চিঠিটি প্রকাশ করা হল
২৯ জুন,২০২০
প্রিয় শ্রী অরোরাজি
এই মিডিয়া রিপোর্টে আমরা অত্যন্ত বিচলিত হয়েছি যে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) চৌষট্টি বছরের বেশি বয়সী ভোটারদের পোস্টাল ব্যালটের ব্যবহারের ব্যবস্থা করার জন্য প্রচলিত পদ্ধতি অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা না করে একতরফাভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
অতীতে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে আইন মন্ত্রক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এবং ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার সাধারণ নির্বাচনের সময় পোস্টাল ব্যালটের বিকল্প বেছে নেওয়ার জন্য নির্বাচন বিধিমালার আচরণবিধি সংশোধন করেছিল। একইভাবে এইবারেও ইসিআই কোভিড ১৯ মহামারীর প্রেক্ষিতে এই বিধিটিকে আরও সংশোধন করতে সরকারের সাথে যোগাযোগ করেছিল।আরও জানা গেছে যে ১৯ জুন, আইন মন্ত্রক ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের বিকল্পের জন্য নতুন পরিবর্তনকে নথীবদ্ধ করেছে। সংশোধিত নিয়মগুলি "কোভিড -১৯ সন্দেহভাজন বা আক্রান্ত ব্যক্তিদের" পোস্টাল ব্যালটে মতদানেরও অনুমতি দেয়।
অতীতে, নির্বাচন কমিশন সর্বদা জোর দিয়েছিল যে তারা সংবিধান দ্বারা র্নিদেশিত নির্বাচনের ‘নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের’ জন্য ৩২৪ অনুচ্ছেদে নির্দিষ্ট তাদের বিস্তৃত ও ব্যাপক ক্ষমতা সত্ত্বেও, এই ক্ষমতা একতরফাভাবে ব্যবহার করবে না। এই মনোভাব রাজনৈতিক দলগুলিকে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান অংশীদার হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর নজির তৈরি করেছিল। নির্বাচন পরিচালনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার সময় তারা সর্বদাই ঐক্যমত্য তৈরিতে সক্রিয় ছিল।এটা স্মরণ করা প্রাসঙ্গিক হবে যে নির্বাচনের আদর্শ আচরণ বিধির(মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট) মত একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সংস্কারের ক্ষেত্রে উপনীত হওয়া গিয়েছিল সমস্ত রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই।এই আচরন বিধি, বিধিবদ্ধ ক্ষমতায়নের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত না হলেও কখনওই প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। এই নির্বাচনী অভ্যাস ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে এবং ব্যবস্থার স্বচ্ছতাকে আরও শক্তিশালী করে।
অতীতের রীতির উল্টো পথে হেঁটে ২০১৯ এর অক্টোবর ও ২০২০এর ১৯ জুনের নির্বাচনী সংশোধনদুটোর ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক দলের মতামতই নেওয়া হয়নি। সংবাদমাধ্যম থেকে এও জানা গিয়েছে যে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে বিহার নির্বাচনকে ঘিরেই এই তৎপরতা নির্বাচন কমিশনের।
আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাটি সর্বদা ভোটারদের শারীরিক উপস্থিতি ও ন্যায্য ভোটার কীনা তা যাচাইকে নির্ভরযোগ্যতার ভিত্তি হিসাবে বিবেচনা করেছে। বিধি দুটো সংশোধনের মাধ্যমে বড় সংখ্যক ভোটার যাচাইযোগ্যতার বৃত্তের বাইরে চলে যাবে। নির্বাচনের দায়িত্বে নিযুক্ত কর্মীদের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম পোস্টাল ব্যালট ব্যবহৃত হলেও সেখানে কারসাজি এবং অপব্যবহারের উদাহরণগুলির কারণে এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।
নতুন নির্বাচনী পদ্ধতি প্রচলনের পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর ও নির্বাচন কমিশনের মতৈক্য প্রয়োজন অন্যথায় ভোটার যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে ও ক্ষমতাসীন প্রশাসন তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে পোস্টাল ব্যালটে গরমিল করতে পারে যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও শুদ্ধতার জন্য ক্ষতিকারক ।
অস্বচ্ছ নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের বিষয়টি এখনও অমীমাংসিত রয়েছে ও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন আমাদের মত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সহমত যে, এ ধরণের তহবিল নির্বাচনে ব্যবহৃত হলে তার আয় ব্যয়ের হিসাব রাখা অত্যন্ত দুষ্কর। এই পরিস্থিতিতে পোস্টাল ব্যালটের এই নতুন ধরণের ব্যবহার চালু হলে তা পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করবে ও শাসক দলের অনুকূলেই যাবে।
অতএব, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে নির্বাচন কমিশনের একতরফাভাবে এই পরিবর্তনগুলি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া অনুচিত।রাজনৈতিক দলগুলির সাথে পর্যাপ্ত ও স্বচ্ছ আলোচনার ভিত্তিতে এবং কমিশনের মত প্রতিষ্ঠানের অতীত ঐতিহ্যকে মাথায় রেখেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমতার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের এটাই মৌলিক নীতি।
আমি কমিশনের তরফ থেকে একটি ইতিবাচক বিবেচনা এবং প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করছি।
আপনার শুভার্থী
স্বাঃ
সীতারাম ইয়েচুরি
সাধারণ সম্পাদক
শ্রী সুনীল অরোরা,
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার,
ভারতের নির্বাচন কমিশন
শেয়ার করুন