Manifesto 175 Cover

175 Year of Communist Manifesto: The Legacy

প্রকাশ কারাত

সভাপতি কমরেড বিমান বসু, কমরেড মহম্মদ সেলিম, সূর্যকান্ত মিশ্র সহ পলিটব্যুরোর অন্যান্য সদস্যরা, মঞ্চে উপবিষ্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ, কমরেড ও বন্ধুগন।

Communist Manifesto

দুটি ঘটনাকে ‌স্মরণ করতে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি।‌ প্রথম, কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে। ১০৩ বছর আগে তাসখণ্ডে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। দ্বিতীয়টি ১৭৫ বছর আগে মার্কস ও এঙ্গেলসে্র লেখা কমিউনিস্ট ইশতেহার প্রকাশ। এই দুটি ঘটনা নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। কমিউনিস্ট ইশতেহার প্রথম প্রকাশ্য একটি ঘোষণাপত্র, কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্ত কিছুই এই ছোট বইটি থেকে শুরু হয়েছে। যখন মার্কস ও এঙ্গেলস এই বই লিখেছেন তাদের দুজনের বয়সই ছিল তিরিশের নীচে। কমিউনিস্ট লীগের পক্ষে এই বই লেখা হয়েছিল, তা ছিল জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির শুরু হলেও পরবর্তীতে অন্য দেশের শ্রমিকদেরও যুক্ত করা হয়, ক্রমে জন্ম হয় প্রথম আন্তর্জাতিক।‌ কমিউনিস্ট ইশতেহার প্রকাশকে বাদ দিয়ে পৃথিবী জুড়ে কমিউনিস্ট আন্দোলনের জন্ম ও বিকাশকে বোঝা যায় না। সে কারণে ১৯২০ সালে সদ্যবিপ্লব-সমাপ্ত রাশিয়ায় এম.এন. রায়ের নেতৃত্বে, যিনি তখন সদ্য দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন, কিছু ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ যারা তাসখণ্ডে পৌঁছে যান,‌ তাঁদের সহযোগিতায় রাশিয়া থেকে প্রেরণা নিয়ে নিজেদের দেশের স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে কমিউনিস্ট পার্টি। এবং কমিউনিস্ট ইশতেহার এই গোটা সময়পর্বে আন্তর্জাতিক শ্রমিক রাজনীতির ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছে। যে ছোট শাখাটি তৈরি হয়েছিল, তা নিজেকে এই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সংযুক্ত অংশ হিসেবে দেখতে শুরু করে। প্রেরণা জুগিয়েছে সেই সমস্ত মানুষের সাহচর্য যারা দেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। কমিউনিস্ট ইশতেহার এই গোটা বিষয়টির বোঝাপড়াকে স্বচ্ছ করেছে: যে পুঁজিবাদ একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা,  এবং শ্রমিকদের এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি বিশ্বব্যাপী সংহতিরই প্রয়োজন। কমিউনিস্ট ইশতেহারে ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বিবৃত করা হয়েছে, সহজভাবে ইতিহাস সম্নন্ধে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বলা হয়েছে এখানে। এবং এখন পর্যন্ত সমস্ত মানবসভ্যতার ইতিহাস যে শ্রেণীসংগ্রামের, সেই  সত্য এখানে জানানো হয়েছে। এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বুর্জোয়া শ্রেণী কিভাবে উদ্বৃত্ত মূল্য আত্মসাৎ করবার মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণীকে শোষণ করে। ইশতেহার আগে থাকতে বুঝতে পেরেছিল যে পুঁজিবাদ বিশ্বব্যাপী একটি প্রক্রিয়ায় পরিণত হতে যাচ্ছে। বুর্জোয়া শ্রেণীও একথা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে মার্কস বিশ্বায়নের আন্দাজ পেয়েছিলেন সেই উনিশ শতকেই। ইশতেহার জানিয়েছিল: The need for the constantly expanding markets for it’s products chases the bourgeoisie over the whole surface of the globe. It must settle everywhere, set up connection everywhere. অর্থাৎ বুর্জোয়া শ্রেণী বাজার প্রতিষ্ঠার জন্য, এবং লগ্নির জন্য সারা পৃথিবীতে ছুটে বেড়ায়। কিন্তু ইশতেহার(১৮৪৮) পুঁজিবাদের সম্পূর্ণ কার্যকলাপ বিবৃত করেনি, যা পরবর্তীতে ‘পুঁজি'(১৮৬৭) গ্রন্থে মার্কস পূর্ণাঙ্গভাবে আলোচনা করেছেন, সেখানে আমরা পুঁজিবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতির একটি স্বচ্ছ রূপ পেতে পারি। লেনিন পরবর্তীতে মার্কসের চিন্তার উপরে ভর করে নতুন পর্যায়ে একচেটিয়া পুঁজিবাদের বিকাশ পর্যবেক্ষণ করেন, যা মরণোন্মুখ সাম্রাজ্যবাদের সাথে যুক্ত। এর ভিতর দিয়ে মার্কসীয় চিন্তা পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যে নতুন যুগে পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্বব্যাপী একটি ব্যবস্থা। এবং তা ঔপনিবেশিক শাসন পৃথিবীর নানান প্রান্তে প্রতিষ্ঠা করেছে, যা পুঁজিবাদের চক্রে সংযুক্ত নানান শক্তি কিভাবে পারস্পরিক সহযোগিতায় লিপ্ত তা প্রমাণ করে। লেনিন জানিয়েছেন যে সাম্রাজ্যবাদ কেবলমাত্র উন্নত দেশগুলোতে উপস্থিত নয়, উপনিবেশ ও আধা-উপনিবেশগুলিতেও সাম্রাজ্যবাদ কার্যকর, বিশাল সংখ্যায় মানুষ, বিশেষ করে কৃষিজীবী মানুষ এই ব্যবস্থার দ্বারা শোষিত হন। শোষণই এক অর্থে উন্নত দেশের শ্রমিক ও উপনিবেশের কৃষকদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। কিন্তু আজ এই আলোচনা আমরা করছি কেন? কারণ আমরা এখানে মিলিত হয়েছি এমন একটি সময়ে যখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আরো একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইজরায়েল, যা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের দ্বারা পৃষ্ঠপোষিত, গাজায় বলপূর্বক অনুপ্রবেশ করছে। গাজা এবং পশ্চিম ব্যঙ্ক অঞ্চল এখন দখলীকৃত প্যালেস্তাইনের  অংশ।

