিয়ে দেখে নেওয়াটা কাজ। ওবিসির বাইরে যে কাস্টগুলি আছে সেগুলোকেও অতিরিক্ত ভাবে যুক্ত করে নেওয়া যায়। এনথ্রপলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ‘পিপল অফ ইন্ডিয়া’ প্রজেক্ট করেছিল। ৪৬৩৫ জাতি, ৪৬৯৪ সম্প্রদায় চিহ্নিত করেছিল ১৯৯২ সালে। তাদেরও সাহায্য নেওয়া যায়। সাহায্য নেওয়া যায় এক্সপার্ট কমিটি করে। বিগ ডাটা অ্যানালিটিক্সের প্রয়োগ অনেক সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। এসইসিসিতে এত প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরও বলা হলো জনগণকরা ভুল করেছে। অর্থাৎ তাদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হল। সুতরাং জনগণকদের নতুন করে প্রশিক্ষণটাও এমন কিছু পাহাড় ডিঙানোর কাজ নয়। আসলে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। ইচ্ছা না থাকলে জাতিভিত্তিক জনগণনা বন্ধ হয়।

ঠিক যেমন এস ই সি সি’১১’র জাতিভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হল না। করলো না বিজেপি’র কেন্দ্রের সরকার। বলল সেটা নাকি অসম্পূর্ণ এবং অকার্যকরী। জনগণকেরা নাকি ঠিকঠাক করে গণনা করেননি। বলা হল প্রচুর ভুল আছে। এর সংগঠনার দায়িত্ব ছিল রেজিস্টার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া ও সেন্সাস কমিশনারের উপর। ২০১৬ সালে লোকসভার গ্রাম উন্নয়ন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রেজিস্টার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া বলে গেলেন যে এস ই সি সি২০১১’র প্রতিবেদন ৯৮.৮৭ শতাংশ ঠিক। তার মানে ১.১৩ শতাংশ ত্রুটি। সেন্সাস এ পর্যন্ত ২ শতাংশের নিচে ত্রুটিকে নগণ্য বলে ধরা হয়। তাহলে এস ই সি সি ২০১১র জাতিভিত্তিক প্রতিবেদনের অংশটুকু প্রকাশ হলো না কেন? আর জনগণকদের ভুলই যদি হবে তাহলে ওই রিপোর্টের অর্থনৈতিক তথ্য কেন সরকার গ্রহণ করল দারিদ্র্য দূরীকরণের কর্মসূচিগুলি সূক্ষ্মভাবে বাস্তবায়িত করতে? আসলে জাতিভিত্তিক সোশিও ইকোনমিক কাষ্ট সেন্সাস প্রকাশিত হলে সমাজে  ভয়ঙ্কর বৈষম্যের চিত্র সামনে আসবে । সমাজের তথাকথিত উচ্চ জাতির শিরোপা পাওয়া মানুষের স্বল্প সংখ্যা অথচ সরকারি বা বেসরকারি কাজ ও শিক্ষায় ব্যাপকতর দখলদারি-আমাদের বিস্মিত করবে আর এদের ধারক-বাহকদের বিব্রত করবে। সাবিত্রীবাই ফুলে পুনে ইউনিভার্সিটি আর জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ দলিত স্টাডিস তাদের গবেষণাপত্রে দেখিয়েছে যে ২২.৩ শতাংশ জনসংখ্যার তথাকথিত উচ্চ জাতি হিন্দু দেশের ৪১ শতাংশ । ৭.৮ শতাংশ আদিবাসী হিন্দু ভোগ করে দেশের সম্পদের ৩.৭ শতাংশ, সবচেয়ে কম। ২০১৩ সালে ন্যাশনাল স্যাম্পলিং সার্ভের অল ইন্ডিয়া ডেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সার্ভে দেখায় যে সম্পদের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে নিচের ৪০ শতাংশ পরিবার দেশের কেবলমাত্র ৩.৪ শতাংশ সম্পদের অধিকারী। এই বন্ধনীতেই সিংহভাগ তপশিলি, আদিবাসী ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতিভুক্ত মানুষ। আসলে জাতি ভিত্তিক জনগণনা তথাকথিত হিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনীতির প্রকৃতি প্রকাশ করবে।  সমাজে বেশি শ্রম করা মানুষের বেশিরভাগ তথাকথিত নিম্নবর্ণের অংশের এই হতদরিদ্র চেহারা আঙুল তুলবে বর্ণাশ্রমের পাহারাদার বিজেপি এবং আরএসএস এর দিকে। নিম্নবর্ণের মানুষকে যারা হিন্দু বন্ধনীতে ঢুকিয়েছে সেই মানুষ সম্পদের অসম বন্টন দেখে ঘৃণা করবে সঙ্ঘ বাহিনীকে। জাতিভিত্তিক জনগণনা প্রয়োজন বর্ণ ও আর্থসামাজিক শিক্ষাগত উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে। 

শাসক যে কত দেউলিয়া তা ধরা পড়বে এখানে। আর এই বঞ্চনার চিত্র দেখে যদি বহুজাতি যেমন দলিত ,আদিবাসী ,অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতি যদি চলে আসে এক ছাদের তলায়? যদি দাবী করতে থাকে তাদের ওপর চলে আসা বঞ্চনার বৈষম্যের প্রতিবিধানের? খুব চাপ পড়বে জাতিব্যবস্থার উপর। কারণ তারা শেখায় এই জাতি ব্যবস্থায় দুটি জাত কখনো একে অপরের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে পারে না। কারণ তাদের মধ্যে নাকি অবশ্যই  অন্তগ্রথিত শ্রেষ্ঠত্ব এবং হীনমন্যতার সম্পর্ক থাকতেই হবে। বৈষম্যবোধ থেকে জাতিবোধ স্পষ্ট হয়। অনেকে এটাকে সংকীর্ণতা বলে ভাবে। কিন্তু বৈষম্য এবং তার উৎস জানতে পারলে গণতান্ত্রিক উপাদানকে এক করা যায়। প্রকৃত জাতিভিত্তিক জনগণনার ফলাফল আমাদের ইতিবাচক অবস্থানের দিকে ধাবিত করতে পারে।


জাতিব্যবস্থা এক জাতি থেকে আরেক জাতিতে অথবা এক জাতির অভ্যন্তরে বিভাজনেরই  শক্তি। যেমন ওবিসি নিয়ে এত উন্মাদনা। কর্নাটকে যখন রাজ্যে জাতিভিত্তিক জনগণনা হয় তখন রিপোর্টে দেখা যায় ওবিসি’র বা নন ওবিসি ‘র মধ্যে যারা প্রভাবশালী সেই লিঙ্গায়েত এবং ভক্কালিগা সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ও শিক্ষাগত ভাবে। প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ হলে তাদের আধিপত্যে ধাক্কা আসতে পারে এই আশঙ্কায় বিজেপি সরকার কে প্রভাবিত করে তারা এই প্রতিবেদনকে আটকে দেয়। বৃহৎ জমির মালিক বা ভূস্বামী, কৃষি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত জাতিগুলি জাতির ভিত্তিতে সমাবেশের ক্ষমতা রাখে। পশ্চাৎপদতার প্রশ্নকে সরিয়ে রেখে তাদের প্রভাব খাটিয়ে তারা সংরক্ষণের সুযোগ পেতে চায়। আরেক অংশ আছে যারা প্রকৃতই সামাজিক বৈষম্যের শিকার, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদ কিন্তু সংখ্যা এবং প্রভাবে নগণ্য। গণতান্ত্রিক শক্তির দুর্বলতায় এরা ছোটে প্রভাবশালীর পিছনে। ১৯৮১-৮২’র সময় থেকেই সিপিআই (এম) মন্ডল কমিশনের রিপোর্ট কে সমর্থন করেছে। সিপিআইএমের বক্তব্য ছিল অনেক রাজ্যেই দীর্ঘদিন ধরে ওবিসি’দের জন্য সংরক্ষণ চালু আছে। তাদের বড় অংশ গ্রামীণ দরিদ্রভুক্ত। তাদের তথাকথিত নিচু জাতি অবস্থান বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের শিক্ষায়, নতুন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের। সুতরাং যেখানে জাতের অবস্থানের ওপর দাঁড়িয়ে পশ্চাৎপদতা, যেখানে জাতি বিরোধী আন্দোলন জাতের বাধা ভাঙতে পারেনি সেখানে এই সম্প্রদায়গুলোর সংরক্ষণের যুক্তি রয়েছে। সিপিআইএম সাচার এবং রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ ও সমর্থন করেছিল । ১৯৫৭ সালে দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সময় নির্বাচনী ইশতেহারে কমিউনিস্ট পার্টি সংরক্ষণ প্রয়োগের সময়ের সম্প্রসারণকে এবং তাকে অন্যান্য বঞ্চিত অংশে সম্প্রসারিত করাকে সমর্থন করেছিল। এবারেও জাতিভিত্তিক জনগণের দাবিকে সিপিআইএম সমর্থন করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সাধারণ মানুষের অন্তরমহল থেকে রাষ্ট্রের উন্মোচিত মুখ দেখার চলমান সংকল্প তৈরি হচ্ছে না। ছিদ্রান্বিত লৌহবাসরে কালনাগিনীর দংশনে কাতর লখিন্দর প্রশ্ন করেছিল বেহুলাকে-তোরে খাইলো কালনিদ্রা ,মোরে খাইলো কি? বিভাজনের বিষে আক্রান্ত দেশকে রক্ষা করতে জনগণের জাগরণ খুবই জরুরী। 

Spread the word

Leave a Reply