socialism

‘Adversity is the first path to truth’: A Report

সাত্যকী ভট্টাচার্য

১৯৪৯ সাল, বিপ্লবের পর চীনের যা অবস্থা ছিল সেটা ১৯৪৭’র ভারতের সাথে তুলনীয়।

তারপরের অবস্থা আমাদের সকলেরই জানা। গড় আয়ু (৭৮ বনাম ৬৮), ইস্কুলে কাটানো গড় সময় (আন্দাজ সাড়ে সাত বছর বনাম আন্দাজ সাড়ে চার বছর), মাথা পিছু জিডিপি (আন্দাজ ১২৭৫০ ডলার বনাম ২৫০০ ডলার), শিক্ষার হার (প্রায় ৯৮ শতাংশ বনাম প্রায় ৭৮ শতাংশ), ইত্যাদি।

তাছাড়া প্রযুক্তির দিক থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার জায়গায় খুব কম দেশই আছে। পৃথিবীর বৃহত্তম হাইস্পিড রেলওয়ে নেটওয়ার্ক (৪০০০০ কিমির বেশি, পরবর্তী স্থানে আছে স্পেন ৪০০০ কিমির আশেপাশে), রিমোট সার্জারি, ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময় করার সফল গবেষণা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সফল প্রয়োগ, বিশ্বের সমস্ত সৌর প্যানেলের ৮০ শতাংশ উৎপাদন ক্ষমতা, নিজস্ব চিপ তৈরি, নিজস্ব স্পেস স্টেশন, ইত্যাদি।

Socialism PP Cover

স্বাভাবিক মানুষের মনে প্রশ্ন আসেই, কী করে এমন হয়? এর কারণ অনুসন্ধান করা যাক।

বিপ্লবের পর জনতার কমিউন, বিপুল ভূমিসংস্কার, নানা প্রক্রিয়ায় কাজ এগিয়ে মানবজীবনের ব্যাপক উন্নতি হয়, সেটা ১৯৪৯ থেকে  কমরেড মাও এর প্রয়াণের সময়ে শিশু মৃত্যুর হার কমা বা গড় আয়ুর ব্যাপক বৃদ্ধি স্পষ্ট করে। কিন্তু এর পরে কৃষিজীবী অধ্যুষিত দেশের পশ্চাদপরতা কাটছিল না। এই সময়ে আসে “ওপেন আপ অ্যান্ড রিফর্ম।” বিশ্বের তাবড় তাবড় সমাজতন্ত্রীরা ভয় পেয়েছিলেন। সঙ্গত কারণেই। মাইকেল প্যারেন্তির মত মানুষ ভেবেছিলেন চীন বোধ হয় নয়া উদারনীতি গ্রহণ করছে। কিন্তু দেখা গেল চীনের অর্থনীতিতে পর্যায়ক্রমিক উত্থান এবং পতনের চক্র চলছে না। এই চক্রটি পুঁজিবাদী অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য।

এর কারণ হিসেবে বলা যায়:

১. যদি পুঁজিপতিদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা না থাকে, তবে সারপ্লাস উৎপাদন কেনার ক্ষমতা শ্রমিকের নেই, কারণ তার জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে যত শ্রম দিতে হয় সে সেইটুকু শ্রমের ফসল কিনতে পাওয়ার মত মজুরি পায়।

২. অতএব উৎপাদনশীলতা বাড়াতে থাকাই একমাত্র উপায়। কিন্তু উৎপাদনশীলতা বাড়তে থাকলে অতি অবশ্যই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যন্ত্র, কাঁচামালের জন্য খরচ শ্রমিকের জন্য খরচের থেকে আনুপাতিকভাবে বাড়তে থাকে। এদিকে শ্রমিকের অতিরিক্ত শ্রমই পুঁজিপতির লাভের উৎস হওয়ায় লাভের হার কমতে থাকে।

এই  পরিস্থিতিতে উৎপাদন বন্ধ করতে হয়। ব্যাপক ছাঁটাই, গৃহযুদ্ধের মত পরিস্থিতি। তখন কোনওভাবে মেহনতি মানুষকে কিছু বছরের জন্য দমিয়ে রেখে পরে আবার নতুন করে উৎপাদন আরম্ভ করা হয়। এ জিনিস আমরা ২০০৮ সাল থেকে এখনও অবধি দেখছি। তবে এর কোনও প্রভাব চীনের অর্থনীতিতে পড়ল না। কেন?

এক কথায় উত্তর হল, চীন নয়া উদারনীতি গ্রহণ করেনি। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হল কোনও জিনিসের প্রয়োজন কত তার সঙ্গে তার মূল্য, উৎপাদনের পরিমাণের সামঞ্জস্যের অভাব। ফাটকা খেলার চেষ্টা। অদূরদর্শিতা। সত্যিই, যথেষ্ট দাম পেলে পুঁজিপতি সেই দড়িটাই আমাদের বিক্রি করবে যেটা দিয়ে আমরা তাকে ঝোলাবো। এর বিপরীতে থাকে পরিকল্পিত অর্থনীতি। আগে থেকে মানুষের কতটা কী প্রয়োজন, ঠিক করে সেই অনুযায়ী শ্রম এবং রিসোর্সের বণ্টন। পরিকল্পিত অর্থনীতির সমস্যা হল এই আন্দাজ করার কাজটা নিয়ে। বিশেষত চীন বা ভারতের মত বিরাট দেশে এ কাজ অতি দুষ্কর।

সাম্রাজ্যবাদীরা রটিয়ে দিয়েছিল বাজার অর্থনীতির বিপরীতে পরিকল্পিত অর্থনীতি। একদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন “গণতান্ত্রিক মুক্ত বাজার পরিচালিত বিশ্ব”, অন্যদিকে সোভিয়েতের নেতৃত্বাধীন “একনায়কতন্ত্রী পরিকল্পিত অর্থনীতি”। কিন্তু বাজার তো পুঁজিবাদের একচেটিয়া নয়। দাসব্যবস্থা, বা সামন্ততন্ত্রের যুগেও বাজার ছিল। বাজার তো একটা অস্ত্র মাত্র। কোনও দেশের উৎপাদন ও বণ্টনের মূল সুর কীকরে বাজার হতে পারে?  বাজারের কাজ হল তথ্য সংগ্রহ। কোন জিনিস কতটা উৎপাদন করতে হবে সেই ইঙ্গিত দেওয়া। তবে সমাজতন্ত্রের মধ্যে বাজারকে ব্যবহার করতে বাধা কীসের?

এইসব ক্ষেত্রে যাঁর শরণাপন্ন হতেই হয়, অর্থাৎ কমরেড স্তালিন.. তাঁর মতে সমাজতন্ত্রী ধাঁচের পরিকল্পিত অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য দুটো।

১. সামাজিক চাহিদা অনুসারে সম্পদের বণ্টন, যেটি সমাজতন্ত্রের মূল কথা।

২. প্রথমটি সফল করতে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ, উৎপাদনের নানা শাখার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা।

মনে রাখতে হবে, স্টালিনের কাছে রাষ্ট্র কেবল একটা বাইরের কাঠামো মাত্র নয় (লিবারাল মুক্ত বাজার ধরণের সংজ্ঞায়)। তিনি রাষ্ট্রকে অর্থনীতির ভিত্তিতে ক্রিয়াশীল একটি শক্তি হিসেবে দেখছেন। একজন সর্বোচ্চ মানের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী হিসেবেই রাষ্ট্রের এই দ্বৈত চরিত্রে তাঁর কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। প্রশ্ন হল, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ওপেন আপ এবং রিফর্ম পরবর্তী ক্ষেত্রে কীভাবে প্রথম উদ্দেশ্যটি সাধন করে থাকে? উত্তর: কমিউনিস্ট পার্টির প্রায় ১০ কোটি কর্মীর নিরলস প্রচেষ্টায় শুধু বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থার মধ্যে যোগাযোগ সাধন নয়, রীতিমত স্ট্র্যাটেজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের নির্দিষ্ট দিকে চালানোর মাধ্যমে।

এখানেই কনস্ট্রাক্টিভ মার্কেটের প্রসঙ্গ চলে আসে। ফ্রেডরিক হায়েকের মত দার্শনিকের সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়ে মার্কসবাদীরা মনে করেন, বাজার শূন্য থেকে সৃষ্টি হয় না। নির্দিষ্ট আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে তার সৃষ্টি, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই। অতএব আপাত দৃষ্টিতে মুক্ত বাজারও আসলে মুক্ত নয়। উদাহরণ স্বরূপ, আজ আপনি হঠাৎ কোনও একটা সামগ্রীর ব্যবসা করতে চাইলে স্রেফ লাইসেন্স পেতেই আপনার কালঘাম ছুটে যাবে, অন্যদিকে ধনাঢ্য পুঁজিপতিরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে যথেচ্ছ ঋণ নিয়ে, ভর্তুকি নিয়ে যথেচ্ছাচার করতে পারে। এছাড়া আছে পেটেন্টের প্রশ্ন। মোটকথা, বাজারটি মুক্ত নয়। বিশেষ গোষ্ঠীর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত।

চীনের ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক সেক্টর বলতে সেই উৎপাদন শাখাগুলোর কথা বলা হয় যেগুলো সোজা কথায় সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। জাতীয় প্ল্যানিং এর ভিত্তিতে এনার্জি, কমিউনিকেশন, ফিন্যান্স — এর মত সেক্টরগুলোকে প্রায় সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে রেখে তার মাধ্যমে অন্যান্য সেক্টরের ওপর প্রভাব বিস্তার এর একটি পদ্ধতি। এছাড়া আছে কোনও বিশেষ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শ্রমের প্রয়োজন হলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা, দেশের সার্বিক উন্নতিকল্পে কোনও বিশেষ বাজার সরাসরি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে তৈরি করা, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বৈদ্যুতিন গাড়ি।

এরপর আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আসে।

কেন্দ্রীয় ভাবে সবকিছু জানা গেলে ভালই হত। কিন্তু যতদিন না তা হচ্ছে, ততদিন স্থানীয় সরকারগুলোর থেকে তথ্য সংগ্রহ। স্থানীয় সরকারগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে একদিকে যেমন প্রযুক্তির উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করা যায়, অন্যদিকে কোন প্রদেশ বা শহর কীসে পিছিয়ে তার একটা পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়। এর সঙ্গে যোগ হয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে প্রতিযোগিতা। এটিও একটি জ্ঞান আহরণের প্রক্রিয়া, যেটাকে কেন্দ্রীয়ভাবে এককে অন্যের সাথে সংযুক্ত করা যায়। কোনও প্রাদেশিক সরকার “জিডিপি লক্ষ্য” পূরণ করার জন্য পরিবেশের অতিরিক্ত ক্ষতি করলে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ “সবুজ উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোনোর” হয়ে যেতে পারে। এছাড়া দুর্নীতিগ্রস্ত পার্টি অফিসিয়াল বা সরকারি আমলা, ধনিকদের জন্য মৃত্যুদণ্ড চীনে খুব একটা বিরল নয়। এর শেষ উদাহরণ লি জিয়ানপিং। ইনার মঙ্গোলিয়া অঞ্চলের এই নেতা ব্যাপক দুর্নীতির দায়ে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পান। এটি কার্যকর হয় ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪।

লেনিন ফাইন্যান্স পুঁজিকে ব্যাংক পুঁজি আর শিল্পের পুঁজির ফিউশনে তৈরি হওয়া এক সত্ত্বা হিসেবে দেখেছিলেন। শিল্প বা উৎপাদনের প্রয়োজনে থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে ফাইন্যান্স পুঁজির স্বার্থ। তাই ফাটকা লাভের জন্য ফাইন্যান্স পুঁজির মালিক তাকে বিনিয়োগ করতে পারে। তার উদ্দেশ্য “পুঁজি – পণ্য ক্রয় – উৎপাদন – পণ্য বিক্রি – পুঁজি” এই চক্র নয়। তার উদ্দেশ্য “পুঁজি – পুঁজি” চক্র। উৎপাদনের যে মানবিক প্রয়োজন, সেটা যায় হারিয়ে। উৎপাদনের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়, যেন তেন প্রকারে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিক্রি এবং পুঁজি বাড়ানো।

যে কারণে মার্কিন ফার্মগুলি কেবল নিজেদের শেয়ারের দাম কৃত্রিম উপায়ে বাড়ানোর জন্য নিজেরাই নিজেদের শেয়ার কিনে নিচ্ছে। স্টক এক্সচেঞ্জে এর প্রভাব হবে – “অমুক ফার্মের শেয়ার হুহু করে বিক্রি হচ্ছে, অতএব সবাই তাড়াতাড়ি অমুক ফার্মে লগ্নি করো!” আপনারা যদি দেখেন, চীনের স্টক মার্কেট খুব একটা উত্তেজক জিনিস নয়। ওখানে এই জুয়া খেলার গল্পটা নেই। একদিন কৃত্রিমভাবে কোনও শেয়ারের দাম কমিয়ে প্রচুর কিনে নিয়ে পরেরদিন বেচে দিয়ে প্রভূত অর্থাগমের সম্ভাবনা থাকে না। এর কারণ হল ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর রাষ্ট্রায়ত্ত। আর রাষ্ট্র কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত। এর সুবিধে হল, কোনও সেক্টর হঠাৎ বিরাট লাভ দিতে পারবে না, কিন্তু রাষ্ট্রের ঠিক করে দেওয়া লক্ষ্যে এগোবে — এমন হলে সে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরের সাহায্য পাবে, ঋণ পাবে। এখানে অদূরদর্শিতার প্রশ্ন নেই।

পশ্চিমের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মাথার চুল ছিড়ুন গে — দেশটার ব্যাংকিং সেক্টর নন পারফর্মিং লোন দিয়ে দিয়ে শেষ হয়ে যাবে (অর্থাৎ, সমস্ত সেক্টর যথেষ্ট লাভ তুলে দেবে না, বা কখনও কখনও ঋণের খেলাপও করবে)। তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন এই নন পারফর্মিং লোন জেনে শুনেই দেওয়া হচ্ছে এমন কিছু সেক্টরকে, যেগুলো জাতীয় উন্নতিকল্পে পার্টি নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম ফলো করছে। তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন এক্ষেত্রে প্রতিটি উৎপাদনশীল সেক্টর ব্যাংকিং সেক্টরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, কমিউনিস্ট পার্টির মাধ্যমে এবং প্রতিটি ব্যক্তি মালিকানাধীন সেক্টর যাদের ওপর নির্ভরশীল, অর্থাৎ এনার্জি, কমিউনিকেশন ও ফাইন্যান্স, সেইগুলোর মাধ্যমে তাদের উপর পার্টির নিয়ন্ত্রণ রাখা চলে।

এখানেই পার্টি মিশে আছে সমস্ত অর্থনীতির মধ্যে।

আমরা শিখেছি যেকোনো বস্তুর মূল্য তার উৎপাদনে প্রযুক্ত সামাজিকভাবে প্রয়োজনীয় গড় শ্রমের সমান। ছোট থেকে আমরা যে চাহিদা আর যোগানের কথা শুনে এসেছি, সেগুলো এই মূল্যের ওপর একটা ভ্যারিয়েশন মাত্র। এখন সব জিনিসের ব্যবহারিক মূল্য তার এক্সচেঞ্জ মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন জলের ব্যবহারিক মূল্য বিশাল, কিন্তু জল প্রায় বিনামূল্যে পাওয়া যায়। আবার বেশ কিছু মূল্যবান (এক্সচেঞ্জ) ধাতুর ব্যবহারিক মূল্য প্রায় নেই বললেই চলে। সমাজতন্ত্রী পার্টির কাজ হল সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে উচ্চ ব্যবহারিক মূল্যযুক্ত বস্তুর উৎপাদন বাড়ানো। আবার বাজার পরিচালনার ক্ষেত্রে একইভাবে বিভিন্ন সংস্থার এক্সচেঞ্জ মূল্য সংক্রান্ত উদ্দেশ্যগুলো অব্যাহত রাখা।

আমাদেরও একটি রাষ্ট্র আছে। সে রাষ্ট্র অনায়াসে বিরাট অরণ্যভূমি আদানির হাতে তুলে দেয়। আদানি নিজের দমে সেই ভূমি দখল করে না। রাষ্ট্র তার পাহারাওয়ালা পাঠিয়ে সেই ব্যবস্থা করে। একের হয়ে রাষ্ট্র লড়ে হাজার, লক্ষের বিরুদ্ধে।

এ লড়াই ওল্টানো যায়। কমন প্রস্পারিটি! সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়া কথাটাকে ভুলিয়ে দিয়েছে প্রায়। জিরো সাম এপ্রোচে চলছে, অথচ অসীম উৎপাদন ক্ষমতার বাসনা। এর চেয়ে বড় দ্বন্দ্ব আর কী হয়?

আবারও। কমন প্রসপারিটি।

একটা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দাঁড়িয়ে করোনা অতিমারীর বছরে (২০২০) একটা পুঁজিপতি প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ টাকা করে তার সম্পত্তিতে (নেট ওয়ার্থ) যোগ করেছে, অথচ মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ মরেছে বিনা চিকিৎসায়, অর্ধাহারে, অনাহারে, রাস্তায়। দেশের জিডিপি গ্রোথ নেমে গেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধি অ্যাডজাস্ট করে দেখলে জিডিপি নেমে গেছিল প্রায় ৭ শতাংশ। তাহলে ঐ লোকটার সম্পত্তি এত বাড়ল কীকরে?

কেন ব্যাংকে অনাদায়ী ঋণ থাকলেও স্রেফ বিজেপিতে যোগ দিলে সেটি রাতারাতি মাফ হয়ে যাবে?

কয়েকটা ভূত আমাদের ঘাড়ে চেপে বসে আছে। তারা আমাদের উপরে উঠতে কিংবা সামনে এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না। কেন আমাদের দেশের লোক দৈনিক গড় ৬০ গ্রাম প্রোটিন খাবে? চীনে সেই পরিসংখ্যান দ্বিগুণেরও বেশি হয় কী করে?

আমাদের দেশের উপর যে ভূতটা চেপে বসেছে, তাকে ঝেড়ে ফেলা যায়।

মনে রাখার বিষয় হল, সে ওঝার নাম দেশের জনসাধারণ, আর কেউ নয়।

তথ্যসুত্রঃ

১। উইকিপিডিয়া

২। লোকাল ফ্লাওয়ার্স ব্লুম, মাইকেল হাডসন

৩। সোশ্যালিজম উইদ চাইনিজ ক্যারেকটারিস্টিক্স, রোলাণ্ড বয়ের

৪। Industrial Policy with Chinese Characteristics: The Political Economy of China’s Intermediary Institutions, MENG JIE AND ZHANG ZIBIN, Tricontinental

Spread the word

Leave a Reply