প্রয়াত সিপিআই(এম) নেতা কমরেড পদ্মনিধি ধর ...

১১ জুলাই,২০২০ শনিবার
ওয়েবডেস্কের প্রতিবেদন:


প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা ও ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক কমরেড পদ্মনিধি ধর গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১২ টা নাগাদ প্রয়াত হয়েছেন। কমরেড পদ্মনিধি ধর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) হাওড়া জেলার দীর্ঘদিনের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ছিলেন ও ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক (১৯৯১-২০০৬) ছিলেন।

প্রবীণ কমরেড পদ্মনিধি ধরের, পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ৬ জুলাই বাড়িতেই হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায় তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়ার সময় তাঁর শর্ত ছিল ৮ তারিখ জ্যোতি বসুর জন্মদিনের দিন তাকে শ্রদ্ধা জানাতে দিতে হবে। সেই মতো ৮ তারিখ তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তিনি জ্যোতি বসুর ছবিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। এরপর ৮ এবং ৯ তারিখ তিনি ভালই ছিলেন বলে জানা গেছে পরিবারসূত্রে। কিন্তু ১০ তারিখ থেকেই তার নিঃশ্বাসজনিত সমস্যা শুরু হওয়ায় রাতে ফের নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বেড না থাকায় অন্য একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার পথেই তিনি মারা যান বলে জানা গেছে। পরবর্তী নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ২ পুত্র ২ কন্যা স্ত্রী ভাই নাতি নাতনি সবাই রয়েছে। তাঁর প্রয়াণে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সিপিআই(এম) হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার।

১৯৩৫সালের ২২ জুলাই তারিখে তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের বরিশাল জেলার বানোয়ারীপাড়ার বাইশআড়ি গ্রামে পদ্মনিধি ধরের জন্ম হয়। বাইশআড়ি হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার পরিবার পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে। বেলুড় টিফিন বাজার এলাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তখন বেলুড় স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তী কালে ভদ্রকালী ক্যাম্প ঘুরে নিশ্চিন্দা ২নং কলোনিতে প্লট পেয়ে চলে আসেন। ভর্তি হন বালী শান্তিরাম বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণি তে। সুরেন্দ্র নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপর জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হতে হয়। ট্রেনে "সোভিয়েত দেশ" পত্রিকা বিক্রি, একসরা থেকে সবজি এনে ঘোষপাড়া বাজারে বিক্রি, বেলুড়ে ন্যাশনাল রবারে ২টাকা রোজের শ্রমিকের চাকরি - এইরকম জীবন সংগ্রামের মধ্যেই প্রাইভেটে বিএ এবং এমএ পাশ করেন। শিক্ষকতার জীবনে প্রথমে দুর্গাপুর পল্লিমঙ্গল বিদ্যামন্দির, পরবর্তীতে নিশ্চিন্দা চিত্তরঞ্জন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।

উদ্বাস্তু জীবনের কঠিন সংগ্রামের মধ্যেই কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। ১৯৫৪ সালে পতিত পাবন পাঠক, নন্দদুলাল ব্যানার্জিদের প্রচেষ্টায় বালী গ্রামাঞ্চলে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম শাখা গড়ে ওঠে চারজনকে নিয়ে। কমরেড পদ্মনিধি ধর তার অন্যতম। বালি গ্রামাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক, কৃষক ও ছিন্নমূল উদ্বাস্তু দের পুনর্বাসনের দাবির আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব দান করেন। ১৯৫৬ সালে কোনা এলসি'র সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬০ সালে পার্টির হাওড়া জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।১৯৬৪ সালে পার্টি ভাগ হলে তিনি সিপিআই (এম) এ যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে নিশ্চিন্দা এলসি গঠিত হলে পদ্মনিধি ধর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে বালী জগাছা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে বাংলা বিহার একীকরণ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকায় একমাস জেলে বন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে খাদ্য আন্দোলন যুক্ত থাকায় পিডি অ্যাক্টে গ্রেপ্তার হয়ে ফের একবছর কারাবাস করেন।

১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১সালে তিনি ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হন। বিধানসভা শিক্ষা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যও ছিলেন।সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ ,পশ্চিমবঙ্গ প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর রাজ্য স্তরের নেতৃত্ব ছিলেন। বালী গ্রামাঞ্চল ক্রীড়া সমিতির তিনি সভাপতি ছিলেন। জেলে বন্দি জীবন ব্যতিরেকে তিনি দীর্ঘ কয়েকবছর আত্মগোপন করে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। বহু নির্যাতন সহ্য করা,কংগ্রেসী গুন্ডাদের আক্রমণে শিক্ষকতা ও এলাকা ছেড়ে থাকতে বাধ্য হন। ২০১২সাল পর্যন্ত তিনি পার্টির হাওড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

তথ্য : হাওড়া জেলার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ।।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন