প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পক্ষ থেকে পি এম কেয়ার্স ফান্ড তহবিলের তথ্য গোপন রাখা এবং হিসাব প্রকাশ্যে না আনা সম্পর্কে যেরকম একরোখা মনোভাব দেখানো হচ্ছে সেই নিয়ে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রধান্মন্ত্রীকে মধ্যমণি হিসাবে রেখে স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং অর্থমন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের ট্রাস্টি হিসাবে নিয়ে গঠিত এই তহবিল আসলে একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট হিসাবে কাজ করে। দাবী করা হয়েছে যেহেতু এটি একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট তাই এই তহবিলের হিসাব আরটিআই (তথ্যের অধিকার আইন)’র অধীনে আসবে না অথবা কোন সরকারি নিরিক্ষক সংস্থা এই তহবিলের অডিট করতে পারে না। এতেই স্পষ্ট হয়ে গেছে এই তহবিলের কোন স্বচ্ছতা নেই, এই তহবিলের কোন দায়বদ্ধতাও নেই।
মার্চ মাসে সংসদ অধিবেশন মুলতবি রাখার সময়ে এই তহবিলের ঘোষণা করা হয়েছিল। জনগণের উদ্দেশ্যে প্রকাশে এই তহবিলে মুক্ত হস্তে অর্থদানের জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল এই তহবিলে জমা অর্থ কোভিড অতিমারি মোকাবিলায় ব্যাবহার করা হবে। এই তহবিলের জন্য সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের মাসিক আয়ের থেকে বাধ্যতামূলকভাবে একদিনের আয় কেটে নেওয়া হয়। আগামী দুই বছরের জন্য সাংসদ তহবিলের অর্থ এই তহবিলের জন্য বরাদ্দ করা হয়। ২০১৩ সালের কোম্পানি আইনে যথাযথ সংশোধন আনা হয় যাতে এই ধরণের প্রাইভেট ট্রাস্টের তহবিলে আর্থিক অনুদান হিসাবে কর্পোরেটদের সামাজিক দায়বদ্ধতার খাতে ব্যয় করার জন্য নির্দিষ্ট অর্থকে ব্যবহার করা যায়। এই তহবিলের প্রচারে দেশের জাতীয় প্রতীক এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট নির্দেশনামা জারী করে সরকারি কর্মচারীদের থেকে আর্থিক অনুদান জমা দিতে বলা হয়েছে। এই তহবিলে জমা হওয়া আর্থিক অনুদানকে কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে দেশে দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য গড়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী জাতীয় রিলিফ তহবিল থাকা সত্ত্বেও কেন আরেকটি প্রাইভেট ট্রাস্ট তহবিল গড়ে তোলা হল সেই জবাব আজ অবধি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় রিলিফ তহবিলের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ছিল, তা সিএজি বা ক্যাগ দ্বারা নিরীক্ষণ (অডিট) করা যেত।
খবরে প্রকাশ ইতিমধ্যেই এই তহবিলে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। এই বিরাট রাশির মধ্যে অন্তত চার হাজার কোটি টাকা এসেছে শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারীদের থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে কেটে নেওয়া অনুদান বাবদ। এমন হতে পেরেছে তার একমাত্র কারণ হল সরকারি কর্মচারীদের উপরে এই তহবিলে অনুদানের জন্য নির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশনামা ছিল।
করোনা ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত মানুষদের যথাযথ শারীরিক পরীক্ষা করার পরিকাঠামো গড়ে তোলা এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসার কাজে এই তহবিলের অর্থকে ব্যয় করার দাবী জানিয়েছে সিপিআই(এম)। মুক্ত টেন্ডারের আইনসঙ্গত ব্যবস্থাপনা না করে যেভাবে এই তহবিলের অর্থব্যায় করে ভেন্টিলেটর কেনা হয়েছে সেই নিয়ে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এবং বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এই তহবিলেকে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে এবং জনগণের সামনে হিসাব জমা দিতে বাধ্য থাকতে হবে, সিপিআই(এম) দৃঢ় ভাবে এই দাবী জানাচ্ছে। অতিমারি মোকাবিলায় যারা সবচেয়ে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করছে সেই রাজ্যসরকারগুলির হাতে এই তহবিলের অর্থ তুলে দিতে হবে। এই তহবিলের সমস্ত হিসাব জনগণের জন্য প্রকাশ করতে হবে এবং একে সরকারি নিরীক্ষণ ব্যাবস্থার আওতাধীন করতে হবে।
শেয়ার করুন