কোভিড -১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী বাম ও কংগ্রেস পরিষদীয় দলের পক্ষ থেকে যৌথ চিঠি

২৫ এপ্রিল,২০২০



মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাশয়,

আপনার কর্মব্যস্ত রোজনামচা মাথায় রেখেও তিনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপানার অবগতির জন্য আমরা এই চিঠি লিখতে বাধ্য হচ্ছি। আশা করি এই তিনটি বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ ও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আপনাকে আগ্রহী করতে সক্ষ্মম হব আমরা।

১. আপনি জানেন, লকডাউনের সাফল্য অন্যান্য অনেক কিছুর উপরে নির্ভরশীল যেমন সঠিক সময়ে জনগণের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেবার গুরুত্ব রয়েছে। এই ব্যাবস্থা গরীব, দুঃস্থ - কৃষিজীবী এবং দৈনিক আয়ের উপরে নির্ভরশীল মুজদুর পরিবারগুলীর জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে - সামাজিক সুযোগ সুবিধা ক্রয় না করতে পারা জনগণের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। আপানার মনোবাঞ্ছা এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৫ লক্ষ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সাহায্য পৌঁছানর কাজ এখনও করা হয় নি। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয়ে এই মুহূর্তে অর্থনৈতিকভাবে সমাজের সবচেয়ে নিচের স্তরে বসবাসকারী মানুষজন গভীর সংকট এবং দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। এই মুহূর্তে তাদের বেঁচে থাকার জন্য আগামী ছয় মাসের জন্য বিপিএল তালিকাভুক্ত গরীব, খেটে-খাওয়া কৃষিজীবী, সাধারণভাবে শ্রমজীবী এবং পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারগুলীকে মাসিক ৭৫০০ টাকা করে সাহায্যকল্পে দেবার ব্যাবস্থা করা হোক।

২. আপনার ঘোষণা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যান যোজনা প্রকল্পে সমস্ত পরিবারের হাতে মাসিক ৫ কেজি চাল এবং এক কেজি ডাল বরাদ্দ করা হয়েছে, অথচ এই ঘোষণার পরে একমাস পেরিয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পের কোন কাজই এখনও অবধি করা হয়নি।

৩. সারা দেশে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে পূর্বপরিকল্পনা ব্যাতিরেকেই লকডাউন জারী করা হয়েছে। দেশের নানা প্রান্তে আমাদের রাজ্য থেকে বহু মানুষ কাজের প্রয়োজনে, বিদ্যার্থী হিসাবে এবং ঘুরতে গিয়ে এই লকডাউনের কারনে আটকে পড়েছেন। তার সবাই নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয়ে আটকে রয়েছেন। তাদের খাদ্য, আশ্রয়, টাকাপয়সা, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর একান্ত প্রয়োজন রয়েছে। যদিও আপনি সব রাজ্যসরকারগুলিকেই এই সমস্ত মানুষদের সাহায্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন তবু কার্যক্ষেত্রে বহু জায়গাতেই সেইসবের ব্যাবস্থা অনেকটাই অপর্যাপ্ত রয়ে গেছে। বিভিন্ন সমিক্ষায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী নিজেদের রাজ্যের বাইরে বাইরে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ৬৫%ই সরকারি প্রতিশ্রুতি সত্বেও সাহায্যের আওতার বাইরে রয়ে গেছেন। একবার অনুমান করে দেখুন তারা কিভাবে দিন গুজরান করছেন। এদের জীবন-জীবিকার স্বার্থে অতি সত্বর যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

"মন কি বাত" অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একাধিকবার আপনার পক্ষ থেকে এইসব বিষয়ে পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে পরিস্থিতি এখনও অনেকটাই নিরাপত্তাহীন হয়ে রয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গে সংকটের কারনে দুর্ভোগের শিকার হওয়া মানুষজনেদের পক্ষ থেকে আপনাকে এই আবেদন জানানো হচ্ছে যাতে এক্ষেত্রে আপনি সহমর্মিতার ভিত্তিতে মনোযোগ দেন এবং অতি দ্রুত সমস্যার সমাধানকল্পে ব্যাবস্থা নেন।

ধন্যবাদ সহ

আবদুল মান্নান (কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা) এবং সুজন চক্রবর্তী (বামফ্রন্ট পরিষদীয় দলের নেতা)
শেয়ার করুন

উত্তর দিন