তনুশ্রী চক্রবর্তী
Hon’ble Speaker,
I present the Budget for 2023-2024. This is the first Budget in “Amrit Kaal”.
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন গত বুধবার ০১/০২/২০২৩ বাজেটকে “অমৃত কালের প্রথম বাজেট” বলেছেন। বাজেটে যে সাতটি বিষয়ের উপর প্রাধান্য দেওয়ার মিথ্যা ভাষণ দেওয়া হয়েছে সেগুলি –
- Inclusive Development
- Reaching the Last Mile
- Infrastructure and Investment
- Unleashing the Potential
- Green Growth
- Youth Power
- Financial Sector
অন্তর্ভুক্তিমূলক (Inclusive) উন্নয়ন সূচকের তিনটি মূল স্তম্ভ হল-
(১) আন্ত: প্রজন্মের সমতা ও স্থায়িত্ব; (২) অন্তর্ভুক্তি ; (৩) বৃদ্ধি ও উন্নয়ন
বাজেটে অর্থমন্ত্রী ‘সাবকা সাথ্ সাবকা বিকাশ’ -এর মাধ্যমে কৃষক, নারী, যুব, তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের উন্নয়ন ও অগ্রাধিকারের যে দর্শন তুলে ধরেছেন, তার কোন বাস্তব ইঙ্গিত বাজেটে নেই। অপরদিকে সরকার যে এর বিপরীত দিকে যেতে চাইছেন তার ইঙ্গিত স্পষ্ট রয়েছে। কৃষিতে ব্যাপকহারে বরাদ্দ হ্রাস হয়েছে। ২০২২-২০২৩ -এর বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ ছিল ১লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। এ বারের বাজেটে তার আসবে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা এবারের বাজেটেও নেই। খাদ্যশস্য সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত দ্রব্যের দাম স্থির রাখার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা লোপ করা হয়েছে।
সারের ক্ষেত্রে ভর্তুকি রাস করা হয়েছে ২২ শতাংশ। কিন্তু সারের দাম বাড়লে যে কৃষি উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে তা বুঝতে বোধহয় খুব বেশি কষ্ট করার দরকার পড়ে না। সারাদেশের সাধারণ মানুষের মূল সমস্যা হলো- (১) বেকারত্ব; (২) মূল্যবৃদ্ধি।
আবার এই দুটি সমস্যাই পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ভারতবর্ষের জলন্ত সমস্যা হল বেকারত্ব। কিন্তু স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোন লক্ষ্য মাত্রই স্থির করা হয়নি ২০২৩-২০২৪ এর বাজেটে। কোন নতুন প্রকল্প নেই এই বাজেটে। গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বেজায় বরাদ্দ হ্রাস। ২০২২-২০২৩ সালে ৮৯ কোটি টাকা থেকে হ্রাস পেয়ে ৬০০০০ কোটি হয়েছে। এই প্রকল্পের বাজেট গত দু’ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশেষজ্ঞরা একে সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পের “রক্ত স্নান” বলেছেন। অন্যভাবে বলা যায়, প্রকল্পটিকে হত্যা করার সরাসরি সরকারি পদক্ষেপ। কৃষির ক্ষেত্রে স্থায়ী কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সেচের সম্প্রসারণ এবং সারের ব্যবহার বৃদ্ধি দরকার। কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রেই বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে। স্বল্প বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে প্রকল্প (NREGA)-টি হত্যা করার মাধ্যমে লক্ষ-লক্ষ দরিদ্র মানুষের জীবনরেখা মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এই বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকি ২,০৬,৮৩১ কোটি থেকে কমে ১,৯৭,৩৫০ কোটি হয়েছে। গণবন্টনে যার সরাসরি প্রভাব পড়বে। জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনে খাদ্যশস্য সংগ্রহের জন্য ২০২২-২০২৩ সালের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৭২,২৮২ কোটি টাকা। এই বাজেটে তা কমিয়ে করা হয়েছে ৫৯,৭৯৩ কোটি টাকা। মিড ডে মিলের প্রকৃত বরাদ্দ ৯.৪ শতাংশ কমানো হয়েছে। পুষ্টিভিত্তিক ভর্তুকি ছাটাই হয়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। বর্তমান সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো খাদ্য নিরাপত্তা এবং গণ বন্টন ব্যবস্থার উপর খরচ কমানো। যার সরাসরি ফল হল ক্ষুধা অপুষ্টির মৃত্যু মিছিল।
