প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা শ্যামল চক্রবর্তী’র সংক্ষিপ্ত জীবনী ….

কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী

জন্ম: ১৯৪৩সালের ২২ফেব্রুয়ারি
মৃত্যু: ২০২০ সালের ৬আগস্ট, দুপুর ২টা
বয়স: ৭৬ বছর
পিতা-মাতা: বাবা সুশীল চক্রবর্তী, মা অন্নপূর্ণা দেবী।
স্ত্রী: শিপ্রা ভৌমিক (১৯৮২ সালে প্রয়াত)
সন্তান: উষসী চক্রবর্তী
স্থায়ী বাসস্থান: ডি/৬, মানিকতলা হাউসিং এস্টেট, ভিআইপি রোড, কলকাতা।
• বর্তমানে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর প্রাক্তন সদস্য। সিআইটিইউ-র সর্বভারতীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গ কমিটির প্রাক্তন সভাপতি। রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী। প্রাক্তন সাংসদ(রাজ্যসভা)।
• শিক্ষা: পূর্ববঙ্গ থেকে আসা অবিভক্ত যৌথ পরিবারে তাঁর ছোটবেলা খুবই দারিদ্রের মধ্যে কেটেছে। ওপার বাংলা থেকে প্রথমে চাকদায় কিছুদিন থাকার পর দমদম নলতা রোডে তাঁদের পরিবার বসবাস শুরু করে। ১৯৫১ সালে তিনি দমদম রায়বাহাদুর বৈদ্যনাথ ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে ডাবল প্রোমোশন পেয়ে ১৯৫৪ সালে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল। তিনি বার্ষিক ম্যাগাজিনে লেখা দিতেন, দেওয়াল পত্রিকায় লেখার কাজ করতেন। ১৯৫৯সালে তিনি স্কুল ফাইনাল পাশ করেন। তারপর দমদম মতিঝিল কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন (১৯৬২)। এরপর বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে তিনি স্নাতক (১৯৬৬) হন।
• ছাত্র আন্দোলন: স্কুলে পড়ার সময়েই তিনি বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭০সালে এসএফআই গঠিত হলে তার রাজ্য নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে শিবপুর সম্মেলেনে তিনি এসএফআই-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত, ১৯৭৯ সালে বারাকপুর রাজ্য সম্মেলন পর্যন্ত এই দায়িত্বে। এসএফআই-র সর্বভারতীয় যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন।
• অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন ১৯৫৯সালের শেষে। ১৯৭৮ সালে শিশির মঞ্চে অনুষ্ঠিত রাজ্য সম্মেলন থেকে তিনি পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৫সালের রাজ্য সম্মেলনের পর পার্টির রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হন। ২০০২ সালে হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
• শ্রমিক আন্দোলন: পরিবহন শিল্প, বিদ্যুৎ শিল্প সহ কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি সর্বভারতীয় স্তরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি হিসেবেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে গ্রামীণ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবীদের সংগঠনে নিয়ে আসার প্রশ্নে তিনি উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই প্রশ্নে একটি প্রচার পুস্তিকাও তিনি লিখেছিলেন।
• স্ত্রী ও সন্তান: ছাত্র আন্দোলন এবং পরে মহিলা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী কমরেড শিপ্রা ভৌমিকের সঙ্গে শ্যামল চক্রবর্তীর বিবাহ হয়। ১৯৮২ সালে শিপ্রা ভৌমিক প্রয়াত হন। তাঁদের একমাত্র সন্তান মেয়ে উষসী চক্রবর্তী পেশায় অভিনেত্রী।
• বিধায়ক: মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের সিপি‌আই(এম) বিধায়ক সুহৃদ বসুমল্লিকের জীবনাবসান হলে ১৯৮১ সালে শ্যামল চক্রবর্তী এই কেন্দ্রে বামফ্রন্টের সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালের বিধানসভার সাধারণ নির্বাচনেও এই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক এবং রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য। রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী। ১৯৮৭ ও ১৯৯১ সালেও তিনি মানিকতলা থেকে বিধানসভায় জয়ী হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জয়ী হতে পারেননি।
• সাংসদ: রাজ্যসভা সদস্য হন ২০০৮ সালের ৩এপ্রিল। ছিলেন ২০১৪সালের ২এপ্রিল পর্যন্ত। সাংসদ হিসেবেও রাজ্যের স্বার্থে এবং দেশের শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
• সুবক্তা ও সুলেখক। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। অসংখ্য পুস্তক ও প্রবন্ধ লিখেছেন। ছাত্র আন্দোলনের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন ‘৬০-৭০ ছাত্র আন্দোলন’ শীর্ষক বইয়ে। এটি প্রথম খণ্ড। দ্বিতীয় খণ্ড রচনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সংগ্রহ করছিলেন তথ্য।
• প্রকাশিত বই: কাশ্মীর-অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত, ১৯৯৮; সমাজতন্ত্র কী এবং কেন, ১৯৭৮; তিন প্রসঙ্গ, ২০০১; গরু ও ত্রিশূল, ২০০১; আর্যরা কি ভারতের আদিম অধিবাসী, ২০০২; ঝড়ের খেয়া, ২০০৮; ভারতীয় সমাজের বিকাশের ধারা ইত্যাদি। এছাড়া কয়েকটি প্রচার পুস্তিকাও তিনি লিখেছেন: আনঅর্গানাইজড ওয়ার্কার ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল, ২০০৫; রিটেল ট্রেড, ২০০৭ ইত্যাদি। তিনি বেশ কিছুদিন পার্টির প্রকাশনা কেন্দ্র ন্যাশনাল বুক এজেন্সির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। এইকাজে তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

Spread the word

Leave a Reply