তত্ত্বকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন -অজয় দাশগুপ্ত

৮ জুলাই ২০২২ (শুক্র বার)

২০০০ সালের শেষে কোনো একদিন। গণশক্তি দপ্তরের পাঁচতলায় মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ পাঠাগারে ঢুকতেই দেখি এক পাহাড় বইয়ের বোঝা নিয়ে চিন্তিত কর্মীরা। জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, জ্যোতিবাবুর বাড়ি থেকে এই সমস্ত বই পাঠিয়েছে। কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্ত, কমরেড সরোজ মুখোপাধ্যায় সহ পার্টির প্রয়াত নেতাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত সংগ্রহ মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ পাঠাগারে স্থান পেয়েছে। জানা গেল, জ্যোতিবাবু মুখ্যমন্ত্রীত্ব থেকে অবসর নেওয়ার পর বাড়ি থেকে অতিরিক্ত কাগজপত্র ঝাড়াইবাছাই যখন হচ্ছিল, তখন বইগুলো জ্যোতিবাবু নিজেই এই পাঠাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। জয়কৃষ্ণ ঘোষকে বলেছেন, ‘‘দ্যাখো, ওদের যদি কোনো কাজে লাগে।’’
খুবই কৌতুহল ছিল। খোঁজ নিচ্ছিলাম, কী কী বই আছে দেখার জন্য। পরে বুকশেলফে সাজানোর পর একদিন গিয়ে দেখলাম সেখানে ধর্ম নিয়ে ফিদেল কাস্ত্রোর মতামত সম্পর্কে সদ্যপ্রকাশিত বইটি যেমন আছে, তেমনি ইংরাজী সাহিত্যের বেশ কয়েকটি সাম্প্রতিকতম উপন্যাস রয়েছে। রয়েছে হাঙ্গেরির চিত্রকলা নিয়ে বই, অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বই।
এই বইগুলো কী জ্যোতিবাবু পড়েছেন? প্রশ্ন করেছিলাম জয়কৃষ্ণ ঘোষকে। জয়দা বললেন, ‘‘জ্যোতিবাবু সময় পেলেই বই পড়েন।’’ সকালে উঠে ‘গণশক্তি’ না পড়তে পারলে তিনি অস্থির হয়ে উঠতেন। একদম শেষের দিকে আমি জয়দাকে জিজ্ঞাসা করেছি, ‘‘উনি যে কাগজটা সামনে ধরে পড়ছেন, চোখের দৃষ্টি কি এখনও এত জোরালো?’’ জয়দা বলতেন, ‘‘উনি হেডিংগুলো পড়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, সেটা আমাকে পড়ে শোনাতে বলেন।’’


তবে ইংরাজী সাহিত্যের সাম্প্রতিকতম নভেলও যে তিনি পড়তেন, তার প্রমাণ বিভিন্ন সময়ে পাওয়া গেছে। ১৯৯৯ সালে একবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক চলাকালীন জ্যোতিবাবু অসুস্থতা বোধ করলে তাঁকে এইমস-এ ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁকে দেখতে গিয়ে তাঁর টেবিলে ঝুম্পা লাহিড়ীর লেখা সাম্প্রতিকতম উপন্যাসটি থাকার কথা বহুলপ্রচারিত সংবাদমাধ্যমেও দেখা গেছে।
কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের বহুবিধ গুণাবলী থাকলেও কখনও কখনও কোনও একটি দিক অন্য সমস্ত দিককে ছাপিয়ে যাওয়ায় তাঁকে সেই বিশেষ গুণের জন্য সকলে মনে রাখেন। কেউ তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে পরিচিত হন, কেউ সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য সমাদৃত হন, কেউ কেউ আবার জননেতা হিসেবে শ্রদ্ধেয় হয়ে আছেন। যেমন অন্য অনেক গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও এম বাসবপুন্নাইয়া, বিটি রণদিভে তাত্ত্বিক নেতা হিসেবেই সমধিক পরিচিত। আবার প্রমোদ দাশগুপ্ত, হরকিষেণ সিং সুরজিৎ সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ইএমএস নাম্বুদিরিপাদের মধ্যে অবশ্য উভয় গুণাবলীই প্রকট হয়েছিল। তিনি যেরকম মার্কসবাদী তত্ত্ব, দর্শন, সাহিত্য, ইতিহাস বিভিন্ন বিষয়ে অজস্র লিখেছেন, তেমনি জননেতার পর্যায়েও উন্নীত হয়েছিলেন।


জ্যোতিবাবু তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু তিনি তত্ত্বকে মানুষের মধ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন, মানুষের ভাষায় মার্কসবাদকে ব্যাখ্যা করার মতো অনন্য দক্ষতা তিনি অর্জন করেছিলেন। জ্যোতিবাবু প্রায়ই বলতেন, ‘‘মানুষ, একমাত্র মানুষই ইতিহাস রচনা করে। এটা ঠিকই যে মানুষ কখনো কখনো ভুলও করে। কিন্তু নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে শেষ পর্যন্ত মানুষের জয়ই অবশ্যম্ভাবী।’’ এই উক্তিটি জ্যোতিবাবুর বলেই অধিকাংশ মানুষ জানেন। কিন্তু ১৯৯৮ সালের ১৩ নভেম্বর দিল্লিতে ১৩তম জওহরলাল নেহরু স্মারক বক্তৃতায় জ্যোতিবাবু নিজেই বলেছেন: ‘‘As a Marxist, I am interested not merely in interpreting the world but also in changing it. Karl Marx has aptly reminded us in ‘The Eighteenth Brumaire of Louis Bonaparte’:”Men make their own history but they do not make it just as they please: they do not make it under circumstances chosen by themselves, but under circumstances directly encountered, given and transmitted from the past.”

বিলেতে পড়াশুনো করার সময় নিয়মিত মার্কসবাদ চর্চা করতেন জ্যোতিবাবু। তিনি দেশে ফেরেন ১৯৪০ সালে। এদেশে কমিউনিস্ট পার্টি তখন বেআইনি। তার আগে তিনি যখন লন্ডনে ছিলেন তখনই সিপিজিবি-র নেতারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিস্ট গ্রুপের ভারতীয় ছাত্রদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন, জানিয়েছিলেন প্রকাশ্যে কোন সভা সমাবেশে অংশ না নিতে। কারণ ভারতে ব্রিটিশরা তখন কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেই সময়টা কমিউনিস্ট গ্রুপের সদস্যরা প্রকাশ্যে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জ্যোতি বসুর নিজের কথায়:‘‘আমরা তখন মার্কসবাদী পাঠচক্রে যেতে শুরু করলাম। আমাদের পড়াতেন হ্যারি পলিট, রজনী পামদত্ত, ক্লিমেন্স দত্ত এবং ব্র্যাডলের মতো নেতারা। গোটা বিশ্ব তখন তপ্ত থেকে তপ্ততর। স্পেনে শুরু হয়েছে গৃহযুদ্ধ। ফ্রাংকোর স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রীদের সংগ্রাম নজর কাড়ছেসমস্ত প্রগতিশীল মানুষের। ফ্যাসিস্তদের বিরুদ্ধে স্বাধীন চিন্তার এই যুদ্ধে শামিল হতে গড়ে ঊঠেছে আন্তর্জাতিক ব্রিগেড। রালফ ফকস্, ক্রিস্টোফার কডওয়েলের মতো বিখ্যাত কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবীরা স্পেনে যেতে শুরু করেছেন। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের উপন্যাস ফর হুম দি বেল টোলস এই সংগ্রাম নিয়েই লেখা। আমি ভিতরে ভিতরে প্রবল আলোড়িত। মার্কসবাদী সাহিত্য পাঠ আর সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহ আমাকে দ্রুত রাজনীতির মূল প্রবাহে টেনে নিচ্ছে।’’


