about Adani trinmul is soft , why does Trinamool want?


সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আদানি গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারিতে সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্তের দাবি উঠবে কিনা অস্পষ্ট। সরকার পক্ষ নিজেরই লক্ষ্য পূরণে ডেকেছে এই অধিবেশন। সংবিধান অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিদের কাছে জবাবদিহি করার জন্য নয়। তবে বিরোধী একাধিক দল যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্তের দাবি তুলছে ফের।
সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি তদন্তের শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। সময় চাইছে শেয়ার বাজারে নিয়ামক প্রতিষ্ঠান ‘সেবি’ নিজেই। এমনকি ‘সেবি’-র সঙ্গে আদানিদের যোগও চর্চায় চলে এসেছে। সে কারণে সংসদীয় কমিটি গড়ার দাবি ফের উঠেছে।
অধিবেশনের এই পাঁচ দিনে দাবি এড়ানো গেলেও আদানি কেলেঙ্কারির নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি রাজনীতিতে থাকবেই। প্রশ্ন হচ্ছে সংসদে বা সংসদের বাইরে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র সব শরিক একমত হবে কিনা। বিশেষ করে এই সন্দেহ রয়েছে তৃণমূল প্রধান এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ঘিরে।


গত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে আদানির শেয়ারে কারচুপি এবং ব্যাপক কেলেঙ্কারির তদন্তের দাবিতে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সংসদ। বিরোধী বহু দল একত্রে শামিল হলেও দূরে থেকেছে তৃণমূল কংগ্রেস। গোড়ায় অনুগামী সংবাদমাধ্যম মনে করাতে চাইছিল যে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে আপত্তির কারণে এই দূরে থাকা। তারপর তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতারা বললেন যে, কংগ্রেসের দাদাগিরি সহ্য করব কেন? তৃণমূল কিছু কম নয়। কংগ্রেসের পরিকল্পনা অনুযায়ী সংসদে দাবি তুলতে হবে কেন তৃণমূলকে?
তারপর শোনা গেল ডেরেক ও ব্রায়েনের মতো দলের নেতাদের একাংশের বক্তব্যে, যৌথ সংসদীয় তদন্তের কোনও অর্থ নেই। সেই কারণেই বিরোধীদের এই দাবিতে গলা মেলাতে রাজি নয় তৃণমূল।
আদানি শেয়ার নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল কেন? কারণ আদানি গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত বিষয় নয় ব্যবসায়িক এই টানাপোড়েন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সব বিদেশ সফরে হয় গোষ্ঠীপতি গৌতম আদানি উপস্থিত, নয়তো মোদী যে যে চুক্তি সই করেছেন তাতে আদানির জন্য সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশে বিমানবন্দর থেকে সমুদ্রবন্দর হয়ে ভোজ্য তেল থেকে সড়ক তৈরির প্রকল্পে অবধারিত যে গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ, তার নাম আদানি।


কিন্তু আমেরিকার শেয়ার বাজারে পরিভাষায় ‘শর্ট সেলার’ একটি সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে তোলপাড় পড়েছিল। রিপোর্ট বলেছিল, আদানির শেয়ার যে দামে বিক্রি হচ্ছে আসলে তার দাম তত নয়। দাম ভাড়ানো হয়েছে। অন্তত ৮০ শতাংশ দাম পড়ে যেতে পারে।
আদানির শেয়ারে বিনিয়োগ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা এলআইসি’র, রয়েছে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বিনিয়োগও। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট বেরনোর পর সত্যই আদানির শেয়ারের দাম হুড়মুড়িয়ে নেমে গেল। এলআইসি এবং স্টেট ব্যাঙ্ককে খোয়াতে হলো মূলধন। বলা ভালো, এই মূলধন দেশের জনতার টাকায় তৈরি। বিমার জন্য বা অবসরের পর জরুরি অর্থের জন্য যে জনতা অর্থ রাখেন রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে।
দেশময় প্রবল প্রতিবাদের জেরে তৃণমূলকেও আদানির শেয়ারের তদন্তের দাবি জানাতে হয়েছিল। তবে তা আলাদা করে। বিরোধীদের সঙ্গে নয়। সংসদে সরকার নীরব থাকায় ইডি দপ্তর অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন বিরোধীরা। দিল্লি পুলিশ সেই মিছিল আটকে দিয়েছিল। তৃণমূল সেই মিছিলেও অংশ নেয়নি। বরং সংসদ অচল হওয়ায় কংগ্রেসকে দোষারোপ করছিল তৃণমূল।
কারো কারও যুক্তি ছিল, পশ্চিমবঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর বিনিয়োগ রয়েছে। বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সে কারণে তৃণমূলকে সরে থাকতে হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক মহল মনে করাচ্ছে, রাজস্থানেও আদানির বিনিয়োগ রয়েছে, তার জন্য কংগ্রেস সরে থাকেনি। কেরালাতেও রয়েছে, তার জন্য বামপন্থীরা সরে থাকেননি।

চলতি বছরের গোড়ায় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল গোপন নির্বাচনী বন্ডে কোন দলের কত আয় হয়েছে। ২০২২’র মার্চে শেষ অর্থবর্ষে তৃণমূলের নির্বাচনী বন্ড বাবদ আয় ছিল ৫২৮ কোটি টাকা। ২০২১’র অর্থবর্ষে আয় ছিল ৪২ কোটি টাকা। ২০২০’তে ১০০ কোটি টাকা, ২০১৯ অর্থবর্ষে ৯৭ কোটি টাকা। রাজনৈতিক দলগুলি আয়কর বিভাগের কাছে যে তথ্য দেয় তার ভিত্তিতেই হিসেবের খতিয়ান প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনী বন্ডে সবচেয়ে বড় আয় বিজেপি’র। ২০১৭’তে এই বিল পেশের সময়ই বামপন্থী দলগুলির সঙ্গে বহু অংশ বলেছিল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কর্পোরেটের সরাসরি লেনদেনের এই বন্দোবস্ত বিপজ্জনক। ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত আটবার ছাড়া হয়েছে নির্বাচনী বন্ড। মোট ৯ হাজার ২০৮ কোটি টাকা জমা হয়েছে। তার ৫৭ শতাংশ বা ৫ হাজার ২৭০ কোটি টাকা ঢুকেছে একা বিজেপি’র ঘরে।
বাকিদের অবস্থা কী? সিপিআই(এম) গোপনে কর্পোরেটের টাকা নেওয়ার এই বন্ডে কোনও দান গ্রহণই করে না। কংগ্রেস ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৯৬৩ কোটি টাকা। আর তৃণমূলের আয় ৭৬৭ কোটি টাকা। দু’দলের তুলনা নজরে রাখার মতো। সারা দেশে একাধিক রাজ্যে সরকারে অথবা বিরোধী আসনে বসে কংগ্রেসের যা আয় এক রাজ্যে থেকে তৃণমূল তাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে!
২০২২ অর্থবর্ষে তৃণমূল জানিয়েছিল তাদের আয়ের ৯৬ শতাংশই এসেছে নির্বাচনী বন্ড থেকে।
বিধানসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে হয়েছিল ২০২১-এ। ওই বছরই ডিসেম্বরে আদানি গোষ্ঠীর প্রধান গৌতম আদানির সঙ্গে বৈঠক হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। ২০২২-এ আদানি গোষ্ঠী জানায় যে তাজপুরে সমুদ্র বন্দরে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। ২০২২’র জুনে ঘোষণা হয় যে নিউ টাউনে বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালিতে আদানি গোষ্ঠী গড়বে ‘হাইপার স্কেল ডেটা সেন্টার’। ‘আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স’-এ এমন বহু তথ্যের ভাণ্ডার গড়ার দিকে নজর দিয়েছে একাধিক কর্পোরেট গোষ্ঠী।
কোনও ঘোষণা স্পষ্ট করে নেই, তবে বীরভূমে ডেউচা পাচমীতে আদানির স্বার্থ আছে, এমন কথা রয়েছে বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক স্তরে।


তৃণমূলের এক বছরে কর্পোরেট বন্ডে ৫২৮ কোটি টাকা আয়ে কী আদানি যোগ রয়েছে, এই প্রশ্নও উঠে এসেছে। বিজেপি সরকারের পাশ করানো আইনে বন্ডে দাতা কে তা গোপন রাখা হয়। অতীতে রাজনৈতিক দলের তহবিলে বাণিজ্যিক সংস্থার অর্থ দানের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা ছিল। তাও তুলে দিয়েছে মোদী সরকার। এতে বিজেপি লাভবান হয়েছে কোনও সন্দেহ নেই। লাভবানের তালিকায় আরেকটি নাম তৃণমূল কংগ্রেস।
কর্পোরেট কাউকে আসলে দান করে না। রাজনৈতিক দলেও বিনিয়োগ করে। সংশ্লিষ্ট দল সরকার গড়লে অথবা সরকারে আসীন থাকলে সুদে আসলে বিনিয়োগ উসুলও করে নেয়। বিজেপি বা তৃণমূলের ঘরে এই বিপুল কর্পোরেট অনুদান সে কারণেই জনতার নজরদারির বাইরে থাকতে পারে না।

Spread the word

Leave a Reply