একশো বছর কটাই বা দিন? লেনিন যে মৃত্যুহীন - সূর্যকান্ত মিশ্র


একটা কালো দিন ও তারপর
লেনিনের জন্ম ১৮৭০ সালের ২২ এপ্রিল। মৃত্যু ১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি। ৫৪ বছর বয়সও অতিক্রান্ত হয়নি তাঁর। নিয়মিত ব্যায়াম, সাঁতার কাটা, সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে কিংবা দেশান্তরে আত্মগোপনের দিনগুলিতেও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ইত্যাদি সত্ত্বেও কি তাঁর জীবনাবসানের বয়স হয়েছিল?
ফিরে যেতে হচ্ছে প্রায় ছয় বছর আগের দিনটাতে। ‘সাম্রাজ্যবাদীদের নির্দেশে ও টাকায় অভ্যন্তরীণ প্রক্তিয়া ও সোভিয়েত সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকায়, লেনিন ও তাঁর সহকর্মীদের হত্যার আয়োজন করে। ১৯১৮ সালের ৩০ আগস্ট সোশ্যালিস্ট রেভলিউশনারি পার্টির সদস্যা কাপলান লেনিনের প্রাণনাশের এক পৈশাচিক চেষ্টা করে। রিভলবার দিয়ে একেবারে সামনাসামনি গুলি করে সে। গুরুতর আহত হন লেনিন। কাপলানের গুলি ছিল বিষাক্ত। … ভ্লাদিমির ইলিচের জীবন সংশয় হলো।’ (ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন/জীবনী, এনবিএ, ১৯৯৮, জানুয়ারি)
একটি সভায় ভাষণ দিয়ে গাড়িতে ওঠার মুখে এই ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন সকালে লেনিনের কাছে খবর এসেছিল যে চেকার প্রধানকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। লেনিনকেও বের হতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা অপেক্ষা করছেন, লেনিন তাই সভায় যেতে অনড় থাকেন। তারপরে গুলিবিদ্ধ হন। এরপরেও লেনিন নেতৃত্ব দিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির মোকাবিলায়, ওয়ার কমিউনিজমের বছরগুলিতে, নয়া অর্থনৈতিক নীতির (এনইপি) পর্বে উত্তরণে। ১৯১৯ সালের মার্চে পার্টির অষ্টম কংগ্রেসে পার্টির নতুন কর্মসূচী পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের গোটা পর্ব জুড়ে সংগ্রামের দিশারী হিসাবে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলো। গৃহীত হলো গ্রামাঞ্চলে কাজের রিপোর্ট সহ লেনিনের প্রস্তাব মতো খেতমজু, গরিব কৃষকদের সঙ্গে মধ্য কৃষকদের ঐক্য গড়ে তোলার নীতি, কুলাক বা ধনী জমিদার শ্রেণী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক সাম্রাজ্যবাদীদের শ্বেতরক্ষী বাহিনীকে পরাস্ত করতে। ইএমএস লিখেছিলেন, ‘১৮৮৩ সালে যখন মার্কসের মৃত্যু হয় তখন লেনিনের বয়স বারো বছর। এর বারো বছর পরে এঙ্গেলসের যখন মৃত্যু হয় তখন তাঁর বয়স ২৪। লেনিনকে তাই প্রবীন এঙ্গেলসের সমসাময়িক নবীন বলা যায়। তিনিই তুলে নেন দুই মহারথীর তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক সম্পদের উত্তরাধিকার। তাঁর ওপরেই বর্তায় মহারথীদের বর্ণিত বৈপ্লবিক নীতিগুলির প্রয়োগের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব।’

Lenin-Engels-Marx

জেলে, নির্বাসনে, দেশান্তরে লেনিন
পশ্চিম ইউরোপের শ্রমিক সংগ্রাম ও সংগঠনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সুইজারল্যান্ড, প্যারিস, বার্লিন ঘুরে লেনিন পিটাসবার্গে ফিরলেন ১৮৯৫ সালের শরৎকালে। ওই বছরের ডিসেম্বরেই তাঁকে অন্যান্য কমরেডদের সঙ্গে ১৪ মাসের জন্য জেলে যেতে হয়। ১৮৯৭ সালে জেল থেকে ছাড়া পেলেও পূর্ব সাইবেরিয়াতে নির্বাসনে যেতে হলো তাঁকে। নির্বাসনের মেয়াদ ফুরোলে ১৯০০ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি রাশিয়াতে ফিরলেও পিটাসবুর্গে তাঁর প্রবেশ নিষেধ ছিল। তবুও গোপনে বিভিন্ন কায়দায় যাতায়াতের সময়ে একবার পুলিশ তাঁকে ধরে ফেললেও প্রমাণসূচক কিছু না পেয়ে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু তখনই জানা যায়, পুলিশ কর্নেল জুবাকভ উচ্চতম স্তরে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, ‘বিপ্লবের প্রশ্নে উলিয়ানভের চেয়ে বড় কেউ নেই।’ প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁকে গুম খুন করার জন্য। বাধ্য হয়ে আরও পাঁচ বছরের বেশি সময়ের জন্য দেশান্তরে যেতে হলো লেনিনকে। বার্লিনে গিয়ে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন পার্টির মতাদর্শগত রাজনীতি সংগ্রাম সংগঠনের মুখপত্র প্রকাশের জন্য। মিউনিখ থেকে প্রথমে প্রকাশ করেন ‘ইসক্রা’, স্ফুলিঙ্গ থেকেই আগুন জ্বলবে এই বার্তা নিয়ে। এরপর অবশ্য লেনিনের সঙ্গে সঙ্গে বারেবারে ঠিকানা বদলেছে ইসক্রা, লন্ডন, জেনেভা ইত্যাদি স্থান থেকে স্থানান্তরে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রন্থাগার যেখানে একসময় মার্কস নিয়মিত পড়াশোনা করতেন পরে সেখানেই লেনিনের যাতায়াত নিয়মিত হয়ে ওঠে। ১৯০১ সালের শেষদিকে ভ্লাদিমির ইলিচ তাঁর কিছু লেখায় স্বাক্ষর দিতে শুরু করলেন – ‘লেনিন’। রাশিয়ার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেস হওয়ার কথা ছিল ব্রাসেলসে, কিন্তু বেলজিয়াম পুলিশের হানায় তাঁকে যেতে হলো লন্ডনে।


পরবর্তীকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস (বলশেভিক) রচনার জন্য নিয়োজিত কমিশনের খসড়ার ভিত্তিতে স্তালিনের সম্পাদনায় চূড়ান্ত রূপে সেই ইতিহাস প্রকাশিত হয়। এটা ঘটনা যে স্তালিনের মৃত্যুর পর এই ইতিহাস থেকে স্তালিনের নাম মুছে দেওয়ার মধ্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তাই স্তালিনের সময়ে রচিত ইতিহাসকেই প্রামান্য দলিল হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। লেনিন মৃত্যুর আগে স্তালিনের কঠোর সমালোচনা সহ অন্যান্য কমরেডদের মূল্যায়ন করে ১৯২৪ সালে ত্রয়োদশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেটাও একটা প্রামান্য দলিল। সন্দেহ নেই মার্কসবাদ-লেনিনবাদ, স্তালিনের লেখা ‘লেনিনবাদের ভিত্তি’ ও ‘লেনিনবাদের সমস্যা’ ইত্যাদি বাদ দিয়ে ইতিহাসে লেনিনের অবদানগুলি সম্পর্কে ধারণা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মার্কস এঙ্গেলসের অবদানগুলির মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি সম্পর্কে একটি পত্রের জবাবে লেনিন স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, এগুলি অপ্রাসঙ্গিক। কারণ মার্কস এঙ্গেলস এবং লেনিন নিজে বা অন্য কোনো মানুষই সম্পূর্ণ অভ্রান্ত হতে পারেন না। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভুল অপরাধ। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুল সংশোধন করে এগিয়ে যাওয়াই একমাত্র উপায়। আমাদের পার্টির বিভিন্ন দলিলে এই ভুলগুলি সম্পর্কে নির্দিষ্ট উল্লেখ করার পাশাপাশি তাদের অনেক মহত্তর অবদান সম্পর্কে বিশদে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিষয়ে সংশয় থাকলে যে কেউ সর্বশেষ কমরেড হীরেন মুখার্জির লেখা ‘হাতির দাঁতে খুঁত, তবু হাতির দাঁত’ পাঠ করতে পারেন।


লেনিনের অবদান
লেনিনের অসংখ্য অবদানের মধ্যে যদি একটা কিছু বেছে নিতে হয় সেটা হলো সাম্রাজবাদকে পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর হিসাবে তুলে ব্যাখ্যা যা ঘটেছিলো উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর সন্ধিক্ষণে। এই বিষয়ে আগেই হিলফারডিং, হবসন প্রমুখের লেখাগুলির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি লেনিন নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি যে ৫টি মূল বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেছেন সেগুলি হলো ১) পুঁজির ঘনীভবন ও কেন্দ্রীভবন, একচেটিয়া স্তরে রূপান্তর ও আর্থিক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক ভূমিকা।

২) ব্যাঙ্ক পুঁজি ও শিল্প পুঁজির মিলেমিশে লগ্নিপুঁজির উদ্ভব ও ফিনান্সিয়াল অলিগার্কি।

৩) পণ্য রপ্তানির তুলনায় পুঁজি রপ্তানির অভূতপূর্ব বৃদ্ধি।

৪) আন্তর্জাতিক স্তরে একচেটিয়া পুঁজির গোটা বিশ্বের দখলদারির জন্য একজোট হওয়া।

৫) কেবল বিশ্ব বাজার নয়, সারা বিশ্বের ভৌগোলিক ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেওয়া নিজেদের মধ্যে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে লেনিন সিদ্ধান্তে আসেন, আন্তর্জাতিক স্তরে এই দখলদারির ভাগাভাগি থেকেই শুরু হয় সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের ভিতরের অন্তর্ব্আন্ব্ , যার থেকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। তিনি দেখান যে এই যুদ্ধের বিরোধিতা করার পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণী ও তার মিত্রদের নিজ নিজ দেশের শাসক সাম্রাজ্যবাদীদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সংগ্রামের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের নেতারা প্রথমে এতে সহমত পোষণ করলেও যুদ্ধের শুরু থেকেই নিজ নিজ দেশের পার্লামেন্টে যুদ্ধের পক্ষে, যুদ্ধ বাজেটের পক্ষে ভোট দেয়।
কেবল রাশিয়ার বলশেভিক পার্টি সমাজতান্রি থক বিপ্লবে সফল হয়। রাশিয়া ছাড়াও অন্যান্য জাতিগুলিকে নিয়ে সমাজতান্রিমাক সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনে সক্ষম হয়। এরপর যুদ্ধোত্তর পর্বে গড়ে ওঠে তৃতীয় আন্তর্জাতিক যা কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল বলে খ্যাত। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি হয়। সকলের জন্য শান্তি, রুটি, কৃষকের হাতে জমি এই স্লোগানের ভিত্তিতেই সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হয়েছিলো। লেনিনের নেতৃত্বে তৃতীয় আন্তর্জাতিকেই কমিউনিস্ট পার্টিগুলির জন্য মূল সাংগঠনিক নীতিগুলি গৃহীত হয়। জাতীয় ও ঔপনিবেশিক প্রশ্নের নিষ্পত্তি হয়। নভেম্বর বিপ্লব পথ দেখিয়েছিলো কেন এই সব দেশে রাশিয়ার মতোই বিপ্লবকে দুটি স্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রথমটি গণতান্ত্রিক এবং দ্বিতীয়টি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তর। গণতান্ত্রিক বিপ্লব চরিত্রগতভাবে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক হলেও শ্রমিক শ্রেণীকে তার মুখ্য উদ্যোক্তা হতে হবে এবং তারপর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরে নেতৃত্ব দিতে হবে। লেনিনই দেখিয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পরে কেন সাম্যবাদের স্তরে উত্তরণ (একটি বা কয়েকটি দেশে) সুদীর্ঘকাল ধরে চলবে এবং এই পর্বে নয়া অর্থনৈতিক নীতি (NEP) কেন অপরিহার্য। তাঁর মৃত্যুর ১০০ বছর পরেও এখনকার সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে এই নীতিই অনুসরণ করতে হচ্ছে।


লেনিনের নির্দেশ মতো বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে এবং আমাদের পার্টিতেও পার্টি সদস্যদের ন্যূনতম পাঁচটি কাজ নির্ধারিত আছে। সর্বক্ষণের কর্মী (লেনিনের ভাষায় পেশাদার বিপ্লবী), সমালোচনা- আত্মসমালোচনা ও ত্রুটি সংশোধন ইত্যাদির ভিত্তিতে পার্টি সংগঠনের মূল নীতি ও গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতাকে কিছু দুর্বলতা সত্ত্বেও অনুসরণ করে চলেছে। বুর্জোয়া সংসদীয় গণতন্ত্রে কখন ও কেন অংশগ্রহণ করা আবশ্যিক, আবার কখন ও কী পরিস্থিতিতে সংসদ বহির্ভূত সংগ্রামই প্রধান হয়ে ওঠে এগুলি সবই লেনিনীয় নীতি।
নভেম্বর বিপ্লব চলাকালীন লেনিন ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’ লেখাটি সম্পন্ন করেন। তা সত্ত্বেও এই পুস্তকে ও অন্যত্র বিপ্লবের আবশ্যকীয় শর্তগুলি তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। তার প্রধান দুটি শর্ত হলো বিপ্লবী পরিস্থিতি ও বিপ্লবী পার্টি। অর্থাৎ বিপ্লবী পরিস্থিতি থাকলেও একটি বিপ্লবী পার্টি না থাকলে বিপ্লব সম্পন্ন হতে পারে না। বিপ্লবী পরিস্থিতি বলতে কী বোঝায় তা ব্যাখ্যা করে লেনিন দেখান এর গুরুত্বপূর্ণ দুটি শর্ত হলো জনগণের ব্যাপকতম অংশ পুরনো কায়দায় শাসিত হতে চান না এবং শাসক শ্রেণীও পুরনো কায়দায় শাসন চালাতে পারে না। মূল শিক্ষা হলো বিপ্লবী পরিস্থিতি হলো একটি বিষয়গত উপাদান, কিন্তু তার সঠিক বিশ্লেষণ ও প্রয়োগ বিষয়ীগত উপাদান। লেনিন কঠোরভাবে দক্ষিণপন্থী সংশোধনবাদী বিচ্যুতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের পাশাপাশি বামপন্থী সংকীর্ণতাবাদী বিচ্যুতির বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।


১৯২২ সালের মার্চ মাসে লেনিন সোভিয়েত ইউনিয়নের পার্টির একাদশ কংগ্রেসে শেষ ভাষণ দেন। ওই বছরের ২০ নভেম্বর প্রকাশ্যে শেষ ভাষণ দেন মস্কো সোভিয়েতের পূর্ণ অধিবেশনে। ওই বছরেরই ডিসেম্বর থেকে থেকে তিনি কেবল শ্রুতিলিখন দিতে পেরেছেন। কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের চারটি কংগ্রেসে অংশ নিয়ে লেনিন যা অবদান রেখেছেন তাতে সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপ্লবের সফল প্রয়োগের ধারণায় সমৃদ্ধ হয়েছিল আন্তর্জাতিক।
সাম্রাজ্যবাদকে যিনি পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায় বলে চিনিয়ে দিয়েছিলেন সাম্রাজ্যবাদীরা কি তা ভুলে যেতে পারে! ১৯১৮ সালের আক্রমণে তিনটি গুলি করা হয়েছিল লেনিনকে। পরবর্তী জীবনে লেনিনের অসুস্থতার মূল কারণ ছিলো তাঁর শরীরে থেকে যাওয়া একটি বিষাক্ত বুলেট। এর জেরেই মাত্র ৫৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান। না হলে সারা বিশ্ব লেনিনের আরও সৃষ্টি ও অবদান পেতো নিঃসন্দেহে। লেনিনের অবদানের জন্যই সাম্রাজ্যবাদীদের দিক থেকে এই আক্রমণ তাঁর ‘প্রাপ্য’ ছিল। ইতিহাস সাক্ষী, পথের বাধা সরাতে সাম্রাজ্যবাদীরা অনেক রাষ্ট্রনায়ককে হত্যা করেছে। আর লেনিনের ওপরে আক্রমণের সময়কালে তো আমেরিকা ব্রিটেন ফ্রান্স একজোট হয়ে মদত দিচ্ছিল প্রতিবিপ্লবে। লেনিন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে ১২ সেপ্টেম্বর লাল ফৌজ সিসবির্স্ক মুক্ত করে প্রতিবিপ্লবীদের হাত থেকে। সেনারা টেলিগ্রাম করে জানালেন, ‘‘প্রিয় ভ্লাদিমির ইলিচ, আপনার জন্ম শহর দখল, ওটা আপনার প্রথম জখমের (বুলেটের) জবাব। দ্বিতীয় জখমের জবাবে নেবো ‘সামারা’।’’ লেনিন জবাব দিলেন, ‘‘আমার জন্ম শহর সিসবির্স্ক দখল হলো আমার জখমের সেরা মলম।’’


শেয়ার করুন

উত্তর দিন