Logo oF Communism

ভারতের নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরোর পক্ষ থেকে পোস্টাল ব্যালট সম্পর্কিত দ্বিতীয় চিঠি

তারিখঃ ২ জুলাই, ২০২০ – বৃহস্পতিবার

ভারতের নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসুর লেখা পোস্টাল ব্যালট সম্পর্কিত চিঠির সম্পূর্ণ বয়ান এখানে তুলে দেওয়া হল।

*************************************************************************************************************

২ জুলাই, ২০২০

শ্রী চন্দ্র ভূষণ কুমার

ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার

ভারতের নির্বাচন কমিশন

মহাশয়,

আমাদের পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির লেখা চিঠির জবাবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার শ্রী সুনীল অরোরা’র চিঠি আমরা পেয়েছি।

১. আপনারা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন আপনাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই আমাদের তরফ থেকে লেখা চিঠিটি ব্যপকভাবে গনমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। আমি এই ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য স্পষ্ট করতে চাই। নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে আমাদের লেখা চিঠি পৌঁছানোর পরে নির্দিষ্ট ষ্ট্যাম্প সহ প্রাপ্তিস্বীকারের তথ্য আমাদের দপ্তরে এলে তার পরেই আমাদের লেখা চিঠি গনমাধ্যমে দেওয়া হয়। আমি আশা করি, এই ব্যাপারে কোনোরকম ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা এই তথ্যেই সংশোধিত হতে পারে।

২. সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদকের চিঠিতে আদৌ এমন বলা হয় নি যে পোস্টাল ব্যালট ব্যাবহারের পরিসর বৃদ্ধি করা নিয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ৩২৪ নম্বর ধারার আহ্বান করেছে, বরং সেই চিঠির বয়ানে বলা ছিলঃ

“অতীতে সংবিধানের ৩২৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে “নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকির” জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা থাকা সত্বেও তারা সবসময়েই সেই ক্ষমতার প্রয়োগ করা সম্পর্কে নিজেদের অবস্থানকে কখনো একতরফা হতে দেন নি। নির্বাচন কমিশনের এমন অবস্থানের ফলে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সর্বদাই এমন এক সুস্থ স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করেছে যেখানে ভারতের জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মুখ্য অংশীদারিত্ব ধরে রাখতে পেরেছে, চর্চা করতে পেরেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনোরকম সময়োপযোগী বদল আনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিরবিচ্ছিন্নভাবে সকলের সাথে ঐক্যমতের ভিত্তিতে কাজ করেছে। অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসাবে উল্লেখ করা যায় আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংশোধন জারী করা হয়েছিল সবকোটি রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষেই। সেই সময়েও এই নির্দেশিকা জারী করার ক্ষেত্রে কোনোরকম বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের উল্লেখ করা হয় নি, স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে কারোর তরফে কোন সমালোচনাও করা হয় নি। এভাবেই গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়াটিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছিল এবং সব পক্ষের তরফে প্রশংসাও পেয়েছিল”।

ঐ চিঠিতে দীর্ঘ সাত দশক ধরে চলা দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন যে অসাধারণ কীর্তির উদাহরণ বজায় রেখেছে তাকে প্রশংসাই করা হয়েছিল, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে কেন সেই ধারা জারী রাখা হল না সেই কথাই উল্লেখ করা হয়েছিল।

৩. বিহারের নির্বাচনকে সামনে রেখে সেখানকার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক যে সভার আয়োজন করেছিলেন সেখানে নানা আলোচনার সাথে সাথেই এই বিষয়টিরও উল্লেখ করা হয়েছিল তা আমরা জানি। এই নিয়ে কথা তোলার উদ্দেশ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন কিছু বিষয়কে টেনে বার করা ছিল না, বরং নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকেই উল্লেখ করা হয়েছিল। কোন পরিস্থিতিতেই একটি নির্দিষ্ট রাজ্যের নির্বাচন উপলক্ষে সেখাকার আঞ্চলিক দলগুলির সাথে ঐ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের আলোচনা করে নেওয়া কোন সিদ্ধান্তকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে সারা দেশের নির্বাচনী পদ্ধতিতে নতুন সংযোজনা হিসাবে ব্যাবহার করা উচিত নয়, সেক্ষেত্রে জাতীয়স্তরের রাজনৈতিক দলগুলির সাথে আলোচনার কোন বিকল্প নেই। সুতরাং বিহারের নির্বাচনে প্রযোজ্য সেই রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের পোস্টাল ব্যালট সম্পর্কিত নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তকে সারা দেশের নির্বাচনে সাধারণ সিদ্ধান্ত হিসাবে প্রয়োগ করার আগে জাতীয়স্তরের রাজনৈতিক দলগুলির সাথে আলোচনা না করার ঘটনাকে যথোপযুক্ত ঐতিহ্যসম্মত দৃষ্টান্ত বলা চলে না।

৪. আপনাদের তরফে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে গত ২৪ মার্চ-২০২০, মধ্যরাতে পোস্টাল ব্যালট ব্যবহারের পরিসর বাড়ানো সম্পর্কিত নির্দেশিকার বিজ্ঞপ্তি জারী করা হয়েছিল। ঠিক এই প্রবনতার কথাই আমাদের পার্টির পক্ষে সাধারণ সম্পাদক তার লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন। বর্তমানে প্রয়োজনানুসারে ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে খুব সহজেই জাতীয়স্তরের সবকটি রাজনৈতিক দলের সাথেই সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আলোচনা সাপেক্ষে এধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত যা এক্ষেত্রে করা হয় নি। উল্লেখ্য, এদেশে নির্বাচনী কর্মকান্ড পরিচালনায় বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দীর্ঘ সাত দশকের ইতিহাসে এমন ব্যাবহারের আর একটিও উদাহরণ নেই।

স্বাধীন ভারতের দীর্ঘ সাত দশকের ইতিহাসে নিজেদের কাজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ভারতের নির্বাচন কমিশন যে আলোকোজ্জ্বল উদাহরণের ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে সেই ধারা মেনেই আগামিদিনে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যেকোনো পরিবর্তন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত সবকটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের সাথে পর্যাপ্ত আলোচনা সাপেক্ষেই নেওয়া হোক সিপিআই(এম) এটুকুই দাবী জানাচ্ছে।

আপনার জ্ঞাতার্থে

নীলোৎপল বসু

সদস্য

পলিট ব্যুরো
শেয়ার করুন

উত্তর দিন