পেট্রোপণ্যের উপর ভর্তুকি হ্রাস পেয়ে হবে ২২৫৭ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবর্ষে ছিল ৯১৭০ কোটি টাকা। ফলে পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে আবার। যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পরবে সাধারণ গরিব মানুষের জীবনে।
মূল্যবৃদ্ধি একটি জ্বলন্ত সমস্যা। বর্তমান বাজেটে খাদ্যশস্য বন্টন এর উপর ভর্তুকি হ্রাস মূল্য বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে। উপরন্তু, সস্তায় খাদ্যশস্য বন্টনের জন্য ভারতের খাদ্য নিগমকে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বছর ১,৩৭,২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। যা গত বাজেটে ছিল ২,২৪,৬৩৬ কোটি টাকা। ICDS কর্মীদের ভাতা বৃদ্ধি পায়নি। মহিলাদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ হয়েছে মোট খরচের মাত্র ৯ শতাংশ। স্বনির্ভর গোষ্ঠী, স্ব-উদ্যোগী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগী মহিলাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ঋণের কথা বলা হয়েছে বাজেটে। কিন্তু ঋণের উৎস, সুদের হার, ঋণ কাঠামোর বিন্যাস কিছুই বলা হয়নি। তাহলে কি উদ্যোগী মহিলারা মহাজনি ঋণ বা সদ্য সদ্য গজিয়ে ওঠা ঋণ সংস্থার জালে আটকাবে?? যার পরিণতি কি বিপন্নতা আত্মহত্যা ?? এর উত্তর পাওয়া যাবে সময়ের সাথে সাথে।
বর্তমান সরকার দাবি করে মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র প্রসারিত হয়। কিন্তু বাজেটে মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে মাত্র ৯.৬ শতাংশ। গত বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি জাতীয় উৎপাদনের ৬.৪ শতাংশ। এই বাজেটে তা ৫.৯ শতাংশ কি অনুমানের ভিত্তিতে স্থির করা হলো, তার কোন ইঙ্গিত নেই এই বাজেটে। কৃষি ও কৃষি উন্নয়ন, পেট্রোপণ্য, শিল্প উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, খাদ্য ও গন বন্টন, শ্রম ও কর্মসংস্থান, এবং আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে।
প্রশ্ন তাহলে একটাই। কাদের জন্য এই বাজেট?? “অমৃত কাল” কাদের জন্য??
এই বাজেট থেকে একটা বিষয় জলের মতো স্পষ্ট যে দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এই বাজেট হয়নি। খাতায়-কলমে অংকের বিচারে সরকারের আর্থিক লাভ এতে নেই তাও স্পষ্ট। বঙ্কিমচন্দ্রের একটা কথা আছে- “তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির ধর্ম”। ঠিক এই ভাবেই এই বাজেট আম্বাদি-আদানিদের বাজেট। আর তার অসত্য বর্বরোচিত কাজ কি সততার মোড়কে পেশ করার জন্য রয়েছে কর্পোরেট মদতপুষ্ঠ গণমাধ্যম। সামাজিক গণমাধ্যমে চলবে অসত্য অর্থনীতির গল্প। আর অমৃত পান করবে দেশের এক শতাংশ মানুষ। গরল পান করবার জন্য সাধারণ গরিব মানুষ রইল।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় (Human Resource Management)-এ “Conflict” ট বলে একটি বিষয় আছে, যতক্ষণ মানুষ ভাবনা এবং বাস্তবতার পার্থক্য করতে পারবে না, ততদিন এই গরলকেই “অমৃত” ভেবে পান করবে।
বিজেপি সরকারের দালাল যারা দেশ ভক্তির জয় গান গাইতে ব্যস্ত তাদের দেশদ্রোহিতার স্পষ্ট নিদর্শন এই বাজেট। ডানপন্থী পপুলিজম কর্তৃত্ব বাদী এবং অগণতান্ত্রিক কাঠামোকে যেভাবে চালনা করছে তার পরিবর্তন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। নাহলে সর্বগ্রাসী দেশপ্রেমের মিথ্যে মোড়কে ঢাকা, জনস্বার্থ বিরোধী লুটেরা-রা সাধারণ মানুষের শ্বাসরোধ করার উল্লাস থেকে বিরত হবে না।