PB Statement

একটি উদ্বেগজনক রায়

১১ ডিসেম্বর,২০২৩,সোমবার

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এর পলিট ব্যুরো নিম্নলিখিত বিবৃতি জারি করেছে:

সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার ও জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অস্তিত্ব বিলোপের যৌক্তিকতা সংক্রান্ত মামলা খারিজ করার সুপ্রীম কোর্টের রায় অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম মৌলিক বুনিয়াদ যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো , তার পরিপন্থী এবংএর পরিণতি খারাপ হতে বাধ্য।

রায়ে বলা হয়েছে ভারতে সংযুক্তির পর জম্মু ও কাশ্মীরের সার্বভৌমত্ব থাকে না। সেই কারণে জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধানও বাতিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু সংযুক্তির ব্যবস্থায় জম্মু ও কাশ্মীরের সই করার সঙ্গে কী বিশেষ মর্যাদার শর্ত জড়িত ছিল না? যে বিশেষ মর্যাদা অধুনা বিলুপ্ত সংবিধানের ৩৭০ ধারায় দেওয়া হয়েছিল?

রায়ে বলা হয়েছে যে জম্মু ও কাশ্মীর অন্য কোনও রাজ্যের থেকে আলাদা নয়। তাই তার বিশেষ মর্যাদার দাবি থাকে না। সংবিধানের ৩৭১ ধারায় উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির এবং অন্য কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে অন্যান্য কিছু রাজ্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই রায়ের ফলে সেই স্বীকৃতিও জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

এই রায় জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবনমিত করার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছে, এই বলে যে সলিসিটর জেনারেল রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সাথে,  লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে গঠনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ফলে পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর আশ্বাসও সব অংশের জন্য নয়। কেবল একটি অংশকে পূর্ণরাজ্য করা হবে। সেটাও কেবল আশ্বাসের ভিত্তিতে।

আশ্চর্যজনকভাবে, জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন কমিশনকে ২০২৪’র ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আসলে জম্মু ও কাশ্মীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতে আরও দীর্ঘ সময় দেওয়া হলো কেন্দ্রকে।

যখন একটি রাজ্য রাষ্ট্রপতি শাসনের অধীনে থাকে এবং রাজ্য হিসাবে তার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়, তখন নির্বাচিত বিধানসভার অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত রাজ্যপালের সম্মতি কি বিকল্প হিসাবে নেওয়া যেতে পারে? পুনরায় বলতে হয়, এটি অন্যান্য সমস্ত রাজ্যের জন্য গুরুতর দুশ্চিন্তার কারণ, যেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা যেতে পারে এবং রাজ্যের সীমানা পরিবর্তন করা যেতে পারে এমনি রাজ্যের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে পারে।

সংবিধানের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রপতি যেকোনো রাজ্যের পুনর্গঠনের জন্য বিলটি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আইনসভার কাছে তার মতামত প্রকাশের জন্য পাঠাবেন। এই রায়টি কেন্দ্রীয় সরকারকে একতরফাভাবে নতুন রাজ্য গঠন, এলাকা, সীমানা বা বিদ্যমান রাজ্যগুলির নাম পরিবর্তন করার অনুমতি দেওয়ার প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেয়। এরফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং নির্বাচিত রাজ্য আইনসভার অধিকারের গুরুতর আবদমন হতে পারে।

এই ৫ সদস্যের বেঞ্চের রায়ের একটি বিশদ প্রতিক্রিয়া, মূল রায় এবং ২ টি আনুসঙ্গিক রায় সহ, একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়নের পরেই করা যেতে পারে।

যাইহোক, এটা স্পষ্ট যে এই রায় আমাদের সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলবে এবং "ঐক্যবদ্ধতার" নামে এবং "জাতীয় নিরাপত্তা"-এর স্বার্থে একটি একমাত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোকে শক্তিশালী করার দিকে ঝুঁকছে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন