সাম্প্রতিক বাবরি মসজিদ রায় প্রসঙ্গে - বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য...



৯ অক্টোবর ২০২০
ওয়েবডেস্কের প্রতিবেদন :

সাম্প্রতিক সময়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে কেন্দ্র করে সিবিআই এর বিশেষ আদালত যে রায়দান করেছে তাতে বিচার ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকবে না।বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় ‘’লিবারহান কমিশন’’ গঠন হয় যা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করাকে পরিকল্পিত এবং অপরাধযোগ্য বলে গণ্য করে।)জ্যোতি বসু বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাকে ‘’অসভ্য এবং বর্বর’’ দের কাজ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী বসুর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেছিলেন যে কেন তিনি এই ঘটনাটিকে অসভ্য বলছেন, বসু জবাব দেন যে প্রতিষ্ঠিত যে কোন সৌধ ভাঙা অপরাধ এবং সেই ঘটনাকে অসভ্য ও বর্বর ছাড়া কিছু বলা যায় না।

কমরেড জ্যোতি বসু


২৭ বছর লাগে সিবিআই এর বিশেষ আদালতের রায়দান করতে। সুপ্রিম কোর্টের ‘রাম জন্মভূমি’ রায় থেকেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো যে বাবরি মসজিদ কেন্দ্রিক সমস্ত রায় হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষেই থাকবে। রঞ্জন গগৈই এর নেতৃত্বের বেঞ্চের সিদ্ধান্ত বলে যে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা অপরাধ এবং এও বলে যে মন্দির ওইখানেই নির্মান হবে। যা হিন্দুত্ববাদীদের “মন্দির ওহি বান্যায়েঙ্গে”। পুরানো মনুমেন্ট রক্ষার জন্য যে আইন রয়েছে তাতে বলে যে এই স্মারকটি প্রত্নতত্ত্বের অন্তর্ভূক্ত এবং একে রক্ষা করা উচিত। এইসব সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের রায় হিন্দুদের পক্ষে যাওয়ায় আইনগুলির গুরুত্ব কমে যায়।সি বি আই আদালতের রায় প্রমাণ করে বিচারব্যবস্থার ওপর হিন্দুত্ববাদের প্রভাব।

The five-judge Constitution bench of the Supreme Court is headed by the Chief Justice Ranjan Gogoi and includes CJI-designate Justice S A Bobde.


বিচারপতির যুক্তি এই ঘটনাটি হঠাৎ ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা বার বার স্বীকার করছেন যে প্রাচাীন সৌধ তারাই ধ্বংস করেছেন। পরিকল্পনা ছাড়া একটি সৌধ ধ্বংস করা যায় না।এই ঘটনা যে পরিকল্পিত তার প্রমাণ স্বাধীনতার পর থেকে হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি নিয়ে যে আন্দোলন করে।হঠাৎ করে কোনদিন শয়ে শয়ে মানুষ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজির হয় না।বিচারকের মতে বিভিন্ন সংবাদপত্রের যেই ভিডিও ও ছবির নমুনা পাওয়া যায় তা যথাযোগ্য প্রমাণ নয়,এই মন্তব্যটি তথ্যপ্রযুক্তি আইন বিরোধী।এই ভিডিও এবং ছবিগুলি প্রাইমারী না হোক সেকেন্ডারী এভিডেন্স হতে পারে।তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মতে এই ভিডিওগুলি গ্রহনযোগ্য।বিচারক হয় কারো নির্দেশে বা ভয়ে তাঁর সাধারণ চিন্তাভাবনা হারিয়ে ফেলে। তিনি হয়ত ভেবেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট যদি ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের স্থানে মন্দির করার রায় দিতে পারে তাহলে হিন্দুত্ববাদী বিচারক মনে করেন যে,হিন্দুদের পক্ষে বিচার দান করে তিনি একটি পুন্য কর্ম করবেন।এর মধ্য দিয়ে গোটা বিচারব্যবস্থাকে তিনি সবার সামনে এক অশ্রদ্ধার পাত্র করে তুলেছেন।