ভারতে আসার পরেও কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতে তত্ত্বকে মানুষের ভাষায় প্রকাশ করা এবং মতাদর্শগত প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ায় তাঁকে কখনও পিছপা হতে দেখা যায়নি। ১৯৪৮ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেস। নানা দিক দিয়ে এই কংগ্রেস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল প্রতিনিধিদের কাছে। সে সময়ে সংষ্কারবাদী ও সংকীর্ণতাবাদী এই দুই ঝোঁকের বিরুদ্ধে মতাদর্শগত লড়াইয়ে তিনি তাঁর মত ব্যক্ত করতে দ্বিধা করেননি। এই কংগ্রেসে যে রাজনৈতিক থিসিস গ্রহণ করা হয়েছিল তার যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে সব জ্যোতি বসু ছিলেন তার মধ্যে একজন।
পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয় সম্পর্কেও তিনি সুস্পষ্ট মত ব্যক্ত করেছিলেন। ২০০৭সালের ৭নভেম্বর ‘গণশক্তি’তে তাঁর লেখা ‘‘সমাজতন্ত্রের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিল নভেম্বর বিপ্লব’’ শীর্ষক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন: ‘‘রাশিয়ায় পরবর্তীকালে যে মতাদর্শগত চর্চার অভাব ঘটেছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সে দেশে গিয়েও আমার নিজের এ বিষয়ে মনে হয়েছিল। প্রথম যাই ১৯৫৭ সালে। তারপর আরো কয়েকবার গিয়েছি। সাল মনে নেই, একবার সে দেশে গিয়ে ব্ল্যাক সি-র উপর দিয়ে একটা জাহাজে করে যাচ্ছিলাম। সেই জাহাজটি এক সময়ে হিটলারের জাহাজ ছিল। বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত বাহিনী তা কবজা করে। প্রায় ২২০০ যাত্রী সেই জাহাজে ছিল। প্রায় সকলেই ছুটি কাটাতে যাচ্ছে। জাহাজের মধ্যে খেলছে, সাঁতার কাটছে। কিন্তু দেখলাম কেউই খবরের কাগজ পড়ছে না। অথচ কাগজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খবর ছাপা হয়েছে। ওদের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সংক্রান্ত খবর ছাপা হয়েছে এবং রয়েছে এক রুশ মহাকাশচারীর প্রত্যাবর্তনের খবর। কিন্তু তাতেও ওদের কাগজ পড়ার আগ্রহ নেই। আমি এক দোভাষীকে জিজ্ঞাসা করলাম, ওদের খবরের কাগজ পড়ার আগ্রহ নেই কেন? জবাবে সে বললো, ওরা ছুটি কাটাতে যাচ্ছে। তাই ওদের আগ্রহ নেই। ফিরে এসে কাগজ দেখবে। তাতে শুধু দেখবে ওদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা কিছু বাড়লো কি না। তখন এই বিষয়টা নজরে এসেছিল। সবটা বুঝিনি-আজ বুঝি প্রবণতাটা তখন থেকেই তৈরি হয়েছিল।’’


এই নিবন্ধেই তিনি লিখেছেন: ‘‘….সোভিয়েতে বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে আমাদের পার্টি ১৯৯২ সালে মাদ্রাজ পার্টি কংগ্রেসে প্রস্তাব গ্রহণ করে। সেই প্রস্তাবে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়। তারমধ্যে একটি হলো, সে দেশে শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার বদলে পার্টির এবং বেশিরভাগ সময়ে পার্টি নেতৃত্বের একনায়কত্বে পরিণত হয়েছিল। এর ফলে পার্টি ও রাষ্ট্র জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে প্রতিরক্ষাখাতে ব্যয় বাড়াতে হয় সোভিয়েত ইউনিয়নকে। সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিতে গিয়ে উন্নতমানের ভোগ্যপণ্য তৈরির কাজ অবহেলিত থেকেছে। মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পারেনি। এছাড়া মতাদর্শগত চেতনা প্রসারের ঢিলেমি দেখা দিয়েছিল।’’
বামফ্রন্ট সরকার তৈরি হওয়ার পরেও জ্যোতি বসু বারেবারে পার্টিকর্মীদের সরকার ও পার্টিতে কাজ এবং কোন মতাদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা এই সরকারকে দেখবো তা বলেছেন। ১৯৭৮ সালে ‘‘দেশহিতৈষী’’ পত্রিকার শারদ সংখ্যায় জ্যোতি বসু ‘‘প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের এক বছরের অভিজ্ঞতা’’ শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখেছেন: ‘‘ধনতান্ত্রিক-সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে বিশেষ একটা রা‍‌জ্যে ক্ষমতাসীন হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার মৌলিক পরিবর্তন সাধনের এবং খোদ ব্যবস্থাটাকেই পালটে ফেলার চেষ্টা করতে পারে না। সুকঠিন বাধাবিপ‍‌ত্তির মধ্যে এই সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে। প্রায় সমস্ত ক্ষমতা আর আর্থিক সংস্থান কেন্দ্রের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে আর সংবিধান খাড়া করছে নানা বাধাবিপত্তি; কারণ তার চরিত্র যতটা না যুক্তরাষ্ট্রীয় তার চেয়ে অনেক বেশি এককেন্দ্রিক।’’
১৯৮১ সালে ‘মার্কসবাদী পথ’’ প্রকাশিত হলে প্রথম সংখ্যাতেই জ্যোতি বসু বামফ্রন্ট সরকার সম্পর্কে পার্টিকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে তা ব্যাখ্যা করেছিলেন। ‘‘মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে বামফ্রন্ট সরকার’’ নামে সেই দীর্ঘ নিবন্ধে তিনি লিখেছেন: ‘‘জনগণকে আদর্শগত ও রাজনীতিগতভাবে উদ্বুব্ধ করার জন্যে ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। পার্টিকর্মীরা বামফ্রন্টের কর্মসূচী রূপায়ণের কাজেই বা কতটা জড়িত হবে আর পার্টি গঠন এবং শ্রেণী সংগ্রামের প্রয়োজনে শ্রেণী সংগঠন গড়ে তোলা — এই কাজেই বা কতটা নিয়োজিত হবে সে বিষয়ে প্রায়ই বৃথা তর্কবিতর্ক হয়। যেন এই দুটি উদ্দেশ্য পরস্পর-বিরোধী। নতুন পরিস্থিতিতে পার্টির ভূমিকা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার ফলে দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থী উভয় ধরনেরই বিচ্যুতি ঘটেছে। আমাদের যে কথা ভালোভাবে মনে রাখতে হবে সেটা হলো যে সরকারে আমাদের অংশগ্রহণের ফলে পার্টির কাজ খুবই জটিল ও বিচিত্র ধরনের হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্বোক্ত ঐ দুটি কর্তব্যকে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং এর একটিকে আর একটি থেকে পৃথক করা যাবে না।’’

