ভারতীয় সংসদের উপরে আক্রমণ
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) নিম্নলিখিত প্রেস বিবৃতি জারী করেছেঃ
ভারতীয় সংসদের উপরে আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
২৫ সেপ্টেম্বর নতুন কৃষি আইনের প্রতিবাদে দেশজূড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে যুক্ত হন।
বিজেপি সরকারের দ্বারা প্রস্তাবিত কৃষি আইনের ক্ষেত্রে সাংসদদের আলোচনার সমস্ত সুযোগ কেড়ে নিয়ে, দেশের যাবতীয় সংসদীয় পদ্ধতি-প্রকরণের সম্পূর্ণ ধ্বংসসাধন এবং নতুন কৃষি আইনের সাহায্যে যেভাবে দেশ এবং দেশের জনগণ উভয়ের উপরে ভয়ানক আক্রমন নামিয়ে আনা হচ্ছে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরোর পক্ষ থেকে তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
কোভিড মহামারীর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলীকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করে এসেছে এই সরকার, এমনকি মহামারীর সময়ে যখন সংসদীয় কর্মকাণ্ডের কাটছাঁট করা হচ্ছে তখন অত্যন্ত ব্যাগ্রতার সাথে ১১টি বিভিন্ন অধ্যাদেশ জারি করে লকডাউনের সুযোগে সেইসবকিছুকে আইনে রূপান্তরিত করতে চাইছে।
এই প্রক্রিয়াতেই দেশের কৃষিক্ষেত্র সম্পর্কিত তিনটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করতে গিয়ে সরকারের তরফে সংশ্লিষ্ট আইনগুলির উপরে সাংসদদের আলোচনার কোন সুযোগই দিতে রাজি হয়নি, রাজ্যসভায় (যেখানে সরকারের একচেটিয়া কর্তৃত্ব নেই) সাংসদেরা এই তিনটি আইনের ক্ষেত্রে ভোটের দাবী পেশ করেন কিন্তু সেই দাবী নাকচ করে দেওয়া হয়। এভাবে ভোটের ন্যায্য দাবিকে নাকচ করে দেবার ঘটনা একইসাথে নজিরবিহীন এবং দেশের গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে সমর্থ।
দেশের সংসদে প্রস্তাবিত যেকোনো আইন কিংবা সংসদীয় সিদ্ধান্তের মুখাপেক্ষী যেকোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে ভোটের দাবী জানানো প্রত্যেক সাংসদের সাংবিধানিক এবং ন্যায্য অধিকার। সেই ন্যায্য অধিকারকে অত্যন্ত অবজ্ঞার মনোভাব নিয়ে পায়ের তলায় মাড়িয়ে দিচ্ছে সরকার। অত্যন্ত অন্যায় কায়দায় ভোটের দাবী তোলা ৮ জন সাংসদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একথা স্পষ্ট যেহেতু রাজ্যসভায় বিজেপি / এন ডি এ’র সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই তাই এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে বিরোধী সাংসদদের প্রতি এমন অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। আর ঠিক সেই কারনেই পাশ হওয়া আইনগুলি ন্যায্য নয়, আইনি বৈধতাহীন এবং দেশের রাষ্ট্রপতির উচিত ভারতের সংবিধানের ১১১ নম্বর ধারার প্রয়োগে সেগুলিকে পুনরায় সংসদে আলোচনার জন্য ফেরত পাঠানো।
এই নতুন আইনগুলির বলে দেশের কৃষিক্ষেত্র, উৎপাদিত খাদ্যশস্য এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের গোটা বাজারটাই দেশি – বিদেশী কৃষিপণ্যের কর্পোরেটদের কবলে চলে যাবে। এর ফলে সেইসব দেশি – বিদেশী কর্পোরেট সংস্থাগুলির জন্য লাগামছাড়া মুনাফা কামানর রাস্তা খুলে যাবে এবং দেশের কৃষিজীবী ও সাধারণ মানুষের উপরে অশেষ দুর্দশা চেপে বসবে। ন্যুনতম সহায়ক মূল্যের ব্যাবস্থা ধ্বংস হবে। প্রস্তাবিত আইনসমূহে আলগোছে ন্যুনতম সহায়ক মূল্যের উল্লেখ থাকলেও কৃষকদের আয়ের ক্ষেত্রে কোনোরকম নিশ্চয়তা থাকছে না। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন করে কার্যত মজুতদারদের হাতে বিপুল পরিমানে খাদ্যশস্য জমিয়ে রাখার (হোর্ডিং) সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাজারে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে নকল খাদ্যসংকট চাপিয়ে দিয়ে দাম বাড়ানোর সুযোগ থাকায় গোটা দেশ এবং জনগন এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। “ল্যান্ড পুলিং” এবং কন্ট্র্যাক্ট ব্যাবস্থার নামে মুনাফার যে বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছে তাতে আমাদের দেশের স্বাভাবিক কৃষিকাজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দেশের খাদ্য সুরক্ষা এক প্রবল ঝুঁকির সম্মুখীন।
এই প্রসঙ্গে মনে রাখতেই হয় কৃষিকাজ দেশের সংবিধানে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ বিষয়। নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলীকে যেভাবে এই আইনের সাহায্যে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে তা একটি বুনিয়াদি সাংবিধানিক বৈশিষ্টরুপে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকেই নাকচ করে দেয়।
কিষাণ সংগঠনগুলির ডাকে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দেশজূড়ে যে প্রতিবাদ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে তার প্রতি সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে।
দেশ, দেশের অন্নদাতা এবং দেশের জনগণের খাদ্য সুরক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে এই নতুন আইনগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বাতিল করা উচিত ।
শেয়ার করুন