আমরা এমন ঘটনা ইতোপূর্বে বিংশ শতাব্দীতে ঔপনিবেশিক শাসনে দেখেছি, যেখানে জমি দখল করে, নিজেদের ব্যবস্থা চাপিয়ে, শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে লুট এবং সম্পদের বহির্নিগমনকে ত্বরান্বিত করা হয়েছিল। সেই ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী পর্ব কমবেশি শেষ হয়ে গেছে গত শতকেই। কিন্তু এখনো একটা উপনিবেশ আছে ভূতপূর্ব সময়ের, প্যালেস্তাইন। যে শক্তি প্যালেস্তাইন দখল করে মানুষকে ঔপনিবেশিক শাসনে বদ্ধ করেছিল, তা ইজরায়েল। একথা বলা যায় যে ইজরায়েল সেই অর্থে ধ্রুপদী সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী, যেভাবে আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স বা ব্রিটেন সাম্রাজ্যবাদী, সেই অর্থে ইজরায়েল নয়। কিন্তু ইজরায়েল সাম্রাজ্যবাদের কার্যকারিতার পরিপ্রেক্ষিতে জন্ম নেওয়া একটি শক্তি। ঐতিহাসিকভাবে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের অতীত না বুঝলে বর্তমানে সেখানে কী ঘটছে তা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। সেকারণেই আমি কমিউনিস্ট ইশতেহারে পুঁজিবাদের ধারণা হয়ে লেনিনের সাম্রাজ্যবাদের ধারণা এখানে উল্লেখ করছি একথাই বলতে যে বর্তমানেও সাম্রাজ্যবাদের কার্যকারিতা আছে, আমরা গাজায় যা দেখছি বা দেখব তা আরেকটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ যা সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা শুরু করা হয়েছে। আগে আমরা দেখেছি ইরাক ও লিবিয়াকে সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস করেছে। দেখেছি আফগানিস্তানে সাম্রাজ্যবাদের অনুপ্রবেশের ফলাফল। এশিয়ার পশ্চিমে, যাকে ব্রিটিশরা মিডল ইস্ট বলে চিহ্নিত করে, সেখানে ১৯৪৮ থেকে এই কাজ চলছে। ১৯৪৮ থেকে প্যালেস্তাইন ব্রিটেনের প্রোটেক্টেরেট, তার আগে তা ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে গোটা মিডল ইস্টকে সাম্রাজ্যবাদী শিবির নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। প্যালেস্তাইন গেছিল ব্রিটেনের দখলে। এখন ইউরোপীয় ইহুদিদের সম্পর্কে সম্ভবত আমরা সকলেই জানি। তাঁরা বছরের পর বছর ধরে কেবল ইহুদি বলেই বঞ্চিত হয়েছেন, খ্রীষ্টান ও ইহুদিদের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্কের কারণ। ইহুদিদের মধ্যে একারণে মাতৃভূমির দাবি তৈরি হয়, বহুদিন ধরে তারা মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন। সমস্ত ইউরোপীয় রাজতন্ত্র ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব পোষণ করতেন। সেখান থেকে বাইবেলীয় সময়ে থাকা মাতৃভূমিতে ফিরবার ধারণা তৈরি হয়। প্যালেস্তাইন সেই পরিসর, সেখানে বহু শতাব্দী আগে ইহুদিরা থাকতেন বলে বিশ্বাস করা হয়। মাতৃভূমির দাবি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা সমর্থিত হয়। ১৯১৯ সালে এক ঘোষণাপত্র মারফৎ ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারি ইহুদিদের মাতৃভূমির দাবিকে সমর্থন জানায়। এর পরের ঘটনা পরম্পরা, গণহত্যা, নাৎসী কর্তৃক ইহুদিনিধন, এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হলোকস্টের বীভৎসতার দায় নিয়ে  বেশিরভাগ ইউরোপীয় শক্তি ইহুদিদের মাতৃভূমির দাবিকে মেনে নেন, যে তারা প্যালেস্টাইনে থাকবেন। অবশ্যই প্যালেস্টাইনের আদি বাসিন্দারা যে আগে থেকেই সেখানে ছিলেন তা ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয়নি। ইহুদিরা সারা পৃথিবী থেকে মাইগ্রেট করে প্যালেস্টাইনে পৌঁছান, আদি বাসিন্দারা তাদের দ্বারা আক্রান্ত হন, এবং ১৯৪৮ শে সদ্যগঠিত ইউনাইটেড নেশনস্ ঘোষণা করে যে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইন দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে।

