BIMANBOSE

সচেতনতা প্রচার ১৮-১৯ বাস্তবে শয্যা কোথায়, প্রশ্ন বিমান বসুর..

১৭জুলাই ২০২০
ওয়েবডেস্কের প্রতিবেদন—

মুখ্যমন্ত্রী অজস্র হাসপাতাল দেখাচ্ছেন, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল দেখাচ্ছেন, কোভিড চিকিৎসার জন্য হাজার হাজার শয্যা তৈরি আছে বলে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে শয্যা কোথায়? রোগীরা তো শয্যা পাচ্ছেন না, ভর্তি হতে পারছেন না। শুভ্রজিতের মতো একটি ছাত্রকে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে প্রাণ দিতে হলো। রাস্তায় বৃদ্ধা মরে পড়ে থাকছেন। কোনও সভ্য সমাজে এসব চলতে পারে? বৃহস্পতিবার ১৬টি বামপন্থী ও সহযোগী দলের নেতৃবৃন্দের বৈঠকের শেষে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রশ্ন তুলেছেন। এদিন বিমান বসু সাংবাদিকদের জানান, করোনা মহামারী নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে আগামী ১৮ এবং ১৯ জুলাই রাজ্যজুড়ে সচেতনতা প্রচারের কর্মসূচি নিয়েছে বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলি। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের বেহাল দশার প্রতিবাদে জুলাই মাসের শেষেই অবস্থান বিক্ষোভের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, মানুষের সচেতনতা ছাড়া মহামারী প্রতিরোধ করা যায় না। তাই মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার স্বাস্থ্যক্ষেত্রের দায়িত্ব পালন করছে না বলে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। বিমান বসু এদিন বলেন, আমরা প্রথমে সর্বদলীয় বৈঠকে, তারপরে বামফ্রন্টের ডেপুটেশনে এবং তারপরে দ্বিতীয় সর্বদলীয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছিলাম যে জেলায় জেলায় ব্লকস্তর পর্যন্ত সর্বদলীয় সভা করা হোক। কিন্তু সেসব করা হয়নি। হাসপাতালে পরিকাঠামো নেই, কোয়ারান্টিন সেন্টারে অব্যবস্থা রয়েছে। এই সমস্ত বিষয়ে কাগজপত্র তৈরি করে আমরা সরকারকে দেব এবং জুলাই মাসের শেষদিকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। সরকারের দায়িত্ব সরকারকেই পালন করতে হবে।

প্রায় চার মাস হতে চলল লকডাউনের। কিন্তু এখনও সংক্রমণ যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিমান বসু বলেছেন, এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় মানুষকে সচেতন করার দরকার আছে। দৈনন্দিন কাজ নিশ্চয়ই করতে হবে। কিন্তু রাস্তায় দূরত্ববিধি মেনে, মাস্ক পরে বেরোতে হবে, যেখানে সেখানে থুতু ফেলা চলবে না। স্যানিটাইজার না থাকলেও সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে। এসব কথা মানুষকে বোঝানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অপদার্থতার অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, মানুষের কোভিড উপসর্গ দেখা গেলে তিনি কী করবেন, কোথায় টেস্ট করাবেন, টেস্ট পজিটিভ হলে কোথায় ভর্তি হবেন, নন কোভিড রোগীরা কোথায় চিকিৎসা করাবেন, এসব কেউ জানে না। ফলে মানুষ চরম বিপদে পড়ছেন। স্বাস্থ্যভবন তো সাজানো ভবনে পরিণত হয়েছে, ওখানে ফোন করলেও পাওয়া যায় না, সবকিছু নাকি নবান্ন থেকেই হয়। স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কোনও পূর্ণমন্ত্রী নেই, মুখ্যমন্ত্রী যিনি স্বাস্থ্যদপ্তরের দায়িত্বে তিনি করোনাকে ‘পাশবালিশ’ করে থাকতে বলেছেন। এভাবে মহামারী মোকাবিলা হয়? এদিন কোভিড রোগাক্রান্তদের সরকারি হাসপাতালের বদলে বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী যে দোষারোপ করেছেন তার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন বিমান বসু। তিনি বলেছেন, সরকারি হাসপাতালে ভালো ব্যবস্থা থাকলে মানুষ বেশি অর্থ খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে যাবেন কেন? সরকারি হাসপাতালে ব্যবস্থা নেই বলেই মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন।

মহামারী পরিস্থিতিতে বিরোধীরা রাজনীতি করছে বলে মুখ্যমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন তার জবাবে বিমান বসু বলেছেন, বামপন্থীরা দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, তাঁরা কখনো মহামারী নিয়ে রাজনীতি করে না। আমরা কোনও সস্তা রাজনীতি করিনি। মহামারী পরিস্থিতিতে মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয় দাবিগুলিকে পোস্টার হিসাবে তুলে ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছি, সেটাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এই প্রসঙ্গে বসু একথাও বলেছেন, লকডাউনের মধ্যে সিইএসসি এবং রাজ্যের বিদ্যুৎ সংস্থা বেপরোয়া বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দিচ্ছে। এটা সরকারের দেখা উচিত, নইলে আন্দোলন হবে বৈকি। আমফানে ত্রাণ দুর্নীতির অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ৯৯ শতাংশ ত্রাণ নাকি দেওয়া হয়ে গেছে। এটা সত্যভাষণ নাকি মিথ্যাভাষণ? মানুষের অভিজ্ঞতা হলো, শাসক দলের ঘনিষ্ট পাকাবাড়ির মালিকরা ত্রাণের টাকা পেয়েছেন, আর যে গরিবদের বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে তাঁরা টাকা পাননি। সরকারের যদি সাহস থাকে তাহলে ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের নামের তালিকা টাঙিয়ে দিচ্ছে না কেন? স্যানিটাইজারের ওপরে চড়া জিএসটি বসানোর প্রতিবাদে বসু বলেন, মহামারীর মধ্যেও কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবসা করে মুনাফা করার চেষ্টা করছে, এটা অনুচিত। রাজ্য সরকারেরও আপত্তি করা উচিত এই সব পণ্যের ওপরে কর বসানোয়।

সূত্র: গণশক্তি পত্রিকা।
শেয়ার করুন

উত্তর দিন