অনেক পরে ২০০৮ সালে কমরেড নিরুপম সেন-এর লেখা ‘বিকল্পের সন্ধানে’ বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমরা যে কখনও সরকার গঠন করতে পারবো, আর সেই সরকার যে এতদিন টিঁকবে, তা আগে কখনো ভাবতেও পারিনি। ১৯৫৭ সালে কেরালায় যখন প্রথম কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হলো, তখনও আমাদের সামনে অতটা পরিষ্কার ধারণা ছিল না যে এই পূঁজিবাদী সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে একটি অঙ্গরাজ্যে কমিউনিস্টরা সরকার গঠন করলে কী করা সম্ভব, কতখানি করা সম্ভব। সেসব আমরা পরে ভেবেছি। ১৯৬৪ সালে সিপিআই(এম) যখন গঠিত হলো, তখন পার্টি কর্মসূচীতে আমরা বললাম, এরকম সরকারে গেলে সমাজব্যবস্থার খুব বড় কিছু অদল-বদল হয়তো আমরা করতে পারবো না। কিন্তু এই সংবিধানে যে অধিকার দেওয়া আছে, তাকে কাজে লাগাতে হবে। মানুষের স্বার্থে এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার আমাদের করতে হবে। মানুষকে কিছু রিলিফ আমরা নিশ্চয়ই দিতে পারবো এইসব সরকারকে ব্যবহার করে। পার্টি কর্মসূচী সময়োপযোগী করা হলে আমরা বলেছি, সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে এই সরকারগুলি বিকল্প নীতি তুলে ধরবে ও প্রয়োগ করার চেষ্টা করবে। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গে রিলিফের থেকে বেশি কিছুই আমরা মানুষকে দিতে পেরেছি। এটা ঠিকই, আমাদের লক্ষ্য হলো শ্রেণীহীন, শোষনহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা। কিন্তু সেকাজ এখনও অনেক বাকি। তাই এখনকার যা কাজ, তা এখনই করতে হবে। আজ এটা প্রতিষ্ঠিত, এই সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার মানুষের স্বার্থে অনেক কাজ করতে পেরেছে।’’
কোনও মতাদর্শ তখনই শক্তিশালী হয়, যখন মানুষ তা গ্রহণ করে। জ্যোতি বসু সারাজীবন এই বিশ্বাসেই পথ চলেছেন এবং আজও অনুপ্রাণিত করে চলেছেন।

Spread the word

Leave a Reply