১৪ই মার্চ, ১৮৮৩ সালে আজকের দিনে মানবমুক্তির লক্ষ্যে আজীবন বিপ্লবী, মহান দার্শনিক কার্ল হাইনরিখ মার্কসের মৃত্যু হয়। সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ওয়েবসাইট আজকের দিনে শেষযাত্রায় তার সহযোদ্ধা ফ্রেডেরিখ এঙ্গেলসের বক্তৃতার কয়েকটি ছোট অংশের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করছে।
এঙ্গেলসের সেই বক্তব্যেই স্পষ্ট কার্ল মার্কস কেন চিরস্মরণীয় ব্যাক্তিত্ব।
এঙ্গেলসের বক্তব্যের ইংরেজি প্রতিলিপির বাংলা অনুবাদ ওয়েবডেস্কের নিজস্ব
“১৪ই মার্চ দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ এই যুগের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ চিরকালের মতো নিজের চিন্তন থামিয়ে দিয়েছেন। দুপুরে মিনিট দুয়েকের জন্য তাকে ঘরে একলা রেখে আমরা বাইরে যাই, ফিরে এসে দেখি তিনি তার আরামকেদারায় ঘুমিয়ে পড়েছেন – তবে চিরকালের জন্য”।
“মার্কস নিজেকে বিপ্লবী হিসাবে পরিচয় দিতেন, তিনি বাস্তবিক তাই ছিলেন। বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মজুরি-শ্রমিকদের শ্রেণীসংগ্রামের বিকাশ ঘটানোই ছিল তার সমস্ত কাজের প্রাণকেন্দ্র। বিপ্লবের কাজে তার মতো সক্রিয় সৈনিক কেউ কখনো দেখেনি। বিপ্লবের লক্ষ্যে তার যাবতীয় কর্মসূচির মধ্যে সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হল শ্রমজীবীদের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা করা, ১৮৬৪ – ৭২ অবধি মার্কস নিজে সেই সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন”।
“কার্ল মার্কসের মতো আলোকোজ্জ্বল ব্যাক্তিত্ব একটি শতাব্দীতে খুব বেশি গড়ে ওঠে না। চার্লস ডারউইন পৃথিবীতে জীবজগতের বিকাশের ইতিহাস আবিষ্কার করেছিলেন। মানুষের ইতিহাস কিভাবে সামনে এগোয়, কোন পথে বিকশিত হয় সেই আবিষ্কার মার্কসের। তার আবিষ্কার এমন একটি স্বতঃসিদ্ধ যা শুরু থেকেই নিজের জোরে সারা দুনিয়া জূড়ে সমর্থন আদায় করেছে। এখানেই শেষ নয়, বর্তমান মানব সমাজে কিভাবে পুঁজিবাদী এবং মজুরি-শ্রমিক এই দুই শ্রেণী গড়ে উঠেছে তাও মার্কসেরই আবিষ্কার। কিভাবে মানব সমাজ গড়ে ওঠে, বিকাশের বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে সেই সমাজ কিভাবে বর্তমানে এমন অবস্থায় উপনীত হয় যাতে ইতিহাসের অন্যান্য সকল ব্যবস্থার মতোই আজকের ব্যাবস্থাটিও একদিন ধ্বংস হবে বলে নিশ্চিত হওয়া যায় – এসবই কার্ল মার্কস আবিষ্কার করে গেছেন। অসাধারণ গবেষণাসমূহের মাঝেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, যা আরও বেশি পীড়া দেয় তা হল এই যে, এখনও তার এমন অনেক কাজই অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে”।
“একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগোনোর কাজে এমন কেউ নেই যিনি অজাতশত্রু। মার্কস এমনই কতিপয় শত্রুকে পৃথিবীতে ছেড়ে গেলেন। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তাকে ইউরোপের এমন একজনে পরিণত করেছে যার নামে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা এবং কুৎসা প্রচার করা হয়েছে। কদাচিৎ কখনো কেউ তার নামে অপবাদ দেবার সাহস দেখিয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে সেইসব অপবাদের সম্মুখে তিনি দেখে গেছেন পৃথিবী জূড়ে তাঁর লক্ষ লক্ষ সমর্থকদের – সাইবেরিয়ার খনি থেকে ইউরোপ এবং আমেরিকার কারখানা অবধি যাদের বিস্তৃতি, ব্যাপ্তি। তিনি নিশ্চিত হয়েছেন পৃথিবীজূড়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর আবিষ্কৃত অর্থনৈতিক তত্ত্বই হবে বুনিয়াদি শক্তি। অত্যন্ত জোর দিয়েই বলা যায় তার মতের বিরোধী অনেকেই ছিলেন কিন্তু তার ব্যাক্তিগত শত্রু একজনও নেই”।
ওয়েবডেস্কের পক্ষে অনুবাদঃ সৌভিক ঘোষ