মুরলি- উমা-আদবানী


তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকাঃ
প্রশ্ন থাকতেই পারে যে সি বি আই কোন গ্রহনযোগ্য প্রমাণ ধ্বংস করেছে কিনা? কমিশনের রিপোর্ট, ভিডিও এইগুলি গ্রহনযোগ্য প্রমাণ হিসাবে সি বি আই আদালতে পেশ করেছে কিনা? বিচারকের মন্তব্য যে এইসব তথ্য সি বি আই গ্রহনযোগ্য হিসাবে হাজির করে নি যা স্পষ্ট করে যে সি বি আই স্বাধীন ভাবে তদন্তের পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রশাসকদের কাছে নিজেদের বাঁধা রেখেছে । এতে খুব বিস্মিত হওযার কথা নেই কারণ সি বি আই এর প্রাক্তন ডিরেক্টর রামভক্তির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন তাঁর বিভিন্ন টুইটে। একটি প্রসঙ্গ উঠে আসে যে জনগনের করের টাকায় রামভক্ত কর্মচারীরা কতদিন পুষিত হবে এবং আইনের শাসন (Rule of Law) কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। দলমত নির্বিশেষে আইন কার্যকর ও সমপ্রয়োগ প্রসাশনের দায়িত্ব এবং তা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা দেখবে বিচার ব্যবস্থা। সমাজবিরোধীদের আইন অনুযায়ী সাজা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, তা না করলে নৈরাজ্য তৈরী হয়। স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্মিলিতভাবে যে কোন জাতীয় সৌধ ভাঙা একপ্রকার সন্ত্রাসবাদ। এই ধরনের কর্মকান্ডকে রোখার জন্য প্রসাশন এবং বিচার ব্যবস্থার তৎপর হওয়া উচিত।না হলে তা সন্ত্রাসবাদীদের উৎসাহ যোগায়।বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারীরা যদি শাস্তি না পায় তাহলে তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সমাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে উৎসাহ দেবে। সুপ্রিম কোর্টের রায় রাম জন্মভূমিকে কেন্দ্র করে এবং সি বি আই বিশেষ আদালতের রায় বিচার ব্যবস্থা এবং তদন্তকারী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়।এই চ্যালেঞ্জ কে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে সি বি আই এবং হাইকোর্ট ,এবং সুপ্রিম কোর্ট কিভাবে গ্রহন করবে এটা তাদের বিবেচনায় ছাড়া যায় না ।প্রসাশনিক ও বিচার ব্যবস্থা যদি উগ্র রাজনৈতিক ,ধর্মীয় আবেগের কাছে মাথা নত করে তবে তা হলে বড় বিপদ।

দক্ষিন আফ্রিকা সাংবিধানিক কোর্ট, Ministry of Home Affairs বনাম Fourie মামলায় ২০০৫ সালে দক্ষিন আফ্রিকার সাংবিধানিক কোর্টের মন্তব্য আমাদের গণতন্ত্র রক্ষায় প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ।

Equality means equal concern and respect across difference. It does not presuppose the elimination or suppression of difference. Respect for human rights requires the affirmation of self, not the denial of self. Equality therefore does not imply a levelling or homogenisation of behaviour or extolling one form as supreme, and another as inferior, but an acknowledgement and acceptance of difference. At the very least, it affirms that difference should not be the basis for exclusion, marginalisation and stigma. At best, it celebrates the vitality that difference brings to any society. …. what is at stake is not simply a question of removing an injustice experienced by a particular section of the community. At issue is a need to affirm the very character of our society as one based on tolerance and mutual respect. The test of tolerance is not how one finds space for people with whom, and practices with which, one feels comfortable, but how one accommodates the expression of what is discomfiting.

ছবি : গুগল ইমেজ

শেয়ার করুন

উত্তর দিন