21 Days of Lockdown to Curb Corona but The Fear of Famine Looms Large

গোটা দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬০০ অতিক্রম করে গেছে। গতকালের সাথে যুক্ত হয়েছে আরো ৬০ জনের বেশি নতুন আক্রান্ত। ২৪ তারিখ রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেন ২৫ মার্চ মধ্য রাত থেকে টানা ২১ দিন গোটা দেশ জুড়ে চলবে লকডাউন । ‘করোনা’ ঠেকাতে এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিল নিঃসন্দেহে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যে এর জন্য দেশের অধিকাংশ মানুষের নিত্যদিনের ন্যূনতম বেঁচে থাকার রসদের জোগান হবে কোথা থেকে। রবিবার থেকেই কমবেশি দেশের অধিকাংশ রাজ্যের বেশিরভাগ জেলায় পূর্ণ বা আংশিক লকডাউন লাগু হয়েছিল।

PLFS (Periodic Labour Force Survey) 2017-18 রিপোর্ট অনুসারে এদেশের মোট কর্মক্ষেত্রে যুক্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭.২ কোটি। আজীম প্রেমজী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালে করা একটি নিরীক্ষা অনুসারে দেশের মোট শ্রমশক্তি ৪৬.৫ কোটি। ভারত সরকারের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে আইএলও বা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাব অনুসারে ২০১৮ সালে ভারতের মোট শ্রমশক্তির ৪৩.৯% যুক্ত ছিল কৃষিক্ষেত্রের সাথে – সংখ্যার হিসাবে ২০.৪ কোটি মানুষ। বাকি ২৬.১ কোটি মানুষ যুক্ত কৃষি বহির্ভূত কাজে । এই দেশ জোড়া লকডাউনের মধ্যেই দুর্ভিক্ষের অশনিসঙ্কেত নেই তো কোথাও ?

. গ্রাম ভারত কৃষিক্ষেত্রে যুক্ত মানুষদের মধ্যে ৯.২ কোটি ছোট বা মাঝারি চাষী আর বাদবাকিরা মানে ১১.২ কোটি মানুষ ভূমিহীন ক্ষেতমজুর । এই বিপুল ভূমিহীন ক্ষেতমজুরেরা লকডাউনে কিভাবে কাজ পাবেন জানা নেই ? মনরেগার কাজ আদৌ হবে কিনা বা হলেও তাঁরা নিয়মতি টাকা পাবেন কিনা জানা নেই। টাকা না পেলে তাদের ও তাদের পরিবারের রোজকার আহার্য কিভাবে জোগাড় হবে? জমি থাকা ৯.২ কোটি মানুষের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ স্কীম বা ফসল বীমাা যোজনার টাকা কী আদৌ পৌঁছাবে ?

. শহর ভারত – গ্রাম বাদ দিলে অন্যরা যুক্ত উৎপাদন শিল্প বা পরিষেবার (Service Sector)এর সাথে। PLFS এর রিপোর্টের ভিত্তিতে যেখা যাচ্ছে যে গোটা দেশের শ্রমশক্তির ২২.৮% বেতনভোগী কর্মচারী (স্থায়ী বা অস্থায়ী), ২৪.৯% ঠিকা কর্মচারী আর বাদবাকি ৫২.৩% কোন না কোনভাবে স্বনির্ভর। ২০১৮-২০১৯ এর অর্থনৈতিক সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে এদেশের শ্রমজীবীর মধ্যে অসংগঠিত ক্ষেত্রেই কর্মরত ৯৩ শতাংশ। এই হিসাবের নিরিখে অ-কৃষি কাজের সাথে যুক্ত অসংগঠিতক্ষেত্রের মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪.২৬ কোটি মানুষ। এদের মধ্যেকার বিন্যাসাটা কেমন ?

ক) স্বনিযুক্ত পেশাদাররা যেমন ডাক্তার, চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট, নিজস্ব ছোট বড় সংস্থায় যুক্ত প্রযুক্তিবিদ , আইনজীবী এবং অন্যান্য একটা বড় অংশ

খ) নিয়মিত মজুরিতে নিযুক্ত মানুষরা

গ) দৈনিক মজুরিতে নিযুক্ত মানুষরা

শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে এই ‘ক’ বর্গভুক্ত অংশটি থেকে উচ্চশিক্ষিত পেশাদার অংশটি বাদ দিলে স্বনিযুক্ত যারা থাকেন তারা কারা ? ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, মুচি, দর্জি, নাপিত, নির্মাণ শ্রমিক, ভ্যান চালক, ঠেলা চালক, মালবাহক, অটো-রিক্সা-ওলা-উবের চালক যাদের মাথার ওপরে আছে ইএমআই এর বোঝা, সুইগী-জোমাটো-ফুড পান্ডার খাবার ডেলিভারির সাথে যুক্ত মানুষেরা এছাড়াও অনেক মানুষ। জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের ভূতপূর্ব চেয়ারম্যান পিসি মোহাননের মতে শহরের স্বনিযুক্ত শ্রমশক্তির এই বিপুল অংশের মধ্যে কমবেশি ৫ কোটি মানুষের সেই অর্থে কোন সামাজিক সুরক্ষা নেই। শহরের অসংগঠিত ক্ষেত্রের মধ্যে স্বনিযুক্ত শ্রমশক্তির পরিমাণ, পরিসংখ্যান অনুসারে, ৯.১৪ কোটি যার মধ্যে ৫ কোটি স্বাভাবিক পরিস্থিতেই খুব অনিশ্চয়তায় থাকেন । ২৪.২৬ কোটির থেকে এই ৯.১৪ কোটি বাদ দিলে থাকেন ১৫.১২ কোটি মানুষ। এরা কারা ?

এরা হলেন নিয়মিত মজুরিতে ও দৈনিক মজুরিতে নিযুক্ত মানুষরা। এরা হলেন এই লকডাউনে শহরে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত অংশ। ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার নিরিখে এই অংশের মানুষদের নিয়মিত মজুরি কমছিল , বাড়ছিল কাজের অনিশ্চয়তা তার মধ্যে ‘করোনা’র জন্য দেশব্যাপী লকডাউন এদের ঠেলে দিল এক ভয়াবহ সঙ্কটের দিকে। সমস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদ্যোগগুলো ২১ দিনের জন্য বন্ধ হওয়া মানে এদের ভয়াবহ সঙ্কট।

গ্রাম ও শহরের শুধুমাত্র অসংগঠিত ক্ষেত্র যুক্ত করলে বিপন্ন শ্রমজীবি মানুষের সংখ্যা ৩০.৮৩ কোটি ! এদের মধ্যে আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিকরা সামগ্রিকভাবেই সবথেকে বিপন্ন। ২০১৬-১৭ এর আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্টের সাথে ভারতীয় রেলের হিসাব মিলিয়ে একটা পরিসংখ্যান অনুযায়ী আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৯.৫ কোটি। বিভিন্ন বৈদ্যতিন সংবাদ মাধ্যমের ফুটেজে ইতিমধ্যেই ধরা পরেছে কী ভয়াবহ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্য থেকে এই শ্রমিকদের ট্রেনে করে নিজেদের রাজ্যে ফিরছে হয়েছে। এদের মধ্যে ‘করোনা’ সংক্রমণের আশঙ্কাও সে কারণে অনেক এপিডেমিওলজিস্ট ও ভাইরোলজিস্টরা করছেন। এদের না আছে উপযুক্ত পুষ্টি না আছে যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য । আয়কর ফাইলের হিসাব দেখলেও দেখা যাবে ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৫% (পারিবারিক মাসিক রোজগার ২০০০০ বা তার বেশি) বাদ দিলে ৮৫% মানুষের কোন ধরণের আর্থিক নিরাপত্তা নেই ।

এই পরিস্থিতিতে দুর্ভিক্ষই না মহামারির আকার ধারণ করে সেটাও একটা চিন্তার বিষয়। এফসিআই এর গুদামে ৪৩৫ লক্ষ টন উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য রয়েছে যার মধ্যে ২৭২.১৯ লক্ষ টন ধান , ও ১৬২.৭৯ লক্ষ টন গম। অবিলম্বে এই উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য বিপন্ন মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কেন্দ্রের সরকারকে অবিলম্বে এই শ্রমজীবী মানুষদের হাতে কিছু অর্থ সাহায্য (এককালীন ন্যূনতম ৫০০০ টাকা ) তুলে দিতে হবে।

খাদ্যসঙ্কটের পরিস্থিতি দুইভাবে হতে পারে –

১. রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাবার কেনার প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকা
২. দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে এই মানুষগুলো অবধি খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পরা।

সর্বশেষ সবথেকে প্রামান্য যে তথ্য আমাদের আছে তা হল ২০১১ এর জনগণনার হিসাব। এমনকি ৯ বছর আগেও আমাদের দেশে ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ৪৭.৪১ কোটি মানুষ কোথাও না কোথাও কাজ করে আয় করে থাকেন। তাঁদের মধ্যে ৩৩.৬৯ কোটি কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজ করেন। এই ৩৩.৬৯ কোটির মধ্যে আবার ১১ কোটির একটু বেশি বাঁচেন দৈনন্দিন আয়ের ভরসায়। এক দিনের আয়েই যাঁদের পেট ভরে না, তাঁরা ২১ দিন আয় না-করে বাঁচবেন কী ভাবে? আমরা জানি না।

কেরালা সহ একাধিক রাজ্যের সরকার সরাসরি বাড়ি বাড়ি প্রয়োজনীয় আহার্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেও কেন্দ্রের সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে এই ২১ দিনের লকডাউন কিছুদিনের মধ্যেই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে।




Spread the word

Leave a Reply