CPIMCC

কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি

৩০ অক্টোবর,সোমবার,২০২৩

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী)-এর কেন্দ্রীয় কমিটি ২৭-২৯ অক্টোবর, ২০২৩, নতুন দিল্লিতে বৈঠক করে নিম্নলিখিত বিবৃতি জারি করেছে :

কেরালা: বোমা বিস্ফোরণ

কেন্দ্রীয় কমিটি এর্নাকুলামের একটি কনভেনশন সেন্টারে সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণের তীব্র নিন্দা করেছে, বিস্ফোরণের ফলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। ইতিমধ্যেই সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। কেন্দ্রীয় কমিটি এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্যের নিন্দা করছে যিনি সত্যতা যাচাই না করেই কেরালা এবং কেরালাবাসীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক জিগির তুলেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি কেরালার জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বরাবরের মতই তারা যেন কেরালার অনন্য এবং অতুলনীয় সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ব্যাহত করতে চায় এমন উপাদানগুলির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

প্যালেস্তিনীয়দের ওপর ইস্রায়েলের গণহত্যাকারী হামলা 

মানবিকতার খাতিরে যুদ্ধবিরতি, সমস্ত সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষা এবং অবিলম্বে মানবিক সহায়তা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে ভোট দানে মোদি সরকারের বিরত থাকার অবস্থানকে কেন্দ্রীয় কমিটি তীব্র নিন্দা করেছে। মোদি সরকারের ভোটদানে বিরত থাকা এবং সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজদের পাশে থাকা প্যালেস্তাইনের প্রতি ভারতের সমর্থনের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী। রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রস্তাবের দাবিগুলোর সমর্থন করে কেন্দ্রীয় কমিটি সকল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইস্রায়েলের নির্লজ্জ মারণ যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্যালেস্তাইনের বিপন্ন জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এখন পর্যন্ত, সরকারি হিসাবে ৮০০০ জন নিহত হয়েছে যাদের মধ্যে ৪০০০ শিশু এবং প্রতিদিনই সংখ্যা বাড়ছে, যার মধ্যে শুধু গাজা নয়, ওয়েেস্ট ব্যাঙ্কে হত্যার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

বিধানসভা নির্বাচন

বিধানসভা নির্বাচন হতে চলা পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে চারটি রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি আলোচনা করেছে। রাজস্থানে, কেন্দ্রীয় কমিটি রাজ্য কমিটির প্রস্তাবিত ১৭ জন প্রার্থীর তালিকা অনুমোদন করেছে, যার মধ্যে দুইজন সিপিআই(এম) বিধায়ক রয়েছেন। ছত্তিশগড়ে, পার্টি তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে; মধ্যপ্রদেশে, পার্টি চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, এবং তেলেঙ্গানায় এখনও আলোচনা চলছে।

মণিপুর

মণিপুরে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এটা প্রমাণ হয়ে গেছে যে পরিস্থিতি মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণে মোদি সরকার এবং বিজেপির ডাবল-ইঞ্জিন সরকারের সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই জাতীয় মেরুকরণকে ধর্মীয় পরিচয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে রাজ্যে জাতিগত মেরুকরণকে সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়া হচ্ছে।

সরকারিভাবে, রাজ্য পুলিশ মৃতের সংখ্যা বলেছে ১৭৫ (বাস্তবে, সংখ্যাটি অনেক বেশি হবে) এবং বলেছে যে কমপক্ষে ৯৬টি মৃতদেহ দাবি করা হয়নি। ৩২ জনের ক্ষেত্রে নিখোঁজ দেখানো হয়েছে। সরকারি হিসাবে ৫,১৭২টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে ৪,৭৮৬ টি বাড়ি এবং ৩৮৬টি ধর্মীয় স্থান রয়েছে। মোট ৫,৬৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ১,৩২৯টি উদ্ধার করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে এবং মণিপুরের ধ্বংসলীলা বন্ধ করতে হবে।

মানুষের উপর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বোঝা

মোদি এবং তার তাঁবেদার প্রচারযন্ত্র যা ই দাবি করুক না কেন, অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারি মানুষের আয়ের ওপর থাবা বসিয়েছে। সাথে পরিবারের আর্থিক সম্পত্তির পরিমাণও জিডিপির ১১.৫% (২০২০-২১) থেকে ৫.১ শতাংশ (২০২২-২৩) হয়েছে। এর ফলে পরিবারগুলির আর্থিক ঋণদায় বাড়তেই থাকে।

আকাশ ছুঁয়েছে পেঁয়াজের দাম, মনরেগায় বরাদ্দ কমছেই আর আন্তর্জাতিক খাদ্য সূচকে ভারতের অবস্থান পৌছেছে ঐতিহাসিক খারাপ জায়গায়, ১২১ টি দেশের মধ্যে ১১১ নম্বরে।

এক দেশ-এক নির্বাচন

ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন উচ্চ-স্তরের কমিটি, রাজনৈতিক দলগুলির থেকে তাদের মতামত এবং দৃষ্টিকোণ চেয়ে পাঠিয়েছে, এক দেশ-এক নির্বাচনের প্রস্তাব প্রয়োগের নিরীক্ষণের উদ্দেশ্যে, কয়েক মাস পরের নির্বাচন মাথায় রেখে। কেন্দ্রীয় কমিটি এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। আমাদের সংবিধানে খচিত সংসদীয় গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ওপর জোড়া ফলায় আঘাত হানে এই প্রস্তাব। বিপজ্জনক সংবিধান সংশোধন ছাড়াও, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত করতে গেলে রাজ্য স্তরের বিধানসভাগুলির মেয়াদ হয় ছাঁটকাট করতে হবে নইলে বাড়াতে হবে, লোকসভা নির্বাচনের সাথে সমন্বয় রাখতে। যখন একটি সরকার বিধানসভার অলিন্দে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়, তার ক্ষমতায় থাকা বেআইনী। যদি কেন্দ্রীয় শাসন প্রযুক্ত হয়, মানুষের সরকার নির্বাচনের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খারিজ করে, তা গণতন্ত্র বিরোধী।

জাতিভিত্তিক জনগণনা

কেন্দ্রীয় কমিটি মোদি সরকারকে একটি জাতিভিত্তিক গণনার জন্য দাবি পেশ করেছিল, যা জাতিগত সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থাকে দেখাবে ২০২১ সাধারণ জনগণনার সাথে, যা বহুদিন ধরে বাকি আছে। এরকম জাতিগণনা মানুষের আইনগত অধিকারগুলি, যেমন সংরক্ষণ সমস্ত লোকের কাছে পৌঁছচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি।

বিহার ইতোমধ্যেই রাজ্যস্তরে একটি জাতিভিত্তিক জনগণনা করেছে, অন্য কিছু রাজ্যও করার জন্য ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে। রাজ্যভিত্তিক সমীক্ষা সম্পূর্ণভাবেই নির্বাচিত রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। তাহলেও, রাজ্যভিত্তিক সমীক্ষা ভারতব্যাপী জাতিভিত্তিক সমীক্ষার বিকল্প হতে পারে না। ভারতব্যাপী জাতিভিত্তিক সমীক্ষা সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার নিশ্চিত করার জরুরি ভিত্তি।

কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বান

কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের পার্টির প্রতি স্তরে আহ্বান জানাচ্ছে প্যালেস্তিনীয় মানুষের সংহতিতে এবং ইস্রায়েলী গণহত্যাকারী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে।

বিদ্যুৎ বেসরকারীকরণের উদ্দেশ্যে মোদি সরকার আগুয়ান হয়েছে, বিদ্যুৎ গ্রাহকদের প্রিপেইড স্মার্ট মিটারের আওতায় আনার জন্য। এর ফলে সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবন আরো কঠিন হবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন চলে যাবে বেসরকারি আওতায়, লাভের উদ্দেশ্যে। এর ফলে দরিদ্র মানুষের এবং কৃষকদের ওপর অসহনীয় অর্থনৈতিক বোঝার সৃষ্টি হবে। যেসব জায়গায় এই মিটার লাগানো হচ্ছে, সেই সব জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২৬-২৮ নভেম্বর দেশব্যাপী কিষাণ-মজদুর যে মহাপরব আয়োজন করছে তাকে সমর্থন করার।

পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৪ ডিসেম্বরের দলিত সংগঠন এবং মঞ্চগুলির ডাকে আয়োজিত সংসদ অভিযানকে সমর্থন করা হবে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন