কিছু কিছু সিনেমা হয় কালজয়ী। তার একটা সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’। এ দেশে যে হীরক রাজের রাজত্ব চলছে তা কেউ কি অস্বীকার করতে পারবেন? বোধ হয় না। এখন এ দেশের হীরক রাজ মানে মোদির কাছে ঘুরতে আসছেন আমেরিকার হীরক রাজা ট্রাম্প। দুজনের মিল এমনিতেই প্রচুর চোখে পরে। এখন হীরক রাজার কাছে তার বন্ধু রাজা এলে রাজা সেই ‘ভরসা পূর্তি’ থুড়ি ‘বর্ষ পূর্তি’ হোক আর গল্প করতেই হোক নিজের এলাকা সুন্দর করতে হবে। আর তাই সেই সিনেমার পদ্ধতিতেই চলছে বস্তি উচ্ছেদ। ইতিমধ্যেই ৪৫টি পরিবারকে উচ্ছেদের নোটিশ ধরিয়েছে বিজেপি পরিচালিত আহমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন।
দু’দিনের ভারত সফরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আগেই সাজ সাজ রব আহমেদাবাদে। সেই উপলক্ষেই সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইন্দিরা ব্রিজ অবধি রাস্তার পাশের বস্তি ঢাকতে তৈরি করা প্রাচীর ঘিরে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। যদিও প্রাচীরের উচ্চতা কম করা হলেও আতঙ্ক ক্রমেই গ্রাস করছে আহমেদাবাদের দেবসরণ বস্তিবাসীকে। ৬০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে বস্তি। পাঁচিল তুলতে ইতিমধ্যেই জোরকদমে কাজ শুরু করেছে আহমেদাবাদ পুরসভা। তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা ট্রাম্প আহমেদাবাদে থাকবেন বলে খরচ হবে ১০০কোটি টাকারও বেশি।
আতঙ্কে আমেদাবাদের বস্তির মানুষেরা। ভয়ের সুর শোনা গেল দেবসরণের বৃদ্ধ দম্পত্তি সর্দারভাই (৯৫) এবং রামুবেন (৬০)-এর গলাতে। স্মৃতি উসকে তাঁরা বলেন, “এখানে তখন জঙ্গল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। লোকেরা তখন এখানে আসতে ভয় পেত। ইন্দিরা গান্ধী এই জায়গা আমাদের দিয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন এখান থেকে আপনাদের কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না।”
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইন্দিরা ব্রিজ পর্যন্ত থাকা সরকারি জমির উপর তৈরি বস্তিতেই প্রায় চার দশক ধরে বসবাস করেন সুশীলাবেন সরণিয়া । তিনি বলেন, “পুরসভার লোকজন হঠাৎ এসে আমাদের ঘর ভেঙে দিয়ে সেখানে পাঁচিল তুলতে শুরু করেন। এবার কোথায় যাব আমরা? আমাদের কোথায় রাখা হবে কিছুই বুঝতে পারছি না আমরা।” সংবাদ মাধ্যম প্রাচীর গড়ার কারণ সম্পর্ক জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “আমরা এখানে কেবল জলের সুবিধা চেয়েছিলাম। আমরা এখানে কয়েক দশক ধরে এখানে রয়েছি।”