কিন্তু কী ঘটল? অস্ত্রে শক্তিশালী ও পশ্চিমা সাহায্যপ্রাপ্ত ইজরায়েল কর্তৃক প্যালেস্টাইনের মানুষকে ভয়ঙ্কর আক্রমণের মুখে পড়তে হয়, আজ থেকে ৭৫বছর আগে, একে তারা লাখুয়া বলে চিহ্নিত করেন, তাদের কার্যত প্যালেস্তাইন থেকে বিতাড়িত করা হয়। এখন তাহলে প্যালেস্তাইন-নিবাসীরা কোথায়? তাঁরা আদপেই প্যালেস্টাইনে নেই, কেউ পশ্চিম উপকূলে যা তৎকালীন জর্ডনের অংশ ছিল, সেখানে সরে গেছেন, কেউ গাজায়, যা মিশরের অংশ ছিল, অটোমান সাম্রাজ্যেরও।। বেশী মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন। বহু মানুষ দখলীকৃত পরিসরের বাইরে যেতে বাধ্য হন, যেমন লেবাননে গত ষাট বছর ধরে উদ্বাস্তু কলোনী করে মানুষ ছিলেন। গাজায় যারা আছেন তারা সকলেই প্যালেস্তাইন থেকে স্থানচ্যুত আদি বাসিন্দারা। এমনকি গাজা আজকেও একটি বিশাল উদ্বাস্তু অধ্যুশিত পরিসর। ৭৫ বছর বাদে প্যালেস্টাইনের মানুষ বলছেন যে তাঁরা আবার একটি ভয়াবহতার শিকার হচ্ছেন। এর পিছনে ষড়যন্ত্রটা কোথায়? মিশরকে বলা হচ্ছে যে গাজা ও মিশরের মাঝে রাফা ক্রসিং খুলে দিতে, এবং মিশরকে বলা হচ্ছে গাজার এই মানুষদের থাকতে দিতে, যেভাবে তাদের লেবানন বা জর্ডনে পাঠানো হয়। উদ্দেশ্য তারা গাজা দখল করবেন। সেটাই আজকের মূল উপজীব্য। ইজরায়েলের এখন দ্বিবিধ উদ্দেশ্য:  প্রথম, একটা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করে দেওয়া, এবং তার পিছনে এলাকা ফাঁকা করা। কারণ হামাসদের সরানো কঠিন, তা গাজার এলাকায় একমাত্র নির্বাচিত সংগঠন, ২০০৭-০৯ এর পর যদিও আর নির্বাচন হয়নি।  তাই গত ৭ই অক্টোবর থেকে যা চলছে, এই সীমান্ত পেরিয়ে অস্ত্রধারীদের অনুপ্রবেশ, এবং জনগণের উপর আক্রমণ যার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই ১৫০০র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, তাকে বলা হচ্ছে গাজার উপর গৃহীত প্রতিশোধ।

কিন্তু গাজা আসলে কী? ২০০৫ সালে ইজরায়েলের সৈন্যবাহিনী গাজা ফাঁকা করে দিয়েছিল। দখল করার বদলে একটা পকেট তৈরি করা হয়। গাজা সেই ছোট্ট জায়গাটা, মাত্র ১৪১ বর্গমাইল এলাকা, যেখানে ২.৩ মিলিয়ন মানুষ বাস করেন। মাত্র দুটো সীমান্ত আছে, একটা ইজরায়েল দখল করে রেখেছে, আরেকটা মিশরের সঙ্গে লাগোয়া রাফা ক্রসিং। সেই সীমান্তও ইজরায়েল আর মিশরের যৌথতায় পরিচালিত, তা খোলা হবে না ইজরায়েলের অনুমতি ছাড়া। তাই এই ২.৩ মিলিয়ন মানুষের জল, বিদ্যুৎ, খাদ্য, তাদের চলাচল – সমস্ত অস্তিত্ব ইজরায়েলের দ্বারা পরিচালিত গত ১৬ বছর (২০০৭-২৩) ধরে। স্বভাবতই, তারা বিদ্রোহ করছেন এই জেলবন্দি জীবন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য। তাঁরা ইজরায়েলের রকেট হামলা করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু প্রতিটি চেষ্টার বিরুদ্ধে ইজরায়েল বোমাবর্ষণ করে প্রত্যুত্তর দিয়েছে, আকাশ থেকে, জলপথে, এবং ফলশ্রুতিতে শতশত প্যালেস্টাইনিয়ান মারা গেছেন। ইজরায়েলের বক্তব্য যে তোমরা জেলে আছ, ঠিকমত ব্যবহার করলে সামান্য খাদ্য, স্বাস্থ্য পরিসেবা, ইত্যাদি দেওয়া হবে। কিন্তু প্রতিবাদ করলে আক্রমণ! গাজার যুবকরা হামাসের নেতৃত্বে যে আক্রমণ করেছে তা ইজরায়েল আন্দাজ করতে পারেনি। তাঁরা ভেবেছিল আমাদের আধুনিকতম সৈন্যবাহিনী এবং স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত নজরদারি ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তার পরেও গাজার বাসিন্দারা এই আক্রমণ করেছে। এখন ইজরায়েল একটি চরম দক্ষিণ সরকার দ্বারা পরিচালিত। অদ্ভুতভাবে যারা নাৎসি ফ্যাসিস্টদের হাতে সর্বাধিক বেশি আক্রান্ত হয়েছেন, তারাই এখন ফ্যাসিস্টদের মত আচরণ করছেন। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার ধর্মোন্মাদ চরমপন্থীদের দ্বারা পরিচালিত, যারা বলছেন আমাদের পবিত্র ভূমিতে অন্য কেউ থাকবেনা। থাকলে দাসত্ব করে থাকবে। গাজার এই অবস্থার পাশাপাশি পশ্চিম উপকূল দুটি কনক্লেভে ভাগ করে অচেনা একটি জায়গায় পরিণত করা হয়েছে। এবং কাঁটাতারে ভাগ করে সেখানে ৯ ফুট উঁচু দেয়াল পশ্চিম উপকূল ও ইজরায়েলের মাঝে তোলা হয়েছে। একে বলা হচ্ছে অ্যাপারথেড ওয়াল। পাশাপাশি বানানো হয়েছে অ্যাপারথেড রাস্তা, এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম উপকূলের কেউ ইজরায়েলের অনুমতি ছাড়া ইচ্ছেমত যাতায়াত করতে পারবেন না। পাশাপাশি, পাঁচ লক্ষ চরমপন্থীকে অস্ত্র দিয়ে পশ্চিম উপকূলে পাঠানো হয়েছে যাতে মাতৃভূমির উপর পুরোদস্তুর অধিকার কায়েম করা যায়, জমি ও বাড়ি দখল করে নেওয়া যায়। এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। প্যালেস্টিনিয়ানদের সামনে কোনো পথ নেই, পিছনে দেওয়াল। তাঁদের বাঁচার জন্যই লড়তে হচ্ছে, আর লড়তে গিয়ে মৃত্যু। পশ্চিম উপকূলে ২৪৮ জন প্যালেস্টিনিয়ানকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ইজরায়েলি সৈন্য এবং এই সশস্ত্র চরমপন্থীদের দ্বারা। তাই, বিংশ শতাব্দীর ফেলে রাখা কাজটা শেষ করা হচ্ছে। একটি মাত্র কলোনী ছিল যা স্বাধীনতা পায়নি, সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দখল করে রাখা জায়গা।

