গত ১৬ এপ্রিল রাতে পালঘর জেলার অন্তর্গত দহানু তহসিলের গাদাচিঞ্চলে গ্রামে পিটিয়ে হত্যার যে বীভৎস ঘটনা হয়েছে সিপিআই(এম)’র মহারাষ্ট্র জেলা কমিটির পক্ষ থেকে তার তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে। এই ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে যাদের মধ্যে দুইজন সাধু রয়েছেন যারা মুম্বই থেকে সুরাট যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন। এই ঘটনার অবিলম্বে যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং যাদের দোষ প্রমানিত হবে তাদের কঠোর শাস্তিবিধানের জন্য দাবি জানাচ্ছে সিপিআই(এম)।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী উদ্ধব ঠাকরে আজ এই বিষয়ে রাজ্যের জনগণের উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য রেখেছেন তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তার বক্তব্যে তিনি কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ করেছেনঃ
১. এই ঘটনা শেষ ৬ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলা একের পর এক পিটিয়ে মারার ঘটনাগুলীর সাথে তুলনীয় নয়, ভুলবোঝাবুঝির কারনে এটি ঘটেছে। বিগত কয়েক দিন ধরেই পালঘর জেলার ঐ গ্রামীণ এলাকায় গুজব ছড়ানো চলছিল যে ডাকাতেরা গ্রামে রাতের দিকে হানা দিচ্ছে, এই ধারণা থেকেই আক্রমন করা হয়।
২. এই ঘটনার কোন সাম্প্রদায়িক ভিত্তি নেই, এবং এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িকতার রং দেওয়া উচিত হবে না।
পাঁচজন বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতা সহ মোট ১০০ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৪. দুইজন পুলিশ কর্মীকে সমস্ত দায়িত্ব থেকে নিলম্বিত করা হয়েছে।
৫. এই ঘটনার গভীর তদন্ত করা হবে।
এই ঘটনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের গুজরাটে পৌঁছে দেবার জন্য যে গাড়ির ব্যাবস্থা করা হয়েছিল তার সরকারি অনুমতি ছিল কিনা, জাতীয় সড়ক ব্যাবহার না করে রাতের অন্ধকারে মহারাষ্ট্র ও দাদরা এবং নগরহাভেলি’র কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের সীমান্তসংলগ্ন নির্জন এলাকার ভিতর দিয়ে তাদের গাড়ি করে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি কেন দেওয়া হয়েছিল, অনুমতি কে দিয়েছিল এই সবকিছুই তদন্তের আওতায় আসবে।
আরএসএস-বিজেপি’র পক্ষ থেকে যেভাবে অতিসক্রিয়তা দেখিয়ে এই ঘটনায় ভিত্তিহীনভাবে সাম্প্রদায়িক রং লাগানোর প্রচেষ্টা চলছে সিপিআই(এম) তার তীব্র নিন্দা করছে। যে গোষ্ঠী এই আক্রমন করেছে তাদের কখনো কোন সাম্প্রদায়িক হিংসার ইতিহাস নেই। এই তথ্য আরএসএস-বিজেপি’র অজানা নয়, তবু রাজ্য সরকারকে বদনাম করতেই তারা এই ঘটনায় মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আরএসএস-বিজেপি’র বিভিন্ন নেতৃত্ব যেমন সম্বিৎ পাত্র, সুনীল দেওধর এবং অন্যান্যরা যেভাবে ফেসবুকে মিথ্যা এবং অপপ্রচার করেছেন তার তীব্র নিন্দা করছে সিপিআই(এম)। তারা প্রচার করেছেন এই ঘটনা যে এলাকায় হয়েছে সেই দহানু নির্বাচনীক্ষেত্র সিপিআই(এম)’র প্রভাবান্বিত, সেখানে সিপিআই(এম)’র এমএলএ রয়েছেন এবং এইসব বলে নির্লজ্জের মতো এই হত্যার ঘটনায় সিপিআই(এম)’র জড়িত থাকার অভিজোগ করেছেন।
যদিও বাস্তব হল এর ঠিক বিপরীত। বিগত দশ বছর ধরে গাদাচিঞ্চলে গ্রামে যেখানে এই ঘটনা হয়েছে, সেখানে বিজেপিই জিতে এসেছে। আজও চিত্রা চৌধুরী সেখানকার বিজেপি’র গ্রামপ্রধান (সরপঞ্জ)। এখানকার প্রাক্তন এমএলএ পাস্কাল ধানারে বিগত ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআই(এম) প্রার্থী বিনোদ নিখলের কাছে পরাজিত হন। এই নির্বাচনে সিপিআই(এম) কে সমর্থন জানায় এনসিপি, বিভিএ, কংগ্রেস এবং কাশ্তাকারি সংগঠন। প্রাক্তন এমএলএ পাস্কাল ধানারে ২০১৬ সালে নিজেই একটি পোস্ট করেন যাতে দেখা যায় তিনি চিত্রা চৌধুরী এবং অন্যান্য বিজেপি নেতৃত্বদের সম্মানিত করছেন। সাধুদের হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অনেকেই বিজেপি’র সমর্থক।
এই ঘটনায় দোষীদের কঠিন শাস্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে এই দাবিও জানানো হচ্ছে যে পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ঐ এলাকা থেকে বহু কিলোমিটার দূরে থাকা বহু মানুশকেও গ্রেফতার করেছে। আমরা এই অকারণ হেনস্থা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
সিপিআই(এম) মহারাষ্ট্র রাজ্য কমিটি
শেয়ার করুন