যখন ইজরায়েল তৈরি হচ্ছিল, সোভিয়েত ছিল, সমাজতান্ত্রিক শিবির ছিল, এবং বিশ্বজোড়া জাতীয় মুক্তি আন্দোলন গতি পাচ্ছিল। আরবি জাতীয়তাবাদও এই সময়েই তৈরি হয়। এঁরা ধর্মনিরপেক্ষ। আমেরিকার আসলে এই অঞ্চলের জন্য পুলিশ নিয়োগের দরকার ছিল। এইখানেই ইজরায়েলের সাথে আমেরিকার অশুভ আঁতাত নিহিত আছে। আমেরিকা এই নতুন রাষ্ট্রকে পিছন থেকে সাহায্য করবে, অস্ত্র জোগাবে, সমস্ত বস্তুগত সাহায্য দেবে, পরিবর্তে ইজরায়েলের কাজ যাতে কোনো আরবি প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি এগোতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। সেই প্রক্রিয়া চলেছে, এবং এই আক্রমণের পর এখন দেখা যাচ্ছে কিভাবে আমেরিকা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। দুটি আকাশযান, হাজার দু’য়েক মিলিটারি ট্রুপ তৈরি রাখা হয়েছে, যাতে প্রয়োজন পড়লেই তারা সাহায্য করতে পারে। আর বাইডেন নিজেই সমর্থন জানাতে যাচ্ছেন। তাই তারা যখন হামাসের জঙ্গী কার্যকলাপের বিরোধীতা করেন, তিনি গাজায় ঘটা ইজরায়েলি আক্রমণ নিয়ে মৌন থাকেন। তিনি বলেন না কিভাবে 2800 জন প্যালেস্টিনিয়ান মারা গেছেন, যার মধ্যে প্রায় এগার’শ শিশু। গাজার মিডিয়ান বয়েস মোটে আঠেরো। জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি আঠারোর নীচে। তাই যখনই বোমাবর্ষণ হয়, শিশুরাই প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত হয়। আমেরিকা ইজরায়েলের এই উত্তর গাজাকে ফাঁকা করে দেওয়ার আহবান নিয়ে কিছু বলে না, ১.১ মিলিয়ন মানুষকে ছোট্ট একটা জায়গায় থাকতে হবে।, যেখানে জল নেই। তাঁরা আসলে এর পিছনেই আছেন, ইজরায়েল তাদের এই অঞ্চলের চৌকিদার। এবং ইরান, যারা প্যালেস্টাইনের সমর্থক এবং লেবাননে হিজবুল্লাহ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়ছে। সিরিয়ায় ইজরায়েল বোলান হাইটস দখল করেছে, আরেকটা কলোনী বানানোর জন্য। এসবে আমেরিকা পূর্ণ সমর্থন জানায়। কিন্তু এই লড়াই ইহুদি এবং ইসলামের লড়াই না, অবশ্য বিজেপি সেভাবেই বিষয়টা দেখে। এই প্রথমবারের মত ভারতের প্রধানমন্ত্রী একদেশদর্শীভাবে ইজরায়েলকে সমর্থন জানালেন। আগে ইজরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারের পাশাপাশি প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রের অধিকারকে ও ভারত সমর্থন জানাতো। কিন্তু তা পরিবর্তন হয়ে গেল। কারণ আমাদের দেশের সরকার অনেকাংশেই নেতানিয়াহুর সরকারের মত। তাদের আগ্রহের কারণ শুধু প্যালেস্টাইনের বিরোধীতা নয়, আরব এবং ইসলামবিদ্বেষ। ইহুদি চরমপন্থা প্যালেস্টাইনের মাটিতে ইসলামের অধিকার স্বীকার করে না। আমরা আলেক্সা মসজিদের কথা শুনেছি, তা জেরুজালেমে অবস্থিত। জেরুজালেমের ইতিহাস হল তিনটি ধর্ম: ইহুদি, ইসলাম, এবং খ্রীষ্টান এখানে মিলিত হয়েছে। সর্বোপরি, যীশু যে বেথেলহেমে জন্মেছিলেন তা প্যালেস্টাইনে। ইহুদিরা চাইছেন শুধু মুসলিম নয় খ্রীষ্টানদেরও এখান থেকে নিকেশ করতে। এই ভাবনার সাথে ভারতের হিন্দুত্বের ভাবনা খুবই সামীপ্যবর্তী। বহু পূর্বেই, ১৯৫০ এ, হিন্দুত্বের অন্যতম পথিকৃৎ সাভারকার ইজরায়েলের থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা লিখেছেন, যে কিভাবে তারা চারপাশের মুসলিমদের সাথে ব্যবহার করছেন। তাই এই জাইনাস এবং হিন্দুত্বের শক্তি পরস্পরের সাথে মতাদর্শগত সখ্যতা বোধ করে। তাই ওয়াশিংটন ও দিল্লির সাথে এই সখ্যের নির্দিষ্ট কারণ আছে। প্রথম বাজপেয়ী সরকারের আমল থেকেই, বিজেশ মিশ্র, যিনি বাজপেয়ী সরকারের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ছিলেন এবং ন্যাশানাল সিকিউরিটি পরামর্শদাতা ছিলেন, তিনি আমেরিকায় যান জুইশ কংগ্রেসে বক্তৃতা করতে। বলেছিলেন: যে ভবিষ্যতে আমেরিকা, ইজরায়েল, ও ভারতের যোগাযোগ শক্তিশালী করতে হবে। আমরা এও জানি যে ইজরায়েল ভারতে মিলিটারি অস্ত্র সামগ্রীর সর্ববৃহৎ জোগানদাতা। এর সাথে তারা ইন্টেলিজেন্স ইক্যুপমেন্টও জোগান দেন। আমরা পেগাসাসের কথা জানি, ফোনের মাধ্যমে নজরদারির প্রক্রিয়া, তা ইজরায়েল থেকেই এসেছে। যদি আমরা কাশ্মীরে যাই, গত বিশ বছরে যে ধরণের ব্যবস্থার মাধ্যমে কাশ্মীরিদের উপর নজরদারি করা হয়েছে, সেগুলো শিখিয়েছে ইজরায়েল। যে পেলেট বন্দুক ব্যবহার করা হয় তথাকথিত পাথরবাজদের বিরুদ্ধে, তাও ইজরায়েল থেকেই এসেছে, এগুলো প্যালেস্টাইনে বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হতো। আমরাও পেলেট বন্দুক ব্যবহার করি, আমরা ইজরায়েলের থেকে শিখছি কিভাবে ধর্মীয়  সংখ্যালঘুদের দমন করতে হয়। তাই আজকের ভারত আসলে ইজরায়েল যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তারই প্রতিচ্ছবি। ইজরায়েলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, আরবী ও দখলকৃত জায়গায় থাকা প্যালেস্টিনিয়ানরা সংখ্যায় এখনো ইহুদিদের থেকে বেশি। এই সংখ্যাগরিষ্ঠকে বলপূর্বক দমন করে, সাম্রাজ্যবাদের হাত শক্ত করা হচ্ছে গোটা অঞ্চলে।

কমিউনিস্ট ইশতেহার কি শেখায়? সাম্রাজ্যবাদের বিরোধীতা করতে, এবং যারা সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা আক্রান্ত এবং শোষিত হচ্ছেন তাদের প্রতি সংহতি জানাতে শেখায় ইশতেহার। সেকারণেই জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সময় থেকে(কারণ এই সময়তেই ১৯৪৫-৪৮, ইজরায়েলের উত্থান) জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব, গান্ধী ও নেহেরু, বলেছিলেন প্যালেস্টাইনে যা ঘটছে তা অবিচার। ইহুদিদের অধিকার কখনো প্যালেস্টিনিয়ানদের মূল্যে নিশ্চিত হতে পারেনা, এবং প্যালেস্টাইনের মানুষদেরও মাতৃভূমির অধিকার আছে। সেটাই আমাদের বরাবরের বক্তব্য ছিল। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। আমাদের দেশের শাসকবর্গ এখন নিবিড়ভাবে সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে ঢলে পড়েছেন। বাইডেন ও মোদীর অবস্থানের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই, কারণ, মোদীর আমলে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক অ্যালাইতে পরিণত হয়েছে। আমেরিকার নেতৃত্বে বছর দুয়েক আগে আমরা একটা ফোরামে যোগ দিয়েছি। ইজরায়েল, ভারত, ইউনাইটেড আরব এমিরেটস, এবং যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকা চায় ভারত এবং ইজরায়েল মিলিতভাবে পশ্চিম এশিয়ায় ভূমিকা নিক। তাই আমাদের বৈদেশিক নীতি এখন আমেরিকার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ইজরায়েলকে যেকারণে ভারতের মূল্যবান মিলিটারি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সেকারণেই প্রশ্ন যে আমরা কি আদৌ প্যালেস্টিনিয়ানদের সাথে সহানুভূতিশীল হতে পারি? সেখানে মুসলিমরা আছে, অতএব বিজেপি এবং আরএসএসের মতামত বোঝাই যায়।

একারণেই আমরা কমিউনিস্ট। আমরা সাম্রাজ্যবাদের অস্তিত্ব সর্বত্র বিরোধযোগ্য বলে মনে করি। কারণ আমরা জানি এই সেই সাম্রাজ্যবাদ যা আমাদের শাসকবর্গের সাথে সমঝোতা করে আমাদের পদানত করে রেখেছিল। সেকারণেই আমরা, মোদী সরকার যাই করুক না কেন, প্যালেস্টাইনের মানুষের প্রতি সংহতি জানাই। আর, কর্পোরেট মিডিয়া ভারত এবং পৃথিবীতে যা দেখাচ্ছে তা বাস্তবিক অবস্থার চিত্র নয়। এবং, এোও সত্যি যে আমেরিকা ও ইউরোপে এমন অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে ইজরায়েলকে সমর্থন করার নীতি ভ্রান্ত, এবং প্যালেস্টিনিয়ানরা ইজরায়েলের কার্যকলাপের শিকার হয়েছে। আমাদের দেশের বুর্জোয়া সংবাদমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদেরও আমরা বলব যে কিছুতেই যে হিংসা আক্রান্তরা বাঁচার জন্য ও মুক্তির জন্য করেছে তা তাদের উপর ঘটা সাম্রাজ্যবাদী  আক্রমণের সাথে তুলনীয় নয়। আমরা হামাসের দ্বারা নিরপরাধ মানুষ ও শিশুদের উপর আক্রমণের নিন্দা করি, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আরো বড় মাত্রার  আক্রমণ ও অত্যাচারের যাতে শতশত মহিলা এবং শিশু প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের উপর বোমাবর্ষণ ও আক্রমণের প্রতি আমরা অন্ধ হয়ে থাকব। একথা বলা যায় না যে শিশুদের গুলি করে হত্যা করলে তা বর্বরোচিত, এবং বোমা ফেলে শিশু মারলে তা ঠিক আছে। দুটোই যুদ্ধোপরাধ। তার বিরোধিতা করতে হবে।

এই বিয়োগান্তক যুদ্ধকে আমরা বুঝতেই পারব না যদি না আমরা প্যালেস্টাইনের জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল না হই, কারণ যখন বাকি সমস্ত উপনিবেশ সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে অন্তত রাজনৈতিক স্বাধীনতাটুকু পেয়েছে, তারা তা পায়নি। এ হল বিংশ শতকের অসমাপ্ত কাজ, এবং এই একুশ শতকে কোনও না কোনো সময় রাজনৈতিক সমাধানের দিকে এগোতে হবে, যা ইউনাইটেড নেশনস্ ১৯৪৮-এ দিকনির্দেশ করেছিল। যে, হ্যাঁ, ইজরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার আছে, তার অস্তিত্বও আছে গত পঁচাত্তর বছর ধরে। হামাস না চাইলেও ইজরায়েলের অস্তিত্ব থাকা উচিত। কিন্তু তাদের ১৯৬৭র আগের সীমান্ত অনুযায়ী থাকা উচিত, ৬৭র যুদ্ধে তারা এসব জায়গাগুলো দখল করেছে। বাকী জায়গাটা অন্য কারো দখল ছাড়া প্যালেস্টিনিয়ান মাতৃভূমি হিসাবে থাকা উচিত।

তাই কমরেড, আজকের ভারতের আধিপত্যবাদী হিন্দুত্ব আখ্যানের সামনে আমরা আক্রান্ত হতে পারি, এই যুক্তিতে যে আমরা সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন জানাচ্ছি। এই সরকার যেকোনো বিরোধীতাকেই সন্ত্রাসবাদের তকমা দেয়, যেমন কাশ্মীরে সকলেই উগ্রপন্থী। যেসব সাংবাদিকরা সরকারের সমালোচনা করেন, তাঁরাও উগ্রপন্থী। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাও উগ্রপন্থী। ফলতঃ আমাদেরও সন্ত্রাসবাদের সমর্থকের তকমা দেওয়া হতে পারে, তাতে  বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার কিছু নেই। কারণ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইতে তাদের বিদেশনীতি প্রকৃতপ্রস্তাবে তাদের দেশ পরিচালনার নীতিরই প্রতিফলন। তাদের নীতি হল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা, তাদের দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত নাগরিকে পরিণত করা, হিন্দুরাষ্ট্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে। একই ভাবে ইজরায়েল চায় শুধু ইহুদিদের একটি রআষ্ট্রএ প্যালেস্তাইনকে পরিণত করতে। আজ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র, রাজ্যের অধিকার, সংবিধানের উপর আক্রমণের ও বিরোধীদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার বিরুদ্ধে। গোটা ব্যবস্থাটিই চলেছে নয়া ফ্যাসিবাদের দিকে, সেটা ইজরায়েলেও চলছে। এই হামাসের আক্রমণের আগে ইজরায়েলের নিতানইয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে বিশাল প্রতিবাদ আন্দোলন চলছিল। কারণ, নেতানিয়াহু বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইন করার চেষ্টা করছিলেন। আমাদের দেশে কী হচ্ছে? শুধু বিচারব্যবস্থা না, মিডিয়া, সংসদ, সমস্তই নিয়ন্ত্রণ করতে চান। ইতিমধ্যেই হিন্দুত্ব আধিপত্যবাদী শাসনে আমরা রয়েছি। এদের যদি এখনি বিরোধ করা না হয়, তাহলে খুব দ্রুত নয়া এক ফ্যাসিবাদের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সেকথাই আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সাথে এই সরকারের বিদেশনীতির বিরুদ্ধেও আমাদের লড়তে হবে। কারণ আমেরিকা ও বাইডেন ঠিক যেভাবে এই প্রতিক্রিয়ার শক্তিকে সমর্থন দিচ্ছে, মোদী ও হিন্দুত্বের শক্তিকেও তারা সমর্থন দিচ্ছে। তাই আমাদের লড়াইও হতে হবে সার্বিক। বৈদেশিক নীতি ও আভ্যন্তরীণ নীতির বিরুদ্ধে, এবং সমস্ত সেই সমস্ত উদ্যোগের বিরুদ্ধে যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্রকে বদলে দেওয়ার জন্য কার্যকর আছে। আমি আশা করি, সামনের দিনগুলোতে যখন আমরা পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করব, যেমন আমরা পার্টির শতবর্ষ পালন করেছি – একশো বছরের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস – সেই মাত্র সাত জনের পার্টি ইউনিট যাদের বেশিরভাগই জেলে গেছিলেন – যাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মামলা সাজানো হয়, কানপুর বা বলশেভিক মামলা – যেমন সওকত উসমানীরা তাসখণ্ডে থেকে ফিরেই বিরাগভাজন হয়ে জেলে গেছিলেন। প্রথমদিন থেকেই ইংরেজ সরকার কমিউনিস্টদের খুঁজেছেন।

১৯৪৩ সালে যখন প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়, ১৩৮ জন প্রতিনিধি যারা অংশ নেন, তারা সবমিলিয়ে ৪১৪ বছর জেলে ছিলেন। সেভাবেই কমিউনিস্ট পার্টি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যাত্রা শুরু করেছিল, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না করে কমিউনিস্ট পার্টি টিকে থাকতে পারে না। সেটাই আমাদের ঐতিহ্য।

আমি নিশ্চিত যে এই উদযাপনের সময় আমরা পার্টিকর্মী ও সমর্থকদের এই গৌরবের অতীত সম্নন্ধে আলোকিত করব,  যা আমাদের মতাদর্শগত খামতিগুলো পূরণ করে  আগামী দিনের কঠিন লড়াইয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত করবে।

ধন্যবাদ।

১৭ই অক্টোবর, ২০২৩, কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ভাষণ

ভাষান্তরঃ শ্রীতমা সাউ

Spread the word

Leave a Reply